কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমরা বারাসাতে এখনো অর্ধেক প্যান্ডেল দেখে পারিনি। এখনো অনেক ভালো ভালো প্যান্ডেল দর্শন করা বাকি আছে কিন্তু যে কটা প্যান্ডেল আমরা এখন অব্দি দেখেছি সবকটাই অসম্ভব সুন্দর ছিল। তাই আমাদের উৎসাহ আরো বেড়ে যাচ্ছে মা কালীর পুজোর প্যান্ডেল দর্শন করার জন্য। আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেশ সুন্দর একটা প্যান্ডেলের দর্শন পেলাম। কিন্তু এই প্যান্ডেলটি দেখে কেমন ভয় ভয় হতে লাগলো। কারণ এই প্যান্ডেলটা দেখে মনে হচ্ছে এটি যখন মানুষ বন জঙ্গলে বসবাস করত তখনকার মানুষ যেমন ছিল তেমনি যেন দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ সেই আদিম যুগের প্রতিচ্ছবি যেন এখানে দেখতে পাচ্ছি। প্যান্ডেলের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম প্যান্ডেলের একদম মাথার ওপরে কোন একজন সাধু বসে আছে এবং ধ্যানে মগ্ন। তার দুপাশে দুটি মূর্তি এবং সে মূর্তির মাথার ওপরে পঞ্চমুখী সাপ রয়েছে। সে মূর্তি দুটি নিচে আবার দেখা যাচ্ছে পরপর তিনটে বাইক, স্কুটি অথবা গাড়ির টায়ার লাগানো আছে এবং সেই টায়ারের মধ্যে দিয়ে লাইট জ্বলছে।
এই টায়ার দিয়ে লাইটিং করা এটা আমার কাছে একদমই নতুনত্ব। এর আগে আমি কোথাও কোন প্যান্ডেলের টায়ারের ব্যবহার দেখিনি। দুই পাশে দুই টায়ারের মাঝখানে কিছুটা গোল করে বিভিন্ন রকমের পালক দিয়ে কারুকার্য করা আছে এবং তার নিচেই ত্রিকোণ করে আরো কিছু কারুকার্য করা আছে। এবং এই কারুকার্য এর ভেতরে অর্থাৎ নিচের দিকে বসে আছেন শ্রী গনেশ। গণেশ ঠাকুরের মূর্তি এখানে অনেক সুন্দর করেই করা আছে কিন্তু তার মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে সে খুব রেগে আছেন। এবং গণেশ ঠাকুরের দুই পাশে দুটো মূর্তি দেখা যাচ্ছে আর এই মূর্তির পাশ দিয়েই আমাদের ভেতরের দিকে প্রবেশ করতে হবে। ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম ভিতরে পরিবেশ একদম থমথমে। অনেক বড় জংলি ষাঁড় প্যান্ডেলের মাঝখানে রয়েছে আর তার মুখের সামনে এমন ভাবে লাল আলো দেওয়া হয়েছে দেখেই হঠাৎ করে যে কোন বাচ্চা ভয় পেয়ে যেতে পারে। প্যান্ডেলের দুপাশের দেওয়ালের একদম মাথার উপরে সেনাবাহিনীর মতো দাঁড়িয়ে আছে কতগুলি মানুষ। হাতে বড় বড় অস্ত্র যেন কোন শত্রু দেখলেই বা কোন রকমের বিপদের আশঙ্কা অনুভব করলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে শত্রু দমনের জন্য।
এই মানুষগুলোর নিচে দু'পাশের দেওয়ালে দেখা যাচ্ছে টায়ার দিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে। এবং এখানে টায়ারেও লাইট লাগিয়ে চারিদিকটা আলোকিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই প্যান্ডেলে খুবই কম আলো ব্যবহার করা হয়েছে। হয়তো এই প্যান্ডেলের থিম অনুযায়ী এখানে কম আলো। চারিদিকটা দেখতে দেখতে আমি মায়ের প্রতিমার সামনের কারুকার্য দেখার জন্য নিচ থেকে আমার নজর যেই ওপর দিকে গেল হঠাৎ করে ভয়ে আমার হার্টবিট যেন কয়েক মিনিটের জন্য থমকে গেছিল। অন্ধকারের মধ্যে দুটো চোখ এত বড় বড় করে তাকিয়ে আছে যে অপ্রস্তুত ভাবে যে কেউ সেই দিকে তাকালে ভয় পেতে বাধ্য। আর ওই মূর্তির মুখমণ্ডলটা পুরোই কালো শুধু চোখ দুটো একদম সাদা করেছে। ওই ভয়ংকর মুখমণ্ডল দুটির নিচে পুরো গেটের মতো করে অনেকগুলি ত্রিশূল রয়েছে এবং এই ত্রিশূলের নিচে আবার সেই আদিবাসীদের ভয়ংকর মুখমন্ডলের মতো অনেকগুলি মুখমন্ডল প্রতিটা ত্রিশূলের নিচে একটি করে রাখা আছে।এই মুখমণ্ডল গুলোর কোনটা দাঁত বের করে বিচ্ছিরি ভাবে হাসছে কোনটা আবার জিভ বের করে আছে কোন মুখমন্ডলএর আবার চোখ উল্টে গেছে।
এইসব ভয়ংকর মুখমন্ডলের মাথায় বিভিন্ন পালক দিয়ে সাজানো। এসব মুখমন্ডলের নিচের দিকে আবার সুন্দর করে কারুকার্য করা আর তার ভেতরে রয়েছে একটি মূর্তি। জঙ্গলে পাথর কেটে যেমন মূর্তি তৈরি করে আদিম মানুষরা পুজো করতো এই মূর্তিটি দেখে ঠিক তেমন মনে হচ্ছে কিন্তু এটা কিসের মূর্তি আমি জানিনা। আর মূর্তিটির নিচে ভেতর দিকে রয়েছে মা কালীর প্রতিমা। মা কালীর প্রতিমা এখানে খুবই অদ্ভুত ভাবে করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন জঙ্গলের মধ্যে মায়ের প্রতিমা তৈরি করে সেখানে পূজা করা হয়েছে। অবশ্য এ প্যান্ডেলটা যেমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে সেই অনুযায়ী মায়ের প্রতিমা টি এভাবে তৈরি করেই বেশ ভালো মানিয়েছে। এখানে মায়ের প্রতিমার মুখমণ্ডল খুবই সুন্দর নমনীয় কোমল করা হয়েছে। মায়ের প্রতিমা দর্শন করে আমরা অপরদিক থেকে বেরিয়ে আসার সময় দেখতে পেলাম বেশ কয়েকটি আদিম মানুষের মূর্তি করা আছে। আদিম মানুষগুলোকে দেখতে কিন্তু খুবই ভয়াবহ। এবং প্রত্যেকটি মানুষগুলো খুবই রাগী মুখ করে আছে। আমার এদের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সেই যুগে এরা হয়তো হাসতে পারত না বা এদের হাসি পেত না তাই এমন ভাবে রাগী মুখ করে আছে। আমি বেশিক্ষণ না থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম কারণ আমার একটু ভয় লাগছিল।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit