পুরী ভ্রমণ - পর্ব ০৬

in hive-129948 •  8 months ago 

আজকে আবারো হাজির হয়ে গেলুম আরো কিছু মূর্তির ফোটোগ্রাফস নিয়ে । এই সকল প্রাচীন যুগের মূর্তি কোনারকের সূর্য মন্দির থেকে এক প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত । কোনারকের সূর্য মন্দিরের কাছেই গড়ে উঠেছে এই মিউজিয়াম । এটি ইন্ডিয়ান আর্কিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত । আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে পূর্ব গঙ্গার রাজা নরসিংহদেব (বর্তমানের পুরী) এই মন্দির স্থাপন করেন ।

ক্রমাগত আক্রমণ, ধংসকার্য আর লুন্ঠনের জেরে সূর্য মন্দির তার সকল গৌরব ও গরিমা হারাতে শুরু করে । মন্দিরে সব চাইতে ভয়াবহ ধংসকার্য পরিচালিত করেন দুর্ধর্ষ কালাপাহাড় । তিনি মন্দিরের প্রধান গর্ভগৃহ সম্পূর্ণ ধ্বংস করেন এবং অধিকাংশ দেবী মূর্তি ভগ্ন করেন । এরপরের বড় ধ্বংসলীলা পরিচালনা করেন স্বয়ং নরসিংহদেব । তিনি মূল মন্দিরের প্রভূত ক্ষতিসাধন করেন এবং সমস্ত ধন দৌলত লুন্ঠন করেন । তৃতীয় সব চাইতে বড় আঘাতটা আসে খুরদার রাজ্যের রাজা পুরুষোত্তমদেবের পুত্র যুবরাজ নরশিমাদেবের কাছ থেকে । তিনি মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ সূর্যদেবকে পুরীতে স্থানান্তর করেন এবং মন্দির গাত্র থেকে সকল অলংকার ও কারুকার্য খচিত প্রস্তরখন্ড লুন্ঠন করে পুরীতে নিয়ে গিয়ে পুরীর সূর্য ও চন্দ্রদেব মন্দির স্থাপন করেন ।

এরপরে পুরী যখন মারাঠা কর্তৃক অধিকৃত হয় তখন আরেক প্রস্থ লুন্ঠন এবং ধংসকার্য সম্পন্ন হয় কোনারকের সূর্যমন্দিরে । সূর্য মন্দির প্রাঙ্গনে বিশালকায় এক কারুকার্যময় নাট মন্দির ছিল যেটি মারাঠা লুঠেরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে । কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি ঠোঁকে পর্তুগিজ জলদস্যুরা । কোনারকের সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন সমস্ত অঞ্চল এই জলদস্যুদের করায়ত্ত ছিল । পর্তুগীজ জলদস্যুদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে মন্দিরটির সমূহ ক্ষতি সাধিত হয় এবং একটা সময় পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলাকীর্ন হয়ে পড়ে । ধীরে ধীরে মাটি চাপা পড়তে থাকে এবং একটা সময় সমস্ত মন্দিরই মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় ।

প্রায় ৩০০ বছর ধরে মাটি চাপা থাকার পরে ইংরেজ শাসনামলে বড়লাট লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালে মন্দিরটিকে পুনরুদ্ধার করেন । অনেক বছর ধরে খনন কার্য সম্পন্ন করে অবশেষে লোকচক্ষুর সামনে উন্মীলিত হয় মন্দিরের অসাধারণ সব শিল্প নৈপুণ্য এবং প্রচুর কারুকার্যখচিত মূর্তি ও প্রস্তরখন্ড । এই মূর্তিগুলোই এখন মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে ।


তিন মস্তক সম্বলিত ত্রিনেত্র শিবের মূর্তি ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


বিষ্ণুর মৎস্য অবতার।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


তৎকালীন সমাজের একজন রাজপুরুষ ও তাঁর সহধর্মিনীর যুগল মূর্তি । রাজপুরুষের হাতে খোলা তলোয়ার আর মহিষীর কোলে দুগ্ধপানরত সন্তান ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


মৃগয়ায় রাজা । এক হস্তে অস্ত্র, অন্য হস্তে মৃত হরিণ ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


তৎকালীন সমাজের কিছু টুকরো চিত্র মূর্তি খোদাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । প্রথম মূর্তি হলো গৃহবধূর রূপসজ্জা । দ্বিতীয় মূর্তি নৃত্যরত এক নর্তকীর । তৃতীয় মূর্তি অস্ত্র হাতে এক যোদ্ধার ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


বিশালাকায় এক যুদ্ধের অশ্ব এবং তার পাশে দু'যোদ্ধার যুদ্ধাস্ত্র হাতে মূর্তি । পুরোটাই বেলে পাথর কুঁদে তৈরী করা । অপূর্ব শিল্প ।
তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
সময় : দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট
স্থান : কোনারক, উড়িষ্যা, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

»»——⍟——««

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আজকে আবারো এসে গেলুম আরো একটি এনএফটি আর্ট নিয়ে । এই আর্টটা হলো কাগজ ভাঁজ ভাঁজ করে একটি গ্রেট হোয়াইট শার্ক তৈরী করার আর্ট । এটা এখনো মিন্ট করা হয়নি । এতদিন যাবৎ ট্রন ব্লকচেইনে NFT আর্ট মিন্ট করেছি । এবার তাই ভাবছি ইথারিয়ামে এই NFT আর্টটি মিন্ট করবো ।

OpenSea কে সিলেক্ট করেছি এই কাজের জন্য । এখন জাস্ট একটা OpenSea একাউন্ট খুলে ফেললাম । কাল আমার এই ETH ওয়ালেটটা ফান্ড করে নিচের NFT আর্টটা মিন্ট করে দেব । দেখুন তো কেমন হলো আর্টটা -

shark_origami.jpg

এটাই প্রকৃত সত্য দাদা, ইতিহাত কখনো চাপা থাকে না। সময়ের সাথে সময়ের গতিতে সেটা আবার ফিরে আসে এবং নতুনভাবে উন্মোচন হয়। বেশ সুন্দর এবং কারুকাজের কিছু দৃশ্য ‍উপভোগ করলাম। অনেক ধন্যবাদ

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



The 6th episode of your Puri trip is contained with so much fun.

This extra statue you have shared are all looking great.

We are thankful to lord Curzon for restoring the temple in 1904.
Thank you @rme for sharing this information

感谢您为我普及这个知识

দাদা,আপনার ভ্রমনমূলক পোষ্টগুলি পড়ে যেমন আমরা সেই জায়গা দেখতে পারছি ,তেমনি সুন্দর নিদর্শন দেখতে পারছি।আর তার সঙ্গে আপনার সহজ সরল ভাষায় কাহিনীর বর্ননা পড়ে বেশি ভালো লাগছে।নরসিংহদেবের কাহিনী জেনে ভালো লাগলো, আর মূর্তিগুলো এতটা সুন্দর ও নিখুঁত যেটা পুরোনো ঐতিহ্যের ধারা বহন করে।ধন্যবাদ আপনাকে।

দাদা এই সিরিজের ফটোগ্রাফিগুলো যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। এই পর্বে শেয়ার করা প্রতিটি মূর্তি জাস্ট অসাধারণ।

প্রায় ৩০০ বছর ধরে মাটি চাপা থাকার পরে ইংরেজ শাসনামলে বড়লাট লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালে মন্দিরটিকে পুনরুদ্ধার করেন ।

এতো বছর মাটিতে চাপা থাকার পর, এই মন্দিরটিকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, ভাবতেই অবাক লাগছে দাদা। এক কথায় বলতে গেলে অসাধ্যকে সাধন করেছেন বড়লাট লর্ড কার্জন। মন্দিরটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল বিধায়, মূর্তিগুলো সবাই এখন দেখতে পাচ্ছে। এই পোস্টের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। পাশাপাশি এতো সুন্দর সুন্দর মূর্তি দেখার সুযোগ হলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

Posted using SteemPro Mobile

nice

ইতিহাস আমাদের সব সময় শিক্ষা দেয়। এত ধ্বংস সত্ত্বেও, এই মন্দিরের অংশটি আমাদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এখনও বিদ্যমান। প্রাচীন যুগের এমন সুন্দর হাতের কারুকাজ।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আজ থেকে ১২০০ বছর আগে এই মন্দির স্থাপন করা হয়েছিল, শুনে অবাক হলাম দাদা। সেই সাথে এই মন্দির বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বস্তু আপনি আপনার পোস্টের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, কিভাবে এই মূর্তিগুলো মিউজিয়ামে আসলো সেই বিষয়গুলো অনেক চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে মূর্তিগুলোর কারুকার্য এবং আপনার ফটোগ্রাফি দুটোই অনেক দারুন ছিল দাদা। অনেক শিক্ষনীয় নতুন কিছু জানতে পারলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল দাদা।

HOW I FINALLY RECOVERED MY LOST CRYPTO: I lost all my crypto to a fake investment scam to someone I met online. I started searching for help legally to recover my funds, and I came across a lot of Testimonies about HACKER STEVE. I contacted him, providing the necessary information and it took him and his team of experts about 36 hours to locate and help recover my stolen funds. I am so relieved and the best part was, the scammer was located and arrested by local authorities in his region. I hope this helps as many out there who are victims. I strongly recommend Steve professional services for assistance with swift and efficient recovery (Crypto, Credit card, Forex, NFT, etc) on Gmail: [email protected]

এবারের পর্বেও বেশ কিছু তথ্য জানলাম, বিশেষ করে ইংরেজরা যে উদ্যোগ নিয়েছিল মন্দির পুনরুদ্ধার করার জন্য, এটা জেনে কিছুটা হলেও ভালো লাগলো। বেশ উপভোগ করলাম, এ পর্বের ফটোগ্রাফি গুলো।

বেলে পাথরকে আস্তে আস্তে খোদাই করে তৈরি করা বিশাল আকৃতির ঘোড়ার মূর্তিটি সত্যি অবাক করার মতো। এত বিশাল এক পাথরকে কেটে এত বড় মূর্তি তৈরি করা এক গুণী শিল্পীর কাজ অবশ্যই।

বারবার এত এত লুণ্ঠন ও আক্রমণের পরে ব্রিটিশরা খোদাই করে এতগুলো জিনিস উদ্ধার করেছে এটিই অনেক বড় একটি বিষয়। তাহলে আগে নিশ্চই আরো অনেক অনেক কিছু ছিল এই সূর্য মন্দিরে।

কোনারকের সূর্য মন্দির নিয়ে আপনার কয়েকটি পোষ্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আসলে ইতিহাস খুজলে কত তথ্য পাওয়া যায়। বেলে পাথর কুঁদে দিয়ে তৈরী যুদ্ধের অশ্ব এবং তার পাশে দু'যোদ্ধার যুদ্ধাস্ত্র হাতে মূর্তিটির মধ্যেই কত তথ্য বহন করছে। সব মিলিয়ে দারুন ছিল। ধন্যবাদ।

পুরী ভ্রমন- পর্ব ৬ ও দাদা অনেক তথ্য অনেক ইতিহাস বের হয়ে এলো। আমরা আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আর আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আরও বেশি ভালো লাগলো। সত্যিই দাদা ইতিহাস কখনো চাপা থাকে না।এক সময় তা বের হয়ে আসেই।মূর্তিগুলোর কি সুন্দর কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।ধন্যবাদ দাদা শেয়ার করার জন্য।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

মূর্তিগুলো দেখতে আসলেই দারুন। তবে আপনার এই পোস্ট থেকে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যগুলো জানতে পারলাম সেটা হচ্ছে মন্দিরের উপর আক্রমণের ইতিহাস। ৩০০ বছর মাটির নিচে চাপা থাকার পরে মন্দিরটি যে ওখানে রয়েছে সেটা মানুষ কিভাবে বুঝতে পারলো সেটাই চিন্তা করছিলাম। অবশ্য এজন্য বড়লাট লর্ড কার্জনকে একটা ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। দারুন ছিলো পোষ্টটি দাদা। ধন্যবাদ আপনাকে।

These images are very amazing sir 😍