একটি ছোট্ট ছেলের গল্প( শেষ পর্ব-২) || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)

in hive-129948 •  3 years ago 

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক


  • একটি ছোট্ট ছেলের গল্প
  • ০৬, এপ্রিল ,২০২২
  • বুধবার


আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি একটি ছোট্ট ছেলের গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।



kids-160168__480.webp.png

Source

স্কুলের শিক্ষকদের একটি আবদার অভ্রর পরিবারের কাছে । তাঁরা চাচ্ছেন এ বছর অভ্রকে নার্সারিতে না রেখে কেজি ওয়ানে রাখতে । কারণ এ বছরও কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন হতে বৃত্তির আয়োজন করা হয়েছে । আর তাতে জেলার নামি দামি সব কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো অংশগ্রহণ করবে । অভ্রর আম্মু প্রথমে রাজি না হলেও পরে শিক্ষকদের পীড়াপীড়িতে আর না করতে পারলেন না । মেজো নানা সব শুনে আপত্তি করে বলেন - ‘ এতটুকু ছেলের কাঁধে এতবড় বোঝা চাপানো তোমাদের উচিত হচ্ছে না ' । স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহমান সাহেব মেজো নানাকে বোঝালেন অভ্রর সব দায়িত্ব তাঁরা নেবেন । অভ্রকে যে করেই হোক এ বছর জেলায় ফার্স্ট করবেনই ।

বছরের প্রথম থেকেই স্কুলের শিক্ষকরা স্পেশালভাবে অভ্রর কেয়ার নিতে থাকে । অন্যদিকে বাড়িতেও শিক্ষক রেখে অভ্রর পড়াশোনার তদারকি করতে থাকে । কেননা স্কুলের সুনাম বাড়াতে অভ্রর জেলায় ফার্স্ট হওয়াটা খুব প্রয়োজন । সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ বছরের অভ্রর পেছনে শিক্ষকরা জোঁকের মত লেগে রয়েছেন । কাঁধে ব্যাগ ভর্তি বইয়ের বোঝা আর তার চোখের সামনে ফার্স্ট হওয়ার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয় অভ্রর । প্রথম প্রথম মুরাদ স্যার যখন বিকেলে পড়াতে আসত , তখন অভ্র পড়তে চাইত না , দৌড়ে বাইরে খেলতে যেত । সেদিন অভ্রর আম্মু অভ্রকে কড়াভাবে বকে দেওয়ার পর এখন আর অভ্র খেলতে যেতে চায় না । সারাদিন শুধু বই নিয়ে বসে থাকে । ঘর থেকে তেমন একটা বেরও হয়না । কারও সাথে ভালো করে কথাও বলে না অভ্র , মেজো নানার সাথেও না ।

সময় যত গড়াতে থাকে অভ্রও নিজের মাঝে তত গুটিয়ে যেতে থাকে । যার এখন সারাদিন হেসে - খেলে , নেচে পুরো মোল্লা বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা , তার এখন চলছে ফার্স্ট হওয়ার কড়া মহড়া । খাঁচায় বন্দী পাখির মত পরম যত্নে দিনের পর দিন ফার্স্ট হওয়ার মহড়া দেওয়ার পর অবশেষে অভ্রর বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হয় । শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসার পর বাড়িতে এসে সোজা খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অভ্র । সন্ধ্যায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙে অভ্রর । করুণ কণ্ঠে অভ্র বলে উঠে - ' আমার ভালো লাগছে না আম্মু , আজ আর পড়ব না ' । সপ্তাহ খানেক পর এক রাতে অভ্রর খুব জ্বর আসে । ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে ঔষধ দিয়ে গেলেন তবুও কিছুতেই অভ্রর জ্বরটা কমছে না । মোল্লা বাড়ির পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে । জ্বরের ঘোরে মাঝে মাঝে অভ্র বলে উঠছে- ‘ বাংলা বইটা দাও কবিতা পড়ব , ইংরেজি বইটা দাও রাইমস পড়তে হবে ' ।

street-2805643__480.webp

Source

মেজো নানাও তিন দিন ধরে স্কুলে যায়না , সারাদিন অভ্রর পাশে বসে থাকেন । সেজো নানা এসে রাতে বলে গেলেন আগামীকাল অভ্রর বৃত্তির রেজাল্ট দেবে । সেই রাতে অভ্রর জ্বর হঠাৎ করে আরও বেড়ে যায় । বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে অভ্র । রাত দশটার দিকে একবার অভ্রর জ্ঞান আসে । মেজো নানার সাথে কথা বলে অভ্র । মেজো নানা অভ্রকে বলেন আগামীকাল অভ্রর বৃত্তির রেজাল্ট দিবে । রেজাল্টের কথা শুনে অভ্র কেমন জানি আঁতকে ওঠে । কাঁপা গলায় মেজো নানাকে বলে - ‘ নানু ভাই আমি কি ফার্স্ট হয়েছি ’ ? তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঘুমিয়ে যায় অভ্র । মাঝরাতের দিকে অভ্রর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে । ক্ষীণ কণ্ঠে একই কথা বারবার আওরাতে থাকে অভ্র- ‘ নানু ভাই আমি কি ফার্স্ট হয়েছি , আমার কি আর পড়া লাগবেনা ’ ? একসময় অভ্র আর কিছু বলে না । নেমে আসে এক প্রগাঢ় নিঃস্তব্ধতা । মুহূর্তেই অভ্রর আম্মর আর্ত - চিৎকারে পুরো মোল্লা বাড়ি কেঁপে ওঠে ।

সকালে পুরো গ্রামের মানুষ এসে ভিড় জমায় মোল্লা বাড়িতে । সবার সিক্ত চোখে অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট । দুপুরের দিকে বড় মামা খবর নিয়ে আসে এ বছর রেকর্ড মার্কস্ নিয়ে জেলায় ফার্স্ট হয়েছে অভ্র । তখন আনন্দপুরে অভ্রর আম্মুর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে । অভ্রর ফার্স্ট হওয়ার খবরটা শুনে মেজো নানা প্রায় পাগলের মত হয়ে গেলেন । মোল্লা বাড়ির আনন্দ শূন্য প্রান্তরে মেজো নানার বুকফাটা আর্তনাদে কেবল ধ্বনিত হতে থাকে- ‘ নানু ভাই তুমি ফার্স্ট হয়েছো , আমার নানু ভাই ফার্স্ট হয়েছে' সবার প্রচেষ্টাকে সার্থক করে শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট হওয়ার যুদ্ধে জয়ী হয় অভ্র , কিন্তু জীবনযুদ্ধে নামার অনেক আগেই হেরে যায় অভ্র । অভ্রর অপ্রত্যাশিত হেরে যাওয়াটা হয়ত কারোরই কাম্য ছিল না । সবাই হয়তো অভ্রর সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিল । কিন্তু শুরুতেই ছোট্ট কাঁধে বড় বোঝাটা অভ্র হয়ত সহ্য করতে পারেনি । সেজন্যই হয়ত ফার্স্ট হয়েও হেরে গেল অভ্র । যে হারের ক্ষত কখনোই পূরণীয় নয় ।

ধন্যবাদ সবাইকে



logo.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আপনার ক্ষুদ্রতম সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

জীবন মানে যুদ্ধ
হারজিত আছে,
তাইতো সবাই শিক্ষা নেয়
জীবনেরই কাছে।

অবশ্যই জীবনযুদ্ধে সবসময় এগিয়ে যেতে হবে।

একটি ছোট্ট ছেলের গল্প আপনি খুবই সুন্দর ভাবে পার্ট ২ উপস্থাপন করেছেন ।আপনার লেখালেখির হাতটা খুবই সুন্দর।। ্ দোয়া করি আপনি যেন একদিন অনেক দূর এগিয়ে যান লেখালেখির মাধ্যমে।।

ছোট্ট ছেলের গল্পটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছি আমার কাছে গল্পটি অনেক ভালো লেগেছে সেই থেকেই লেখা ধন্যবাদ।

ছোট্ট ছেলের গল্পের প্রথম পর্ব আমার পড়া হয় নি। প্রথম পর্ব সময় নিয়ে পড়তে হবে। আপনি খুব ভালো আর্টিকেল লিখেন যা বুঝলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

অবশ্যই প্রথম পর্ব করবেন তাহলে অনেক মজা পাবেন পড়ার জন্য অনুরোধ রইল ভাই।