তারিখ-০৪.০৬.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন।আমি আজ পর্যন্ত আমার বাংলা ব্লগে যতগুলো গল্প আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি,বেশিরভাগ গল্পই ছিল ভৌতিকগল্প। আজও তার অন্যথা হচ্ছে না।আর গল্পের থেকেও বেশি আমি যতগুলো ঘটনা শেয়ার করেছি সেগুলো সব ছিল সত্যিকারের ঘটনা। মানে আমার অন্যের কাছে শোনা। এবার তাদের জীবনে সেটা কতটা সত্যি সেটা তাদের ব্যাপার। আজও সে রকম একটা ঘটনা নিয়ে আসলাম। এটা আমি আমার এক বাঙালি বন্ধু রোহণের কাছ থেকে শুনেছিলাম। তার কোন বন্ধুর সাথে ঘটা একটি ঘটনা।
ছেলেটির নাম ধরে নেওয়া যাক রাহুল। এখানে আমি আসল নাম প্রকাশ করছি না। ছেলেটির বাড়ি উত্তরপ্রদেশে।ঘটনাটি বলা যেতে পারে ২০১২-১৩ সময়ের।বিভিন্ন ডেটিং সাইট সেরকমভাবে তখন ছিল না ভারতে। তবে ফেসবুকে তো অনেকেই নতুন নতুন বন্ধুত্ব পাতিয়েছে। আবার অনেকের তাতে নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ছেলেটিরও সে রকমই হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়। মেয়েটির নাম ছিল ধরে নেওয়া যাক আলেয়া।
একদিন রাত্রিবেলা রাহুল সাধারণভাবেই ফেসবুক ঘাটাঘাটি করছিল। হঠাৎ করেই একটি মেয়ের প্রোফাইল ওর চোখে পড়ল। এক দেখাতেই পছন্দ হয়ে যাওয়াতে মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটির তরফ থেকে 'হাই' লেখা একটি মেসেজ আসলো। একটা ছেলে দেখলো হঠাৎ করে মাঝরাতে একটি মেয়ে 'হাই' লেখা মেসেজ পাঠালো, বেশ একটা উত্তেজনার মুহূর্ত। সে ভাবল চলো কথোপকথন শুরু করা যাক। এবার ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হল, ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব বাড়লো, দেখা-সাক্ষাৎ হলো। একে অপরকে বেশ পছন্দ হলো। ভালোই চলছিল সময়। এরপরে তারা দুজনেই ঠিক করল চাকরি-সুত্রে তারা বোম্বে যাবে এবং সেখানে গিয়ে দুজনে লিভইনে একসাথেই থাকবে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে। যথারীতি চলেও গেল তারা দুজনে।একটা ওয়ান bhk এর ফ্ল্যাটও নিয়ে নিল। খুব সুন্দরভাবেই মেয়েটি ফ্ল্যাটটা সাজিয়ে নিল। ঠিক একটা সংসার যেভাবে সাজায় সেভাবেই।ওহ্ এখানে একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম মেয়েটির বেশ কিছু আত্মীয় বোম্বেতে থাকতেন, সেই কারণে মাঝে মাঝেই সে তার আত্মীয়দের বাড়িতে যেত এবং বেশ কিছু সময় কাটিয়েও আসতো। কিন্তু রাহুলকে কখনো সে নিয়ে যায়নি।কারণ রাহুলকে সে বলেছিল সে তার আত্মীয়দের জানিয়েছে সে একাই থাকে। সে একটা ছেলের সাথে লিভ-ইন করছে জানলে তার আত্মীয়রা মেনে নেবে না এবং তার মা-বাবাকেও জানিয়ে দেবে. সেই কারণে রাহুল ও বিষয়টাকে আর ঘাটায় নি।কারণ ভেবেছিল দু'বছর পরে যখন বিয়ে করবে তখনই একেবারে সবার সাথে পরিচয় করে নেবে।
এভাবে বেশ দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু সময় যত কাটছিলো, দেখা যাচ্ছিল রাহুল ধীরে ধীরে শীর্ণকায় হয়ে যাচ্ছে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রথমে তারা ভেবেছিল বোম্বের পরিবেশ আবহাওয়া কোনটাই রাহুলের স্যুট করেনি। সেই কারণেই এই ঘটনা। তারা বেশ কিছু ডাক্তারও দেখালো আলেয়াও সাথে গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে।ডাক্তার যেভাবে বলল সেভাবেই রাহুল চলল। তবুও অসুস্থতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছিল।
একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে সে দেখলো আলেয়া নেই। ভাবলো হয়তো আত্মীয়ের বাড়ি গেছে। রাহুল ঠিক করল সামনেই একটি মন্দির আছে সেখানে গিয়ে একটু বসবে। সারাদিন ঘরে থাকতেও ভালো লাগে না। ওদিকে আলেয়ার নিজের আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বসে আছে।মেয়েটির কোন জ্ঞান-গোম্মীও নেই।
এসব ভাবতে ভাবতেই, ভাবলো এক কাজ করলে হয়, "কিছুদিনের জন্য রোহনকে এখানে ডেকে নিলে হয়।"ভেবেই রোহণকে একটা ফোন করলো মন্দিরে বসেই।
রোহন বলল,"ঠিক আছে।সামনের সপ্তাহে তবে আসছি।" এভাবেই দেখতে দেখতে রোহণ চলে এলো ওদের ফ্ল্যাটে।বিষয়টা আলেয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।কেমন যেন রোহনকে দেখেই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। তখন রাহুল বলল, "তুমি তো সারাদিন নিজের কাজে ব্যস্ত থাকো।আর যা ও সময় পাও, আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে বসে থাকো। তাই ভাবলাম কাজের পরে একাকী ভালো লাগে না। তাই রোহন কিছুদিন থেকে গেলে, আমার মনটাও ভালো লাগবে। শরীরটা তো ভালো যাচ্ছে না।"আলেয়া আর কিছু বলল না।
এরপর আলেয়া বেরিয়ে যাওয়াতেই রোহন বললো, "তোর কি এই বিষয়গুলো অস্বাভাবিক লাগে না? একটা মেয়ে ঘন ঘন কেন এতটা আত্মীয়র বাড়ি যাচ্ছে? কি তার কাজ?"রাহুল বলল,"আমি অতটা ভেবে দেখিনি।"
এরপরে রোহন বলল, "বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দে। আমি দেখছি কি করা যায়।"
এভাবে রোহন আলিয়ার উপর নজর রাখা শুরু করলো একদিন নজর রাখতে গিয়ে সে দেখতে পেল আলেয়া খুব তাড়াতাড়ি তার আলমারির ভেতরে কিছু একটা লুকিয়ে রাখছে। এরপর আলেয়া যখন স্নানে গেল, রোহণ ধীরে ধীরে তার আলমারি খুলে দেখলো তার ভেতরে একটা রুমালের মধ্যে কিছু চুল কাটা রয়েছে। রোহান আর কোন কিছু না বলে সেই চুলের রুমালটা সরিয়ে নিল এবং কিছুক্ষণ পরেই রাহুলের কাছে তার মাথায় হাত দিয়ে দেখল তার মাথার কিছুটা অংশ চুল কাটা।
এবার তার বুঝতে আর বাকি রইলো না।সে বুঝতে পারল আলিয়া কোন একটা কালা জাদু করছে। যার জন্য রাহুল দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এরপরে সে ঠিক করলেও যে পরে যেদিন আলেয়া বাড়ি থেকে বেরোবে সে তার পিছু নেবে। ঠিক সেই মুহূর্ত চলে এলো। বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। রোহন এবং রাহুল দুজনেই আলেয়ার পিছু নিল। যদিও রোহন,রাহুলকে কিছুই জানায়নি। শুরু থেকে শুধু বলেছিল,"আমার সাথে চল।একটা জায়গায় যাওয়ার আছে।"
পিছু নিয়ে বেশ খানিকটা যাওয়ার পরে তারা দেখল আলেয়ার গাড়ি একটি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ালো। পেছনে পেছন তারা সেই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলো। এরপরে দেখল আলেয়া একটা ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে গেল। আর সে কোন দরজা না আটকেই ধীরে ধীরে ভিতরে প্রবেশ করল। এটাই ছিল রাহুল এবং রোহণের কাছে একটি সুযোগ। তারা বেশ কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করে যখন দেখলো আলেয়া বেরোচ্ছে না,তারা ঐ ঘরের ভেতরে ঢুকলো। ঢুকে দেখলো সারা ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু ভেতরের একটি ঘর থেকে হালকা লাল-হলুদ আলো ভেসে আসছে।সে আলো কে লক্ষ্য করে তারা এগিয়ে গেল। দেখা গেল ঘরের দরজাটা অল্প করে খোলা।
এরপরে তারা উঁকি দিয়ে যা দেখল তাতে তাদের সারা শরীর হিম হয়ে গেল।
তারা বুঝতে পারছিল না তারা তাদের চোখকে বিশ্বাস করবে নাকি না। দেখা গেল সারা ঘরে আর কোন মানুষ নেই। শুধু আলেয়া একা রয়েছে। সে একা একাই কথা বলছে। তার কথাগুলো ঠিক এইরকম, "আমার কাছে এসো শয়তান। আমার কাছে এসো। তোমাকে পাওয়ার জন্যই তো আমি একটা ছেলের বলি দিচ্ছি ধীরে ধীরে।"
এই বলতে বলতেই আলেয়ার শরীরটা সম্পূর্ণ শূণ্যে ভেসে উঠলো।এই দেখে রোহণ এবং রাহুল আর কিছুতেই নিজেদের ঠিক রাখতে পারল না। কোন রকমের সেই ঘর থেকে তারা বেরিয়ে সোজা তাদের ফ্ল্যাটে চলে গেল এবং নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে সেখান থেকে ওই দিনই পালিয়ে এসেছিল। এরপরে আলিয়ার সাথে আর কোনরকম যোগাযোগ তারা রাখেনি। এরপর কি ঘটেছিল, আলেয়া কোথায় গেল আর কিছুই জানা যায়নি।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
উপপপপপপপ
আলেয়ার ব্যাপারে জানতে ইচ্ছে করছে বেশ। কে এই মেয়ে। পরে কি হয়েছিলো। সব কিছুই জানতে ইচ্ছে করছে। যাইহোক রাহুল কি পরবর্তীতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে?
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রাহুল এখন বিবাহিত। একি ছোট্ট বাচ্চা আছে। আলেয়ার খোঁজ আর ওরা রাখে নি। ধন্যবাদ দিদি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব ভাল লাগলো দিদি গল্পটি পড়ে। আলেয়ার শেষ পরিনতি আসলে কি হয়েছিল?? ছেলেটি সুস্থ হয়েছিল কিনা?? দারুন লাগলো পড়ে। ধন্যবাদ দিদি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রাহুল এখন বিবাহিত। একটি ছোট বাচ্চার বাবাও। আলেয়ার কোন খোঁজ ওরা রাখে নি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit