সিলেট ভ্রমণ: ঢাকা থেকে সিলেট ভ্রমণ (প্রথম পর্ব)

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে ঢাকা থেকে সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।

আমার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা ছিল যে, একদিন সিলেট ঘুরতে যাবো। সিলেট ঘুরতে যাওয়ার মতো তেমন একটা যাওয়ার সাথী ছিল না, সেজন্য যাওয়া হয়নি। বেশ কিছু দিন আগে আমি আমাদের বেশ কিছু বন্ধুর সাথে সিলেট ভ্রমণের কথা শেয়ার করি, তাঁরা ও আমার সাথে সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়। আমরা সকলেই একত্রিত হয়ে একটি তারিখ ঠিক করে নিলাম। তারিখ টি ছিল ২৬ শে নভেম্বর। আমরা ২৬ শে নভেম্বর সকাল বেলা সকলেই একত্রিত হয়ে রংপুর থেকে ঢাকা বাসের মাধ্যমে চলে যাই। মূলত আমাদের ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে রাখা ছিল।আর ট্রেনের সময় ছিল রাত দশটা। আমাদের ঢাকায় পৌছাতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল।তাই আমরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন না গিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

আমরা সাভারে এসে অনেক বড় একটি জ্যামের মধ্যে পড়ছিলাম বলেই আমাদের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়া হয়নি। যাইহোক আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে জ্যামের মধ্যে আটকে পড়ার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাই। আমরা গিয়ে সেখানে নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর আমরা সকলেই মিলে রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে চলে আসি। স্টেশনের মধ্যে এসে আমার বেশ কিছু সময় ধরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ট্রেন টি একদম সময় মতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যায়। এরপর আমরা আমাদের ক্রয়কৃত সিট খুঁজতে শুরু করলাম। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের সিট পেয়ে যাই। আমরা আমাদের আসনে বসে পড়লাম।

আমরা যে বগির মধ্যে উঠেছিলাম সেই বগির মধ্যে প্রায় সকলেই সিলেট ভ্রমণ করার জন্য যাচ্ছিল। আমরা সকলের সাথে পরিচয় হলাম। সেখানকার বিভিন্ন জন বিভিন্ন জেলার ছিল। তবু ও আমরা সকলেই মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করছিলাম।এক পর্যায়ে এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেল।সে মূলত একজন গায়ক ছিল।এক পর্যায়ে আমরা সকলে মিলে ভাবলাম গান বলবো।গায়ক ভাইয়া অল্প কিছু সময়ের মধ্যে একটি গান শুরু করে দিলো। আমাদের আশেপাশের বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে সহ তার গলার সাথে গলা মিলাতে শুরু করলাম। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের পুরো বগি গানে মেতে উঠলো।

এক পর্যায়ে আমাদের বগির মধ্যে আশেপাশের বেশ কয়েকটি বগির লোক চলে আসে গান শোনার জন্য।ক্রমে ক্রমে আমাদের গায়কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।আর আমাদের যত বেশি গায়ক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তত বেশি গানের মধ্যে মজা হচ্ছিল।এক পর্যায়ে আমাদের বগির মধ্যে বেশ কয়েকজন রেলওয়ে পুলিশ চলে আসে। তারা আমাদের বগির মধ্যে এতো সুন্দর একটি পরিবেশ দেখে অবাক হয়ে যায় এবং তাঁরা ও আমাদের সাথে গান পরিবেশন করার পাশাপাশি গান গুলো ভিডিও করতে শুরু করে। আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর একটি ভ্রমণ ছিল এটি। আমরা সেখানকার কাউকে চিনি না, কিন্তু আমরা তবুও সেখানে অনেক বেশি সুন্দর একটি সময় উপভোগ করেছিলাম।

ঢাকা থেকে সিলেট ভ্রমণ করার কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আপনারা হয়তো সকলেই অবগত আছেন যে, সিলেটে ট্রেনে যাওয়ার সময় পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।আর এতো সুন্দর একটি দৃশ্যের মধ্য দিয়ে ট্রেনের মধ্যে যাওয়ার অনুভূতি একটু অন্যরকম। আমরা ট্রেনে ভ্রমণের পুরোটা সময় জুড়েই গানের মধ্যে সম্পৃক্ত ছিলাম। বিশেষ করে আমার কাছে গান এবং ট্রেনের বগির প্রতিটি মানুষের ব্যবহার আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছিল। আমরা সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে একদম ভোর বেলা পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানে ট্রেন থেকে নেমে সকল ভাই ও বোন গুলোর শেষ দেখা করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ২৬ তারিখ রাতের ট্রেন ভ্রমণের কথা মনে থাকবে।

সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।