তালে-গোলে বড়ার প্রীতি (১০% @shy-fox এবং ৫% @abb-school এর জন্য)

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

অনেক বাঙালীর বাড়িতে শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে তালের বরা খাওয়া হয়। তবে কেউ আমায় কারণ জিজ্ঞেস করবেন না। কারণটা ঠিক কি সেটা আমিও জানি না। তবে কারণ যা ই থাকুক পেট যেখানে 'ওকে বস্' বলবে সেখানেই বাঙালী ঢুঁ মারবে। তো সেই ঢুঁ মারার জন্যই হোক বা নিয়ম মেনেই হোক, আমিও প্রথমবার ইনিশিয়েটিভ নিয়ে তালের বড়া ভাজব বলে মনস্থ করলাম। বাবা কে বলে দিলাম বাজার থেকে একটা তাল(যদিও ভেবেছিলাম ছোট তাল আনবে, কিন্তু বড় একটা তাল নিয়ে চলে এসেছে গো! 🥺) , কলা, নারকেল(যেটা পাশের বাড়ির কাকিমা গ্রেট করে দিয়েছেন, কারণ আমি নারকেল কোড়াতে পারি না)আনতে বলেছিলাম।

IMG_20220819_222413.jpg
তবে প্রতিবার মা তালের বড়া ভাজলেও এই বছর মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়াতে আমিই করব ঠিক করলাম।তালের বড়া খুবই সহজ ও সাধারণ একটা আইটেম। তবে এখানে আমি আমার মা এবং দিদিমা কে দেখেছি তারা কখনওই তালের বড়া নির্দিষ্ট শেপে ভাজেন না। আমার দিদিমা বলেন বড়া কখনও শেপে ভাজতে নেই। তাতে তার স্বাদ পাওয়া যায় না। আমিও চেষ্টা করেছি সেভাবেই ভাজার।

উপকরণ

             ১.তাল
             ২.নারকেল
             ৩.কলা
             ৪.সুজি
             ৫.ময়দা
             ৬.চিনি
             ৭.সাদা তেল

প্রণালী
-

ধাপ ১

তালটা ভেঙে তালের আঁটি গুলো(এখানে ৩টে আঁটি ছিলো) ছাড়িয়ে চুন জল মাখিয়ে রাখলাম আঁটি গুলো তে। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। চুন জল। কারণ একটাই তেতো জল টা তালের থেকে বার হয়ে যাবে। আর বরা টা খেতে তেতো লাগবে না। প্রায় ৩০ মিনিট এই ভাবে রেখে দিতে হবে।

ধাপ-২
আঁটি গুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে যাতে চুন জল আর না থাকে। আর ঝরে যাওয়া তেতো জল টা ফেলে দিতে হবে।
1ef27879-5266-40b0-a6ca-2e9828a03753.jpg

ধাপ-৩
এবার কোনো খড়খড়ে স্ট্রেইনার দিয়ে তালের আঁটি গুলো কে ঘষতে হবে। এখানে একটি বিষয় আছে, আমি যে স্ট্রেইনার দিয়ে ঘষেছি সেটি থেকে শুধু তালের রস টাই নিচে ছেঁকে পড়বে। তালের আঁশ কিন্তু পরে না। তাই আলাদা করে আর তালের আঁশ সরানোর হুজ্জুকি থাকে না।তালের আঁটিগুলো যতক্ষণ না হলুদ থেকে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঘষে যেতে হবে। আমার ঠাম্মা কে দেখতাম গ্লাস দিয়ে তাল ঘষতো। জানিনা কেমন ভাবে! 😲
1c91a6a9-c7c5-47cf-96a0-56773463ffa4.jpg

ধাপ-৪
তাল ঘষা হয়ে গেলে এবার কলার পালা। অনেকে কলা সরাসরি তালের গোলার মধ্যে দিয়ে দেয়। কিন্তু আমি কলাটা স্ট্রেইনারে ঘোষে দিলাম। এতে বিষয়টা মিহি হয়।বড়াটা বেশ মুখে দিলেই মিলিয়ে যাবে।
67fe180e-86ec-4add-9d1d-904db2c6b83a.jpg

ধাপ-৫
এবার আসি সব মেলা মেশা করার পালায়। একে একে তাল আর কলার গোলায় নারকোল কোড়া(অর্ধেক), চিনি ২৫০ গ্রাম, ময়দা ৩ টেবিল চামচ, সুজি ৩ টেবিল চামচ দিলাম। এখানে চিনির পরিমাণটা স্বাদ বুঝে বাড়ানো কমানো যেতেই পারে। তবে ময়দা আর সুজি একটু কম করে মেশানোই ভালো। যদিও বা এতে বড়াগুলো দেখতে সুন্দর হয় তবে খেতে কিন্তু একদমই ভালো হবে না। পাথরের মত শক্ত হয়ে যাবে যা খাওয়ার কম অস্ত্র বেশী মনে হবে।😃
83566572-a37f-4929-aee9-b76df3c3cb3d.jpg

ধাপ-৬
এবার সব উপকরণগুলো ভালো করে মাখিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিলাম যাতে করে সুজি আর চিনি টা গলে যেতে পারে ভালো মত।
32388bb8-82e6-42f7-941f-ced0334bde7d.jpg

ধাপ-৭
৩০ মিনিট পর উনুনে একটা কড়াই বসিয়ে কড়াইতে তেল গরম হতে দিলাম। কড়াইয়ে তেল গরম হলে রেখে দেওয়া তালের মিশ্রনটি একবার ভালো করে নাড়িয়ে নিলাম আর এক ফোঁটা নিয়ে তেলে দিয়ে দেখলাম যে ভালো মত তেলটা গরম হয়েছে কিনা। যদি দেখি মিশ্রণটা তেলে দেওয়ার সাথে সাথে উপরে উঠে আসছে তাহলে বুঝব তেল সঠিক গরম হয়েছে। এবার গ্যাসের ফ্লেম টা মিডিয়ামে রেখে অল্প অল্প করে নিজের পছন্দের সাইজে মিশ্রণ তেলে ছাড়তে হবে। এবার কিছুক্ষণ পর পর উল্টে পাল্টে ভাজতে হবে লাল করে।
4e6270c9-09a8-4d60-b476-0b45ada1dd7d.jpg

এখানে একটা কথা বলি তালের বড়া কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে পুড়ে যায় তাই কড়াই থেকে চোখ সড়ালে চলবে না। আর গরম অবস্থায় যদিওবা একে অপরের সাথে লেগে ধরতে পারে,পরে ঠান্ডা হলে ঠিক হয়ে যাবে।এবার ভাজা হয়ে গেলে রেখে দিন। কারণ তালের বড়া কেউ গরম গরম পরিবেশন করে না। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন। আর পরিবেশন করার সময় ২-৩ টে নিজেও খেয়ে নিন। 😁দেখবেন মনে হবে মুখের মধ্যেই যেনো সমস্ত স্বর্গ!
b05ca37c-cb4d-4962-982b-e421b4126ec9.jpg
আর একটা বিষয় তালের বড়া ভাজতে তেলটা বেশ ভালোই দরকার পরে। তাই তেলে কার্পণ্য করলে চলবে না। আর যেহেতু ভীষণ হাই ক্যালোরি খাবার। তাই কম খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

জন্ম অষ্টমী তালের বড়া ছাড়া অসম্পূর্ণ। আমিও একটু পর বানাতে বসব।আজ আপনার রেসিপি ফলো করব।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

ভালো লাগলো শুনে যে আপনি আমার পদ্ধতি অনুসরণ করে বড়া ভাজবেন।অবশ্যই জানাবেন যে কেমন লাগলো বিষয়টা। আর জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানাই আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সকলকে। ভালো থাকবেন।

স্বাগতম।আপনাকে ও আপনার পরিবার কেও জন্ম অষ্টমীর শুভেচ্ছা।

তালের বড়া খেয়েছি কিন্তু কোনদিন তাল ও কলা দিয়ে মিশ্রিত বড়া খায়নি ।আপনার এই পোস্টি আমার কাছে অনেক ইউনিক লেগেছে। এমন পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

থ্যাংকিউ সো মাচ। হ্যাঁ আসলে কলার বড়া আলাদা করে বানায় অনেকে আর অনেকে তালের বড়ায় শুধু তাই দেয়। তবে আমআর ঠাম্মা কলা ব্যবহার করত। এতে আপনি কাজু কুচি ব্যাবহার করতে পারেন। ভালো লাগবে খেতে।

অসাধারণ দেখতে তালের বড়া। জিভে জল এসে গেল। শুনেছি জন্মাষ্টমীতে তাল ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় । ভুলেই গিয়েছিলাম শুভ জন্মাষ্টমী

আপনাদের ভালো লাগলেই আমার সফলতা। আজ জন্মাষ্টমী বলেই রেসিপি টা আজ শেয়ার করলাম।বড়াগুলো সুস্বাদু হয়েছিলো। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানাই।

তালের বড়া তখন কেন খাওয়া হয় সেটা আসলে আমিও জানিনা। তাই আপনার কাছে জিজ্ঞেস করলাম না তবে এই ভরা খেতে খুবই ভালো লাগে। অনেক সুস্বাদু হয় আপনি অনেক সহজে এই তালের বড়া তৈরি করার পদ্ধতি উপস্থাপন করেছেন অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ। কারণ যা ই হোক। বাঙালির কাছে খাওয়া দাওয়ার জন্য কোন কারণের প্রয়োজন হয় না।খাবার যেখানে আমরা সেখানে।আমি চেষ্টা করেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বানানোর। তাও ১.৫ ঘন্টা লেগেছে।

আর একটা বিষয় তালের বড়া ভাজতে তেলটা বেশ ভালোই দরকার পরে। তাই তেলে কার্পণ্য করলে চলবে না। আর যেহেতু ভীষণ হাই ক্যালোরি খাবার। তাই কম খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

আসলে দিদি ঠিকই বলেছেন কিপটামি করা চলবে না তেলের ব্যাপারে তবে তেলের যে দাম বেড়েছে, না করে তো উপায়ও নাই। আর হ্যাঁ এটাও ঠিক বলেছেন অনেক ক্যালরিযুক্ত খাবার তাই আমাদের সকলেরই পরিমাণ মতোই খাওয়া উচিত। খুবই চমৎকারভাবে আপনি তালের বড়া রেসিপি তৈরি করেছেন, দেখতে যেরকম লোভনীয় লাগছে খেতেও নিশ্চয়ই অনেক ভালো হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলে অল্প খেলে আমরা বেশীদিন খেতে পারব। এটাই আসল কথা। তেলের দাম বাড়ুক বা কমুক। খাওয়াটা আমাদের সিমীত রাখতে হবে। তবে ভাজা পোড়া জিনিস বেশী তেল ছাড়া ভালো লাগে না। বাড়ির সবার খুব পছন্দ হয়েছে। আর শেষ ও হয়ে গেছে। তবে আমি বাবা কে বললাম আর আনবে না তাল। আর আনলেও বড়া করব না। কারণ এত তেল খাওয়া ঠিক না। ধন্যবাদ আপনাকে আমার রেসিপি টা পছন্দ করার জন্য।

তালের বড়া, এবং কলার বড়া দুইটা আলাদা আলাদা করে খেয়েছি । কিন্তু দুইটার কম্বিনেশনে যে এত সুন্দর বড়া তৈরি করা যায় । তা আপনার রেসিপি দেখে প্রথম জানার সুযোগ হলো । হ্যান্ড কুরনি দিয়ে কিন্তু নারিকেল কুরে নেওয়া খুব সহজ । ট্রাই করে দেখতে পারেন এর পরের কোন রেসিপিতে ।

ধন্যবাদ। আমি হ্যান্ড কুড়ানি দিয়ে করতে গিয়ে হাত ছিলে ফেলেছিলাম একবার। তারপর থেকে চেষ্টা করি নি।আপনি বললেন যখন চেষ্টা করব অবশ্যই।আর এই পদ্ধতি তে কখনও তালের বড়া বানালে অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

পাকা তালের রস দিয়ে এভাবে বড়া তৈরি করে খেতে খুবই ভালো লাগে আমার। ছোটবেলা থেকে আমাদের পরিবারে তালপাকলে এভাবে বড়া বানিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। আশা করি বেশ মজাদার হয়েছিল রেসিপিটা।

হ্যাঁ দাদা রেসিপি বেশ টেস্টি হয়েছিলো। পাকা তালের বড়া খাওয়া যায় আবার জ্বাল দিয়ে মুড়ির সাথে খাওয়া যায়। সেটাও বেশ ভালো।

তালের বড়া খেতে আমি অনেক পছন্দ করি। কিছুদিন আগে আমার আম্মু বাড়িতে তালের বড়ার রেসিপি তৈরি করেছিল আমি অনেক মজা করে খেয়েছিলাম। আপনার তালের বড়ার রেসিপি তৈরি দেখতেও আমার কাছে বেশ দারুন লেগেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ দাদা। পছন্দের রেসিপি দেখলে বেশ জিভে জল চলে আসে। এইবছর আমাদের এই প্রথম খাওয়া হল তালের বড়া। আর খাওয়ার ইচ্ছে নেই। এত তেল লাগে তাই।

তালের বড়া খেতে ভালই লাগে। তবে আমাদের বাসায় তালের বড়ার ভেতরে নারকেল কোড়ানো দেয়া হয় না। আপনার বড়াগুলো দেখে মনে হচ্ছে খেতে ভালোই হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

প্রথমবার করেছিলাম। সবাই এমনকি পাশের বাড়ির আন্টিও খেয়ে বলেছে বেশ ভালো আর নরম হয়েছিলো। আসলে রান্না করে খাওয়ালে কেউ ভালো বললে মনে হয় সার্থকতা পেলাম।নারকোল দেওয়ায় বেশ একটা ক্রাঞ্চ আসছিলো প্রতিটা বাইটে।

আজকে বাসায় তালের বড়া রেসিপি তৈরি হয়েছিল।তালের বড়া তৈরি করার ধাপ গুলো তুলে ধরেছেন দিদি, অনেক লোভনীয় ছিল।

ধন্যবাদ দাদা আপনাকে। আমাদের বাড়িতে আমি ৩-৪ দিন আগেই বানিয়েছিলাম। খেতে ভালো হয়েছিলো।