পুরী ভ্রমণ - পর্ব ১৩

in hive-129948 •  10 months ago 

কোনারকের সূর্য মন্দির দেখা শেষে আমরা খুব দ্রুত ধবলগিরির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লুম । এমনিতেই বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিলো । শীতের বেলা তিনটের পরে খুব দ্রুত সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে । কোনারক থেকে প্রায় দেড় ঘন্টার পথ উড়িষ্যার ধবলগিরি । আমরা বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ধবলগিরিতে পৌঁছে গেলুম ।

ধবলগিরি একটা অনুচ্চ পাহাড় । এই পাহাড়ের শীর্ষদেশে ধবলগিরি দেবীর (দেবী দুর্গার আরেকটি রূপ)মন্দির এবং একটি বৌদ্ধ শান্তি স্তুপ রয়েছে । ১৯৭২ সালে জাপানের এক বুদ্ধ সংঘ উড়িষ্যার সরকারের সাথে মিলিতভাবে ধবলগিরির শীর্ষদেশে এই বৌদ্ধ শান্তি স্তূপের নির্মাণ করেন । ধবলগিরি যে জায়গায় অবস্থিত এই স্থানে বহুবছর আগে এক স্বাধীন রাজ্য ছিল । নাম কলিঙ্গ রাজ্য । গোটা ভারতবর্ষ তখন শাসন করতেন মৌর্য সম্রাট অশোক । মৌর্য সাম্রাজ্য খুবই শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও এবং এই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সুদূর আফগানিস্তান অব্দি হওয়া সত্ত্বেও কলিঙ্গ রাজ্য কখনোই জয় করা সম্ভবপর হয়নি ।

মগধরাজ সম্রাট অশোকের পিতামহ এবং পিতা বছরের পর বছর চেষ্টা করেও কলিঙ্গ জয় করতে পারেননি । তাই মগধের সিংহাসনে আরোহন করেই সম্রাট অশোক বিশাল এক সামরিক অভিযান করেন কলিঙ্গ রাজ্যের বিরুদ্ধে । কলিঙ্গের রাজা ছিলেন তখন মহারাজ অনন্ত পদ্মনাভন । তিনি এই ধবলগিরি সংলগ্ন নদীর পাড়ে সম্রাট অশোকের বিপুল বাহিনীর মোকাবেলায় অবতীর্ন হন । কথিত আছে ধবলগিরির সন্নিকটে দয়া নদীর তীরে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ।

লক্ষ লক্ষ কলিঙ্গ সেনানীর বুকের তাজা রক্তে দয়া নদীর জল রক্তবর্ণ ধারণ করে । মগধ সেনা ছিল দুর্ধর্ষ, আর সম্রাট অশোক নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন । কলিঙ্গসেনারা খড় কুটোর মতো স্রেফ উড়ে যাচ্ছিলো দুর্ধর্ষ মগধ সেনার সামনে । কিন্তু, তারা হাল ছাড়তে নারাজ । যায় প্রাণ যাক কিন্তু দেশকে তারা পরাধীন হতে দেবে না । এই মানসিকতায় অসীম বিক্রমে লড়ে যাচ্ছিলো কলিঙ্গসেনারা । ফল হলো দলে দলে কলিঙ্গ সেনার মৃত্যু । প্রায় এক বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল এই যুদ্ধ । অবশেষে সম্রাট অশোক জয়লাভ করেন । এই যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকেও হার মানায় । এক বছর যুদ্ধের পর পুরো কলিঙ্গ রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয় সম্রাট অশোকের হাতে । সেই সাথে পুরো দেশ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয় ।

বহুযুদ্ধের নায়ক সম্রাট অশোক অব্দি এই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান । হৃদয় কেঁদে ওঠে তাঁর । মহাপ্রাক্রমশালী সম্রাটের হৃদয় অবশেষে শিশুর মতো কেঁদে ওঠে । চন্ডশোক থেকে ধর্মাশোকে পরিনত হন তিনি । ভগবান বুদ্ধের পাদপদ্মে নিজেকে উৎসর্গ করেন । এক মহাপ্রাক্রমশালী যুদ্ধবাজ রাজা হতে শান্তির বাণী প্রচারকে পরিণত হন তিনি । এভাবেই, ভারতবর্ষের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি হন সম্রাট অশোক । তবে, বহু চেষ্টা করেও কলিঙ্গবাসীর ক্ষমা পাননি সম্রাট অশোক ।

