বর্ষার দিনে গ্রামের হাটে ভয়ঙ্কর এক ঘটনা প্রতক্ষ্য করাsteemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  2 years ago 

child-817373_1920.jpg
Copyright Free Image Source : PixaBay


ছোটবেলার কথা সবারই অল্প বিস্তর মনে থাকে । আসলে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার মুহূর্তের মধ্যে ঠিক কোনগুলো মনে থাকবে আর কোনগুলো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না । অনেক সময় খুবই তুচ্ছ কোনো ঘটনা বহুদিন বাদেও স্মৃতির পাতায় জ্বল জ্বল করে, কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাই আর মনেই পড়ে না কখনো ।

আমার ছেলেবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে, কিন্তু অধিকাংশই হারিয়ে ফেলেছি বিস্মৃতির গর্ভে। আজকে আমাদের এখানে সকাল থেকে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে । এমনই এক বর্ষার দিনে ছোটবেলায় বাবার সাথে আমাদের গ্রামের এক হাটে গিয়ে এক ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম । ধাঁ করে সেই ঘটনাটি হঠাৎই মনে পড়ে গেলো । ভাবলুম আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার ছোটবেলার সেই ঘটনাটি ।

এর আগে আমার একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম যে আমার ছোটবেলাটা যেহেতু গ্রামে কেটেছে তাই গ্রামের হাটে-বাজারে অনেক গিয়েছি । বাবার সাথেই মেইনলি হাটে যেতাম, তবে দাদুর সাথেও গিয়েছি অনেকবার । আমাদের গ্রাম ছিল একদম অজ পাড়াগাঁ যাকে বলে । সপ্তাহে রবি আর বৃহস্পতিবার হাট বসতো আমাদের গ্রামে ।

বাবা আমাকে নিয়ে প্রায় কোনোদিনই হাটে যেতে চাইতো না । খুব বিরক্ত করি এ জন্য । কিন্তু, শেষমেশ আমার জেদের কারণে নিয়ে যেতে বাধ্য হতো । এমনকি বর্ষাকালেও হাটে যেতাম বাবার সাথে । তো এমনই এক বৃষ্টিমুখর দিনে ছিল হাটবার । দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হঠাৎ করেই থেমে গিয়ে রাঙা রোদ উঠলো । আমিও হাটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ।

বাবা সেদিনও আমাকে যথারীতি বৃষ্টি, রাস্তার কাদা আর আছাড় খাওয়ার ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে চাইলো । কিন্তু, সেসব শোনার পাত্র আমি ছিলাম না । তাই হাফ প্যান্ট আর হাফ শার্ট পরে খালি পায়ে রেডি হয়ে গেলুম হাটে যাওয়ার জন্য । অগত্যা আর কি করার, বাবাও ছাতা দিয়ে আমাকে যথাসাধ্য ঢেকেঢুকে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়, হাটের অভিমুখে ।

বর্ষার শুরু । তাই রাস্তায় তখন খুব বেশি কাদা জমেনি । প্যাচপ্যাচে সেই কাদা মাড়িয়ে আমরা চললুম দু'জনে হাটে । হাটে যাওয়ার আমার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল নানান ধরণের খাবার খাওয়া । বিশেষ করে আমড়া মাখা আর বুট মাখা । তো হাটে পৌঁছাতেই দেখা গেলো বৃষ্টির কারণে সেদিন অর্ধেকও দোকান আসেনি । তবে, আমার প্রিয় আমড়াওয়ালা আর চানা-বুট-ছোলা-ঘুগনী ওয়ালা হাজির ।

আর এসেছে প্রচুর আখ ও বাতাবি লেবু । বাবা যথারীতি ব্যস্ত হয়ে পড়লো বাজার করতে । আমিও পিছু পিছু আমড়া চাটতে চাটতে বাজার করা দেখতে লাগলুম । আমার মুখ এক মুহূর্তও বিরাম নেই । আমড়া শেষ হলে বুট, বুট শেষ হলে ছোলা, ছোলা শেষ হলে ঘুগনি, এরপরে গজা, বাতাসা, মুড়কি এসব ।

একসময় বাবার বাজার করা শেষ হলো । ঠিক সেই মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে বর্ষা নামলো আবার । বাবা আমার মাথায় ছাতা ধরে হাটের পাশে একটা চালাঘরে নিয়ে এলো । এই চালাঘরটি ছিল একজন তেলের কারবারির । হাটের পাশেই ছোট্ট একটি খাল । এই খালের নাম হলো হাটখোলার খাল । তো এই হাটখোলা খাল দিয়ে গ্রামের মুদি দোকানদার থেকে মহাজনদের নৌকো আসতো হরেক মাল বোঝাই করে শহর থেকে ।

এই খালের দুই পাড় ছিল খুব প্রশস্ত । এক পাড়ে হাট বসতো আর অন্য পাড় থাকতো উন্মুক্ত । শীতের দিনে সেই পাড়ে ধানের বোঝা নামাতো চাষীরা । তো সেবার বর্ষার কিছুটা আগে আগে এক পাল বেদেরা এসে সেই খোলা প্রান্তরে ডেরা বাঁধলো । ভয়েতে আমরা ছোটরা কোনোদিনও সেই বেদেদের ডেরার আশেপাশেও যাইনি । শুধু দূর থেকে দেখতাম কালো কালো মাথার চুলে জট বাঁধা পিঙ্গলবর্ণ এক গাদা ছেলেপিলে ও মেয়েরা হুটোপুটি করতো । বর্ষা বেশি পড়লেই সব হয় ঢুকে যেতো তাদের তাঁবুতে আর না হয় তাদের নৌকোতে । কম করে হলেও আট-দশটা নৌকো ছিল বেদেদের । এই বেদেদের কাছে সত্যি সত্যিই কিন্তু সাপ ছিল । কারণ, আমাদের বাড়িতেই এসেছিলো দেখাতে এরা - সাপ খেলা ।

তো সেদিন চালাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খালের অপর পাড়ের অস্থায়ী বেদে বস্তির দিকে চেয়ে ছিলাম । দেখি কি সেই বৃষ্টির ভিতরই বেদেদের একটি বছর আটকের বাচ্চা মেয়ে, কোলে আবার একটা ছোট বাচ্চা নিয়ে খালের যেখানে বাঁশের সাঁকো ছিল সেই বাঁশের সাঁকোর একপ্রান্তে এসে দাঁড়ালো । বলতে ভুলে গিয়েছি এই খালের ওপর তখনও কোনো ব্রিজ হয়নি, জাস্ট একটা বাঁশের সাঁকো ছিল পারাপারের জন্য ।

সেই বেদে মেয়েটি বাচ্চা কোলে নিয়েই বাঁশের সাঁকো বেয়ে কিছুটা উঠলো । সেই বৃষ্টির মধ্যে কাদা মাখা পায়ে বাঁশের সাঁকো পার হওয়া যে কি ভীষণ রিস্কি তা আমিও সেই বাচ্চা বয়সেও সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম । আর খালের ওপরের বাঁশের পুল গুলো ধনুকের মতো পিঠ উঁচু হয়ে থাকে, কেননা তলা দিয়ে যাতে পালতোলা নৌকোর যেতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য।

জীবনযুদ্ধে অবিরত সংগ্রাম করা সেই বেদেদের মেয়েটি প্রায় সাঁকোর মাঝামাঝি চলে এলো । দমবন্ধ করে আমি সেই দৃশ্যটি দেখছি । আমার নিজেরই বুক দুরু দুরু করছে । অনেকটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে এখন মেয়েটি । প্রায় দো'তলা বিল্ডিং এর সমান উচ্চতা । আসলে একটা বাচ্চা মেয়ের বৃষ্টির মধ্যে কাদা পায়ে এতটা দূর আসাই একদম অসম্ভব, তায় তার কোলে আবার একটি বাচ্চা । কিন্তু, ভুলে গেলে চলবে না, ওরা বেদে ।

এরপরেই কিন্তু ঘটে গেলো সেই ভীষণ ঘটনাটি । হঠাৎ করেই বাচ্চা মেয়েটি সাঁকো থেকে ছিটকে নিচে পড়লো । কোলের বাচ্চাটিও হাত থেকে ছিটকে পড়েছে । একটা হৈ হৈ রব উঠলো হাটের মধ্যে । বাচ্চা মেয়েটির মাথার একটি পাশ খালের তুলতুলে নরম পলিমাটির মধ্যে নিমেষে সেঁধিয়ে গেলো । তবে, কোলের বাচ্চাটি একটু দূরে কাদার ওপরে চিৎ হয়ে পড়েছে ।ভাগ্যিস সেদিন সেই সময়ে ভাটা চলছিল । ভাটার কারণে তারা পড়লো শুধুমাত্র পলিমাটির কাদার মধ্যে । না হলে দুজনেরই মৃত্যু অবধারিত ছিল ।

হাটে একটু হৈ হৈ উঠেই আবার সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । না কেউ সেদিন বাচ্চা মেয়েটিকে সাহায্য করতে ছুটে যায়নি, কেউ আহা উহুও করেনি । এমনকি আমার বাবাও উদাস ভাবে তাকিয়ে ছিল । শুধু আমি কয়েকবার বাবাকে বলেছিলাম ওদেরকে কাদা থেকে টেনে তুলতে । শুনে বাবা হেসেছিলো । বলেছিলো ওরা বেদেদের ছেলে মেয়ে । তারাই এসে তুলবে ওদের ।

মনে আছে একটা পৃথিবী যেনো দুলে উঠেছিলো আমার সামনে সেদিন । তার মানে কি বেদেরা আমাদের মতো মানুষ নয় ? ওরা কি জন্তু জানোয়ার এর মতোই ? না এ প্রশ্নের জবাব আমি পেয়েছিলাম শুধু ধমকে । আমি চেয়ে দেখেছিলাম অনেকক্ষন মেয়েটি ও বাচ্চাটি সেই কাদার পরেই পড়েছিল । তথাকথিত ভদ্র সমাজের এক দঙ্গল মানুষের চোখের সামনে সে যেনো বিস্ময়মাখা চোখে ব্যঙ্গ করে চলেছিল ।

এই ঘটনাটি আমি কখনো ভুলতে পারিনি । সেই সময়টা আমাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছিল এই ঘটনাটি । রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার উঠে বসতাম দুঃস্বপ্ন দেখে । বড় হয়েও কোনোদিনও ভুলতে পারলাম না । সেই বেদে মেয়েটির আসহায়ভঙ্গিতে ভদ্র সমাজের এক হাট মানুষের সামনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা, বাবার সেই কথাটি "ওরা বেদে, আমরা কেনো তুলবো ওদের" - এসব ভুলতে পারি না । একটা চাপা বেদনা, একটা কষ্ট আজও ব্যথিত করে তোলে আমার হৃদয় ।

"এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই ...
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই ...
এই মানুষের ভীড়ে আমার সেই মানুষটা নাই।"


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)


তারিখ : ০৩ মে ২০২৩

টাস্ক ২৫৪ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : bc02ad9cbe661f05304b5aaa8096970d1d7eb56b26797dea5ea1cddd3c1b0728

টাস্ক ২৫৪ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

দাদা আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে কিছুটা সময় যেমন হাসিতে ফেটে পড়েছি , তেমনিভাবে কিছুটা কষ্ট পেয়েছি। আসলে মানুষের কাছে মানবতা নেই বললে চলে। তা বাজারে অসুস্থ হওয়া লোকটির অবস্থা দেখেই বোঝা যায়। হাসলাম এ কারণে যে আপনার মুখ তো আর বিরাম ছিল না। চলছে তো চলছে এজন্য ট্রেনের মতোই চলছে। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে আজ আমি কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ছেলেবেলা চলে গিয়েছিলাম।

খুবই কষ্ট লাগলো ব্যাপারটি জেনে। একজন মানুষ মরে যাচ্ছে আর আমরা জাত নিয়ে বসে আছি। তারা কি মানুষ না? একজন মানুষ বিপদে পড়লে কি কেউ জাত,ধর্ম নিয়ে বসে থাকে?

আপনার এই গল্পটি পড়ে আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছে, আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কারণ ছোটবেলায় আমিও আমার বাবার সাথে অনেক হাঁটে গিয়েছি। বাবা যখন হাটে যাওয়ার জন্য রেডি হত আমিও তার পিছু ধরতাম। খুব ভালো লাগতো বাবার সাথে হাঁটে যেতে। বাবা প্রায়ই আমাকে নিয়ে যেত হাঁটে। ছোটবেলায় বাবার সাথে অনেক হেঁটেছি সেই স্মৃতিগুলো এখন মনে পড়ছে।

প্রথমে পোস্টটি পড়ে মজা পাচ্ছিলাম। কারন আগে কোন এক পোস্টে পড়েছিলাম দাদা আপনার আমড়া কাগজ সহ চেটে খাওয়ার গল্প।আপনি খাওয়ার জন্য ই হাটে যেতেন।যাই হোক ওমন সাঁকো আমিও ভয় পেতাম।বিশেষ করে আমার নানু বাড়ি থেকে নানুর ভাইয়ার বাসায় যেতে সাঁকো পরতো।কি যে ভয় কাজ করতো আমার বলে বুঝাতে পারব না।আর বেদের মেয়েটি ছোট তার উপর আবার কোলে একজন।আমিতো ভেবেছিলাম পানিতে পরে গেছে।ছোট বাচ্চাটিকে আর পাওয়াই যাবে না।সত্যিই খুব কষ্টেরই ঘটনা দাদা।আপনি এতোদিনেও যখন ভুলে যাননি।তখন আকাশ কালো করে যখনই বৃষ্টি হবে আর আপনি একান্তে থাকবেন তখনই এই ঘটনাটি আপনার মনে আসবেই।ধন্যবাদ দাদা শেয়ার করার জন্য।

আসলেই দাদা আমাদের ছোটবেলার অনেক কথাই আমরা ভুলে যাই। তবে কিছু কিছু স্মৃতি সত্যিই ভুলা যায় না।

আমিও পিছু পিছু আমড়া চাটতে চাটতে বাজার করা দেখতে লাগলুম । আমার মুখ এক মুহূর্তও বিরাম নেই । আমড়া শেষ হলে বুট, বুট শেষ হলে ছোলা, ছোলা শেষ হলে ঘুগনি, এরপরে গজা, বাতাসা, মুড়কি এসব ।

আপনার এই কথা গুলো পড়ে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ। দাদা এতো কিছু খেয়ে আপনার মুখ ব্যাথা করেনি নাকি। আপনি ছোট থেকেই ভোজনরসিক ছিলেন। তবে শেষের দিকটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। মাত্র আট বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে, কোলে একটি শিশু নিয়ে এতো উচু সাঁকো থেকে পরে গেলো। কিন্তু কেউ সাহায্য করলো না কাঁদা থেকে উঠতে। এই ব্যাপারটা সত্যিই খারাপ লাগার মতো। তবে আপনি এতো ছোট থাকতে কতটা গভীরভাবে সেই ব্যাপারটা ভেবেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন সেটাই ভাবছি। আপনি আসলেই সহৃদয়বান একজন ব্যক্তি। আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।

please visit my post 🙂

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ।
আপনি ঠিক যেভাবে যেভাবে বলেছেন দাদা আমিও কল্পনাতে সেভাবে সেভাবে ভাবছি। আর মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে ঘটনাটা ঘটেছে। এতো নিখুঁত ও মনোযোগ দিয়ে আমি পড়েছি। এভাবে কল্পনা করার মূলত একটি কারণ হচ্ছে আমাদের হাটে সাথেই একটি খাল আছে ‌। আর সেভেবে চোখের সামনে সব ভাসছে। আসলেই পুরো ঘটনাটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।😞

এই বেদেদের ব্যাপারে আমি নিজেও দেখেছি যে গ্রামের মানুষের একটা অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। তাদেরকে আসলে সবসময়ই অবহেলার চোখে দেখা হয়। আমাদের গ্রামেও বছরের একটা সময় তারা আসতো এবং দুই তিন মাস তাবু গেড়ে মাঠের ভেতর থাকত। কিন্তু তাদেরকে এতটাই অবহেলা করা হতো যে কুকুর বিড়াল হয়ত তাদের থেকে অনেক বেশি ভালো। যদিও এই ব্যাপার গুলো এখনকার যুগে হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে দাদা তোমার ঘটনাটা শুনে সত্যিই আমার কাছে অনেক বেশি কষ্ট লেগেছে। কারণ বেদের মেয়ে হয়েছে বলে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা যাবে না...! অন্তত বাচ্চাটার কথা চিন্তা করে হলেও তো সবার এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

অনেক খারাপ লাগলো বিষয়টি জানার পরে। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। কে কোন জাতের সেটা বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো আমরা সবাই মানুষ। যতদিন আমরা এটাকে বাস্তবে পরিণত করতে না পারবো ততদিন আমরা মানুষ হিসাবে গণ্য হতে পারব না। এত ছোট একটি বাচ্চাকে নিয়ে ছোট একটি মেয়ে পড়ে গেল আর কেউ তাকে সাহায্য করল না এটা খুবই একটি খারাপ বিষয়। তবে দাদা আমি এত কম বয়সে এতটা গভীরভাবে ভেবেছেন এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো। আসলে ভালো কিছু উপলব্ধি করার ক্ষমতা সবার থাকে না।

বেদে মেয়েটির কথা শুনে সত্যিই খারাপ লেগেছে। আসলে আমরা মানুষরা বড় অদ্ভুত। তারাও তো মানুষ। তারাও তো কারো না কারো আপনজন। ছোট্ট মেয়েটি আর তার কোলে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটি বেঁচে গেল কি মরে গেল এতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। আসলে যার আপনজন কষ্ট পায় সে শুধু সেই কষ্ট বুঝতে পারে। আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে দু চোখের কোনায় পানি চলে এসেছিল দাদা।

অসাধারণ লিখেছেন দাদা আসলে ছোট কালের অনেক স্মৃতি মনে আছে। সে বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া কিংবা হেঁটে হেঁটে বাজারে যাওয়ার দৃশ্য। অনেক সময় পার পিছলে পড়ে যাওয়া পুরা শরীরে কাদা মেখে আবার ফিরে আসা। আপনি তো হাটে যাইতেন শুধু খাওয়ার জন্যই আমড়া চাটতে চাটতে আবার গজা, ঘুগণী তো পুরো বাজার শেষ করে দিতেন মনে হয়? সত্যি বেদে মেয়েটির জন্য অনেক খারাপ লাগছিল। তখনকার সমাজের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ খুব বেশি খারাপ লাগতো নিজের চোখেও দেখেছি। বেদেদেরকে কেউ পছন্দ করত না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ওরাও মানুষ আমরাও মানুষ সবার পরিচয় হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এত ভেদাভেদ কেন জানিনা? আমাদের সমাজটা এরকম অনেক শ্রেণীবিন্যাস করে চলাফেরা করে মানুষ। এখনো আছে অনেকেই দেখবেন যে ক্লাসিফিকেশন মেনে চলে। কাদের সাথে কার বসবাস কে কার সাথে মিশবে সেই চিন্তা ভাবনায় এখনো মেতে আছেন মানুষ।

খুবই দুখ জনক

একদম ঠিক বলেছেন দাদা,ছোটবেলায় ঘটা অনেক তুচ্ছ ঘটনা মনে থাকে কখনও আবার অনকে গুরুত্তপূর্ণ ঘটনা মন থেকে হারিয়ে যায়।আমার ক্ষেত্রেও এটা দেখেছি আমি।আপনি নিজেই তো বাচ্চা ছিলেন,আর সেই সময়ের ঘটনা আপনার এখনও মনে আছে।আর এটা অবশ্য একটু সিরিয়াস ঘটনা ছিল,এজন্যই ভুলতে পারেননি।সেদিনের বেদে বাচ্চা মেয়েটি কাদায় পড়ে গিয়েছিল আর একটি বাচ্চাসহ এটা এখনও ভুলতে পারেননি।আপনি তখন আপনার বাবার ধমক খেয়ে থেমে গেলেও আপনার নিষ্পাপ মন চেয়েছিল তাদের সাহায্য করতে।নিজে তখন সাহায্য করার মতো বয়সে থাকলে ঠিকই সাহায্য করতেন হয়তো।তবে একটা বিষয় আমড়া মাখা আর বুট মাখা খাওয়ার বয়স থেকেই মানুষের মধ্যে এতো মায়া যার কাজ করতে পারে,,,সে তো নিসন্দেহে একজন প্রকৃত মানুষ হবেন এটাই আমার মনে হয়েছে পোস্টটি পড়ে।ভালো লেগেছে অনেক লেখাটি।ধন্যবাদ দাদা চমৎকার পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

দাদা তোমার শেয়ার করা ঘটনাটি পড়ে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করলাম। বেদেদের অন্য দৃষ্টিতে দেখা এই ব্যাপারটা আমিও অনেক জায়গায় দেখেছি। আমাদের সব সময় মানুষ মানুষের জন্য এই নীতি নিয়ে চলা উচিত । মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করা কখনো উচিত নয় । কেউ বিপদে পড়লে তৎক্ষণাৎ তাকে গিয়ে সাহায্য করা উচিত । তোমার চোখের সামনে যে ঘটনাটি ঘটেছিল এটি বেদের মেয়ের সাথে না ঘটে যদি তো অন্য কারো সাথে ঘটতো তাহলে নিশ্চয় মানুষ এগিয়ে যেত সাহায্য করতে কিন্তু সেই কাজটি তখন কেউ করেনি তারা বেদে এই জন্য। সমাজ কতটা পিছিয়ে রয়েছে মানসিকতার দিক থেকে তা তোমার এই ঘটনার মাধ্যমে তুমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে দাদা।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

"এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই ...
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই ...
এই মানুষের ভীড়ে আমার সেই মানুষটা নাই।"

এই গানটা শুনলে এমনিতেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়, সমাজের মাঝে থাকা ভদ্র পোষাকের আড়ারের চেহারাটা সম্মুখে বেরিয়ে আসে, কারন আমি জীবনের নির্মম নিষ্ঠুরতা খুব কাছ হতে দেখেছিলাম, তাই বাস্তবতা আমি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম।

আপনার কাহিনী পড়লে সব সময়ই ভালো লাগে, বেশ উৎসাহ নিয়ে শুরু হতে পড়লাম, খাবারের বিষয়টি দারুণ মজা দিচ্ছিলো কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম, করুণ একটা দৃশ্যের কল্পনা করলাম আর অনুভব করলাম আপনার ভেতরে জাগ্রত হওয়া মানবতার আর্ত চিৎকার।

দাদা আপনার লেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো, প্রথম দিকে যেমন মজা পেয়েছি শেষের দিকে এসে তেমনি বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছি । আসলে বিপদের সময় উঁচু নিচু বর্ণ ভেদাভেদ বিষয়টা বেশ ব্যথিত করে তুলল ।সে বাচ্চা বয়সেই বিষয়টা আপনার হৃদয়ে দাগ কেটেছিল আজও মনে রেখেছেন জেনে বেশ অবাক লাগলো । তবে বাবার সঙ্গে হাটবাজারে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ অন্যরকম । সে আনন্দ আর কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না । যাই হোক বেশ ভালো ছিল । ধন্যবাদ ।

দাদা আজকে আপনার ঘটনাটি পড়ার সময় ভেবেছি মেয়েটি অথবা তার কোলের বাচ্ছাটি পানিতে পড়ে মারা পড়েছে। কিন্তু শেষের অংশটা পড়ে মনে অনেক কষ্ট পেলাম। আজকের বেদে বলে মেয়েটিকে ‍উদ্ধার করতে কেউ যায়নি। তাদের ভাগ্য তাদেরকে বাচিঁয়ে রেখেছে। আর কিছু বলার নেই। ধন্যবাদ দাদা।

ছোট মেয়েটি যখন সাঁকো থেকে পড়ে গেল, তারপর থেকে যতই পড়ছিলাম ততই যেন কষ্ট পাচ্ছিলাম। খুব ভোরবেলার দিকে লেখাটা পড়ছিলাম, তবে এই ভোরবেলার সময় এমন লেখা পড়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। হৃদয়ের ভিতরে যেন খামচা দিয়ে গেল।

আমার ও মনে হয় মাঝে মাঝে এমন বেদেরা কি মানুষ নয়।যাই হোক ঘটনা পড়ে আসলেই ভয়ংকর এবং খারাপ লাগলো।বাচ্চাটিকেও কেউ সাহায্য করতে এলো না।ছোটবেলা গুলো মনে হয় প্রায় সবারই এমন হয় বাবার পিছু নেওয়া। ভালো লাগলো ধন্যবাদ

দাদা আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার ছোটবেলার একটি স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় আমিও আমার বাবার হাত ধরে আমাদের গ্রামের বাজারে যেতাম। দাদা আমি মনে করি, রক্ত মাংসের দেহে গড়া মানুষের মধ্যে ভিন্ন কোন জাত নেই। আমাদের সকলের একটাই পরিচয়, সেটা হলো আমরা মানুষ জাতি। আর মানুষ জাতি হয়ে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। দাদা ওই সময় ওই খানকার মানুষদের শতভাগ উচিত ছিল যে,বেদেদের মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসা। কিন্তু সেটা করা হয়নি। আসলে দাদা কাজের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারি। কিন্তু আমরা অন্যান্য জীবের তুলনায় শ্রেষ্ঠ জীব, মানুষ জাতি। এটা আমাদের সকলকেই মনে রাখা উচিত।

জানেন তো দাদা লেখাগুলো পড়ে ভেতরে অদ্ভুত একটা চাপা কষ্ট হচ্ছিল। আর আমার মনে হয় সমাজে এখনো জাত পাতের এই বাচ বিচার করা হয়। মানুষ হয়ে অন্য মানুষের প্রতি এভাবে বিরূপ আচরণ কিভাবে করে এটাই বুঝে পাইনা । মাঝে মাঝে মনে হয় ঈশ্বর আমাদের সবকিছু দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু কোন একটা কিছু কম করে দিয়ে যদি আমাদের বিবেকটা একটু বেশি করে দিত তাহলে বোধ হয় আরো ভালো হতো।

মানুষে মানুষে এই জাতপাতের ভেদাভেদ হয়তো রয়েই যাবে। আপনার পোস্ট পড়ে মনে হচ্ছে সেই বেদে মেয়েটার অসহায় চাহনিটা আমি দেখতে পাচ্ছি। তবে সেই চোখে কোনো রাগ নেই। মনে হচ্ছে সে আমাদের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করছে আর বলছে তোমরা না সভ্য মানুষ?

আসলে দাদা আমরা মানুষই এই ভেদাভেদ সৃষ্টি করি। আসলে আমাদের সবাইকে এই মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নতুবা একদিন আমাদের ধ্বংস নির্ধারিত।

একদমই তাই হয় দাদা ,ছোটবেলার হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু খুবই সাধারণ কোনো ব্যাপার হয়তো স্মৃতির পাতায় থেকে গেছে। আপনি তো দেখছি ভালই দুষ্টু ছিলেন দাদা ,হাহাহা। আপনার প্রিয় আমড়া ওয়ালা, চানা বুট আর ঘুগনি ওয়ালা ছিল দেখে তো আপনি নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়ে গিয়েছিলেন। আপনার তো উদ্দেশ্য ছিল ওটাই, হি হি হি।

দাদা ঘটনাটা পড়ে আমি তো পুরো থমকে গেলাম ,কি ভয়ানক দৃশ্য!! ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে তার কোলে আবার আরেকটি ছোট বাচ্চা!! মাটির মধ্যে তার মুখটি প্রায় অর্ধেকটা ঢুকে গেছে, খুবই কষ্ট লাগছে দৃশ্যটি কল্পনা করলে। এত মানুষ থাকলেও তারা বেদে বলে তাদের দিকে কেউ এগিয়ে যায়নি। খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। এই ঘটনাটা পড়ার পর আমিও হয়তো কখনো ভুলতে পারবো না।

শুরুর দিকে পড়তে পড়তে খুব মজা পাচ্ছিলাম।কিন্তু এই মেয়েটি আর কোলের বাচ্চা মেয়েটির ঘটনাটা পড়েই মনটা খারাপ হয়ে গেল।আসলে বেদেরাও যে মানুষ সেটা হয়তোবা সেদিন কারো মাথায়ও আসে নি।মানবিকতা থাকলে হয়ত সেদিন অন্য কোনো চিত্র দেখা যেত।এই যে বিষয়টা আপনার মাঝে হয়ত তুমুল ঝড় তুলে যাচ্ছে।তবে ছোটবেলার এই বিষয়টা এখনো মনে আছে জেনে অবাক হয়ে গেলাম।
তবে আমড়ামাখা, ছোলা-বুট,বাতাসা এসব খাওয়ার জন্য যে হাটে যেতেন,বাড়িতে আসার পর কি ঠুসঠাস তাল পড়ত😜

  ·  2 years ago Reveal Comment