আসসালামু আলাইকুম / আদাব,
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আজকে আমি আমার ব্লগ টি শুরু করছি। আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তে সব সময়ই ভিন্ন ধরনের কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।যে প্রতিযোগিতা গুলো আমাদের কাজের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। আজ আমি আপনাদের সাথে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য" ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি" শেয়ার করব।
আমার কাছে বন্ধু মানে সবচেয়ে ভরসার জায়গা।শুধু স্কুল কলেজে গেলে যে বন্ধু তৈরি হয় তা নয়। স্কুল কলেজের বাইরে পরিবারের অনেকের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হতে পারে।।স্কুল জীবনের বাইরে যদি প্রথম কেউ বন্ধু আমার হয়ে থাকে সেটা ছিল আমার বাবা।জীবনে চলতে গেলে সব সময় বন্ধুর প্রয়োজন হয়। আমি যখন স্কুলে যাইনি তখনই দুনিয়াটাকে চিনতে বন্ধুর মত পাশে ছিল এবং এখনো আছে আমার বাবা। তবে ছোটবেলার মতো করে এখন আর বাবার সাথে তো সেইভাবে মেশা হয় না।আমার যে কোনো কষ্ট যে কোন অভিমান আমি নির্দ্বিধায় আমার বাবার সাথে শেয়ার করতে পারি। এটা কে বোধহয় বলে বন্ধুত্ব। যদিও বাবা-মা সবার খুব কাছের। অনেকেই বাবা-মায়ের সাথে সব কথা শেয়ার করে। কিন্তু আমার বাবার সাথে আমার এই বন্ধুত্ব টা একটু অন্যরকম যেটাকে আমি সব সময় খুব মিস করি। আমার সবচেয়ে কষ্টের সময় গুলোতে আমার বাবা এমনভাবে বন্ধুর মত আমার সাথে মিশতেো যে আর কোন বন্ধুর প্রয়োজন হতো না। আজও আমার বাবা আমাকে এমন হবে বন্ধুর মতো মিশে যে আমার যে কোনো কষ্ট যে কোন খারাপ লাগা আমার বাবার মুখের দিকে তাকালে আমি ভুলে যেতে পারি।
এরপর পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে যখন আমি স্কুলে ভর্তি হলাম। তখন আমার খুব বেশি ভালো বন্ধু ছিল না। কারণ আমি সবসময় চুপচাপ থাকতাম। তেমন কারো সাথে মিশতে পারতাম না বলে তেমন বন্ধু হতোনা।এরপর কয়েক মাস পরে আমার ক্লাসের একটি ছেলের নাম ছিল আরিফ। সে আবার আমাদের বাসার পাশেই থাকতো আমি জানতাম না। কিছুদিন পরে তার সাথে একসাথে যাতায়াত করতাম স্কুলভ্যানে। প্রতিদিন যেতে যেতে তার সাথে আমার খুব ভাল একটা বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল। সে অনেক হাসিখুশি ছিল।
তারপর এই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে আরিফ অন্য স্কুলে ভর্তি হয় আমি অন্য স্কুলে ভর্তি হই। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা ভালোই ছিল। যেহেতু আমাদের বাসার কাছাকাছি ওরা ভাড়া ছিল। আমাদের বাসায় সবসময় যাতায়াত করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের এসএসসি পরীক্ষার আগে ওর বাবা মারা যায়। তখনও অনেকটা বখাটের মত তৈরী হয়ে যায়। ততদিনে ওরা অন্য জায়গায় বাসা নিয়েছিল।তারপর এসএসসি পরীক্ষার পরে হঠাৎ একদিন খবর পাই যে কারা যেন আরিফ কপ মেরে ফেলেছে। যদিও খুব খারাপ লেগেছিল। খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু আমি ওকে দেখতে যেতে পারিনি। পুলিশি ঝামেলা ছিল।এভাবে আমি আমার জীবনের প্রথম বন্ধু কে হারিয়ে ফেলি। আজও আরিফের কথা আমার খুব মনে পড়ে।
আমাদের শহরে একটা গার্লস স্কুলে আমি পড়তাম। হাইস্কুলে জীবনে অনেক বন্ধু তৈরি হলে সবার সাথে বন্ধুত্ব টিকে নি।সেই স্কুলের সেতু ও বিপা নামে দুইজন বন্ধুর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। তাদের সাথে একসাথে আমরা একটি কোচিং এ ভর্তি হই। সেই কোচিং এ গিয়ে আমাদের অনেক বন্ধু তৈরি হয়।আমরা যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন বৃত্তি পরীক্ষার জন্য আমাদেরকে অনেক চাপ দেওয়া হয় পড়াশোনার। কোচিং থেকে অনেক চাপ আমার বাসা থেকেও পড়াশোনায় অনেক চা।প একদিন আমাদের কোচিং এর পড়া ঠিক মতো হয়নি বলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কোচিং ফাঁকি দিয়ে একটা জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন বিপা সেতু সতেজ অভিজিৎ নিয়ন আমরা সবাই মিলে একটা বাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে সেই স্মৃতিগুলো আজ ওস্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করে।
সেই বয়সটাতে না ছেলে বন্ধুদের সাথে মেশা বারণ ছিল পরিবার থেকে। আর বন্ধুদের সাথে একা একা বাইরে যাওয়া আরো কঠোরভাবে নিষেধ ছিল। তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে সেদিন আমরা বাইরে গিয়ে অনেক মজা করেছিলাম।স্কুল কোচিং করে বাড়ি ফিরতে দেরি হতো বলে দুইটা করে টিফিন নিয়ে যেতাম। তো সেদিন আমি একটাতে নুডুলস আরেকটাতে খিচুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই মেঘলা দিন টাতে বসে সবার যখন প্রচুর ক্ষুধা লেগে ছিল তখন সবাই সবার টিফিন গুলো ভাগ করে খেয়ে ছিলাম। সবাই মিলে বলছিলাম এভাবে মাঝে মাঝেই আমরা বেড়াতে আসবো। আর সবাই সবার টিফিন গুলো ভাগ করে খাব।কোচিং শেষ হওয়ার আগের মুহূর্তে আমরা সবাই যে যার বাসায় চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে পরিবারকে না জানিয়ে আর কখনো বেড়াতে যাইনি। কারণ বাসায় জানতে পারলে অনেক বকা খেতে হতো।সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। অনেকের সাথে এখন ওযোগাযোগ আছে।
জীবনে চলার পথে আরো অনেক বন্ধু হয়েছে। অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে যেহেতু এখন যোগাযোগ মাধ্যম অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছোটবেলার সেই বন্ধুদের কথা আজও ভুলতে পারেনি। তাদের কথা আজও অনেক বেশি মনে পড়ে। মনে হয় যেন সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারলে ভালো হতো। আর ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে যখনই দেখা হয় তখন মনে হয় যেন আমি অনেকটা ছোট হয়ে যাই।