প্রথমবার বাড়ির দুর্গাপুজোর সাক্ষী হলাম : শেষ পর্ব (১০% বেনিফিসারি @shy-fox এর জন্য বরাদ্দ।)

in hive-129948 •  2 years ago 

নমস্কার, আমি দেবাদিত্য ভাদুড়ী (@pap3), আশাকরি সকালে ভালো আছেন। আমি কিছুদিন আগে প্রথমবার বাড়ির দুর্গাপুজো দেখার অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে ভাগ করেছিলাম। আজ দ্বিতীয় তথা শেষ পর্বে আরো একটি বাড়ির দুর্গাপুজোর অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। প্রথমটি ছিল আমার মাসি শাশুড়ির বাড়ির আর দ্বিতীয়টি আমার স্ত্রীর দাদু বাড়ির পৈত্রিক দুর্গাপুজোর অভিজ্ঞতা।

IMG_20221003_145049.jpg

বংশ পরম্পরায় প্রায় দুশো বছর ধরে এই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর ব্লকের শিবানীপুর গ্রামে। শিবানীপুরের এই পাড়ায় সবাই সবার আত্মীয়। সবাই একই বংশের হওয়ায় তাদের পাড়ার নাম হয়েছে ব্যানার্জি পাড়া। গোটা গ্রামের ঠিক মাঝখানে দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরে প্রতি বছর দুর্গাপুজো ছাড়াও কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এই বৎসর দুর্গাপুজো ১৮৭ বৎসরে পদার্পণ করেছে।

IMG_20221003_160536.jpg

অষ্টমীর দিন দুপুরবেলা মাসির বাড়িতে অঞ্জলি দিয়ে আমরা বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম দাদু বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথে বৃষ্টির বেগ আরও বাড়তে থাকলো তবুও সে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমাদের টোটো এগিয়ে চলল শিবানীপুরের উদ্দেশ্যে। দূরত্ব যদিও বেশি নয় মাত্র কয়েক কিলোমিটার তবুও ভারী বৃষ্টির মধ্যে সে পথ পেরিয়ে আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। মন্দিরের সামনে এসেও টোটো থেকে নামতে পারছিলাম না বৃষ্টির জন্য। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও কূলকূল করে প্রচুর জল বয়ে যাচ্ছিল মন্দিরের সামনে দিয়ে। কিছুক্ষণ পরে সেই জল ডিঙিয়ে আমরা উঠলাম ছোটো মামার ঘরে।

দশমীর দিন দুপুরে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর মায়ের কাঠামো তুলে রাখা হয় মন্দিরের বেদীতে। প্রতি বছর রথযাত্রার দিন নদী থেকে মাটি তুলে নতুন ভাবে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। তারপর দেবীপক্ষে মায়ের চোখ আঁকা হয়। ষষ্ঠী তিথিতে মায়ের বোধন হয়। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি বাড়ির পুজোতে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিপদেও বোধন হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে ভোর বেলায় পুজো শুরু হয়। অষ্টমী ও নবমীতে পাঁঠাবলী হয়। নবমীর দিন পাঁঠাবলি ছাড়াও আঁখ, আদা, চাল কুমড়ো বলি হয়। এবছর অষ্টমীতে একটি ও নবমীতে দুটো পাঁঠা বলি হয়েছে। নবমীতে দুর্গা মায়ের কাছে বলির আগে গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো ও বলি দেওয়ার রীতি আছে। অষ্টমীর দিন দুপুরে ব্যানার্জি পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয়সহ প্রায় তিন শতাধিক মানুষ মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করে। নবমীর দিন এই সংখ্যাটা সাতশো ছাড়িয়ে যায়। এবছর নবমীর দিন প্রায় আটশো মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করেছে।

আমরা যখন মামা বাড়িতে পৌঁছালাম তখন অষ্টমীর পুজো সম্পন্ন হয়েছে ও সন্ধিপুজোর প্রস্তুতি চলছে। তাই দিদার হাতের সরবত ও মিষ্টি খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম সন্ধিপুজো শুরু হওয়ার। অবশ্য পুজো শুরুর আগে মধ্যাহ্নভোজ সারতে ভুল করিনি। মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে মধ্যাহ্নভোজে মায়ের ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল। ভোগ খেয়ে দিদার ঘরে একটু রেস্ট নিতে নিতেই ডাক পরলো সন্ধিপুজো দেখার জন্য।

IMG_20221003_160550.jpg
সন্ধিপুজো চলছে।

সন্ধিপুজো দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। গত পাঁচ বছর দুর্গাপুজো করলেও সন্ধিপুজো আমি কখনো করিনি। নবমী ও দশমীর সন্ধিক্ষণে মাত্র ৪৮ মিনিটের মধ্যে মায়ের চামুন্ডা রূপের পুজো করা হয়। এই সময় মায়ের রূপ চেয়ে দেখার মতো। সন্ধিপুজোতেও বলির নিয়ম আছে। এই সময় ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে মাকে নিবেদন করা হয়।

IMG_20221003_154233.jpg

সন্ধিপুজো দেখে ঘরে ফিরে মাসি-মেসো, শালীদের সাথে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শুরু হল মায়ের সন্ধ্যা আরতি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আরতি হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো। ব্যানার্জি পরিবারের সদস্যরাই নাচ, গান, কবিতা পরিবেশন করলো। সবশেষে হল আমার স্ত্রী গানের অনুষ্ঠান। শ্যামা সংগীত, ভক্তিগীতি, আধুনিক মিলিয়ে অনেকগুলি গান করার পর যখন অনুষ্ঠান শেষ হলো ঘড়িতে তখন বাজে পৌঁনে বারোটা। এরপর দিদার ঘরে এসে পরোটা, ফুল কপি, মিষ্টি সহযোগে হল রাতের খাওয়া।

IMG_20221003_230353.jpg

IMG_20221003_230407.jpg

পরদিন ভোর পাঁচটায় যথারীতি পুজো শুরু হল। তারপর সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের কাছে বলির পর দুর্গা মায়ের এখানেও পাঁঠাবলি হল। বলির পর শুরু হল বাড়ির সদস্যদের নাচ ও কাদায় গড়াগড়ি দেওয়া।

IMG_20221004_100303.jpg
চলছে বলির প্রস্তুতি

দেখতে দেখতে সময় হয়ে এল আমাদের বাড়ি ফেরার। থাকার উপায় নেই, বিশেষ কারণে বাড়ি ফিরতে হবে নবমীতেই। তাই আমরা সকাল এগারোটায় টিফিন খেয়ে তৈরি হয়ে মামার গাড়িতে করে রওনা দিলাম তারকেশ্বর স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে দুইবার ট্রেন বদলে বহরমপুরের বাড়িতে যখন পৌঁছালাম তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা। সত্যি এক অসাধারণ স্মৃতি নিয়ে ফিরলাম। বাড়ির দুর্গোৎসবের যে কত আনন্দ তা না দেখলে অনুভব করা যায় না। আমিও কখনো ভাবিনি এমন আনন্দের ভাগিদার হতে পারব।

IMG_20221003_225735.jpg

ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

ক্যামেরা
ফটোগ্রাফার
লোকেশন
ভিভো জেড ১ প্রো
@pap3
শিবানীপুর, উদয়নারায়ণপুর

Banner(1).png

৩ রা নভেম্বর‚ ২০২২‚ বৃহস্পতিবার

Heroism_Second.png

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!