তারিখ-২৩.০৫.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালোই আছি। চলে এলাম এই ঝিমঝিমি বৃষ্টিতে হার হিম করা একটি ভূতের গল্প নিয়ে। আমি চেষ্টা করি বেশিরভাগই গল্প সত্যি ঘটনা অবলম্বনে বলার। যেগুলো আমাকে নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনের থেকে বেশিরভাগ শোনা। সেরকম একটি ঘটনা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি। কারণ আমার নামে বদনাম রটে গেছে এই এলাকায় যে আমি অনেক বড় বড় লেখা লিখি।😁তাই এবার থেকে ছোট লেখা লেখার চেষ্টা করছি।
ঘটনাটা ১৯৮৮ সালের হবে।আমার মামা বাড়ির গ্রামের রাস্তার উপরেই একটা পানিয়াল গাছ ছিল। সেই পানিয়াল গাছটা নিয়ে অনেক রকম ঘটনা ছিল। কিন্তু কেউ কখনো খারাপ কিছুই দেখেনি। সেই কারণে আমার দিদা শুধু সবসময় গল্পই বলে গেছে আমাকে। কিন্তু এর বাস্তবতা নিয়ে কখনোই কিছু আলোচনা করেনি। আর ভৌতিক গল্প শুনতে আমি সবসময় ভালবাসি।সেই কারণে যা বলেছে সেটাই শুনেছি। এরপরই একবছর মামাবাড়িতে গিয়ে পানিয়াল গাছের সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমার এক মামা নিজেই এই অচেনা অশরীরীর সামনাসামনি হয়েছিল।
ঘটনাটা এরকম-
মামা তখন টিউশন পড়াতো। যেহেতু পানিয়াল গাছটি নিয়ে অনেক বদনাম ছিল তাই রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যা বেলা বা রাতের বেলা আসার সময় আমার দিদা গিয়ে কুঁপি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো। মামাকে নিয়ে আসার জন্য।কারণ মামা ভয় পেত। ভীষণ গরমের সময় তখনো ওই পাড়াতে কারেন্ট ঢোকেনি। দিদা একটা কুপি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মামাকে নিয়ে আসবে বলে ওখান থেকে যাওয়ার সময় দিদা কিছুই অনুভব করতে পারেনি।সে দাঁড়িয়েই ছিল রাস্তায় একাই কুপি হাতে।গ্রামের পাড়া হলে যা হয়। যে যার বাড়ির দাওয়াতে বসে আছে গরমের দিনে। কিন্তু রাস্তায় কেউ নেই।
ঠিক ১৫-২০ মিনিট পর যখন মামাকে নিয়ে ফিরছে,হঠাৎ করেই দেখল একজন এক হাত ঘোমটা দিয়ে শাড়ি পরে পানিয়াল গাছের উপরে হেঁটে উঠলো। দিদা ভাবলো অন্ধকারে হয়তো আবছা আলোতে ভুল দেখেছে। এটাও আবার হতে পারে নাকি?গাছে কেউ হেঁটে উঠতে পারে? আর এই সন্ধ্যা রাতে একটা বউ ঘোমটা দিয়ে গাছে উঠতেই বা যাবে কেনো?কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আন্দিজ করল কি হতে চলেছে? দিদার প্রচন্ড সাহস! মামাকে আর কিছু বলল না, যে কি দেখেছে। কারণ মামা আরো ভয় পেতে পারে।এরপর ঠিক কুপিটা নিয়ে সেই পানিয়াল গাছের সামনে আসার পরে হঠাৎ করেই দিদা অনুভব করল তার শরীরটা ভীষণ ভার হয়ে গেছে। যেটা স্বাভাবিক নয়। তারপরই দেখলো মামা খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। যেটা কখনোই হয় না। মামা ভয় পেতে বলে একটু আগে আগেই চলত।
তখন দিদার একটু সন্দেহ হলো। দিদার পেছন ঘুরে তাকালো না।উল্টো হাঁটতে লাগলো পিছন দিকে। হেঁটে মামার পাশে এসে দেখলো মামা সেই পানিয়াল গাছের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে বড় বড় চোখ করে। সাথে সাথে দিদার হাতের কুপিটা কেউ যেন ফু দিয়ে নিভিয়ে দিল। দিদা আর এক মূহুর্ত দেরি না করে, নিজের গলা থেকে ঠাকুরের লকেট মামার গলায় দিয়ে দেওয়ার পরেই মামা ওখানে অজ্ঞান হয়ে বসে পড়ল। সাথে সাথে দিদা চিৎকার শুরু করল। আশেপাশের বাড়ি থেকে যারা ছিল তারা ছুটে এলো হাতে হারিকেন নিয়ে, আলো নিয়ে। তারপরে মামাকে ধরাধরি করে বাড়িতে আনা হলো। বাড়িতে আনার পরেই মামার সামনে ঠাকুরের নাম করা হলো। তাও মামার কোনরকম জ্ঞান ফিরলো না।
এরপর একজন পুরোহিত মশাইকে ডাকা হল মামাকে দেখার জন্য।কারণ পরের দিন মামা যখন ঘুম থেকে উঠলো কারো সাথে কথা বলছিল না। কেমন একটা স্তম্ভিত হয়েছিল। ঠিক মানুষ ঘোরের মধ্যে থাকলে যেমন হয় তেমনই। পুরোহিত মশাই এসে মামার দেহ বন্ধনী করে দিয়ে যাওয়ার পরেই মামার যেন জ্ঞান ফিরলো।
অবশেষে পুরোহিত মাশাই জানিয়েছিলেন ওই পানিয়াল গাছটি অভিশপ্ত। সেই গাছে একজনের মৃত্যু হয়েছিল গলায় দড়ি দিয়ে। তাই ওই গাছটি কেটে ফেলাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ফলস্বরূপ রাস্তার উপরের গাছটিকে কেটে ফেলা হয়েছিল পুজো করার পরে। তারপর থেকে যদিও সেখানে আর কেউ কিছু দেখতে পায় না এখন। কিন্তু মামাকে সেদিনের পরে যখনই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, "সেদিন গাছের দিকে তাকিয়ে তুই কি দেখেছিলি?"ও আজও বলতে পারেনা যে ও কি দেখেছিল?
এখানেই শেষ করলাম। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওমা! কি ভয়ানক একটি গল্প দিদি পড়ে তো শরীরের লোম সব দাড়িয়ে গেল। আসলে ভূত পেত্নীর গল্প শুনলে অনেক ভয় পাই। যদিও জীবনে কখনো সামনাসামনি দেখিনি এসব কিছু কিন্তু অনেক গল্প শুনেছি। আজকে আপনারও পক্ষ থেকে একটা শুনলাম পড়ে বেশ ভালই লাগলো। তবে আপনার দিদার অনেক সাহস ছিল আর এরকম সাহসী মানুষদের কখনোই ক্ষতি করতে পারে না যেহেতু আপনার মামা ভীতু ছিল তাই তাকে এই ক্ষতি করে বসলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ। একদম ঠিক বলেছেন। সাহসীদের ওরা কিছু করে না। সাহস পায় না করার।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওমা কি ভয়ংকর গল্পরে বাবা! শুনে তো গায়ের লোমগুলো দাড়িঁয়ে গেছে। এসবভূত পেত্নীর গল্প শুনতে আমার কিন্তু বেশ ভালোই লাগে। যদিও আমি কখন ভূত আর পেত্নী নিজ চোখে দেখিনি। তবে গল্প শুনেছি বহুবার। আপনার দাদির তো বেজায় সাহস দেখা যায়। আর আপনার মামা তো একদম ভিতু টাইপের মানুষ। ঠিক আমার মতো। হি হি হি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ দিদি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit