গতকাল একটি জরুরি কাজে রংপুর গিয়েছিলাম। রংপুর গেলে হাতে সময় পেলে বরাবরই আমি হসপিটালে চলে যাই। আমার ছোট থেকে এতো এতো সমস্যা আর যতোবার এখানে এসে চিকিৎসা নিয়েছি বলতেই পারি এই হসপিটালেই আমার ছোট থেকে বড় হওয়া। আমার দুটি অপারেশন হয়েছে এখান থেকে। আর একটি হয়েছিলো ডক্টর জহিরুল ইসলাম স্যারের ক্লিনিক থেকে। এছাড়াও অনেক অনেক অসুস্থতা ছিলো আমার, যার গল্প নাহয় আরেকদিন তুলে ধরবো তবে এখন হসপিটালে যাওয়ার কারণ অসুস্থতা নয় বরং সেখানে থাকা মানুষদের দেখে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগে। মানুষের জীবনের নানা কষ্ট ও দুঃখ দেখতে পেলে নিজের সমস্যাগুলো অনেক ছোট মনে হয়।
হসপিটালে গেলে আমি সাধারণত ছবি তুলি না। কেন জানি না, সেখানে ছবি তুলতে মন চায় না। মনে হয়, দুঃখ-কষ্টে থাকা মানুষদের জীবনের এই কষ্টের মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দি করা ঠিক নয়। তাই আমি চেষ্টা করি যেখানে লোকসমাগম কম, সেখানে কয়েকটা ছবি তুলতে। যেহেতু ব্লগ লিখতে কিছু ছবি দরকার হয়, তাই ২-১টা ছবি নেয়াই লাগে।
হসপিটালে ঢুকার সময় লক্ষ করলাম, হসপিটালের সামনে অনেক মোটরসাইকেল দাঁড় করানো আছে। এগুলোর কাজ হচ্ছে কোন ডাক্তার কাকে কোন ঔষধ দিলো তার ছবি তুলে উপরে পাঠানো। এটা মোটেও ভালো কাজ নয়। একজন রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে প্রকাশ করা উচিত নয়। এটা রোগীদের প্রাইভেসির উপর আঘাত হানে। এ ধরনের কাজ বন্ধ হওয়া উচিত।
হসপিটালের ভেতরে কিছু সময় কাটানোর পর আমি বাইরে বের হলাম। বাইরে থেকে কয়েকটা ছবি তোলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তেমন ভালো লাগছিল না। মানুষের দুঃখ-কষ্টের জায়গায় ছবি তোলা কেমন জানি মানায় না। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলাম।
রংপুর হসপিটালে এই কিছুটা সময় কাটিয়ে আমি উপলব্ধি করলাম, আমাদের সমাজে কত মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় দিন কাটায়। হসপিটালের করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম, কেউ কেউ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, আবার কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছে। এই দৃশ্যগুলো আমার মনকে নাড়া দেয়।
আমাদের সকলেরই উচিত এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। তাদের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়া। হসপিটালের সামনের মোটরসাইকেল চালকদেরও উচিত তাদের কাজের দায়িত্বশীলতা বুঝা এবং মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা। এটি তাদের মর্যাদার ওপর আঘাত হানে।
আমরা যদি একটু সচেতন হই, তবে হয়তো অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। মানুষকে তাদের কষ্টে একটু সান্ত্বনা দেওয়া, তাদের পাশে থাকা, এটাই আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত। হসপিটালের এই অভিজ্ঞতা আমাকে এই বিষয়গুলো নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
রংপুর হসপিটালে কাটানো এই সময় আমাকে জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও দায়িত্ববোধের কথা মনে করিয়ে দিলো। আমরা সকলেই যদি একটু দায়িত্বশীল হই, অন্যের কষ্ট ভাগ করে নিতে শিখি, তবে হয়তো সমাজে একটু শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
এই ভাবনা নিয়েই আমি রংপুর থেকে ফিরে আসলাম। আগামীদিনে আবার হয়তো কোন জরুরি কাজে রংপুর যেতে হবে, আবার হয়তো হসপিটালে যাবো। তবে এই অভিজ্ঞতাগুলো আমার মন থেকে মুছে যাবে না। সবার সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা কামনা করছি। আজকের মতো এখানেই, সবাই ভালো থাকবেন।
আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।
আসলে মেডিকেলে গেলে বোঝা যায় সুস্থতা মহান সৃষ্টিকর্তার কত বড় নেয়ামত।আর আমার কাছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টি তেমন একটা সুবিধার মনে হয় না। কেননা এই মেডিকেলের চিকিৎসা একদম ধীর গতির ।আর বিশেষ করে এতো বড় মেডিকেল টি অপরিচ্ছন্ন। তবুও প্রচুর মানুষের ভীড় জমে থাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সুস্থতা সত্যিই মহান সৃষ্টিকর্তার বড় উপহার। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধীর গতি ও অপরিচ্ছন্নতা সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে যাতে রোগীরা উন্নত সেবা পায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাসপাতালে গেলে বোঝা যায় কতো মানুষ কতোটা কষ্টে দিন পার করছে।আপনার মতো সবার মন মানসিকতা যদি সাহায্যের দিকে হতো, তবে কিছু মানুষ ভালো ভাবে বেঁচে উঠতে পারতো।তবে আমি মনে করি সবার সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরী।মনে রাখতে হবে একদিন আমিও হয়তো এমন পরিস্থিতিতে পরতে পারি। এই ভাবনা মনে থাকলে কেউ সাহায্য না করে পারেনা।অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার এমন মনোভাবের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সত্যিই, হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে বুঝা যায় কত মানুষ কষ্টে আছে। সবার যদি সাহায্যের মনোভাব থাকত, তাহলে অনেক মানুষই ভালোভাবে বাঁচতে পারত। সবার সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরি, কারণ আমরা যেকোনো সময় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারি। আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit