আজকের দিন প্রায় প্রতিটি বাঙালী হিন্দুর ঘরে এক বিশেষ দিন। আজ শ্রাবণ মাসের শেষ দিন এবং কাল থেকেই ভাদ্রমাস শুরু হবে। আজকের দিনে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মা মনসার পুজো হয়। হিন্দু মাইথলজি অনুযায়ী এই দিন সূর্য কর্কট রাশি থেকে সিংহরাশি তে প্রবেশ করে। (তথ্য সূত্র- 'এবেলা' সংবাদপত্র) মা মনসার পূজো নিয়ে অনেক গল্পই প্রচলিত আছে। তবে যেটা সবথেকে বেশী আমরা সকলে জানি তা হল চাঁদ সদাগর,বেহুলা-লখিন্দরের গল্প। আমার বাড়িতে কখনও যদিও আমি মনসা পুজো হতে দেখি নি তবে পাড়ার বেশ কিছু বাড়িতে মনসা পুজো হয়। আমার মামাবাড়ি আসামে। ভারতের অন্য রাজ্যে, সেখানে মনসা পুজোর প্রচলন এতটা ছিলো না। ঐ কারণে মায়ের কাছে শোনা যে মা যখন বিয়ের পর এখানে অর্থাৎ আমার বাবার ভিটে তে আসে তখন প্রথম মনসা পুজো বা মনসামঙ্গল পাঠ শোনে।
Image Source
মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণ মধ্যযুগের এক উল্লেখযোগ্য কাব্য। এই কাব্যের দ্বারাই জানা যায় তৎকালীন সময়ে অনার্যদের দেবী মনসার পুজো প্রচলনের কথা। পদ্মপুরাণ অনুযায়ী মনসা হলেন শিবের স্বীকৃতকন্যা আবার কোন কোন ধর্ম গ্রন্থে মনসাকে ঋষি কাশ্যপের মানস কন্যাও বলা হয়েছে। মানুষ সর্পদংশনের যেন ভয় না পায় সেই কারণে ব্রহ্মাদেব ঋষি কাশ্যপ কে একটি মন্ত্র দান করেন। এই মন্ত্রের কথা চিন্তা করার সময় কাশ্যপের মানস থেকে এক সুবর্ণ দেবীর জন্ম হয়। মানস থেকে জন্ম হওয়ায় তার নাম মনসা।দেবীর দ্বাদশ নামের মধ্যে এক নাম হল বিষহরি। কারণ তিনি নাগের দেবী।প্রচলিত ধারা অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তির দিনমনসাকে দুধ, কলা দিয়েই ভোগ প্রদান করা হয়। এরপর ব্রতকথা পড়ে বাড়ির বৌ মেয়েরা প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙেন।
Image Source
মনসা মঙ্গলের কাহিনী অনেকটা এমন যে চম্পক নগরের বনিক চাঁদ সদাগর একমাত্র শিব ভক্ত ছিলেন।অপর দিকে তখনও মর্ত্যে মনসার পুজো শুরু হয় নি। মনসা ছিলেন শিবের অতি প্রিয় কন্যা। শিব মনসা কে জানান যে মর্ত্যে তাঁর পুজো আরম্ভ করার জন্য অবশ্যই মানুষের হাতের পুজো প্রয়োজন।মনসা হলেন সর্পের দেবী। তিনি চাঁদ সদাগরকে নির্দেশ দেন যেন চাঁদ প্রথম তার পুজো শুরু করে। কিন্তু দাম্ভিক চাঁদ তাতে রাজি হয় নি। বরং মনসা কে অপমান করেন। এতে মনসা ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদের ৬ পুত্রের প্রাণ হরণ করেন এবং তার সপ্তডিঙা মধুকর জলে ডুবিয়ে দেন। মনসা স্বর্গের নর্তকদম্পতি অনিরুদ্ধ এবং ঊষাকে মর্ত্যে পাঠালেন। অনিরুদ্ধ চাঁদের ঘরে জন্মাল লখিন্দর রূপে, উজানী শহরে বণিকের ঘরে বেহুলা রুপে ঊষা জন্ম নিল।বেহুলার সাথে লখিন্দরের বিয়ের পর মা মনসা বেহুলা কে অভিশাপ দিলেন যে বিয়ের রাতেই সে তার স্বামী কে হারাবে।অভিশাপের ভয়ে যদিও বা সাতালি পর্বতে লোহার বাসরঘর বানান হল তবুও মনসার নির্দেশে তাতে একটা ছিদ্র রাখা হল। সেই ছিদ্র পথ দিয়ে কালনাগিনী বাসর ঘরে ঢুকে লখিন্দর কে দংশন করল। এরপর লখিন্দরের দেহ কলার ভেলায় ভাসিয়ে বেহুলা রওনা হল স্বর্গ লোকের উদ্দেশ্যে।নেতা ধোপানীর সাহায্যে স্বর্গ লোকে পৌঁছে নৃত্যের মাধ্যমে দেবতাদের সন্তুষ্ট করে লখিন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে আনে।বেহুলার পতি ভক্তি দেখে চাঁদ সওদাগর রাজি হয় মা মনসার পুজো করতে। এই ভাবেই মর্ত্যে মনসা পুজোর প্রচলন হয় ঘরে ঘরে।
এই সমস্ত কাহিনীই জানতে পারা যায় মনসামঙ্গল কাব্য থেকে। মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতাদের মধ্যে যারা বিখ্যাত তারা হলেন কানাহরি দত্ত, কেতকা দাস, ক্ষেমানন্দ, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্ত। উপরে বর্ননা করা তথ্য গুলো সম্পূর্নই সংগৃহীত 'উইকিপিডিয়া' এবং 'এবেলা' সংবাদপত্রের আজকের প্রকাশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে। তবে একটা কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে পৌরানিক কাহিনীর সাথে বাস্তবের হয়তো কোন মেলবন্ধন নেই, তবে এই কাব্যগুলো মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। এই সম্ভার হয়তো একমাত্র বাংলাই দিতে পারে বলে বিশ্বাস করি। আমরা যদি ধর্মীয় দিককে বাদও দি,তবুও দেখার বিষয় হল কবির কাব্যিক মনন, দক্ষতা।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
মনসার গল্পটি পড়ে বেশ ভালই লাগলো আমার। উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলো আপনি যথাযথভাবে নিয়েছেন কিনা সেটা আমার জানা নেই তবে আপনার ছবির সোর্সগুলো আপনি যথাযথভাবে উল্লেখ করতে পারেননি। আপনি দয়া করে আপনার ছবির সোর্স গুলো যথাযথভাবে উল্লেখ করেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট টা পড়ার জন্য। আমি আবার এডিট করে ঠিক করেছি। আশা করি এবার বোঝা যাবে।আর ইনফরমেশন টা উইকিপিডিয়া থেকে যথাযথ ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। পাশে থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Beautifull please follow me and upvote my content
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit