নমস্কার। ফটোগ্রাফি, ট্রাভেল পোস্টের পর এবার আমি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
কলকাতার এক নামি হাসপাতাল রবীন্দ্রনাথ টেগর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সাইন্সেস, যা সাধারণভাবে লোকমুখে আরএন টেগোর নামে পরিচিত। এই হাসপাতাল 'দেবী শেঠীর হাসপাতাল' (ব্যাঙ্গালোরের বিখ্যাত ডাক্তার) নামেও লোকমুখে প্রসিদ্ধ। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতার বিখ্যাত কার্ডিও সার্জেন্ট ডাক্তার কুনাল সরকার এই হাসপাতালেই আমার বাবার বাইপাস সার্জারি করেন। পরবর্তী কালে তিনি এই হাসপাতাল ছেড়ে অন্য একটি হাসপাতালে চলে যান। ডাক্তার কুনাল সরকারকে আপনারা অনেকেই টিভির পর্দায় বিভিন্ন চিকিৎসা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে ও নানান বিতর্ক সভামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখেন।
অপারেশনের পর থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে বছরে দুবার বাবাকে চেকআপে যেতে হয়। প্রথম প্রথম দাদা বাবাকে নিয়ে যেত কিন্তু পরবর্তী সময়ে দাদার ব্যস্ততার কারণে সে দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ওপর। বিগত কয়েক বছর ধরে আমিই এই দায়িত্বভার বহন করছি নিষ্ঠার সাথে। শুধুমাত্র 2020 সালে করোনার জন্য বছরে একবারই বাবাকে চেক আপে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়ে ছিলাম। হাসপাতালে গিয়ে প্রথম প্রথম কিছু অসুবিধা হলেও এখন আর কোনো অসুবিধা হয় না।
ডাক্তার কুনাল সরকার না থাকায় বাবার চেক আপ করে থাকেন ডাক্তার পঙ্কজ সিং। ডাক্তারবাবু ব্যবহার এক কথায় বলা যায় অমায়িক। পশ্চিম বাংলা, পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার ও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য রোগী প্রত্যহ ডাক্তার দেখাতে আসেন। হার্টের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে অন্যান্য অনেক বিভাগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে আগত রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হাসপাতালে এভাবেই লেগে থাকে রোগীর আনাগোনা।
এবছরের নির্ধারিত দ্বিতীয় চেক আপ করাতে বাবাকে নিয়ে গত মাসের 31 তারিখ কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কলকাতায় মামার বাড়ি থেকে পরদিন ভোর বেলা ট্রেন করে প্রথমে রওনা দি শিয়ালদহ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে সাউথ লাইনের নামখানা লোকাল ধরে পৌঁছে যাই যাদবপুর স্টেশনে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আমরা চলে আসি সুকান্ত সেতুর ওপরে। এখান থেকেই মুকুন্দপুরে অবস্থিত এই হাসপাতালে যাওয়ার বাস ও অটো পাওয়া যায়। আমরা মূলত অটোতেই হাসপাতালে যাতায়াত করি খুব দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য। তাই প্রতিবারের মতো এবারেও দুজনে অটো ধরে হাসপাতালে পৌঁছে যাই।
হাসপাতালে পৌঁছে ঘড়িতে তখন সবে সকাল ৭.১০ এ। এবার হাসপাতালের নিয়ম মেনে আমি টোকেন নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পরি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যথারীতি সকাল ৭.৩০ এ টোকেন দেওয়া শুরু হয়। আমি নয় নম্বর টোকেন পাই। এরপর সকাল ৭.৪৫ নাগাদ একটি কাউন্টার খোলা হয়, যদিও ৮ টার মধ্যেই একে একে ৬ টি কাউন্টারই খুলে দেওয়া হয়। যারা প্রথমবার এখানে ডাক্তার দেখাতে আসেন তারা কাউন্টার থেকে নতুনদের নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফর্ম জমা করে থাকেন।
কিছুক্ষণ পরেই ইলেকট্রিক বোর্ডে আমাদের টোকেন নম্বর ভেসে ওঠে এবং আমরা তিন নম্বর কাউন্টারে চেক আপের বিল জমা দি। তারপর চলে যাই রক্ত পরীক্ষা করানোর নির্দিষ্ট বিল্ডিংএ। সেখানে গিয়ে বিলটি দেখিয়ে টোকেন নিলে বাবা রক্ত পরীক্ষার জন্য ভেতরে প্রবেশ করে। আমি কিছুক্ষণ বাইরে বসার নির্দিষ্ট জায়গায় বসে অপেক্ষা করতে থাকি। কিছুক্ষণ পরে বাবা ওখান থেকে বেরিয়ে আসে এবং আমরা দুজনে মিলে চা খাওয়ার জন্য হাসপাতালের পাশের একটি দোকানে যাই। সেখানে চা-বিস্কুট খাওয়ার পর আমরা আবার হাসপাতালে এসে বসি। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর সকাল সাড়ে নটা নাগাদ হাসপাতালের উল্টো দিকের দাদা-বৌদির হোটেলের বাম পাশের দোকানে যাই সকালের ব্রেক ফাস্ট করতে। এখানে সব রকম খাবার গুণ-মানে ভালো হলেও দাম তুলনামূলক ভাবে খুব একটা বেশি না। আমি তিনটে রুটি খাই চানাছোলার তরকারি দিয়ে ও বাবার জন্য মিক্স ভেজ নি। আমরা প্রতিবারই এই দোকানে খাই। টিফিনের জন্য হাত রুটি ছাড়াও এখানে পরোটা এবং নানা রকম সব্জি, ডাল পাওয়া যায়।
যাদবপুর স্টেশন, দূরে দেখা যাচ্ছে সুকান্ত সেতু।
সকালের টিফিন করে নেওয়ার বাবাকে নিয়ে ইসিজি রুমে যাই। সেখানে প্রথমে লাইন দিয়ে ইসিজি করানোর সিরিয়াল নাম্বার নেওয়া হয়। তারপর সেখানে বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাবার সিরিয়াল নাম্বার ধরে ডাকা হয় এবং বাবা ইসিজি করাতে ঢোকে। ইসিজি করার পর ইসিজি রুমের বাইরে বসে সময় কাটাতে থাকি। ইএসজি রিপোর্ট সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া গেলেও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তিন ঘন্টা। তাই আমরা ওখানে বসে অপেক্ষা করতে থাকি। বসে থাকার মাঝে বাবা ব্লাড প্রেসার, ওজন, পাল্স মেনে নেয় অপর একটি ঘরে গিয়ে। সেখানে গিয়েও টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।
পরীক্ষার জন্য বাবার রক্ত নেওয়া হয় সাড়ে আটটা নাগাদ। তাই সাড়ে এগারোটার পর ডাক্তার পঙ্কজ সিং এর কাউন্টারে খোঁজ নিতে যাই রিপোর্ট এসেছে কিনা। জানতে পারি ততক্ষণে রিপোর্ট সেখানে চলে এসেছে। ওনারা কম্পিউটার দেখে সেই প্রিন্ট আউট করে আমাকে দেন, সাথে জানান ডাক্তারবাবু রাউন্ডে গেছেন। এই সুযোগে আমরা দুপুর ১ নাগাদ লাঞ্চ করতে চলে যাই দাদা-বৌদির হোটেলে। সেখানে নিরামিষ - আমিষসহ নানান রকম পদের খাবার পাওয়া যায়। তবে মাছের ভ্যারাইটি অনেক। রয়েছে ইলিস, পাবদা, রুই, কাতলা, চিংড়ি সহ নানা রকম মাছের পদ। আমরা দুই প্লেট ভাতের অর্ডার দি। মাছ হিসেবে বেছে নি দেশী কাতলা। তাতে জন প্রতি খরচ হয় একশো কুড়ি টাকা।
এরপর চলে আসি ডাক্তারের চেম্বারের কাছে। ফাইল জমা দিলে রিসেপসনিস্ট ডাক্তারের ঘরের সামনে দাঁড়াতে বলেন। ওখানে গিয়ে দেখি একজন রোগী ভিতরে আছেন আর আমাদের আগে আছেন আরো এক রোগী। তারপর মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পর আমরা ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করি। ডাক্তারবাবু প্রথমে টেথোস্কোপ দিয়ে বাবাকে একবার পরীক্ষা করেন তারপর সকল রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হন। এরপর প্রেসক্রিপশনে ওষুধ ও পরের চক আপের পরীক্ষা গুলি লিখে দেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ডাক্তার দেখানোর আগে হাসপাতালের হেল্প লাইনে ফোন করে ডাক্তার দেখানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে আসতে হয়। যারা আমাদের মতো দূর থেকে নির্দিষ্ট ডাক্তারকে দেখাতে আসবেন তারা অবশ্যই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসবেন।
এরপর হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে দুপুর দুটো নাগাদ অটো ধরে রওনা দি যাদবপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছে যাই মামা বাড়িতে।
ফেরার পথে যাদবপুর স্টেশন
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এই হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন, আশা করি তাদের কিছুটা বাড়তি তথ্য প্রদান করবে আমার এই পোষ্টটি। আশাকরি অনেকে উপকৃত হবেন। সকলে ভালো থাকবেন।
দাদা ধন্যবাদ। দারুন ইনফরমেটিভ একটি পোস্ট ছিল।কাউকে কখনো নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়লে অনেক কাজে লাগবে।এপার বংলায়ও দেবি শেঠি যথেষ্ট পরিচিত।ধন্যবাদ দাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি এই কারণেই লেখাটি পোষ্ট করলাম। যাতে অনেকের সুবিধা হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা খুব ভালো কাজ করেছ। এইভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর ডিটেইলস লিখে দিলে মানুষের অনেক সুবিধা হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই। আমি চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব ডিটেইল দেওয়ার।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit