কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
একজন স্বামী স্ত্রী যখন প্রথম জানতে পারে যে তারা বাবা-মা হতে চলেছে তখন তাদের জীবনে আনন্দের ঠিকানা থাকেনা। তারপর কয়েক মাস পরে সে বাচ্চা যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে বাচ্চার মুখ দেখে বাবা মা যেন স্বর্গের সুখ খুঁজে পায়। তবে সেই বাচ্চা যদি হয় কন্যা সন্তান তবে সংসারে যেন অন্যরকম একটা সুখ ভরে যায় । পুরো বাড়ি ঝলমল করে সেই কন্যা সন্তানের আগমনের আনন্দে। বাবা-মা প্রতিনিয়ত অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সেই কন্যা সন্তানটিকে নিয়ে। ধীরে ধীরে অতি যত্ন সহকারে বড় করতে থাকে তার অতি যত্নের মেয়েটিকে। কখনো তার কোনো চাহিদা অপূরণ রাখে না আর কোন অভাব বুঝতে দেয় না। বাবা-মায়ের যতটুকু সামর্থ্য তার থেকেও অনেক বেশি কষ্ট করে তাদের মেয়েকে সুন্দর করে মানুষ করার চেষ্টা করে এবং আগলে রাখে। তেমনি একটি মেয়েও তার বাবা-মার সংসারের লক্ষ্মী হয়ে থাকে। সমস্ত কাজ নিজের হাতে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসে। বাবা মার যত্ন নেয় এছাড়াও পরিবারের সবার অনেক বেশি খেয়াল রাখে। সবার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে এবং সবাইকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এমনভাবেই যখন সে ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায় তখনই যেন সময় আসে তার বিদায়ের।
কিছু কিছু মেয়ে আছে যাদের বাবা-মা পড়াশোনা করিয়ে নিজে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে মেয়েকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তারপর বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। আবার কিছু কিছু বাবা-মা আছে যারা মেয়েদের পড়াশোনা এবং নিজে অর্থ উপার্জনের ব্যাপারে অতটাও গুরুত্ব দেয় না এবং একটি নির্দিষ্ট বয়স আসলেই তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে। তবে সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা যাই করুক না কেন বিয়ে করে তাদের শ্বশুর বাড়িতে যেতেই হবে। সারা জীবন বাপের বাড়িতে থাকা যাবে না। নির্দিষ্ট বয়সের পর বাবা-মা মেয়ের জন্য একটি সুপাত্র দেখা শুরু করে দেয়, আবার অনেকে আছে নিজের জন্য পাত্র নিজেই দেখে নিয়ে আসে অর্থাৎ আগে থেকে পরিচয় হয়ে ভালোবাসা হয় তারপর বাড়িতে বাবা মাকে সেই ছেলের কথা জানায়। তবে এক্ষেত্রে কোন কোন বাবা মা মেনে নেয় আবার কোন কোন বাবা-মা মেনে নেয় না। আসলে প্রতিটা বাবা মা চেষ্টা করে যেন তার সন্তান একটু ভালো জীবনসঙ্গী পায় এবং সারা জীবন সুখে শান্তিতে একসাথে থাকতে পারে। তাই তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে একটি ভালো ছেলে খোঁজার যেন তার মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিতে পারে। আসলে আমাদের সমাজে মানুষের এমন চিন্তাধারা যে একটি নির্দিষ্ট বয়স হলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তাকে পরের ঘরে পাঠাতেই হবে।
আর বাবা-মায়েরও এমন একটা আচরণ তৈরি হয়ে যায় যেন মেয়েরা তাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ে দিয়ে কন্যা দান করে বোঝা নামাতে পারলেই তাদের যেন শান্তি হয়। খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে একটি সুপাত্র পেয়ে গেলে তোর জোর করে শুরু করে দেয় সেই ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আয়োজন। বিবাহের সময় দেখা যায় যে বাবা তার কন্যাকে অন্য একটি ছেলের হাতে দান করে দেয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং মানুষের চিন্তাভাবনা এমনই হয়ে গেছে যে মেয়েদের একটি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ একটি পণ্যকেই দান করা যায় অর্থাৎ কাউকে দিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মানুষ হয়তো ভুলে যায় যে মেয়েরা কোন পণ্য নয় রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। তারা কোন দানের জিনিস নয়। তাই আমার মনে হয় এই দান করা ব্যাপারটা খুবই জঘন্য একটি কাজ। আর এই কন্যা দান করার জন্যই প্রতিটা মা-বাবা এমন মনে করে যে তার মেয়ে এখন থেকে পর হয়ে গেল। বাবা মার কাছে তার মেয়ে সারা জীবন তাদেরই মেয়ে হয়ে থাকে। বিয়ে দিলে কোন সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে না। তবুও আমাদের সমাজ এমন ব্যবহার করে যেন কন্যা দান করা হয়ে গেল মানেই মেয়ে পর হয়ে গেল। আর সেই বিবাহিত মেয়ের বাবা-মায়ের প্রতি কোনো অধিকার থাকে না। এবং তার বিপদেও পাশে থাকার সিদ্ধান্ত তার নিজস্ব হয় না।
বাবা মা কন্যা দান করার পর মেয়েদের জীবনটা এমন হয়ে পড়ে যে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যেন তার জীবনটা পুরোই চালনা করার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে। তারা যেভাবে চাইবে মেয়েরা সেভাবেই চলতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ বাবা মা যেমন পণ্য হিসেবে তাদের মেয়েকে দান করে দেয় অন্য একজনের কাছে তেমনই সে ছেলের পরিবারের কাছে এসে পণ্য হিসেবে সারা জীবন পরিচালিত হতে থাকে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা কখনো নিজের গুরুত্ব পায় না। আমার মতে মেয়েদের এই কন্যা দান করার নিয়মটা পুরোপুরি তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো কোন বাবা মার কাছে মনে হবে না যে তার মেয়ে এখন আর তার নেই পর হয়ে গেছে। আর কোন মেয়েরই মনে হবে না যে আমার এখন বাবা মার প্রতি আর অধিকার নেই এবং বাপের বাড়িতে আমি শুধুই মাত্র একজন অতিথি। আসলে কন্যাদান হলেই মেয়েরা কখনো পর হয়ে যায় না তাই আমাদের সমাজের প্রত্যেকের চিন্তাভাবনার পরিবর্তনের দরকার। আর কিছু কিছু অপ্রয়োজনীয় এবং কুসংস্কার অবশ্যই বর্জন করা উচিত যেসবের কারণে আমাদের সুখ শান্তি নষ্ট হতে পারে এবং আমাদের কাছের মানুষ দূরে সরে যেতে পারে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit