দ্বান্দ্বিক ক্যানভাস | জীবনবোধের কবিতা | পারভেজ আনোয়ার

in hive-129948 •  last year 

Burning Roses_Dwandwik Canvas.gif

আমি যখন বেঁচে ছিলাম,
​ ​ ​ ​ মিথ্যে বলবো না,
আমাকে ১ অনাত্মীয় তরুণীর কাছে বেচেছিলাম…

রাতের পাথর মুহূর্ত
মূর্তিমান মৃত্যুর মত শাসিয়ে বলতো –
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হতভাগা, তোর জীবনে
রাত পেরোনো ভোর না আসা'ই উচিৎ,
​ ​ ​ ​ হয়েছিল’ও তাই;
আমি রাতের আঁধারে র’য়ে গেলাম।

সোয়া ১ কিলোমিটার
​ ​ ​ ​ মনে হয় এক আলোকবর্ষ পথ;
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ৯ মিঃমিঃ’র শীতল ট্রিগারে
​ ​ ​ ​ বার বার তর্জনী পৌছে যায়,
কি যেন পাই আর কি যেন হারাই
সংখ্যারেখার শূন্য বিন্দুতে…

কার অভিশাপে কে জানে
​ ​ ​ ​ পিতা বলে দূর হয়ে যা…!
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মাতা বলে, আমার দোয়া
তোকে ফেরেশতার মতো পাহারা দেবে;
​ ​ ​ ​ অথচ আমি শুধুই বন্ধন ছিন্ন করি,
যেন এছাড়া আর কিছু শিখিনি…

যে হাতে অবৈধ অস্ত্র ওঠে,
​ ​ ​ ​ সে হাত আমার নয়…কিভাবে?
অগণন জনগণের ভীড়ে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ নিজেকে অনুর্বর মনে হয়,
​ ​ ​ ​ না হয় কিচ্ছু ফলবে না ​ আর এ জমিনে,
প্রচেষ্টা’ও কি তবে অর্থহীন !

কত কথা'ই যে এই ঝলসি অন্তর
​ ​ ​ ​ কত সপ্তবরণী সুরই যে ভ্রমর চোখ
ব’লে ব’লে যায়, গেয়ে গেয়ে যায়
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তার সবটুকু কাউকে শোনানো
দিনে দিনে অশোভন হয়ে প'ড়ছে…

আগামীহীন এ জীবনযাপন
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শুধুই কী তবে কালক্ষয়?
আসলে আমি কী আঁধার কালো ঘর…!
​ ​ ​ ​ আলো নেই বলে অমূল্য দ্রব্যাদির
প্রয়োজনও বুঝি ফুরিয়েছে…

পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে –
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমিই বারুদ, আমিই আগুন…
​ ​ ​ ​ সর্ব্বোচ্চ সংকুচিত হই
যখন দেখি কেউ কেউ অনিবার্য হয়ে ওঠে,
আত্ম-অহংকার আত্মদন্ডে পরিনত হয়…

কোনো না কোনো ক্ষেত্রে
নিজেকেই অনিবার্য ও অনির্ভরশীলভাবে
​ ​ ​ ​ আত্মপক্ষ সমর্থন ক’রতে হয়…
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কিন্তু নিজেকে নিজে
​ ​ ​ ​ কোনোভাবেই ক্ষমা করতে না পারা
বুঝি সব যাতনার উর্ধ্বে…

চড়া দ্রব্যমূল্য, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ
কিভাবে যে জীবনকে খেয়ে ফেলেছে !
​ ​ ​ ​ জানি’নে কেন এমন হয়…!
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কী হয়েছিল এ জীবনের?
জানি’নে এ জীবন নিয়ে কী হবে…! প্রশ্ন আজনম…!

জীবনানন্দের কথাটা মনে
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অসহ্য পীড়ন সৃষ্টি করে –
​ ​ ​ ​ “ঘাসের উপর দিয়ে উড়ে যায় সবুজ বাতাস,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অথবা সবুজ বুঝি ঘাস” –
আমার অসুখটা’ও এ’রকম…

শব্দ আর সত্য একাকার হয়,
​ ​ ​ ​ মৃত্যু মিথ্যে হয়ে যায়;
সহস্র গুণী এবং দোষী ব্যক্তিবর্গের
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অমর কর্ম দেখে শুনে
​ ​ ​ ​ বোধ হয় আমি ক্রমাগত
অতীতে আত্মপ্রবেশ ক’রছি…

অতলান্তিক অতীতের
​ ​ ​ ​ হীরকোজ্জ্বল দিনে সূর্য-গ্রহণ নেই;
আমার জীবনের বিগত ১ দিনে,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ১ বছরে মৃত্যু নেই,
​ ​ ​ ​ মৃত্যুহীন অতীতে
রক্তমাংসহীন আমি আছি, ক্ষুধা নেই…

যাহোক, আমি যখন বেঁচে ছিলাম,
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মিথ্যে বলবো না,
আমাকে ১ অনাত্মীয় তরুণীর কাছে বেচেছিলাম…
​ ​ ​ ​ কারণ, আফসোস…!
এছাড়া আমি আর কিছুই শিখিনি…!



কৈফিয়তঃ
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আমাদের প্রত্যেকের জীবন এক একটি দ্বান্দ্বিক ক্যানভাস যার আংশিকাঞ্চল বিমূর্ত ‘ব্যক্তিগত’ ব্রাশ-স্ট্রোকে এবং অত্যাধিকাংশই স্বতঃস্ফুর্তভাবে এর ‘নিজস্ব’ নক্‌শা সম্বলিত… এর বাইরে কিছু অংশ আমৃত্যু থেকে যায় অস্পর্শী… সেটুকুই প্রকৃত, সেটুকুই পরম… আমাদের ঠিক যে যে কাজগুলো সময় থাকতেই করা উচিত তা করতে আমরা বড্ড দেরী করে ফেলি… অনেক ধরনের অব্যক্ত কথা আমরা শুধু মনে মনে উচ্চারণ করি, এখানে তা কোনো দূর্বল মুহূর্তে প্রকাশ হয়ে গেলো, এই আর কি…

​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ কোনো প্রকার নেতিবাচকতায় কাউকে আবৃত করা প্রচ্ছন্ন ভাবেও আমার অভিপ্রায় নয়, এখানে যা উল্লেখিত হয়েছে সেটা অস্থিতিশীল সমাজের ব্যক্তিক কার্যক্রম; কোথাও কোনোভাবে এর অনাকাঙ্খিত প্রভাব পড়ুক সেটা’ও কাম্য নয়। আত্মমগ্নতায় ভোগ-বিলাসী পরার্থপরতাহীন পার্থিব জীবনকে এখানে অনাত্মীয় তরুণী হিসেবে প্রতিভাত করা ব্যতীত আমার আর কোনো উপায় ছিল না, ইচ্ছে’ও হয়নি। এ মহামায়া’র এমনই কড়া যৌবন-মদির স্বাদ, যিনি এর হাতে ধৃত না হয়েছেন, তিনি কোনোক্রমেই এর অভাবনীয় আকর্ষণ ও সুদূরপ্রসারী ব্যাপকতা সম্পর্কে জ্ঞাত হবেন না… প্রজন্ম আমাদের কাছে যে পৃথিবী আশা করেছিল তা আমরা ক্রমান্বয়ে অনাবাসযোগ্য করে তুলছি… মনে হয়, এ দায় সর্বতোভাবেই আমাদের…


দ্রষ্টব্যঃ কপিরাইটের জন্য এখানে প্রকাশিত প্রতিটি সাহিত্যকর্মই আংশিক আকারে প্রদর্শিত
N.B.: Some stanzas here have been masked to avoid copyright infringement
[ Copyright © 2023 | Anwar Parvez Nur Shishir – All Rights Strictly Reserved ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!