আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- একটি ছোট্ট ছেলের গল্প
- ০৬, এপ্রিল ,২০২২
- বুধবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি একটি ছোট্ট ছেলের গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
স্কুলের শিক্ষকদের একটি আবদার অভ্রর পরিবারের কাছে । তাঁরা চাচ্ছেন এ বছর অভ্রকে নার্সারিতে না রেখে কেজি ওয়ানে রাখতে । কারণ এ বছরও কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন হতে বৃত্তির আয়োজন করা হয়েছে । আর তাতে জেলার নামি দামি সব কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো অংশগ্রহণ করবে । অভ্রর আম্মু প্রথমে রাজি না হলেও পরে শিক্ষকদের পীড়াপীড়িতে আর না করতে পারলেন না । মেজো নানা সব শুনে আপত্তি করে বলেন - ‘ এতটুকু ছেলের কাঁধে এতবড় বোঝা চাপানো তোমাদের উচিত হচ্ছে না ' । স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহমান সাহেব মেজো নানাকে বোঝালেন অভ্রর সব দায়িত্ব তাঁরা নেবেন । অভ্রকে যে করেই হোক এ বছর জেলায় ফার্স্ট করবেনই ।
বছরের প্রথম থেকেই স্কুলের শিক্ষকরা স্পেশালভাবে অভ্রর কেয়ার নিতে থাকে । অন্যদিকে বাড়িতেও শিক্ষক রেখে অভ্রর পড়াশোনার তদারকি করতে থাকে । কেননা স্কুলের সুনাম বাড়াতে অভ্রর জেলায় ফার্স্ট হওয়াটা খুব প্রয়োজন । সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ বছরের অভ্রর পেছনে শিক্ষকরা জোঁকের মত লেগে রয়েছেন । কাঁধে ব্যাগ ভর্তি বইয়ের বোঝা আর তার চোখের সামনে ফার্স্ট হওয়ার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয় অভ্রর । প্রথম প্রথম মুরাদ স্যার যখন বিকেলে পড়াতে আসত , তখন অভ্র পড়তে চাইত না , দৌড়ে বাইরে খেলতে যেত । সেদিন অভ্রর আম্মু অভ্রকে কড়াভাবে বকে দেওয়ার পর এখন আর অভ্র খেলতে যেতে চায় না । সারাদিন শুধু বই নিয়ে বসে থাকে । ঘর থেকে তেমন একটা বেরও হয়না । কারও সাথে ভালো করে কথাও বলে না অভ্র , মেজো নানার সাথেও না ।
সময় যত গড়াতে থাকে অভ্রও নিজের মাঝে তত গুটিয়ে যেতে থাকে । যার এখন সারাদিন হেসে - খেলে , নেচে পুরো মোল্লা বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা , তার এখন চলছে ফার্স্ট হওয়ার কড়া মহড়া । খাঁচায় বন্দী পাখির মত পরম যত্নে দিনের পর দিন ফার্স্ট হওয়ার মহড়া দেওয়ার পর অবশেষে অভ্রর বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হয় । শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসার পর বাড়িতে এসে সোজা খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অভ্র । সন্ধ্যায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙে অভ্রর । করুণ কণ্ঠে অভ্র বলে উঠে - ' আমার ভালো লাগছে না আম্মু , আজ আর পড়ব না ' । সপ্তাহ খানেক পর এক রাতে অভ্রর খুব জ্বর আসে । ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে ঔষধ দিয়ে গেলেন তবুও কিছুতেই অভ্রর জ্বরটা কমছে না । মোল্লা বাড়ির পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে । জ্বরের ঘোরে মাঝে মাঝে অভ্র বলে উঠছে- ‘ বাংলা বইটা দাও কবিতা পড়ব , ইংরেজি বইটা দাও রাইমস পড়তে হবে ' ।
মেজো নানাও তিন দিন ধরে স্কুলে যায়না , সারাদিন অভ্রর পাশে বসে থাকেন । সেজো নানা এসে রাতে বলে গেলেন আগামীকাল অভ্রর বৃত্তির রেজাল্ট দেবে । সেই রাতে অভ্রর জ্বর হঠাৎ করে আরও বেড়ে যায় । বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে অভ্র । রাত দশটার দিকে একবার অভ্রর জ্ঞান আসে । মেজো নানার সাথে কথা বলে অভ্র । মেজো নানা অভ্রকে বলেন আগামীকাল অভ্রর বৃত্তির রেজাল্ট দিবে । রেজাল্টের কথা শুনে অভ্র কেমন জানি আঁতকে ওঠে । কাঁপা গলায় মেজো নানাকে বলে - ‘ নানু ভাই আমি কি ফার্স্ট হয়েছি ’ ? তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঘুমিয়ে যায় অভ্র । মাঝরাতের দিকে অভ্রর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে । ক্ষীণ কণ্ঠে একই কথা বারবার আওরাতে থাকে অভ্র- ‘ নানু ভাই আমি কি ফার্স্ট হয়েছি , আমার কি আর পড়া লাগবেনা ’ ? একসময় অভ্র আর কিছু বলে না । নেমে আসে এক প্রগাঢ় নিঃস্তব্ধতা । মুহূর্তেই অভ্রর আম্মর আর্ত - চিৎকারে পুরো মোল্লা বাড়ি কেঁপে ওঠে ।
সকালে পুরো গ্রামের মানুষ এসে ভিড় জমায় মোল্লা বাড়িতে । সবার সিক্ত চোখে অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট । দুপুরের দিকে বড় মামা খবর নিয়ে আসে এ বছর রেকর্ড মার্কস্ নিয়ে জেলায় ফার্স্ট হয়েছে অভ্র । তখন আনন্দপুরে অভ্রর আম্মুর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে । অভ্রর ফার্স্ট হওয়ার খবরটা শুনে মেজো নানা প্রায় পাগলের মত হয়ে গেলেন । মোল্লা বাড়ির আনন্দ শূন্য প্রান্তরে মেজো নানার বুকফাটা আর্তনাদে কেবল ধ্বনিত হতে থাকে- ‘ নানু ভাই তুমি ফার্স্ট হয়েছো , আমার নানু ভাই ফার্স্ট হয়েছে' সবার প্রচেষ্টাকে সার্থক করে শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট হওয়ার যুদ্ধে জয়ী হয় অভ্র , কিন্তু জীবনযুদ্ধে নামার অনেক আগেই হেরে যায় অভ্র । অভ্রর অপ্রত্যাশিত হেরে যাওয়াটা হয়ত কারোরই কাম্য ছিল না । সবাই হয়তো অভ্রর সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিল । কিন্তু শুরুতেই ছোট্ট কাঁধে বড় বোঝাটা অভ্র হয়ত সহ্য করতে পারেনি । সেজন্যই হয়ত ফার্স্ট হয়েও হেরে গেল অভ্র । যে হারের ক্ষত কখনোই পূরণীয় নয় ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার ক্ষুদ্রতম সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জীবন মানে যুদ্ধ
হারজিত আছে,
তাইতো সবাই শিক্ষা নেয়
জীবনেরই কাছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অবশ্যই জীবনযুদ্ধে সবসময় এগিয়ে যেতে হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একটি ছোট্ট ছেলের গল্প আপনি খুবই সুন্দর ভাবে পার্ট ২ উপস্থাপন করেছেন ।আপনার লেখালেখির হাতটা খুবই সুন্দর।। ্ দোয়া করি আপনি যেন একদিন অনেক দূর এগিয়ে যান লেখালেখির মাধ্যমে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোট্ট ছেলের গল্পটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছি আমার কাছে গল্পটি অনেক ভালো লেগেছে সেই থেকেই লেখা ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোট্ট ছেলের গল্পের প্রথম পর্ব আমার পড়া হয় নি। প্রথম পর্ব সময় নিয়ে পড়তে হবে। আপনি খুব ভালো আর্টিকেল লিখেন যা বুঝলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অবশ্যই প্রথম পর্ব করবেন তাহলে অনেক মজা পাবেন পড়ার জন্য অনুরোধ রইল ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit