নমস্কার বন্ধুরা!
চলে এলাম শুভ দাদার পোস্ট করা কম্পিটিশন টপিক প্রথম মোবাইলের অভিজ্ঞতা, তোমাদের কাছে শেয়ার করার জন্য।
প্রথমেই বলে রাখি আমি যখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পরি তখন থেকে এই মোবাইল নামক বস্তুটির বিষয়ে অল্প অল্প কানে আসে। আর এক-দুজনের হাতেও দেখি। মোবাইল দেখতাম আর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম বাহ্ কি বিস্ময়কর বিষয়! এতদিন তো বাড়িতে তাড় দেওয়া ফোনেই কথা বলতে হত। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই কথা বলো। আর মোবাইল বিষয়টা কি অদ্ভুত! তারের দরকারই পরে না! যেখানে খুশি নিয়ে যাও, নম্বর টেপার সময় সেটা স্ক্রিনে দেখাও যায়, আবার মেসেজও নাকি পাঠানো যায়।
Image Source
এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতেই বাবার কাছে বায়না জুড়ে দিলাম," আমাদেরও একটা মোবাইল নাও প্লীজ।" বাবারও হয়তো মনে মনে আমার মতই ইচ্ছে ছিলো। যেই বলা সেই কাজ! নিয়ে নিলো নোকিয়ার একটা কী প্যাড হ্যান্ডসেট। সাথে কানেকশন নেওয়া হল 'কম্যান্ড'(যা পরবর্তীতে 'হাচ্'-'ভোডাফোনে' রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানে 'ভিআই' হয়েছে) এর। এরপর আর আমায় দেখে কে! সে কি ভাব আমার! ফোন হাতে নিয়ে গেটের সামনে যাই, মাঝে মাঝেই চার্জে বসাই আবার হাতে করে ঠাম্মা বাড়ি নিয়ে গেয়ে কাকাদের দেখাই। একবার ছাদে উঠছি, একবার এঘর যাচ্ছি, আবার সে ঘর যাচ্ছি। ভাই তখন ছোট। ওকে বলছি,
"এই তুই এখনও ছোট, এখন ছুঁবি না, বয়স হোক তোর হাতেও দেব।"ভাব এমন যেন কি একদম বড় আমি! এদিকে পড়ি তো সেভেনে। 😁
মোবাইলফোন আসার পরই স্কুলে গিয়ে খাতার পেছনে যে কজন বান্ধবীর বাবা বা মায়ের কাছে মোবাইলফোন ছিলো সবার নম্বর নিয়ে এলাম। আর আমার বাবার নম্বর টাও মোটামুটি ক্লাসে বিলিয়ে এলাম।এবার আর কি! বাড়িতে সন্ধ্যে হলেই কল আসে, "কাকু পায়েল আছে? একটু দাও তো!" আবার আমি কখনও ফোন করে জ্বালাই, "অমুক আছে-তমুক আছে" করে।এত দূর পর্যন্ত তো ঠিকই ছিলো। বুঝতে পারছিলাম বাবা অল্প অল্প বিরক্ত হচ্ছিলো।কিন্তু তাও বিশেষ কিছু বলে নি।
কিন্তু সময় ও প্রমাদ গুনছিলো।আমি একদিন রবিবার দুপুরে ঘরে বসে ড্রয়িং করছিলাম।হঠাৎ করেই বাবা কিছু না বলেই পিঠে গুম্ করে পারমাণবিক বোমা ফেললো। আমার তো মনে হচ্ছিলো আরেকটু হলেই দম বার হয়ে যাবে।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম, "কি হয়েছে? মারলে কেনো? আমি তো কার্টুন দেখছি না। ড্রয়িং করছি।"
এবার ড্রয়ইং এর বোর্ড দিয়ে পায়ের মধ্যে ছোটখাটো একটা বোমা ফেলার মত করে আরেকটা দিয়ে বলল, "কাকে কাকে আমার নম্বর দিয়েছিলি সত্যি কথা বল!"
আমি বললাম, "অঙ্কিতা, সায়ন্তী, স্বাগতা, মধুমিতা এই কজনকেই তো দিলাম।"
আসলে দিয়ে এসেছিলাম আরো অনেকগুলো বান্ধবীকেই। কিন্তু ততক্ষণে বুঝে গেছি যে নিশ্চিত কোন ব্লান্ডার করেছি। তাই এই পারমাণবিক বিস্ফোরণ।
এবার বাবা হুঙ্কার দিয়ে বলল, "তুই আমার ফোন আর ধরবি না। বড় পেকে গেছিস!"
আমি এবার নাছোড়বান্দা! বলতেই হবে কি করেছি? বাবাও কম না। সে ও বলবে না। আমি তক্কে তক্কে ছিলাম যে যেই বাবা স্নানে যাবে ওমনি দেখব যে কি হয়েছে মোবাইলে।যেই ভাবা সেই কাজ।বাবা স্নানে যেতেই মোবাইল খুলে দেখি একটা নম্বর থেকে মেসেজ, "Payel I Love You .❤তুমি কি আমায় ভালোবাসো?"
এই মেসেজ দেখে কয়েক সেকেন্ড চক্ষু চড়কগাছ। আমি ভাবছি কোন ছেলেকেই তো বাবার নম্বর দি নি। তাহলে এটা কি? আমি এমন কেস খেলাম কিছু না করেই! এবার নম্বর টা টুকে নিলাম খাতায়।চুপচাপ সেদিনের মত বকা খেয়ে ফোন ধরলাম না আর।পরেরদিন স্কুলে গেছি।সব বান্ধবীদের যখন বলছি ঘটনাটা হঠাৎ করেই দেখি স্বাগতা হাহা করে হেসে উঠলো।
তখন আমার খটকা লাগলো। বললাম, "কি ব্যাপার? হাসছিস কেনো?"
উত্তরে বলল, "ওরে বোকা ওটা আমার মায়ের নম্বর, মা নতুন ফোন নিয়েছে, তোকে কেস খাওয়ানোর জন্যই মেসেজ করেছিলাম, ভেবেছিলাম সব বান্ধবীকেই করব। "
তখন আমি আগেরদিনে বাবা যে আপ্যায়ন করেছিলো সেটার জন্য রাগ করব নাকি নিশ্চিন্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবো বুঝতে পারছি না।তারপরই ওকে বললাম যে ও যেন কল করে জানিয়ে দেয় যে এটা ওর মা মানে কাকিমার নম্বর।ও বদমাইশি করে বলছিলো বলবে না।
আমি বললাম ,"যদি না বলিস তাইলে স্কুলের করিডোরের দেওয়ালে কিন্তু নম্বর টা লিখে রাখব।"
এবার কাজ হল।আর যেহেতু আমাদের কো-এড স্কুল ছিলো তাই ছেলেরা যদি নম্বর পেয়ে যায় সেই ভয়ে ও আর রিস্ক নিলো না। বাবা কে বিকেলে কল করে জানালো যে ওটা ওর মায়ের নম্বর।আর বাবাও বিনা কারণে আমার পিঠে ঢাক বাজানোর জন্য হয়তো অনুশোচনাতেই সেদিন সন্ধ্যায় আমার আর ভাইয়ের জন্য এগরোল আর কোল্ড ড্রিংক নিয়ে আসলো।এই ছিলো আমার প্রথম মোবাইলের অভিজ্ঞতা।
যদিও এরপর সময় পাল্টেছে, মোবাইল পাল্টেছে, বড় হয়েছি কিন্তু এই অভিজ্ঞতা গুলো যেনো তরতাজা হয়ে আছে।কখনও ভুলব না। আমি হলাম সেই জেনারেশনের যারা ল্যান্ড ফোন থেকে মোবাইল ফোনের রেভলিউশন দেখেছি। সেই আবেগ এখনকার ছেলে-মেয়েরা উপলব্ধি করতে পারবে না মনে হয়। সময়গুলো সত্যিই ভীষণ অমূল্য ছিলো।
Image Source
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
দারুন মজা পেয়েছি দিদি আমি তো হাসতে হাসতে শেষ😂।
আর আপনার আপনাকে এমনে কেস খাওয়াই দিল।😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ দাদা। আমি লিখতে গিয়েও হেসে ফেলেছিলাম ছোটবেলার কথা মনে করে। কি দারুণ সময় ছিলো!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা হা সেই দিনের মাইর টা বেশ লেগেছিলো তাই না😜😜।আসলে কিছু কিছু বান্ধুবি এমনই হয়।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য দম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিলো। আমি তো মেসেজ চেক করার পর নিজেই ভাবছিলাম আরো খাবো বাবার হাতে। তাও তো ছেড়ে দিয়েছিলো। তবে সেই সব দিন গুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।স্কুল, ছোটবেলা সবই খুব মিস্ করি।ধন্যবাদ আপনাকে লেখা টা পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন,ছোটবেলার দিন গুলো ফিরে পেলে বেশ ভালো ছিলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit