কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
সোর্স
আমার পাড়া একটি বিচিত্রময় জায়গা। জঙ্গলে যেমন বিভিন্ন রকমের প্রাণী দেখা যায় এখানেও তেমন বিভিন্ন ধরনের মানুষ এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের মতামত দেখা যায়। অন্যপাড়ায় হয়তো ঘুম থেকে উঠে মানুষ ভগবানের গান শুনে বা ভগবানের নাম করে। কিন্ত আমার পাড়ায় আমি ঘুম থেকে উঠি পাশের বাড়ির ঝগড়া আর গালাগালি শুনে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যার ঘুম ভাঙ্গে ঝগড়া আর গালাগালি শুনে তার সারাদিনটা কত সুন্দর কাটতে পারে। আর এটা শুধু সকালের ব্যাপার তা নয় সকালে যদি এক বাড়ির ঝগড়া শুনে ঘুম থেকে উঠি দুপুরের কাজ করতে করতে অন্য এক বাড়ির ঝগড়া শুনতে পাই। আর সন্ধ্যার সময় একটু শান্ত পরিবেশ হবে আর আমি যে একটু বোর ফিল করব সেটা কখনোই সম্ভব নয়। সন্ধ্যার সময় দেখা যাবে কোন না কোন বাড়িতে ঝগড়া চলছে। মোটামুটি এভাবেই আমি কখনোই একাকীত্ব বা বোর ফিল করিনা।
শুধু যে ঝগড়া শুনে আমার সারাদিনের মনোরঞ্জন হয় এমনটা কিন্তু নয়। আমার আশেপাশে কোন না কোন বাড়িতে জোরে গান বাজনা চলতেই থাকে প্রায় দিন। আর এই গান-বাজনা যেন বেশি চলে বাচ্চাদের যখন পরীক্ষার সময় আসে ঠিক সেই সময়। কারণ আমার পাড়ার মানুষগুলো হয়তো ছোটবেলায় পড়েছেন "পড়াশোনা করে যে গাড়ি চাপা পড়েছে সে"। তাই পড়াশোনাকে বেশি প্রাধান্য না দিয়ে তারা পরীক্ষার সময়ে গান-বাজনা চালিয়ে চারপাশের মানুষগুলোর মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করে l অবশ্য এটা শুধু পরীক্ষার সময় করা হয় তা নয় কখনো কখনো সকালবেলা পড়াশোনার সময় এরা বিভিন্ন ধরনের গান বাজনা এবং ঝগড়াঝাঁটি করে থাকেন। পড়াশোনা করার থেকে বা কোন সামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার থেকে এরা মনে করেন বিকালবেলা একটু পরনিন্দা পরচর্চা করার কাজটা বেশি দরকারি। তাই দেখা যায় পাড়ার গলিতে বা রাস্তার মোড় মাথায় বসে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এরা চর্চায় ব্যস্ত থাকে। কে কেমন পোশাক পরে বা কার সংসারে কি চলছে ইত্যাদি।
আর যদি বলা হয় মিলিতভাবে কোন কাজ করার কথা তবে আমাদের পাড়ায় মিলিতভাবে শুধু একটিমাত্র কাজই হয় সেটা হল জগদ্ধাত্রী পূজা। আর এই পুজো করার ক্ষেত্রেও নানাজনের নানা মত থাকে। আর সেটা থেকে ধীরে ধীরে বড়সড়ো একটি ঝগড়া ঝামেলায় পরিণত হয়। তবে আমাদের পাড়ায় কেউ কারো সাথে বেশিদিন ঝগড়া করে থাকতে পারে না কিছু সময় বা কিছুদিন পরেই আবার মিলেমিশে যায়। তবে এই বছর জগদ্ধাত্রী পূজা করতে গিয়ে দেখা গেল কিছু মানুষ পুজো করবেই না আবার কিছু মানুষ পুজো করতে চায়। কারণ আমাদের পাড়ায় এ একটিমাত্র পূজো হয়। তাই কিছু মানুষ চায় না এই পুজোটা বন্ধ হোক আর কিছু মানুষ চায় পূজা বন্ধ হয়ে যাক। এই নিয়েও বেশ কিছু দিন মনোমালিন্য চলতে থাকে তারপর অবশেষে জোরাজোরি করায় জগদ্ধাত্রী পূজা করা হয় কিন্তু আগের মতো অত সুন্দর করে করা হয়ে ওঠে না। কারণ এইসব ঝগড়া অশান্তি করতে করতেই পুজোর দিন প্রায় চলে এসেছিল। তাই ভালো করে পূজোর প্রস্তুতি নিয়ে ওঠা যায়নি।
হিংসা ঝগড়া অশান্তি তো সব পাড়াতেই কমবেশি থাকে। তবে যে কোন পাড়ায় বসবাসের আগে দেখে নেওয়া উচিত সেই পাড়ার মানুষগুলো কেমন, শিক্ষার হার কতটা বেশি। পাড়ার পরিবেশ এবং মানুষজন ভালো হলে সেই পাড়ায় ভালোভাবে বসবাস করা সম্ভব। আমার পাড়াতেও তেমনি ভালো-মন্দ সবই মিলেমিশে আছে। হাতের পাঁচটা আঙ্গুল যেমন সমান হয় না একটি পাড়ায় সব মানুষ তেমন সমান হয় না। তবে আমার পাড়ার মানুষজন কারোর বিপদ দেখলে এগিয়ে এসে তার সাহায্য করতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। আমার পাড়ার মানুষ কারো কোন বিপদ দেখলে বা কারোর কোন মেডিকেল বিষয়ক সমস্যা দেখলে সর্বদাই এগিয়ে আসে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পাড়ায় কোন পরিবারে কেউ মারা গেলে পুরো পাড়ার মানুষ সবাই ছুটে আসে সেই পরিবারের অসময়ে পাশে থাকতে। মনের মধ্যে যতই রাগ অভিমান থাকুক না কেন তারা নিজের শত্রুর ও ক্ষতি কামনা করে না।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit