তারিখ-১৮.১২.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন।আমিও ভালোই আছি। গতকাল আপনাদের সঙ্গে স্কুলের বন্ধু সৌভিক এর বিয়েতে রিসেপশন পার্টির ছবি এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। এবং এটাও বলেছিলাম যে ওর বিয়েতে খাবার দাবার কেমন হয়েছিল তার রিভিউ আলাদা করে একটা পোস্ট শেয়ার করব। আসলে খাবার-দাবার খেতে গিয়ে খানিকটা ডিসঅ্যাপয়েন্ট হয়েছিলাম। কারণ একটাই, যেখানে খাবার খাওয়ানো হয় সে বসার জায়গাটাতে একাধিক রঙিন আলো লাগিয়ে রেখেছিল। যার ফলে খাবারের আসল রংটাই ফুটে উঠছিল না। চেষ্টা করেছি তার মধ্যে একটু ভালো করে ছবিগুলো তোলার। যাতে করে অন্তত কি খাবার সেটা বোঝা যায়। জানি আজকের ছবিগুলো অতটা মনঃপুত হবে না। তবুও আমার এই প্রতিকূলতার কারণে আপনারা একটু কষ্ট করে দেখবেন।
খাবার খেতে গিয়েছিলাম নটা নাগাদ। গিয়ে বসলাম।মেনু কার্ডও হাতে চলে এলো। এটাকে মেনু কার্ড বললে ভুল হয়ে যায় আসলে মোবাইল স্ট্যান্ড এর উপরে মেনু লেখা একটি কাগজকে চিপকে দিয়েছিল।
মেনুতে কি কি ছিল বলে দেই আপনাদের-
এটা ঠিকই বাবা-মা নিজের সামর্থ্য অনুসারে ছেলে মেয়ের বিয়েতে খরচ করে। তাই সেখানকার রান্না ভালো মন্দ করে নিন্দা এখানে আমি করিনি। করতে আসিনি। তবে যেটুকুই অ্যারেঞ্জমেন্ট করে তার পেছনে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ হয়। সুতরাং যে ক্যাটারার রান্না করলো সে সেই টাকাটার সাথে কতটা জাস্টিফাই করল, সেটা অবশ্যই বলার। ক্যাটারিং এর দায়িত্বে ছিল মা লক্ষী ক্যাটারার। আমাদের এলাকার ক্যাটারিং। মালিক কে আমরা দেবু দা নামে চিনি।দেবু দা মানুষটা এমনি ভালোই,মিশুকে ধরনের। তার ব্যবহারও যথেষ্টই ভালো। অন্তত আমাদের সাথে ছোট থেকে দেখে এসেছি ভালো ব্যবহারই করে। প্রথমেই মেনু কার্ড দেখে বেশ খুশি হয়ে গেলাম।কারণ একটা আছে সেটা হল আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা মোবাইল স্ট্যান্ড কিনব যাতে মোবাইলটা রেখে শুয়ে শুয়ে ভিডিও গুলো দেখতে পারি এই স্ট্যান্ডটা ঠিক তেমনি।
এবার ঢুকে যাই খাওয়া দাওয়ায়। খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে প্রথমেই আসে ফিস ফ্রাই অর্থাৎ পমফ্রেট মাছ যার মধ্যে তন্দুর মশলা, নুন,হলুদ, ফুড কালার, লেবু আরো যাবতীয় মশলা দিয়ে বেশ ভালোভাবে মাছটাকে মাখিয়ে সেটাকে বেসনের একটা ব্যাটারে ডুবিয়ে ডিপ ফ্রাই করা হয়েছে। একপ্রকার স্যালাড, সস দিয়ে বলতে পারেন মাছটা খেতে বেশ ভালো লেগেছে।এক কথায় জাস্ট জমে গেছে।
এরপরে এলো বাদশাহী পরোটা। যেটাকে আমার রিয়েলি বাদশাহী মনে হয়নি। নরমাল লাচ্ছা ছোট পরোটার মতো লেগেছে আর পটেটোস্টাফ। সেটা একটু মিষ্টি মিষ্টি খেতে ছিল। অর্থাৎ আলুর ভেতরটাকে কুড়িয়ে নিয়ে ভেতরে ছানা ড্রাই ফ্রুটসের একটা মিশ্রণকে স্টাফ করে, আলুটাকে ভেজে তারপরে গ্রেভি করা হয়। এটা খেতে মোটামুটি ভালোই ছিল তবে বাদশাহী পরোটাটা আমাকে ভীষণই ডিজঅ্যাপয়েন্ট করেছে। কারণ বাদশাহী পরোটাটা একদম কুড়মুড়ে করে ভাজা ছিল। যেটা কখনোই লাচ্ছা পরোটা ভাজা হয় না।আর কারো কারো পাতের পরোটা টা একদমই কালো হয়ে গেছে অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় পুরে গেছে।
যাইহোক বাদশাহী পরোটাটা খেতে পারিনি ওটা ফেলাই গেছে।আসলে কোন খাবার ফেলব বলে আমি নিই না ভেবেছিলাম খাব। নামটা শুনে বেশ ভালো লেগেছিল। কিন্তু নিয়ে দেখলাম খাওয়ার মতনই নয়। তাই ফেলতে বাধ্য হলাম। এরপরে দেরাদুন চালের ভাত আসলো। দেরাদুন চালের ভাতে সাধারণত চালগুলো খুবই সরু ,লম্বা এবং সুগন্ধ থাকে। এই ক্ষেত্রে কিন্তু চালগুলো দেরাদুন রাইস হলেও,বেশি সেদ্ধ হয়ে যাওয়াতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং একে অপরের গায়ে লেগে গিয়েছিল। যাই হোক সেটা অতটা গুরুত্ব না দিয়েই দইকাতলা টা নিলাম। গ্রেভিটা তৈরী হয় একটু টক দই,কাজু বাটা,চারমগজ বাটা, পেঁয়াজ, রসুন,আদা বাটা, নুন হলুদ, জিরা গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, ধ্বনে গুঁড়ো এবং কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে বিষয়টাকে গুরুপাক করা হয়। টেস্টি ছিল দই কাতলাটা। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে পুরো খাবারের আইটেমগুলোর মধ্যে।
তারপর মিক্সড ফ্রায়েড রাইস এলো। যদিও আমি বিয়ে বাড়িতে গেলে কখনোই ফ্রাইড রাইস,পোলাও এসব খাই না। ভাত থাকলে সেটাই প্রেফার করি। এক্ষেত্রেও তাই করলাম। ভাই-বোনদের থেকে শুনলাম সেটা বেশ ভালোই নাকি করেছিল খেতে। অর্থাৎ ফ্রায়েড রাইসটার মধ্যে চিকেন,এগ,চিংড়ি এসব দিয়ে সুস্বাদু একটা রেসিপি। সাথে এলো মাটন দোপেঁয়াজা। দোপেঁয়াজা নাম হয়েছে দুবার পেঁয়াজ দেওয়া হয় বলে। কিন্তু এক্ষেত্রে মটন টা দেখে খাসির ঝোল বলেই মনে হল।যেটা খেতে ভালোই হয়েছিল। তবে নামের সঙ্গে রেসিপি মিল নেই।সেটাই বলার। যতগুলো আইটেম বললাম তার মধ্যে মাংসের আইটেমটা ভীষণ রিচ হয়ে গিয়েছিল। যেই কারণে আমি পরের দিনে একটু অসুস্থ ছিলাম। সে যাই হোক, বিয়ে বাড়িতে একটু রিচ রান্না হবেই।
এরপর এলো চাটনি,পাঁপড়।ফ্রুট চাটনি করা হয়েছিল।বেশ আঙুর, কাজু, কিসমিস, আমসত্ত্ব সহযোগে,যেটা খেতে ভালোই ছিল। আর পাঁপড় তো পাঁপড়ের মতনই ছিল। রসগোল্লা টা আমি নেইনি, তাই আলাদা করে রসগোল্লার স্বাদ বলার ও নেই।ক্ষীরপুলি টা খুব ভালো ছিল।এটা এক ধরনের মিষ্টি, যেটা দেখতে পুলি পিঠের মতনই হয়। কিন্তু খেতে মিষ্টির মতন অর্থাৎ জানায় তৈরী। অনেকটা রসমালাই এর মত মিষ্টি।যেটাকে একটু ঘন নলেন গুড় এবং দুধের ক্ষিরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর এলো আইসক্রিম।শীতকালে আমি আইসক্রিম খাই না।তাই খেলামও না।আর ছিল শেষ পাতা হজমোলা। বিয়েবাড়িতে যদিও এটা আমার ভীষণ অপছন্দের। একটা পান না হলে ঠিক বিয়ে বাড়ির অনুভূতি হয় না। কিন্তু যাই হোক এটা যার যার পরিবারের ব্যাপার। কেউ বিয়ে বাড়িতে পান করে কেউ হাজমোলা বা জোয়ান করে। এটা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই।
ওভারঅল বলতে গেলে কয়েকটা খাবার ছাড়া খাবার দাবার ভালোই লেগেছে।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো অন্য কোন পোস্ট নিয়ে কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
লোভনীয় খাবার গুলো দেখেই তো খেতে ইচ্ছে করছে আপু। বিয়ে বাড়িতে কিংবা কোন অনুষ্ঠানের বাড়িতে গেলে আমিও পোলাও কিংবা বিরিয়ানি খাই না। সরাসরি সাদা ভাতটাই খেতে পছন্দ করি। আপনিও দেখি তাই করেছেন আপু। বাদশাহী পরোটা যদিও কখনো খাওয়া হয়নি। তবে আপনি যেহেতু বলছেন একেবারে অনেকটা পুড়ে গিয়েছিল তাই বুঝতে পারলাম বিয়ে বাড়িতে গিয়ে এটা খেতেই পারেননি আপু। ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট দেখে ভালই লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ছবিটা মনমত না হওয়ায় একটু ডিজঅ্যাপয়েন্ট।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এ ধরনের রিভিউ এবার প্রথম দেখলাম।তবে দিদি ক্যাটারার রিভিউ নাম দিলে বেশ ভাল হত। কেমন যেন লাগতেছে।বাদশাহী পরটার মনে হয় মন খারাপ ছিল,তাই সাধারণ পরটার মত লাগছে।সুন্দরভাবে লিখেছেন রিভিউটি।ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই। হ্যাঁ আমখর ভালো লাগে নি। এমন কি কারোই ভালো লাগে নি অতটা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু এত উজ্জ্বল আলো দিয়েছে কারন খাবারের দিকে না তাকিয়ে জেনে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন😉😉।যাই হোক মেনুর ছবি দেখেই তো আপনার বন্ধুর বিয়েতে যেতে ইচ্ছে করছে।আসলেই ঠিক বলেছেন খাবার নিয়ে সমালোচনা করা উচিত না।আপু খাবারের ছবিগুলো বেশ লোভনীয়,আপনাদের পরিচিতি ক্যাটারার দেখে মনে হয় খাবার লোভনীয়। হাজমলা টা খেতে কেমন আপু,যাই হোক অনেকের পান না খেলে নাকি খাওয়াই হয় না বিয়ে বাড়িতে।ভালো লাগলো আপু।ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ফুডকালার মেশানো খাবার হয়ে গেছে। 😀😃😄
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিয়ের বাড়ির খাবার মানেই লোভনীয়, আপনার বন্ধুর বিয়ের খাবার গুলোও ঠিক তেমনই লোভনীয় ছিল মনে হয় একমাত্র বাদশাহী পরোটা ছাড়া । আর আপনি শীতকাল বলে আইসক্রিমটা খেলেন না আমি থাকলে ওটাই আগে নিতাম 😁। খুবই প্রিয় আমার তাই শীতকাল হলেও আইসক্রিম বাদ যেত না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপনাকে। আমি আইসক্রিম অতটা পছন্দ করি না আসলে।তার উপর শীতকাল। আইসক্রিম নিয়ে ভাই কে দিয়ে দিয়েছিলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আচ্ছা আপু 🥳🥳
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা হা হা...🤣🤣🤣 এই লাইন দুটো পড়ে হাসতে হাসতে আমি গড়াগড়ি খাচ্ছি।
যাইহোক আপনাকে একটা সিক্রেট কথা বলি, সেটা হচ্ছে আমার খাবারের মেনু স্টার্ট হয় আসলে মাটন কষা থেকে। তার আগের গুলো আমি মেনু হিসেবে গণ্যই করি না। অধিকাংশ সময় আগের গুলো খাইই না। শুধুমাত্র যদি ফিস কাটলেট থাকে তাহলে শুধু সেটাই খায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ কেন যে এমন লাইট দেয়। আমাদের জিমের ট্রেইনার দাদাও এমন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit