কালী পূজা। পর্ব:- ৯

in hive-129948 •  28 days ago 

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


1000017307.jpg


1000017308.jpg



নৈহাটির কালীপুজো দেখার পর আমরা যেন ক্লান্ত হয়ে গেলাম। এত পরিমাণ হাঁটাহাঁটি করে আমাদের মনে হচ্ছিল একদিন একটু রেস্ট করে নেওয়া ভালো। তাই পরের দিন আর বের হয়নি কালী পুজো দেখতে। কিন্তু আজ বর মশাই বলল বারাসাতে কালী পুজো দেখতে যাবে। আমি তো শুনে খুব খুশি হয়ে উঠলাম। কারন এবার বারাসাতে অনেক সুন্দর সুন্দর কালীপুজোর প্যান্ডেল করেছে। কিন্তু বর মশাই বলল যে, বাইকে করে যাব তাই একটু রাত করে বের হব। আমি তো আরো খুশি হয়ে গেলাম। কারণ সাজগোজ করতে আমি আরো একটু বেশি সময় পেয়ে যাব। তাই খুশি খুশি মনে সময় নিয়ে সুন্দর করে সাজগোজ সম্পন্ন করলাম। তারপর বাইকে করে বেরিয়ে পড়লাম বারাসাতের উদ্দেশ্যে। বারাসাতে আমাদের আরেকটা বাড়ি থাকায় আমরা বাড়িতেই বাইক রেখে বেরিয়ে পড়লাম কালীপুজোর প্যান্ডেল দেখার উদ্দেশ্যে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে আসলাম বারাসাতের এবছরের সবথেকে বড় কালী মায়ের প্যান্ডেলে।

1000017309.jpg


1000017310.jpg



এই প্যান্ডেলটি এতই বড় করেছে যে আমি পুরো প্যান্ডেলটির একটিমাত্র ফটো তুলতেই পারলাম না। পুরো প্যান্ডেলটা এক ফ্রেমে আসছিল না। তাই আমি এক পাশ এক পাশ করে কয়েকটি ফটো তুলতে লাগলাম। এই প্যান্ডেলটা কিন্তু তৈরি করা হয়েছে কৈলাস পর্বতের আদলে। কৈলাস পর্বত মানেই আমরা জানি শিবের বাসস্থান। তাই আরও বেশি আকর্ষণ বোধ করছিলাম এই প্যান্ডেলটা দেখার জন্য। ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সামনে একটি বড় জলাশয় রয়েছে। আর সেই জলাশয় এ অনেকজন ব্রাহ্মণ স্নান করছে বা হাত-পা ধুচ্ছে। এবং জলাশয়ের পাশে কিছু গরু বিচরণ করছে। জলাশয়ের ধারে মাটি এবং পাথর দিয়ে সুন্দর করে চারিদিকটা বাধিয়ে দিয়েছে। আমরা জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম আরো কয়েকটি গরু এবং একজন ব্যক্তি কে। এই ব্যক্তিটি মনে হয় গরু চরাতে এসেছে। পাহাড় পর্বতে যেমন পরিবেশ থাকে এখানেও ঠিক তেমনটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। পাহাড়ি পশুদেরও পাহাড়ি বাসিন্দা অনেক যত্ন সহকারে রাখে তাদের ঠান্ডায় যেন কষ্ট না হয় সেই জন্য তাদেরও কিছু গরম কাপড় পরানো হয়।

1000017312.jpg


1000017313.jpg



এখানেও দেখা যাচ্ছে সেরকমই পশুদের গরম কাপড় পিঠের উপর দেওয়া হয়েছে।আর একটু সামনে এগিয়ে যেতেই মূল মণ্ডপের প্রবেশ পথ। উপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম বরফ জমে কিছু বরফ লম্বা লম্বা ঝুলে আছে। ঠিক যেমন বরফের দেশে যেভাবে তুষার পরে সেখানে যেমন চারিদিকটা বরফের হয়ে যায় এখানেও তেমন দেখানো হয়েছে। পর্বতের খাদে খাদে বরফ ঝুলে আছে, আরেকটু ভেতরে প্রবেশ করে চারপাশটা দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন কোন পর্বতের গুহায় ঢুকে পড়েছি। ভেতরে ঢুকেই একদম সামনে উপরের দিকে দেখতে পেলাম কালী মায়ের রাগী একটি প্রতিমা। দেখেই মনে হচ্ছে কালী মা খুবই রেগে আছেন। মায়ের চারিদিকটা পুরো বরফে ঢাকা এবং সামনেও অনেক বরফ ঝুলে আছে। এই মন্ডপে চারিদিকটায় পুরো নীল রঙের আলোতে ভরিয়ে দিয়েছে। এই নীল রংটি এতটাই গাঢ় যে বোঝাই সম্ভব হচ্ছে না কালী মায়ের কি রংয়ের প্রতিমা করা হয়েছে।কালী মাকে এখানে দেখে আমার খুবই ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছে মা খুব রেগে উড়ে গিয়ে হাওয়ায় ভাসছে।

1000017316.jpg


1000017317.jpg



তবে এখানে পর্বতের কারুকার্য আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। পর্বতের পাথরগুলো দেখে আসল পাথরের মতনই মনে হচ্ছে। আর এই পর্বতের গায়ে শিব ঠাকুরের বিভিন্ন ধরনের মূর্তি কারুকার্য করা হয়েছে। কোথাও শিব ঠাকুর কে দেখা যাচ্ছে মাতা পার্বতীর সঙ্গে বসে আছেন। আবার কোথাও তাকে দেখা যাচ্ছে ধ্যানে মগ্ন। কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে মাতা পার্বতী শিবলিঙ্গ কে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। একটি মূর্তি দেখলাম যেখানে শিব ঠাকুর মাতা পার্বতী কে কোলে নিয়ে কান্না করছে। এমনই বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করা আছে এই পর্বতের গায়ে। এই মন্ডপের প্রতিটা মূর্তি এবং প্রতিটা স্থানে যেন শিব ঠাকুরের এক একটি কাহিনী প্রকাশ পায়। শিব ঠাকুরের এই কৈলাস পর্বতে এসে মনে হচ্ছে যেন অন্য একটি জগতে চলে এসেছে। এত সুন্দর করে কৈলাস পর্বত এখানে তুলে ধরেছে যে আমাদের মনে হচ্ছে আর একটু সময় থাকলে ভালো হতো। চারিদিকটা শুধু দেখেই যেতে ইচ্ছা করছিল। একটু সামনে এগিয়ে দেখি পুরোই সাদা বরফে ঢাকা এমন একটি জায়গায় শিবলিঙ্গ আছে এবং তার সামনে কালী মায়ের পূজো করা হয়েছে। কালী মা কে প্রণাম জানিয়ে চারিদিকটা আবারো একটু দেখে আমরা বেরিয়ে এলাম।

1000017318.jpg


1000017321.jpg


ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm



আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!