নমস্কার, এবছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমী থেকে অষ্টমী কেটে গেছে এক এক জায়গায়। আর নবমী কেটেছে ট্রেনে। বিস্তারিত ভাবে পরে সব নিয়ে লিখব।
এবছর বাড়িতে না থাকাই বহরমপুরের দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল ও মাতৃ প্রতিমা দর্শন করা হয়নি তাই আজ দুপুরেই বেরিয়ে পড়লাম প্রতিমা দর্শন করতে। পৌনে বারোটা নাগাদ আমি আর আমার স্ত্রীর দুজনে মিলে স্কুটিতে করে বেরিয়ে পড়লাম ঠাকুর দেখতে। বহরমপুরের কিছু নামকরা ঠাকুর দেখাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। তাই প্রথমেই চলে গেলাম বাবুলবোনা রোড সার্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রতিমা ও প্যান্ডেল দর্শন করতে। থিম পুজো ও অসাধারণ প্রতিমার জন্য এই পুজো বিখ্যাত। এবার এখানকার থিম ছিল মিশর।
প্রতিমা ও প্যান্ডেল দেখে সেখানে করে বেরিয়ে পড়লাম অজানা সংঘের উদ্দেশ্যে। এখানে প্যান্ডেল নির্মিত হয়েছে কাঁসা-পিতল দিয়ে। প্যান্ডেলটি এক কথায় অসাধারণ হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আমরা চলে এলাম বিষ্ণুপুর আমরা কজন ক্লাবের প্রতিমা ও প্যান্ডেল দর্শন করতে। এখানে ৭০ ফুটের মাতৃ প্রতিমা নির্মিত হয়েছে। প্রতিমার সাথে সাজুজ্য রেখে প্যান্ডেলটিও হয়েছে প্রকাণ্ড। এত বড় প্রতিমা দেখে সবাই অভিভূত হয়ে গেছে। শিল্পীর কাজ এক কথায় অনন্য।
এরপর আমরা চলে এলাম কাশিমবাজার ভাটপাড়ার মাতৃ প্রতিমা দর্শন করতে। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের আদলে মাতৃমন্দির। সাথে তুলে ধরা হয়েছে দশাশ্বমেধ ঘাট।
সেখান থেকে এবার আমাদের গন্তব্যস্থল চুনাখালী মোড়ের মাতৃ মন্দির দর্শন। এখানে রাজস্থানের শিষ মহলের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে পুজা প্যান্ডেলটি। মন্দিরের ভেতরে কাঁচ দিয়ে সাজানো হয়েছে। এক কথায় অনবদ্য, চোখ ধাঁধানো হাতের কাজ শিল্পীর। প্রতিমাটি রাজস্থানী আদলে তৈরি। এবছর মন্দিরের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় এই পুজো কমিটি সবাইকে টেক্কা দিয়েছে। কিছু ছবি তুলে ধরলাম যেগুলো দেখলে আপনারা সহজে অনুমান করতে পারবেন এখানে কি সুন্দর ভাবে শিষ মহল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এরপর আমরা চলে এলাম বানজেটিয়া সার্বজনীন পুজা কমিটির পূজা দেখতে। যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বৃন্দাবনের প্রেম মন্দিরে আদলে পূজা প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের চারদিকে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি, তুলে ধরা হয়েছে কৃষ্ণের নানান লীলার চিত্র।
এরপর দেখলাম কাশিমবাজার বারোয়ারীতলার পুজা প্যান্ডেল ও প্রতিমা। পুরীর মন্দিরের আদলে এখানে প্যান্ডেল করা হয়েছে। দুর্গা ঠাকুরটি হয়েছে কৃষ্ণের আদলে।
বানজেটিয়ার ঠাকুর দেখে আমরা চলে এলাম কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির প্রতিমা দর্শন করতে। ঐতিহাসিক রাজবাড়ীতে প্রতিবছর সুন্দর করে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহযোগে দুর্গাপুজো করা হয়। রাজবাড়ী সদস্যরা এই পুজোর সময় সকল ব্যস্ততা ছেড়ে এখানে সমবেত হন। যে যেখানেই থাকুক তারা এসে পৌঁছায় এই রাজবাড়ীতে। বিখ্যাত সুগার এন্ড স্পাইস কোম্পানির মালিক এই রাজবাড়ীর মহারানী তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন এই কোম্পানিটিকে, রাজ্যের নানা শহরে এদের দোকান রয়েছে।
এরপর খাগড়া দয়ানগরের মাতৃ মন্দির দর্শন করলাম। এখানে মাটির ভাড় দিয়ে মনিষীদের ছবি তুলে ধরা হয়েছে প্যান্ডেলের গায়ে।
এরপর আমরা এলাম খাগড়া বাবু পাড়ার পুজো দেখতে। এখানে পাট ও চট দিয়ে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। অতি সুন্দর এই প্যান্ডেলটি পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার করুণ আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে সবার অলক্ষ্যে।
তারপর এলাম খাগড়া ভট্টাচার্য পাড়ার পুজো দেখতে। এখানে জমিদার বাড়ির আদলে প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে।
তারপর আমরা এলাম বহরমপুর পুরনো কান্দি বাস স্ট্যান্ড মোড়ের পুজো দেখতে। এখানে কেদারনাথ মন্দির তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
এরপর চলে এলাম অযোধ্যানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পূজা প্যান্ডেলের সামনে। এখানে দিল্লির লক্ষী নারায়ণ মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।
এরপর আমরা এলাম হরিদাসমাটি শিল্পী সংঘের মাতৃ প্রতিমা দর্শন করতে। এখানে হাম্পির বিখ্যাত রথের আদলে প্যান্ডেল নির্মিত হয়েছে।
এখান থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ বৃষ্টি এলো। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিলাম রাস্তার ধারের এক দোকানে। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অবশেষে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো। বহরমপুরের বহু প্যান্ডেল ও মাতৃ প্রতিমা দর্শন করা সম্ভব হল না সময়ের অভাবে। কারণ অনেক জায়গাতেই মাতৃ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়েছে। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে ভিড় জমতে শুরু করেছে। একে একে চলে আসছে মাতৃ প্রতিমা। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলাম, কারণ আমাকেও যেতে হবে পাড়ার মন্দিরে মা কে শেষ বার দেখার জন্য। আবার এক বছরের অপেক্ষার পর মা আসবেন আমাদের মাঝে।
সকলে ভালো থাকবেন এবং সকলকে ভালো রাখবেন। সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।