তারিখ-১৯.০১.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন।আমিও ভালই আছে। ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছি বলতে পারেন। আজকে আমি আপনাদের সামনে যে পোস্টটা নিয়ে এলাম সেটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শর্মিষ্ঠার আরেকটা আইবুড়ো ভাত খাওয়ার পালা সেই অভিজ্ঞতা।তবে এখানে আমি কি করছি সেটাও বড় কথা।
আসলে যার বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খাওয়া অর্থাৎ ঋতুপর্ণা আমার আর এক বান্ধবী সে আমাকে এবং শর্মিষ্ঠাকে একসাথে নেমন্তন্ন করেছে। বাকি প্রায় সব বন্ধুরই বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র আমি আর শর্মিষ্ঠা বাকি বলতে পারেন। সেই কারণে ঋতুপর্ণা দুজনকে ইনভাইট করেছে। ঋতুপর্ণার হাজবেন্ড সৈকতদা চাকরি সূত্রে বর্তমানে ঋতুপর্ণার বাপের বাড়ি অর্থাৎ আমাদের এখানেই থাকে। আর আছে ঋতুপর্ণার মা কাকিমা। কাকু ঋতুপর্ণার বিয়ের কিছুদিন পরেই মারা গেছেন। মারণ ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধে ছিল।সেই কারণেই কাকুর চলে যাওয়া অসময়ে। যাইহোক আজকে এই কথাগুলো বলে আর মন খারাপের পরিবেশ তৈরি করব না। বরং অন্য কথা বলি। একদিন হঠাৎ করে ঋতুপর্ণা ফোন করে বলল, "তুই কি সামনের শুক্রবার ফ্রি আছিস?"আমি বললাম,"না রে। আমি তো ভীষণ ব্যস্ত। মাসি, মেসো, ভাই এসেছে। ভাইয়ের একটা অপারেশন হওয়ার কথা। শুক্রবারে অপারেশনটা হবে। "
তখন বলল,"ও হ্যাঁ! শর্মিষ্ঠা বলল। ভুলে গেছিলাম। তাহলে তুই কবে ফ্রী হবি?" আমি বললাম, "ভাইয়ের অপারেশন হওয়ার পর ওকে বাড়ি আনব রবিবার। তারপর এমনি কোথাও যাওয়ার নেই।" তখন ঋতু বলল, "তাহলে শর্মিষ্ঠা কে বলে দেখি সোমবার আইবুড়ো ভাত খাওয়ার কথা।" আমি বললাম, "শর্মিষ্ঠার যদি অসুবিধা থাকে তুই ওকে আগেও খাওয়াতে পারিস। আমি কিছু মনে করব না। কারণ উপলক্ষ্যটা ওর।" ঋতু আমায় বকা দিয়ে বলল, "এই চুপ কর তো।সোমবার হবে শর্মিষ্ঠার।"
যা ই হোক তারপর চললাম গত সোমবার ঋতুপর্ণাদের বাড়িতে।নেমন্তন্ন ছিল রাতের বেলা। তাই মোটামুটি সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।ভাবলাম গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করব।তারপরে খাওয়া দাওয়া করা যাবে। আর যেহেতু শহরতলীতে থাকি তাই শীতের সময় রাত্রি নটার সময় চারিদিক ফাঁকা হয়ে যায়। সেই কারণেও ভেবেছিলাম একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে বাড়ি ফিরব।
যাই হোক প্রথমে সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম শর্মিষ্ঠা দের বাড়িতে। শর্মিষ্ঠা দের বাড়িতে সাইকেলটা রেখে গল্প করতে করতে হেঁটে রওনা দিলাম ঋতুপর্ণাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঋতুপর্ণা দের বাড়িতে যাওয়ার আগেই একটা ছোট বাজার পড়ে সেই বাজার থেকে শর্মিষ্ঠা ঋতুপর্ণা দের জন্য মিষ্টি এবং দই নিয়ে নিল । যেহেতু উপলক্ষ ওর। তাই ও যে বাড়িতেই আইবুড়ো খেতে যাচ্ছে তার বাড়িতে দই আর মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক গিয়ে পৌঁছে গেলাম ঋতুপর্ণাদের বাড়িতে। গিয়ে দেখলাম ম্যাডাম,কাকিমা এবং দাদার সঙ্গে মিলে রান্নাবান্না করছেন। আমি বললাম, "ঠিক আছে।অনেক রান্না করেছিস, এবার উপরের ঘরে আয়। তারপরে উপরের ঘরে বসে তিনজনে মিলে বেশ খানিকক্ষণ হা হা হি হি করলাম।অনেক গল্প হল বন্ধুবান্ধবদের যে এখন মানসিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে,আগের মতো সেই টানটা অনেকেরই নেই। এগুলো নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। সময়ের সাথে সাথে সব কেমন বদলে যায়। হয়তো "আউট অফ সাইট,আউট অফ মাইন্ড" কথাটা একদমই সঠিক।
তারপরে নটা বাজতে সৈকত এসে বলল, "চলো অনেক গল্প হয়েছে। এবার একটু খেয়ে নাও।" আমরাও ভাবলাম নটা যখন বেজে গেছে, তাড়াতাড়ি যাই খেয়ে নি গিয়ে।ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখি সে একে এলাহী ব্যবস্থা করেছে। চার রকম ভাজা, ফ্রাইড রাইস, খাসির মাংস, চাটনি, পাঁপড়, দই, মিষ্টি ,ছানার পায়েস এসব। এই চার রকম ভাজার মধ্যে একটা কাতলা মাছের কাটলেট করেছিল কাকিমা। আমি আরেকবার চেয়ে খেয়েছি। এত সুস্বাদু কাটলেট আমি খুব কম খেয়েছি। কাকিমার থেকে রেসিপিটাও জেনে এসেছি। যাই হোক সবটা খাওয়ার পরে, লাস্টের পাঁপড়,মিষ্টি চাটনি এগুলো আর খেয়ে উঠতে পারিনি। এক চামচ করে নিয়ে খেয়ে বাকিটা নষ্ট করিনি।
খেয়ে উঠে হাত মুছে আর দাঁড়াইনি। বললাম,"ভাই অনেক রাত হয়েছে। আজ আসি তবে। আবার অন্যদিন আসবো গল্প করতে।
বেরিয়ে দেখি যা ভেবেছিলাম তা ই। পুরো বাজারই ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে একটা টোটো পেলাম।সেই টোটো তে করে প্রথমে গেলাম শর্মিষ্ঠা দের বাড়িতে। সেখান থেকে আমার সাইকেলটা নিয়ে হনহন করে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। এত ঠান্ডা লাগছিল মনে হচ্ছিল সাইকেলে বসেই জমে যাব। এই কারণেই শীতের দিনে আমি বেশিক্ষণ বাইরে থাকি না। আমার আজকের অভিজ্ঞতাটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আবার আসবো অন্য কোন পোস্ট নিয়ে। সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।