তারিখ-২৬.০২.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন।আমিও ভাল আছি। শারিরীক একটু অসুস্থতার কারণে মুর্ষে গেছি। নয়তো ঠিক আছে বাকি সব। আজকে অনেকদিন পর আপনাদের কাছে একটা সত্যিকারের ভৌতিক গল্প নিয়ে এলাম। খুব বেশি বড় হবে না গল্পটি। তবুও পড়বেন। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে। আর গল্পটি একটি পর্বেই আমি শেষ করার চেষ্টা করব।এরপর আমি যতই গল্প দিই, চেষ্টা করবো খুব বড় না হলে একটি পর্বে গল্পটি শেষ করার। তাহলে কথা না বাড়িয়ে গল্পটি শুরু করছি।
ঘটনাটা ঠিক এরকম ১৯৮৮ সাল হবে।আমার মেজ মামা আর ছোট মাসি দুজনেই খুব বড় নয়। মেজো মামা ক্লাস সেভেনে পড়ে আর ছোট মানুষের ক্লাস নাইনে পড়ে। এরকম অবস্থায় বলে রাখা ভালো, আমার দাদু মারা যাওয়ার পরে মামা বাড়ির দিন আনি দিন খাই অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তো কবে কি রান্না হবে সেটা আগে থেকেই ডিসাইডেড থাকত না। অর্থাৎ সকালে তারা কি খাবে সেটা যেমন জানত না, দিনের শেষে রাতে কি খাওয়াও জুটবে সেটাও তারা জানতো না। কারণ আমার মা টিউশন করে সে সময় সংসার চালাত।মায়েরা ছিল নয় ভাই বোন। বড় মাসির একমাত্র বিয়ে হয়েছিল। তারপরেই আমার মা মেজো। বাকি ভাই বোনদের নিয়ে মা সংসার চালাচ্ছে। তখন আর আর্থিক অবস্থা এমনও ছিল না যে আগে থেকে ঘরে চাল,ডাল,তেল, আলু মজুদ থাকবে। মা টিউশন করে ফেরার পরে,হাতে টাকা দিতো। তারপরে মাসি, মামারা বাজারে গিয়ে চাল, ডাল এসব নিয়ে আসতো। ঘটনা সূত্রপাত এখান থেকেই।একদিন সন্ধ্যাবেলা মা টিউশন করে ফিরে এসে ছোট মাসি আর মেজ মামা কে হাতে টাকা দিয়ে বলল, "যা চাল, ডাল ,তেল আনবি।সাথে আলু আনিস।"
যথারীতি ছোট মাসি আর মেজ মামার বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেল।এখানে একটা কথা বলে দি। ছোট মাসে নাইনে পড়ে আর মেজো মামা সেভেনে পড়ে বললাম। কারণ মামাদের মধ্যে ওই মামা মেজো।কিন্তু ভাই বোনের মিলিয়ে হলে আমার ওই মেজো মামা ছোট মামার ঠিক আগে। তাই ছোট মাসির চেয়ে ছোটই।
তো যথারীতি ওরা সামনে একটা দোকান থেকে জিনিসপত্র আনবে বলে বেরোলো। এরপর বেরিয়ে যে দোকানটাতে ওরা যাওয়ার কথা সে দোকানটা যেতে গেলে একটি বাঁশ বন পড়ে।সাথে সেই বাস বনের নিচেই একটা কুয়া আছে। আপনারা যারা আসাম গিয়েছেন, তারা অনেকেই জানেন আসামে এখনো কুয়োর ব্যবহার প্রচলিত। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি জলের লাইন সেরকম ভাবে নেই। সবাই কুয়োর থেকেই জল তোলে গ্রামগুলোতে। কিন্তু যেই কুয়োটার কথা আমি বললাম, সেটা পরিত্যক্ত অনেকে বলতো সেটা নাকি হন্টেডও। কিন্তু সত্যি বলতে মাসি এবং মামারা কখনো সেসব দেখেনি। সেই কারণে বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না।ওরা দিব্যি বাঁশ ঝাড়টার পাশ দিয়ে চলে গেল জিনিসপত্র নিতে। কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু গা টা একটু ছমছম করছিল বটে।এরপর আসল কান্ড শুরু হল সব নিয়ে ফেরার সময়। যেই ওরা ওই বাঁশ ঝাড়ের কাছে এলো, তখনই ওদের গা টা ভারী হয়ে উঠলো। ওরা দুজন হাতে একটা লন্ঠন নিয়ে দোকানে গেছিলো। ফেরার সময় চারিদিকে কোন হাওয়া নেই কিছু নেই। মনে হল কে যেন ফু দিয়ে লন্ঠনটা নিভিয়ে দিল। এইবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল ওরা। ওরা যেন বুঝতে পারল কেউ একটা ওদের পেছন পেছন হাঁটছে।
ছোট মাসি, মেজ মামার চেয়ে বয়সে একটু বড় হওয়ায় মেজো মামার মাথা চেপে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে জোরে হাঁটা শুরু করল। ছোট মাসি বারবার মামাকে বলছিল, "খোকন পেছন দিকে তাকাবি না।" কিন্তু আমার মেজো মামার ভীষণ বদ অভ্যাস ছিল, এরকম কিছু হলেই পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখবে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন পিছন ঘুরে তাকানোটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিশেষ করে এ ধরনের অবস্থাতে। সুতরাং ওই আলো অন্ধকার অবস্থাতে মেজোমামা পেছন ঘুরে যা দেখল তা হয়তো আমরা দেখলে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতাম।
সে দেখলো একটা মানুষ হেঁটে আসছে ঠিক মানুষ বলা যায়না একটা অবয়ব। তার মাথা বলতে তো কিছু নেই। শুধু দীর্ঘকায় শরীর। এই দেখে মেজ মামা জোরে চিৎকার করে ওঠে।ছোট মাসিকে বলে,"দীপা দেখ!"কিন্তু ছোট মাসি খুব ভালোভাবেই টের পায় যে ওটা কি! সে আর পেছনে ঘুরে তাকায় না।জোরে পা চালিয়ে কোনক্রমে পাশের একটি বাড়ির খোলা বারান্দায় ওঠে। ওরা স্পষ্ট দেখতে পায়, ছায়াটি দুটি বাড়ির মাঝখান থেকে কোথাও একটা চলে যায়। মেজো মামা সেই বাড়ির বারান্দায় লুটিয়ে পড়ে। এরপরে সে বাড়ির সকলে মিলে ছোট মাসি এবং মেজো মামাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। এরপরে শুরু হয় ছোট মাসির উপর বিভিন্ন রোগের প্রভাব।সে ভুগতে থাকে এবং টানা ১২ দিন প্রবল জ্বরে ভোগে। সে জ্বরে যখন কাবু থাকতো তখন স্বপ্নে দেখতো একটা শুধু জীভ যার মধ্যে সহস্র চোখ, মাসির সারা শরীর চাটছে। এরপর একজন ওঝা ডাকা হয়।ওঝা সমস্ত মন্ত্রাদি করে জানায় ওই অশরীরির ইচ্ছে ছিল মেজো মামাকে চেপে ধরবে। কিন্তু ছোট মাসির রাশি ভারি হওয়ায় আর ছোট মাসি সাথে থাকায় সে পারেনি। ওই কারণে সে ছোট মাসিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যাই হোক এর পরে ভালো ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে মাসি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু আজও বেশী রাতে ওই কুয়োর সামনে দিয়ে কেউই যাতায়াত করে না।
কেমন লাগলো আজকের গল্পটা অবশ্যই জানাবেন। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।