ধবলগিরির সেই যুদ্ধপ্রাঙ্গনে আজও একটি অশোক স্তম্ভ আছে । যুগ যুগ শান্তির অমোঘ বার্তা প্রেরণ করে সেটি । যুদ্ধ নয়, মানবজাতির উন্নতিসাধন শান্তিই একমাত্র কাম্য ।


ধবলগিরি অবস্থিত পর্বতেশ্বরী দেবী পার্বতীর মন্দির ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৩০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


দূরে ওই দেখা যাচ্ছে ধবলগিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত বৌদ্ধ শান্তি স্তুপের চূড়া ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৩০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


ধবলগিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত বৌদ্ধ শান্তি স্তুপ }
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


ধবলগিরির উপর থেকে সেই কলিঙ্গ-যুদ্ধ প্রান্তর দেখা যাচ্ছে ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৪০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


শান্তিস্তূপের গায়ে বিভিন্ন কারুকার্য খচিত রয়েছে, সেই সাথে গৌতম বুদ্ধের জীবনীর বিভিন্ন চিত্র খোদাই করা রয়েছে ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৪৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন ভঙ্গিমার ধ্যানরত মূর্তি।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৩ টা ৫০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


IMG_20231231_153258.jpg

IMG_20231231_153323.jpg

ধবলগিরিতে কিছু সেলফি ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ০৪ টা ০০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫৫৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 555 trx)


তারিখ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

টাস্ক ৪৭৭ : ৫৫৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫৫৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : e2bc17ab502d83a4931b37b0f342ae9eb1ef4257a12a8c9ef609ec58e38fbfc2

টাস্ক ৪৭৭ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

»»——⍟——««

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আবারো এসে গেলুম আরো একটি NFT আর্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আমার আজকের NFT আর্টটিও ঠিক পূর্বদিনের মতনই একটি সূর্যোদয়ের ডিজিটাল আর্ট ।

এক পাহাড়ি উপত্যকায় সূর্যোদয় হচ্ছে, একজন অভিযাত্রী সেই মনোরম সূর্যোদয় অবলোকন করছে । দূরে, ওই অনুচ্চ পাহাড়চূড়ো দেখা যাচ্ছে । আর সেই সব পাহাড়চূড়োর উপর দিয়ে উপতক্যার দিগন্তরেখায় উঁকি দিচ্ছে ভোরের সূর্য তার অপরূপ শোভা ছড়িয়ে ।


NFT ART


Screenshot 2024-01-26 004135.png

magical sunrise in vibrant colors

কলিঙ্গসেনাদের সাহসের কথা শুনে আমি বিস্মিত। ছোট একটি দেশ এক বছর পর্যন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করে ছে। যদিও তারা হেরেছে তবে তারা প্রশংসা পেয়েছে। সম্রাট অশোক এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। যার ফলে জয় পেয়েছে। এই ব্লগটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদদাদা।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

This is another interesting post on your Puri travel.

There are many places visited by you and your family Dada.

The bhuddist Shanti stupa was well designed, it looks great.

Thank you for sharing this interesting post with us @rme Dada ❤️❤️

পুরী ভ্রমণের ১৩ তম পর্ব থেকে অনেক ইতিহাস জানতে পারলাম। বিশেষ করে যুদ্ধবাজ সম্রাট অশোক থেকে শান্তির বাণী প্রচারক অশোক হয়ে উঠার ইতিহাস। আসলেই যুদ্ধ শুধু ধবংস করতে পারে। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, এই বাণী ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বব্যাপী।বন্ধ হোক, চলমান আধিপত্য ও যুদ্ধ। পোস্টিটি ছবি গুলো অসাধারণ হয়েছে দাদা। দাদা, আপনার ভ্রমণ কাহিনীর মাধ্যমে অনেক অজানাকে জানতে পারছি। ধারাবাহিক ভাবে পুরী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা আপনার জন্য।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

কলিঙ্গসেনাদের সাহসের কথা শুনে আমি বিস্মিত। ছোট একটি দেশ এক বছর পর্যন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। যদিও তারা হেরেছে তবে তারা প্রশংসা পেয়েছে। সম্রাট অশোক এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। যার ফলে জয় পেয়েছে। এই ব্লগটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদ দাদা।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

বহু চেষ্টা করেও কলিঙ্গবাসীর ক্ষমা পাননি সম্রাট অশোক ।

এতো অত্যাচার করার পর আসলে কেউ ক্ষমা করতে পারে না। তবুও অবশেষে সম্রাট অশোক যুদ্ধবাজ রাজা হতে শান্তির বাণী প্রচারকে পরিণত হন, এটা জেনে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো দাদা। আসলে সৃষ্টিকর্তা কখন কার উপর রহমত নাযিল করেন,সেটা তিনিই খুব ভালো জানেন। এই পোস্টটি পড়ে ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারলাম। প্রতিটি ফটোগ্রাফি এককথায় দুর্দান্ত হয়েছে দাদা। তাছাড়া বৌদি এবং আপনার সেলফিটা দারুণ হয়েছে দাদা। সব মিলিয়ে পোস্টটি বেশ উপভোগ করলাম। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

Posted using SteemPro Mobile

দাদা পুরীি ভ্রমনের এই পর্বেও আপনি বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সেই সাথে তুলে ধরেছেন সুন্দর একটি ইতিহাস। যে ইতিহাস হয়তো অনেকেরই জানা নেই। ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর একটি ইতিহাস আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

লেখাটা যখন পড়ছিলাম ভাই, তখন যুদ্ধের ব্যাপারটা জেনে বেশ ব্যথিত হয়েছিলাম, বিশেষ করে নদীর পানি রক্ত লাল হয়ে গিয়েছিল এই ব্যাপারটা আমাকে বেশ পীড়া দিচ্ছিল। তাছাড়া ছবিগুলোর সঙ্গে লেখাগুলোর বেশ সাদৃশ্য আছে। সেলফিতে দুজনকেই বেশ ভালো লাগছিল, শুভেচ্ছা রইল 🙏

এই ইতিহাস জেনে নিজের মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি নিজেই এই যুদ্ধের ময়দানে দাড়িয়ে সব কিছু দেখছি। আর আপনাদের দুজনকে বেশ মানিয়েছে দাদা আর বউ। ❤️🥀

Posted using SteemPro Mobile

ইতিহাসে এই বিষয়টা পড়েছি দাদা। আজকে তোমার কাছ থেকে পুনরায় বিষয়টা জানতে পারলাম। এক বছরের এই যুদ্ধে এত বেশি ভয়াবহতা হয়েছিল যা সত্যিই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে হার মানাবে। সম্রাট অশোক এই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে নিজেই শান্তির বার্তা নিয়ে মানুষের মাঝে দিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে যুদ্ধ কখনই কাম্য নয়। মানবজাতির মধ্যে শান্তি থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কলিঙ্গ বাসীর উপর এত বেশি অত্যাচার হয়েছিল এজন্য হয়তো তারা কখনোই সম্রাট অশোককে মন থেকে ক্ষমা করতে পারেনি। তবে যুদ্ধের পরে সম্রাট অশোক যে শান্তির বাণী সবার মধ্যে দিয়েছিল তা পরবর্তীতে মানুষের উপকারে এসেছে।

সম্রাট অশোক সম্বন্ধে আপনার এই পোস্ট থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমি শুনেছিলাম কলিঙ্গ যুদ্ধে এক লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো। কিন্তু আপনার পোস্ট পড়ার পরে বুঝতে পারছি সেখানে আসলে মৃত মানুষের সংখ্যা ছিলো আরো অনেক বেশি। তবে মানুষের মনের অনুশোচনা হচ্ছে সবচাইতে বড় ক্রাশ চিত্ত অনুশোচনা একজন রক্ত লোভী শাসককে ধর্ম প্রচারকে পরিণত করতে পারে। এটা হচ্ছে সবচাইতে বড় শিক্ষা। দারুন লিখেছেন দাদা।

কলিঙ্গসেনাদের আসলে অনেক সাহস আছে তারা অনেক বছর ধরে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে
এখানে তারা হেরে গেলেও তাদের অনেক সফলতা আছে। আপনার পুরী ভ্রমণের মাধ্যমে অনেক মূর্তির ফটোগ্রাফি দেখতে পেলাম। আবার অনেক পুরানো ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর কাটানো মূহুর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।