কালো যাদু (শেষ পর্ব), সত্যঘটনা অবলম্বনে (১০% @shy-fox এর জন্য)

in hive-129948 •  2 years ago 
তারিখ-০৩.১২.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন।আজকে আমি আপনাদের সামনে 'কালো জাদু'গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। প্রথম পর্বের লিংক নিচে রইল। প্রথম পর্বের গল্পটি পড়ে, দ্বিতীয় পর্বে আসলে একটু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।আর সেখানেই গল্পের প্রেক্ষাপট আমি দিয়েছি। সেটাও একবার দেখে নিলে কালো জাদু সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারনা তৈরি হয়ে যাবে। রইলো গল্প।


প্রথম পর্ব



👇🏼শেষ পর্ব👇🏼

একদিন সকালবেলা সেই কর্মচারী জোরে জোরে হাঁক দিল হরিরামকে,"স্যার স্যার দেখুন কাকে নিয়ে এসেছি! "
হরিরাম আর ধনোমনি বেরিয়ে এলো। দেখলো একটা বছর উনিশের মেয়ে। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, নাক মুখ বেশ তীক্ষ্ণ,দাঁড়িয়ে আছে ,সেই কর্মচারীর সাথে। হরিরাম বলল, "ও এটাই কবিতা।"
কর্মচারী বলল,"হ্যাঁ স্যার!ও আজকের থেকে আপনার এখানে থাকবে, ম্যাডামের দেখাশোনা করবে এবং ঘরের সমস্ত কাজ করবে আর দুটো ছুটি সারা মাসে ও নেবে নিজের গ্রামে যাবে বলে।" হরিরাম বলল, "ঠিক আছে।চলে এসো। ভেতরে এসে সমস্ত কাজ বুঝে নাও। কোন অসুবিধে হলে আমাকে বা ম্যাডামকে জানাতে পারো।" কবিতা চুপচাপ মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকলো।
হরিরাম এবং ধনমনি দুজনেই মনে মনে বেশ খুশিই হলো। কিন্তু ওরা জানতো না এটাই ওদের জীবনের চরম ভুল হল।


00f692de-5dd7-444a-85ab-671af10dd7e2.jfif
Image Source

ধীরে ধীরে কবিতা ঘরের সমস্ত দায়িত্ব তো পালন করতেই লাগলো, সাথে করে যে কাজগুলো ওর করার ছিল না, নিজের দায়িত্বে সেগুলো করতে শুরু করল। ধনমনী সমস্তটাই ওর উপর ছেড়ে খানিকটা অলসভাবে বিছানাতেই সময় কাটাতে থাকলো। এই ভাবে কোথাও একটা ধনমনি হরিরামের থেকে দূরে সরতে থাকলো।আর হরিরামও ধীরে ধীরে কবিতার প্রতি ঝুঁকতে লাগলো। একটা সময় পরে হরিরাম এবং কবিতার মধ্যে বেশ গভীর একটা পরিণয়ের সম্পর্ক তৈরি হলো। হরিরাম ধনমনিকে সবসময়ই উপরের ঘরে থাকতে বলতো। কোনোভাবেই যেন সে নিচে না নামে। যাতে বাচ্চার কোন ক্ষতি না হয়। এমন একটা ভাব দেখাতো যেন সে বাচ্চার জন্য এবং ধনমনির জন্য খুবই চিন্তিত। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল অন্য। সে বেশিরভাগ সময়ই চাইতো কবিতার সঙ্গে কাটাতে। আর কবিতাও ভাবতো, "ভালোই হলো একজন সরকারি কর্মচারী বাবু পেয়ে গেলাম।যদি তার সাথে আমার বিয়েও হয়ে যায় তাহলে তো আরো ভালো।" এরকম চলতে থাকলো বেশ কিছুদিন।
কিছুদিন পরে কবিতা এসে জানালো হরিরামকে যে সে হরিরামের বাচ্চার মা হতে চলেছে। হরিরামের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।তখন সে অনেক ভেবেচিন্তে কবিতাকে বলল, "তুমি তাড়াতাড়ি তোমার গ্রামে ফিরে যাও।আমি এখানে ধনমনীকে কিছু একটা বুঝিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দেব। তারপর আমি আর তুমি বিয়ে করে নেব।"
কবিতা সরল মনে সেটাকে বিশ্বাস করে, নিজের ভালোবাসার প্রতি আস্থা রেখে, নিজের গ্রামে চলে গেল।


এভাবেই কেটে গেল আরো কিছু মাস,আর তারপরে ধনমনির একটি ছেলে হল। এর কিছুদিন পরেই পেটে বাচ্চা অবস্থাতেই কবিতা এসে হাজির হলো। সে ধনমনীকে সমস্তটা জানালো তার এবং হরিরামের সম্পর্কের কথা। কিন্তু ধনমণি কিছুই বিশ্বাস করতে চাইলো না। কারণ সে ভাবছিল যদি এটা সত্যিও হয় আর সে যদি হরিরামকে ছেড়েও দেয়, তবে তার মাথার উপর ছাদটা কি করে থাকবে? আর হরিরামও সমস্তটা অস্বীকার করলো।কবিতাকে খুবই অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। কবিতা কিছু বলল না। শুধু যাওয়ার আগে বলে গেল, "যেটা করলেন সেটার জন্য আপনি এত পছতাবেন, আপনি নিজেও জানেন না। আর আপনাদের ঘুরে আমার কাছেই আসতে হবে। কিন্তু আমাকে খুঁজে পাবেন কিনা সেটা বলতে পারবো না।"হরিরাম সে কথাকে গুরুত্ব না দিয়েই ঘরে ঢুকে গেল।

বেশ কিছুদিন এভাবেই কাটলো।হঠাৎ করেই হরিরামের ছেলের শরীর অসুস্থ হওয়া শুরু করল। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলে ডাক্তার বলল তাকে স্যালাইন দিতে হবে স্যালাইনের চ্যানেল করার পরেই দেখা গেল স্যালাইন ওয়াটার শরীরের ভেতরে না গিয়ে বরং শরীর থেকে কুচকুচে কালো রক্তের মতন তরল স্যালাইন বোতলের ভেতরে ঢুকছে। এই দেখে হরিরাম খুব ভয় পেয়ে গেল। তারা বুঝতে পারছিল না এমন কেন হচ্ছে! ডাক্তার ও কোনরকম রোগ ধরতে পারছিল না। আরো ভালো জায়গায় নিয়ে গেল হরিরাম তার বাচ্চাকে। কিন্তু কোন লাভ হল না। অবশেষে বাচ্চাটি মারা গেল।

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHb8yeB3CBbBWxw8zRyJKcrmHw4e6m35X4g8eTJieLSnYyqK2pLGXc3SrpiGYaCv83bXbyiFhDPqFqVXrnRphBhUcQQ9QFNNAdZfmHASbD95187WSAx3YJH.jfif
Image Source

ধনমনি যেন ডিপ্রেশনে চলে গেল। এরপরে ধীরে ধীরে ধনমনীরও শরীর ভাঙতে থাকলো। সে কিছু খেতে চাইছিল না, সব সময় বিছানায় পড়ে থাকতো। কিছুদিন পরে তাকে ডাক্তার দেখানো হল। ডাক্তার বলল হয়তো অবসাদের থেকে এরকম হচ্ছে। তারপর তার সারা শরীর জুড়ে হঠাৎ করে একদিন ফোসকা পড়ে গেল। ফোসকা গুলো এত বড় ছিল আর সেগুলোকে ছুলে মনে হচ্ছিল যেন ভিতরে তরল জাতীয় কিছু আছে। হঠাৎ করেই একদিন হরিরাম তার সেই তার স্ত্রীর সেই ফোঁস্কাতে হাত দেওয়াতে একটা ফোসকা ফেটে গেল। আর সেখান থেকে একটা পোকা বেরিয়ে এলো। সেটা দেখে হরিনাম আঁতকে উঠলো। এটা কি করে সম্ভব ?এরপরে প্রত্যেকটা ফোস্কার থেকেই অনেক পোকা বেরিয়ে এলো। হরিরাম প্রায় ওখানে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার ডাকা হল ডাক্তার ও ধরতে পারল না কি হয়েছে। ধনমণি হাঁটতেও পারত না এবং তার তলপেটে খুবই যন্ত্রণা হচ্ছিল। ধীরে ধীরে তাকে হুইলচেয়ারের আশ্রয় নিতে হল। এরপর ফোসকা গুলো ধীরে ধীরে ক্ষততে পরিণত হলো। সেখান থেকে রক্ত বেরোনো শুরু করল। যেটা দেখতে খুবই খারাপ লাগছিল।আর ধনমনি সে কষ্টটা আর নিতে পারছিল না। অবশেষে সকলে বুঝতে পারলো ধনমনীর শরীরের ভেতরটা সম্পূর্ণ পচে গেছে।

সবকিছু জানার পরে, একজন কর্মচারী বলল, "যে বিষয়টা খুব সাধারণ লাগছে না। আপনি একটা কাজ করুন, আপনি এমন কারো সাথে যোগাযোগ করুন, যে স্পিরিচুয়াল ব্যাপারগুলো জানে। কারণ এটা আমার মনে হয় না, ডাক্তারি কোনভাবে ঠিক হওয়া সম্ভব।"

কিন্তু পরের দিন হরি কোনভাবেই কোন বেজ/ওঝার কাছে যেতে পারলো না।কারণ আগের দিন রাতেই তার স্ত্রীর পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হলো এবং সে বারবার ইশারাতে তার যোনির পথকে দেখাচ্ছিল।বাধ্য হয়ে হরি দেখতে গেল যে তার স্ত্রীর যোনিপথে কি সমস্যা? সে ধীরে ধীরে খুব সন্তর্পণে সেই দিকে তাকালো।আচমকাই দেখতে পেল সেই যোনিপথে এক বিরাট জিহ্বা বেরিয়ে আসছে। এক ঝটকায় দেওয়ালের সঙ্গে ছিটকে লেগে হরি। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেল।সে আবার ভাবল এতটা ভুল দেখলাম? আরেকবার যখন দেখলো, কিছুই দেখতে পেল না।সে তখন বুঝলো যে সে স্বাভাবিকভাবেই ছিল। সুতরাং সে অতটা ভুল দেখেনি।

সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না যে তাদের সাথে কেন এরকম হচ্ছিল তখন যে কর্মচারী কবিতাকে নিয়ে এসেছিল সে জিজ্ঞেস করল যে, "এমন কি হয়েছিল যে কবিতা চলে গেল?কারণ আমি যতদূর জানি যে কবিতা যে গ্রাম থেকে এসেছে, সেই গ্রামে ঘরে ঘরে কালো জাদু প্র্যাকটিস করা হয়। "
তখন হরির মাথায় আসলো যে তার সাথে কেন এগুলো হচ্ছে। কবিতার বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো তার কানে বাজতে থাকল।

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHoSjGAEGgtXZ8tYUnse9ohZe2Ncjqz1KPVnYLKnH6KyBq2YXqvCUYP4JgFvSUzFZCRwr13z1eJv25Ay5zR2rDMWiczBZKjDhGooDfpEPdhM15vbT6XAogq.jfif
Image Source

তখন হরিরাম তাকে জিজ্ঞেস করল যে কবিতা কোথায় থাকে? সে সমস্তটা জানালো।কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল।ধনমনির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল সে বুঝতে পারছিল। কাছের হসপিটালেও তাকে নিয়ে গিয়ে রাখা যাবে না। কারণ ততটা সময়ও হয়তো ধনমনির হাতে নেই। অবশেষে ধনমনি মারা গেল। তার শরীরটা যখন তোলা হল দেখা গেল শরীরের নিচে কালো রক্ত বিছানাতে জমে রয়েছে। আর একটা দাঁত পড়ে আছে। সকলে অবাক হয়ে গেল দেখে। পরে জানা গেল, কালো জাদুর মধ্যে সবথেকে ভয়ংকর কালো জাদু তার স্ত্রীর উপর করা হয়েছে। তাতে শরীরের ভেতরের অঙ্গ গুলোকে নষ্ট করে দেওয়া হয় এবং ব্যথা দেওয়া হয়। অবশেষে সবকিছু ভেবে হরিরাম ধীরে ধীরে অবসাদে চলে গেল।সে ভাবতে লাগলো আজকে তার খারাপ কাজের জন্যই এই ঘটনা ঘটলো। তার স্ত্রী, তার সন্তান, এমনকি কবিতার ঘরে তার আরেক সন্তান, কোন কিছুই তার কাছে রইল না। এত মানসিক অবসাদ সে আর নিতে পারল না। অবশেষে একটা চিঠিতে সমস্তটা লিখে সে আত্মহত্যা করল।

বলা হয় আজ পর্যন্ত কেউই জানতে পারেনি যে কবিতা কোথায় গেছে। কিন্তু অনেকেই নাকি কবিতার আত্মাকে দেখতে পায়। কাজিরাঙ্গা থেকে যেতে গেলে একটা হাইওয়ে পরে।সেখানে রাতের বেলা অনেকেই যাওয়ার পথে একজন গর্ভবতী স্ত্রীকে দেখতে পায়।অনেকে বলে সেটা নাকি কবিতার আত্মা।

আজ এখানেই শেষ করছি বন্ধুরা। আমার গল্পটা আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।যদি ভালো লাগে তবে আরও এরকম গল্প লিখব। আবার আসবো নতুন কিছু নিয়ে। সকলে ভালো থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

পরিচিতি

250c6bf5-0fab-4e98-b28b-2299d4f6bc0f.jfif

আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।

Facebook
Instagram
YouTube

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

Vote @bangla.witness as a witness

d3bda13e-40b1-47f0-ae6e-12bd9e3cafa7.jfif

OR

Set @rme as your proxy

79210fdd-a2bc-44f9-b76d-6aa43122ce75.jfif

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHasrbANgiURdsJZbqzojRuxTqrn8BwVMhvjW2bszpJVcHcPW7rxPZLtrPVi9FWSiNoAnyKt4P3qfRidjbh5nr88gtri9qE2ohuC3tavoQ5nX9ihXXuBCWz.jfif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কি ভয়ংকর উপস্থাপনা। কাল যাদু আসলেই আছে ? নাকি কল্পকাহিনী। খুব ভাল লিখেছেন । অনেক অনেক শুভ কাকনা আপনার জন্য।

হ্যাঁ মায়ং এ প্রকৃতপক্ষে কালো জাদু হয়। আপনি একবার গুগল করে দেখতে পারেন যে আসামের মায়ং কালাযাদুর জন্য বিখ্যাত।

আরে বাপরে কি খতরনাক গল্প। বিশ্বাস করেন গল্প আসলে এটাকেই বলে। আমি মনে করি আপনার এই গল্প যদি সানডে সাসপেন্স এ দেওয়া হয় তাহলে দারুন হিট হবে। সত্যিই অসাধারণ লাগলো আমার কাছে, পুরো গল্পটা খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। কালো জাদু ভয়ংকর হয় সেটা আমি জানি, তবে এতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা কখনো ভাবতে পারিনি।তবে একটা জিনিস খুব খারাপ লাগলো, একজনের দোষের কারণে অন্য দুজন কেন মারা গেল। এটা অন্যায় করেছে কবিতা। আমি ১০ এ ১০ দেবো আপনার গল্পে।

হ্যাঁ সানডে সাসপেন্স এর কথা তো জানিনা, তবে ঘটনাটা সত্যি। আর এখনো অনেকে এরকম দেখতে পায় কিছু। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে।সময় করে পড়লেন।কেউ পড়লে বেশ ভালো লাগে।