কিছুদিন আগে আমি আমার নিজ জেলা রংপুরে, আমার গ্রামে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছি। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে গ্রামের মাটিতে ফিরে আসা সবসময়ই আমার জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি দেয়। কিন্তু এইবার গ্রামের বাড়ি ফিরে এসে নানা কারণে বাহিরে তেমন বের হওয়া হয়নি। শহরের জীবনের চাপে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে, গ্রামের প্রকৃতি আর সেখানকার মানুষের আন্তরিকতা কতটা মূল্যবান। সেই ভুলেই হয়তো এইবারও আমার বেশ কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে।
আজ সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে মনে হলো, একটু বের হওয়া দরকার। সেই ভাবনা থেকেই একটু হাঁটতে বের হলাম। গ্রামের হাওয়ায় হাঁটতে বের হওয়া মানেই যেন একটা নতুন প্রাণশক্তি পাওয়া। আর এমন সময় হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে। ওর সাথে দেখা হলে স্বভাবতই একটু গল্প হয়, স্বভাবতই করতে লাগলাম। ওর একটা মাল্টা বাগান আছে, কথায় কথায় হেঁটে হেঁটে যখন ওর বাগানের কাছে চলে এলাম, তখন ও আমাকে প্রায় জোর করেই বাগানে নিয়ে গেল। বাগানটা রাস্তার ধারেই, তাই আমি নিজেও না জেনেই সেখানে পৌঁছে গেছি।
বাগানে ঢুকতেই দেখি, বেশ কয়েকটা মাল্টা নামানো হয়েছে। ও আমাকে তখন বলল, "এখানে বসো, আগে কিছু মাল্টা খাও।" আমি প্রথমে তেমন আগ্রহ দেখাইনি, কিন্তু ভাইয়ের আন্তরিকতার কাছে হার মানতেই হলো। ও নিজে হাতে বাগানের কয়েকটা তাজা মাল্টা পেড়ে এনে ছুরি দিয়ে কেটে আমার সামনে রাখল। যতই আমি না না করি, ততই ও আমাকে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছিল। শেষে না না করতে করতেই পাঁচ-ছয়টা মাল্টা খেয়ে ফেললাম। এমন তাজা আর সুস্বাদু মাল্টা খেয়ে মনে হলো, গ্রামে ফিরে আসাটা সত্যিই সার্থক।
খাওয়ার পর, পেটটা এমনিই ভরে গেলো যে, এরপর আর কিছু খাওয়ার জায়গা ছিল না। আমার ভাই এরপরও চাইলেও আমাকে আর খাওয়াতে পারলো না। কিন্তু ওর এই আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এমন মুহূর্তগুলোতে আমরা সত্যিই বুঝতে পারি, গ্রামে থাকা এই মানুষগুলোর সরলতা আর আন্তরিকতা কতটা নিখাদ।
যদিও সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আমি আর তেমন ফটোগ্রাফি করতে চাইনি, তবুও কিছু ছবি তুলে রাখার চেষ্টা করেছি। এই স্মৃতিগুলো সবসময়ই আমার মনে থাকবে। প্রকৃতির মাঝে এবং আপনজনের ভালোবাসায় ঘেরা এই গ্রামীণ জীবনই তো আমাদের শেকড়।
এই ছোট্ট ঘটনাটা আমাকে গ্রামের জীবনের সৌন্দর্য এবং মানুষদের আন্তরিকতার কথা মনে করিয়ে দিলো। শহরের কোলাহল আর ব্যস্ততার বাইরে, এই নিরিবিলি পরিবেশেই আসলে জীবনের প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানেই থাকি না কেন, গ্রামের টান সবসময়ই আমাকে ফিরে আসতে বাধ্য করে। আর এই ছোট্ট সফরেই আবারও মনে হলো, জীবনের প্রকৃত রূপ খুঁজে পেতে আমাদের মাঝে মাঝে এই মাটির কাছেই ফিরে আসতে হবে।
আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।
মামাতো ভাইয়ের মালটা বাগানে কাটানোর দারুন মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার এই মুহূর্তটা দেখে খুব ভালো লাগলো। একদম নিজের দেশের মাটিতে হওয়া সুন্দর ফলের স্বাদ গ্রহণ করেছেন। ব্লগটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার প্রতিক্রিয়া পড়ে সত্যিই ভালো লাগলো। দেশের মাটির ফলের স্বাদ আর মামাতো ভাইয়ের আন্তরিকতা—সবকিছু মিলিয়েই মুহূর্তটা ছিল বিশেষ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit