রাজের জন্মদিনের সন্ধ্যে(১০% @shy-fox এবং ৫% @abb-charity এর জন্য)

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
তারিখ-০৮.১২.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা

সালটা ২০১৫। হঠাৎ করেই মাম্পি ফোন করে বলল, "পায়েল, পাপিয়া বৌদির মেয়েকে পড়াবি?"আমি বললাম,"পাপিয়া বৌদি আবার কে?"তখন মাম্পি যার কথা বলল, বুঝলাম যে তিনি আমাদের আত্মীয় হন এবং সম্পর্কে কাকিমা।আমি বললাম,"কোন ক্লাসে পড়ে?"বলল,"ক্লাস টু তে।ইংলিশ মিডিয়াম। পড়াবই?"
তখন আমি বেশ ভালোই টিউশন করাচ্ছিলাম। ভাবলাম, ঠিক আছে সময় যখন আছে পড়াবো।গেলাম একদিন দেখা করতে। যাওয়ার পরে কাকিমার সাথে কথা হল। কথা হওয়ার পরে কাকিমা একটা বাচ্চাকে ডাকলো,"মাম্ এদিকে আয়।এই দেখ এটা পায়েল দিদি। এখন থেকে তুই এই দিদির কাছেই পড়বি।"একটা বাচ্চা গুর গুর করে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এসে বলল, "পায়েল দিদি!"ব্যাস তখন থেকেই ওকে পড়ানো শুরু।

7492d3a4-7229-4b0b-96e6-33365b0a43d9.jfif

ওর সম্পর্কে পরে একদিন কিছু লিখব। আজ আর ওর সম্পর্কে কিছু বলব না। কারণ আজ ওর সম্পর্কে যদি আমি লিখতে বসি, তাইলে আর আসল বিষয়বস্তুই বলা হবে না। সে এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেকটাই বড় হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে সময়ও অনেক কেটে গেছে। তারপরে আমি চাকরি জয়েন করার পরে আর পড়াতে পারিনি। তখন ও ক্লাস সেভেনে পড়ে যে বছর ওকে শেষ পড়ালাম। সেই বছর ওর ভাই রাজকেও আমি পড়িয়েছিলাম কিছুদিন। যদিও রাজকে ছোট থেকে রিম্পাই পড়াতো। কিন্তু ছাড়ার কিছুদিন আগে আমিই পড়িয়েছিলাম।


এখন রাজও অনেক বড় হয়ে গেছে। ১২ বছর বয়স। যাকে বলে Big Boy। গত ৩রা ডিসেম্বর, শনিবার রাতে রাজের জন্মদিন ছিল। আর সেই দিনই আমার এক বান্ধবীর বাড়িতে কালীপুজো ছিল। যদিও পাপিয়া কাকিমা অনেক আগেই কল করে বলেছিল, "পায়েল ৩ তারিখ তো রাজের জন্মদিন, অবশ্যই এসো কিন্তু। রাজ এবার চাইছে তুমি আর রিম্পা যেন ওর জন্মদিনে থাকো।" যাবো তো বললাম। কিন্তু গিফট টা কি নেব? আগে ছোট ছিল।খেলনা নেওয়া যেত। কিন্তু এখন দুজনেই বড় হচ্ছে। কি দেবো কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। তারপরেই যেদিন বই মেলা গেলাম ঐদিনই ভাবলাম, যে বইমেলায় যখন এসেছি দুজনের জন্য দুটো বই নিয়ে যাই।আর জন্মদিন রাজের হলেও, গিফটটা সব সময় দুজনের জন্যই নিতাম। এইবারও তাই করলাম। কারণ রাজের দিদির জন্মদিনেও কাছেই। যাই হোক, রাজের জন্য নিলাম অ্যারেবিয়ান নাইটস, যেহেতু ও বাংলা অতটা ভালো পড়তে পারে না,তাই ওর জন্য ইংলিশে নিলাম। আর ওর দিদির বাংলাটা যেন আরেকটু ভালো হয়, সেই কারণে কাকাবাবুর অভিযান নিলাম।

f25df20f-ac1c-4241-a2a1-5163afe261c8.jfif


যেহেতু বান্ধবীর বাড়িতে কালী পুজোতে যাওয়ার ছিল, তাই কাকিমাকে ফোন করে বললাম,"যে তোমরা কেকটা কেটে ফেলো, আমার তো যেতে দেরি হবে একটু। কারণ আমি বান্ধবীর বাড়িতে কালীপুজোতে যাব। আমি এখান থেকে গিয়ে তোমার বাড়িতে যাব।" কাকিমা বলল, "তুমি ঘুরে এসো।রাজ বলেছে তুমি না আসলে কেক কাটবে না।"
সত্যি বলতে আমি ভেবেছিলাম, বাচ্চা মানুষ তো! কতক্ষণ আর অপেক্ষা করবে সন্ধ্যে থেকে? নিশ্চয়ই কেক কেটে ফেলবে।আমি প্রায় রাত ৯:১০ নাগাদ বান্ধবীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাইকেল নিয়ে গেলাম রাজের জন্মদিনে। গিয়ে আমার মুখে ভাষা ছিল না। খাটের মধ্যে একটা টেবিলের উপরে কেকটা রেখে ও অধীর আগ্রহে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আর সবাই চলে এসেছে কিন্তু ও তাও কেক কাটেনি।

40d24a94-6d18-4344-b105-516193ccb34a.jfif


ওর মাকে বলেছে, "পায়েল দিদি আসুক।তারপরে কেক কাটবো।" আমিও ঢুকলাম তারপরে ওর মা স্পার্কেল,মোম সব জ্বালিয়ে দিল এবং কেক কাটলো। এতটা ভালোবাসা আদৌ কোথাও পাওয়া যায় কিনা সত্যিই ভাবার। ওদের আমি কি দিতে পেরেছি আর কি বা করতে পেরেছি আমি জানিনা।

79ee5581-9e9b-4398-a3df-1cd05a294853.jfif

ওরা আমাকে সত্যিই মন থেকে ভীষণ ভালোবাসে এটুকু আমি অনুভব করতে পেরেছি। যাইহোক বেশি ইমোশনাল হব না। এইবার বলি খাবার দাবারের কথা। প্রত্যেক বছর জন্মদিনে ওরা দুই ভাই বোন যেমন আমার আর রিম্পার সাথে খেতে বসতো, ঠিক এবারও সেভাবেই বসলো। রাজের দিদি বসলো রিম্পার সোজাসুজি। আর রাজ বসলো আমার সোজাসুজি। সেই আগের কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল।খাবারে ছিল দারুন একটা চিকেন কাটলেট।যেটা এত বড় সাইজে ছিল যে আমি এই ডিসেম্বরের শীতের মধ্যেও রীতিমত ঘামিয়ে গিয়েছিলাম পুরোটা শেষ করতে গিয়ে।

e933fb58-f661-4c8d-aeff-5a2eec3bef52.jfif

fa854243-1a9e-40ac-8381-ac1b83bf0131.jfif

তারপরও ছিল হালকা মিষ্টি ফ্রাইড রাইস আর চিকেন কারি- ভীষণ ব্যালেন্স স্বাদের,আর ছিলো চাটনী, পাঁপড়, পায়েস মিষ্টি।সব অল্প অল্প খেলেও,শেষে মিষ্টি টা আর খেতে পারি নি। সবটাই ঘরে বানানো। কাকিমা অনেক বার সাধছিলো, "পায়েল, আরো নাও।আরো নাও।"

b74ecc01-e4b8-48f8-8d3e-e3eabc351107.jfif

কিন্তু বান্ধবীর বাড়িতে কালী পূজাতে অল্প খাওয়া-দাওয়া করায় পেটটা বেশ ভরেই ছিল।তাও অল্প খেয়েছি ওদের বাড়িতে। না হলে রাজ আর ওর দিদি সাথে কাকু,কাকিমা সবাই কষ্ট পেত। যাই হোক খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে দশটা-পৌনে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। সবাইকে টাটা বলে বাড়ি ফিরলাম প্রায় এগারোটায়। দিনটা খুব ভালোই কেটেছিল। মন থেকে আশীর্বাদ করে এসেছি, ওরা যেন দুজনেই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। আর আমি নিশ্চিত যে ওরা জীবনে যে শিক্ষা পেয়েছে, ওরা ভালো মানুষই হবে।


আজ এখানেই শেষ করছি বন্ধুরা। আমার এই অভিজ্ঞতাটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আর আপনাদের আশীর্বাদে রাজকে রাখবেন। যেন ও ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। সকলে ভালো থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

পরিচিতি

250c6bf5-0fab-4e98-b28b-2299d4f6bc0f.jfif

আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।

Facebook
Instagram
YouTube

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

Vote @bangla.witness as a witness

d3bda13e-40b1-47f0-ae6e-12bd9e3cafa7.jfif

OR

Set @rme as your proxy

79210fdd-a2bc-44f9-b76d-6aa43122ce75.jfif

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHasrbANgiURdsJZbqzojRuxTqrn8BwVMhvjW2bszpJVcHcPW7rxPZLtrPVi9FWSiNoAnyKt4P3qfRidjbh5nr88gtri9qE2ohuC3tavoQ5nX9ihXXuBCWz.jfif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

প্রথমেই রাজের জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি ভেবেছিলাম রাজ হয়তো আপনার ছোট ভাই হবে। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি আপনার ছোট্ট ছাত্র। ভালোই করেছেন আপু ওদেরকে দুটি বই গিফট করে। পড়তে পারবে ওরা। আপনার যেহেতু পেট ভরে গেছে আমার জন্য একটু পাঠিয়ে দিতেন 😉😉।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂

জন্মদিনের গিফট দেওয়া গুলো আমার পছন্দ হয়েছে কারণ যেহেতু ইংলিশ মিডিয়ার পড়ে সে ক্ষেত্রে বাংলা বই পড়লে অনেকটাই বাংলা রিডিং এর প্রতি কনফিডেন্স আসবে। জন্মদিন উপলক্ষে সব খাবারগুলো হালকা খেয়েছেন আর মিষ্টিটা খেতে পারেনি তাতে কি হয়েছে আমাদের জন্য নিয়ে আসতে পারতেন হা হা হা

হ্যাঁ ওই কারণেই দেওয়া। ধন্যবাদ। 🙂

অনেক টিউশন থাকে যেখানে সম্পর্কটা আত্মীয়ের পর্যায়ে চলে যায়। আমারো এমন একজন স্টুডেন্ট এর জন্মদিন কাল।বই উপহার দেওয়াটাই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়। টিনএজ এর বাচ্চাদের জন্য পারফেক্ট বই দিয়েছ। রাজের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

একদমই ঠিক। আমআর মনে হয় বইয়ের থেকে ভালো কিছু হতেই পারে না।

দিদি নমস্কার🙏
প্রথমে বলবো রাজের জন্মদিনের শুভেচ্ছা সে ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক সবসময় ৷ তার জন্মদিনে তাকে বই উপহার দিয়েছেন বেশ ভালো করেছেন ৷ কারন বই হলো জ্ঞানের জ্ঞানের যা হতে শিক্ষা নিতে পারবে ৷
অনেক আনন্দ করেছেন নিশ্চয়ই ৷
ধন্যবাদ দিদি ভালো থাকবেন ৷

অনেক ধন্যবাদ ভাই।

প্রথমেই জানাই রাজের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আসলে দিদি এমন কিছু টিউশন থাকে, যারা রক্তের সম্পর্কে চেয়ে অনেক বেশি। রাজ যে কেক নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, সত্যি এ রকম ভালোবাসা কজনে পায়।যাইহোক দিনটি অনেক ভালো কেটেছে জেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ দিদি।

ধন্যবাদ দিদি। সত্যিই খুব ভালোবাসে।

ওরা আমাকে সত্যিই মন থেকে ভীষণ ভালোবাসে এটুকু আমি অনুভব করতে পেরেছি

সেটা তো আমিও পোস্ট পড়েই বুঝতে পারলাম। কারণ কেক না কেটে শুধুমাত্র আপনার আশার অপেক্ষায় বসে রয়েছে যে, সে অবশ্যই আপনাকে ভালোবাসে। আর বই গিফট করার থেকে মূল্যবান কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আপনি সবথেকে দামি গিফট টাই দিয়েছেন। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে।

হ্যাঁ। অনেক ধন্যবাদ। 😌

রাজের জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা রইল।আপনি রাজের জন্মদিনে খুবই সুন্দর একটি গিফট দিয়েছেন আপু।অনেক মূল্যবান গিফট বই।রাজ আপনাকে কতোটা ভালোবাসে আর শ্রদ্ধা করে যে,আপনি অনেক দেরিতে গিয়েছিলেন তাও আপনার অপেক্ষায় ছিল।আপনি ওকে আশীর্বাদ করেছেন এটাই ওর জন্য অনেক,আসলেই প্রকৃত মানুষই হোক রাজ।এটাই আশা করি।ভালো থাকুক ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক গুলো।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ব্লগটি শেয়ার করার জন্য ।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 😌