নমস্কার বন্ধুরা
মানুষ মারা যাওয়ার পর আমরা তার জন্য অনেক দুঃখ পাই কিন্তু তার থেকেও বেশি তাকে অনেক ভয় পাই। আজকের এই জেনারেল রাইটিং পোস্টটা আসলে একটি বাস্তবিক ঘটনাকে নিয়ে। যেটা সবে মাত্র আমার দেখা চোখে ঘটেছে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
আমাদের আগে অন্য জায়গায় বাড়ি ছিল। কিন্তু আমি যখন ক্লাস ফাইভে উঠলাম তখন বাবার কাজের সূত্রে আমরা বনগাঁতে চলে আসি। সেখানে আসার পর আবার পাড়ায় বেশ কয়েকটা দাদা, দিদি আর ভাই ,বোনের সাথে খুব ভাব জমে ছিল। আমি আসলে এই দুই দলের মাঝ বয়সী। তাই দুটো দলেই আমি খুব সহজে অংশগ্রহণ করতে পারতাম। ছোট ছিলাম বলে, সারা পাড়া দৌঁড়ে খেলা করে বেড়াতাম, এজন্য অবশ্য বাড়িতে অনেক বকাও খেতাম। যাইহোক, একদিন খেলতে খেলতে একটা দাদা উঠনে বসে ছবি আঁকছিল আর আমি ভুল করে তার খাতার উপরে পা দিয়ে দিয়েছিলাম , তারপর অবশ্য তার কাছে অনেক বকা শুনেছিলাম। আসলে বকা খাওয়ারই কথা ।
তারপর কিছুদিন আমি খুব ভয় পেতাম ওই দাদাকে দেখলে। কিন্তু তারপর দুটো দাদা, দুটো দিদি আর আমার খুব ভাব জমে গেল ওরা আমার থেকে সবাই প্রায় দু-তিন বছরের বড়। সকলের পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। গরমকালে বিকেলে খেলা থেকে শুরু করে, শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা , সরস্বতী পূজা থেকে শুরু করে দূর্গা পুজা হোক বা বিকেলে আশেপাশে ঘোরাঘুরি সবই আমাদের একসাথে হত। আমাদের সকলের মায়েরা সকলের সাথে খুবই চেনা পরিচিত। তাই আমাদের খুব বিশ্বাস আর ভরসা করত আর আমাদেরকে একসাথে দেখলে তারা নিশ্চিন্ত হত।
কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে যখনই পড়ার চাপ বেড়ে গেল তখন খেলাধুলাটা আমাদের বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু দুর্গাপূজায় আর সরস্বতী পূজায় ঘোরাঘুরি কিন্তু বন্ধ হয়নি। তবে এ বছর আমি কলকাতায় থাকার কারণে সরস্বতী পূজাতেও তাদের সাথে যোগদান করতে পারিনি। তবে বাড়ি যাওয়া আসার পথে রাস্তায় দেখা হলে কথা হতো আর হোয়াটস অ্যাপেও মাঝে মধ্যে কথা হতো । কিন্তু গত ১৫ দিন আগে আমি বেহালা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, হঠাৎ করেই মায়ের ফোন আসলো, বলল তুই কি ঘরে? আমি বললাম না কেন, বলছে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা শুনলে তোর পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার মত হবে। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? বলল সৌমাল্য দা মারা গেছে । আমি বললাম ,কি বলছো তুমি? কি করে হলো? কখন হলো ? বলল এই তো এখনই খবর পেলাম, দুপুরে মারা গেছে।
শুনে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল সাথে সাথেই পড়ে গেল, স্কুলের বা টিউশন বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে যতটা না বন্ধুত্ব হয় তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি ভালো বন্ধুত্ব আমাদের এই পাঁচ জনের। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না কথাটা। বাড়ি যেতে চাইলাম, মা বলল তুই আসতে আসতে এই চলে যাবে। তাই শুধু শুধু আসিস না। খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম সেদিন। এখনো পোস্টটা লিখতে গিয়ে অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু সেদিন দুপুর থেকে মনের মধ্যে যেন একটা ভয় বাসা বেঁধেছে। কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না রাতে। একা একটা ফ্ল্যাটে থাকার অভিজ্ঞতা আমার প্রায় দু'বছর ধরে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি ঘুমাতে পারছি না।
সারারাত ঘরে লাইট জ্বালিয়ে রাখা সত্ত্বেও, চোখের পাতা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। ১৫ দিন পর আজ বাড়ি গেছিলাম অন্য কয়েকজন দাদা - দিদিরও সেই একই অবস্থা। আমরা চাইছি কম মনে করতে, যাতে ভয়টা কম লাগে। কিন্তু বারবার মনে পড়ছে সকলেরই , আর সকলের মধ্যেই ভয় বাসা বেঁধেছে। তাই আমাদের মৃত্যুর পর সেই মানুষটার জন্য খারাপ লাগে ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি অনেক ভয়ও করে তার জন্য।
পোস্ট বিবরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|
একদম সত্যি কথা গুলো তুলে ধরেছেন দিদি আমার সাথেও এমন হয়েছিল। এতো ভালো বন্ধত্ব সবার জেনে খুব ভালো লাগলো।আপনার সৌমাল্য দাদা স্বর্গলাভ করুক এই কামনা করছি।কাছের যতো আপনজন হোক না কেন মারা গেলে কিন্তুু আপন থাকে না এবং আমরা ভয় পেয়ে থাকি।কারণ যতো কাছের মানুষ তত তার সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা গুলো মনে পড়তে থাকে।যতো বেশি আপন তত বেশি ভয় কাজ করে মনের ভীতরে।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করে অনেক কিছু আমাদের কে জানানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit