কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমাদের সমাজে সেই পুরনো যুগ থেকেই চলে আসছে মেয়েদের বিয়ের পর বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকার নিয়ম। অনেক পুরনো যুগে দেখা যেত মেয়েদের অনেক ছোটবেলাতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। আর এই বিয়ে হতো মেয়েদের অমতে এবং কিছুটা জোর করেই। কারণ যে বয়সে তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো সেই বয়সে বিয়ে জিনিসটা কি সেটা তারা ঠিকমতো বুঝতেই পারত না। কারণ তাদের তখন খেলাধুলা করার বয়স আর এরকম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। আর সেই কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে তারা ঠিকমতো সংসার কি জিনিস বুঝতে পারত না এবং কিছু কিছু সময়ে দেখা যেত যে তাদের বিবাহ জীবনের বিচ্ছেদ ঘটে যেত। আবার অনেক সময় দেখা যেত কোন দুর্ঘটনায় তাদের স্বামী মারা গেলে তাদের আবার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিত। আর কিছু কিছু সংসারে দেখা যেত মেয়েটি অল্প বয়স হওয়া সত্বেও অনেক বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। আর সেই কারণে বয়স্ক লোকটি মারা গেলে তার স্ত্রীকে আর শ্বশুর বাড়ি আশ্রয় দেওয়া হতো না। আর এইসব কারণেই সেই সব মেয়েদের ফিরে আসতে হতো বাপের বাড়ি। তবে সেই সমাজে বাপের বাড়ি ফিরে আসা এবং সেখানে স্থায়ী ভাবে থাকা যে কতটা কষ্টকর সেটা সেসব মেয়েরাই ভালোভাবে বুঝতে পারত।
কারণ আমাদের সমাজে এমন একটি ধারণা যে একবার মেয়েদের বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে গেলে আর বাপের বাড়ি ফিরে আসতে নেই। বাপের বাড়িতে জন্ম হলেও শ্বশুরবাড়িতেই মৃত্যু হওয়া আবশ্যক। আর সেই মৃত্যুটা যদি খুব কষ্টের হয় শ্বশুরবাড়ির কঠোর অত্যাচারে মেয়েদের মৃত্যু হয় তবুও যেন কোন সমস্যাই থাকে না। শশুর বাড়ি যতটাই কষ্ট হোক না কেন বা নির্যাতিত হতে হোক না কেন সেই মেয়েটি যেন বাপের বাড়ি আসার অধিকারই হারিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু মেয়েরা আছে যারা খুবই সাহসী এবং প্রতিবাদী হয়। যারা শশুর বাড়ির এসব কষ্ট সহ্য না করে বাপের বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু বাপের বাড়িতে আসার পরে এসব মেয়েদের কপালে থাকে আরও অনেক কষ্ট। কারণ আমাদের আশেপাশের সমাজ কখনোই মেনে নিতে পারে না, বা স্বাভাবিকভাবে এটা দেখতেই পারে না যে বিয়ের পরও একটা মেয়ে বাপের বাড়ি এসে থাকছে। তাই তাকে প্রতিনিয়ত কটু কথার সম্মুখীন হতে হয়। সমাজে চলতে ফিরতে রাস্তায় বেরোলেই তাকে শুনতে হয় যে সে শশুর বাড়ির সংসার করতে পারল না। কারণ সে নাকি অপয়া অথবা সে সংসারী নয়, তার চলাফেরা মোটেও ভালো নয়, আর অনেক সময় এমনও বলতে শোনা যায় যে যারা বিয়ের পর বাপের বাড়িতে এসে থাকে তাদের নাকি চরিত্র ভালো হয় না।
এরকম বিভিন্ন সব কটুক্তি শুনতে শুনতে মেয়েটির মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে কিন্তু সমাজের মানুষ বলতে বলতে ক্লান্ত হয় না। আসলে এই সমাজের মানুষ বুঝতে চায় না যে যারা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে এসে বাপের বাড়িতে থাকে তারা কতটা কষ্ট পেয়ে শশুর বাড়ি ছাড়ে। একটি মেয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যে তার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকার জন্য। কিন্তু কিছু কিছু মেয়েদের কপাল এতটাই খারাপ হয় যে তারা শশুর বাড়িতে না পায় ভালোবাসা আর না পায় সম্মান। তবু কিছু কিছু মেয়েরা এমন আছে সব মুখ বুজে সহ্য করে সংসার করতে থাকে তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আর যারা বাপের বাড়িতে থাকে তাদের যে শুধু সমাজের মানুষের কটুক্তি সহ্য করতে হয় এমনটা নয়।বাপের বাড়ির মানুষেরা ও কথা শোনাতে পিছুপা হয় না। আর যদি মেয়েটা কিছু অর্থ উপার্জন করে সক্ষম না হয় তাহলে তো তার পরিবারের লোকের কাছ থেকেও অনেক বেশি খোঁটা এবং কষ্টকর কথা শুনতে হয়। তবে এমনটা নয় যে যারা অর্থ উপার্জন করে নিজের খরচ নিজে চালায় বা নিজের সন্তানের নিজেই দেখাশোনা করে তাদের সমাজের লোকের বা পরিবারের লোকের কথা শুনতে হয় না এমনটা নয়। আসলে বিয়ের পরে বাপের বাড়ি থাকা মানেই বাপের বাড়ির উপর যেন বোঝা হয়ে যাওয়া।
আসলে বিয়ের পরে শশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি আসলে প্রত্যেকটা মেয়েরই কম বেশি কথা শুনতেই হবে যা খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। তবে বর্তমান সমাজে যেহেতু মানুষের চিন্তা ভাবনা একটু আধুনিক হয়েছে তাই এখন তুলনামূলক সমাজের কটুক্তি কম শুনতে পাওয়া যায়। এবং যেসব শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের উপর অত্যাচার করা হয় কিছু কিছু বাবা মা আছে তারা নিজেরাই তাদের মেয়েদের ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এবং তাদেরকে নতুন করে ভালোভাবে বাঁচার জন্য মনে সাহস যোগায়। আসলে আমাদের প্রত্যেকের উচিত মানুষের মনের পরিস্থিতি বুঝে তাদের সাথে কথা বলা। একটা মেয়ে যখন নির্যাতিত ও অবহেলিত হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে আসে তখন সে খুবই অসহায় অবস্থায় থাকে আর তার উপর যদি পারিপার্শ্বিক সমাজের কটুক্তি এবং নিজের পরিবারের অর্থাৎ বাপের বাড়ির অবহেলা সহ্য করতে হয় তাহলে সেই মেয়েটির বেঁচে থাকার আশাই ফুরিয়ে যায়। তাই পাশে থেকে তাকে সাপোর্ট করা এবং তাকে নতুন করে বাঁচার জন্য সাহস দেওয়া উচিত। কারণ মানুষের একটা খারাপ কথাই একটা জীবনকে নষ্ট করে বা শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সঠিক কথা বলেছেন, এই কথাটি কথাটা কষ্টদায়ক সেটা কেবলমাত্র সেই জানে যে মেয়েটি অধিক কষ্ট সহ্য করে নিজের বাপের বাড়িতে এসেও এরকম কথা শুনেছে। আসলে মেয়েদের জীবনটা সত্যিকার অর্থেই অদ্ভুত। ওই যে বললেন না জন্ম বাপের বাড়িতে হলেও মৃত্যু স্বামীর বাড়িতেই হতে হবে। সত্যিই একটা মেয়ে যখন বিবাহিত হয়ে যায় যদি শ্বশুরবাড়ি আদর্শ না হয় তাহলে সেই মেয়েটির জীবন নরকে পরিণত হয়। যাইহোক এরকম পরিবেশ যেন কোন মেয়ের জীবনে তৈরি না হয়। সমাজের বাস্তবধর্মী কিছু কথা তুলে ধরেছেন,ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর কিছু বাস্তব কথা লিখেছেন দিদি।আসলে মেয়েদের জীবনটা ভয়ানক কষ্টের।আগের দিনে মেয়েদের ছোটবেলায় বিয়ে দিতো এবং যৌবনে পা দিতে না দিতেই সে মেয়েটি বেশি ভাগ বিধবা হয়ে যেতো আর তখন তার আর শ্বশুর বাড়িতে জায়গা হতো না বাপের বাড়িতে কষ্ট সহ্য করে থাকতে হতো কটুকথা শুনতে হতো মুখ বুজে।ধন্যবাদ সত্যি কথা গুলো তুলে ধরে আজকের পোস্ট টি সাজিয়ে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে বিয়ের পর মেয়েরা বাপের বাড়ির কাছে অনেকটা পর হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়িটাই তাদের আসল বাড়ি হয়ে ওঠে। আর সেই জন্য তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে থাকবার চেষ্টা করে। আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে এই এক চিরাচরিত ধারা। আপনি সেই ইতিহাসটা খুব সুন্দর করে পোষ্টের মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit