চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।
জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি।
আমার বাংলা ব্লগ।
আমার বাংলা ব্লগ এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে এসে নতুন একটা জীবন খুঁজে পেয়েছিলাম। তবুও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে বাস্তবে জীবন যাপন মানুষকে অনেক অসহায় করে দেয়। তবে আমার প্রাণের বাংলা ব্লগে এসে অনেক কিছু জেনেছি, বুঝেছি, শিখেছি। এবং যেখানে আছে হাসি আনন্দ সেই সাথে অর্থ উপার্জন করার মাধ্যম। আমার বাংলা ব্লগ কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতা 22 শেয়ার করো জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আসলে সত্যি কথা বলতে আমার বাংলা ব্লগের এডমিন মডারেটর আমাদের প্রতিনিয়ত চান আমাদেরকে নতুন নতুন কনটেন্ট উপহার দেওয়ার জন্য। এবং সেই সাথে আমাদেরকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য রাখেন বড় এমাউন্টের প্রাইজবন্ড। আর আমাদেরকে এত সুন্দর একটি কনটেস্ট উপহার দেওয়ার জন্য সবার প্রতি রইল অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে আজ আমরা পেয়েছি সোনালী দিন। প্রযুক্তির ব্যবহারে হাতের মুঠোয় পেয়েছি সারা বিশ্ব। এবং বিজ্ঞানের বিষম্ম কর আবিষ্কারের ফলে আজ আমরা পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় দেখতে পাই। তাই মানব জীবনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে জনজীবন খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে। এবং কি দ্রুততার সাথে যে কোন কাজ সম্পূর্ণ করতে পারছি।
ছোটবেলায় দেখেছিলাম যখন নিজের আত্মীয়-স্বজন বাবা অথবা ভাই দেশে কিংবা বিদেশে চাকরি করতো তখন খোঁজখবর নেওয়ার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হতো। কখন আসবে চিঠি, আবার উত্তরও পেতে পেতে প্রায় এক দুই মাস লেগে যেতো। আমরা অনেকেই রানারের গল্প শুনেছিলাম, আসলে ভাবতে গেলে সে সোনালের অতীতের দিনগুলো একটু অবাক লাগে। বর্তমান এবং কি অতিত এর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান ছিল।
৯০ দশকে দেখেছিলাম প্রথম গ্রামীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিটি সেল ফোনের ব্যবহার। তখন পুরো এলাকা জুড়ে কারো হাতেই মোবাইল ছিল না। বিশেষ করে গুটি কয়েকজন ছাড়া। আর যাদের কাছে মোবাইল ছিল তাদের ভাব ছিল অন্যরকম। এবং কি মানুষের কাছে মহা জ্ঞানী গুণী। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো ফোনে কথা বলার জন্য। বিদেশ থেকে ফোন আসলেও টাকা দিতে হয় আবার বিদেশে ফোন করলেও টাকা দিতে হয়। তবে মানুষ সচারচর বিনা প্রয়োজনে ফোন করতো না। এবং কি কথাও বলা প্রয়োজন মনে করত না। কারণ তখনকার খরচ ছিল ব্যয়বহুল। প্রতি মিনিট দেশ অনুসারে বিভক্ত ছিল সর্বনিম্নমান ছিল 50 টাকা। তখন মোবাইল ফোনে কথা বলাটাও ছিল একটা স্বপ্নের মত।
৯০-৯৫ দশকের দিকে কিছু কিছু মানুষের কাছে সিটি সেল ফোন ছিল। তার দুই তিন বছর পর সবার হাতের নাগালে চলে আসলো নোকিয়া ১১০০ মডেলের হ্যান্ডসেট। হ্যান্ডসেট টি ছিল বাটন। আর এতটাই মজবুত ছিল যে ঢিল মেরে আম অথবা বরই পাড়া যেত অতি সহজে। তবে দুই একজন যাদের হাতে ছিল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতাম তারা কিভাবে সাপের গেমস খেলে। আবার অনেক সময় দেখা যেত না, দেখার সৌভাগ্যটাও হতো না, ধরা তো দূরের কথা।
জীবনে প্রথম মোবাইল সিম কিনার অনুভূতি।
আমি ২০০০ সালে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম ফুফাতো ভাইয়ের কাছে চাকরির সুবাদে। ফুফাতো ভাইয়ের চিটাগং নিউমার্কেটে একটা মোবাইল দোকান দিয়েছিল। প্রথম যেদিন ওনার দোকানে যাই সেদিন আমার হাতে ১০০০০ টাকা দিয়ে বলেছিল একটা একটেল সিম কিনে নিয়ে আসার জন্য। তখন মনে হয়েছে যেন কলিজাটা ধুপ ধুপ করছে। মোটামুটি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, একসাথে এতগুলো টাকা। আর সামান্য একটা সিমের এত টাকা দাম। সব জল্পনা কল্পনা ত্যাগ করে ভয় ভীতিকে দূরে ঠেলে চলে গেলাম মার্কেটে। এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যা সত্যিই বাসায় প্রকাশ করতে পারবো না। যাইহোক ভালোই ভালোই দোকানে যাওয়ার পর সিমটা অতি সহজে আমাকে দিয়ে দিল। অবশ্য ভাইয়া ফোন করে দিয়েছে প্লাস আমাকে নাম্বার ঠিকানা এড্রেস সবকিছু দিয়ে দিয়েছিল। আর সিমটি ছিল পোস্টপেইড, একসাথে এক মাসের জন্য টাকা লোড করা লাগতো। সে কারণে তেমন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি।
জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি।
সলটা ছিল ২০০১, দুই ভাই এই একই সাথে কাজ করি রহিম ইষ্টিল গ্রুপে। তখন আমি কাজ শিখছি আর ভাইয়া ওয়ার্কশপের একজন সহকারী মিস্ত্রি ছিল। এক মাস অপেক্ষা করার পর বেতন পেয়ে মোবাইল কেনার অনুভূতি জাগলো। আর মনে মনে ভাবতাম এতদিন এত বছর পর মনের আশা আকাঙ্ক্ষা টুকু জল্পনা-কল্পনা করাটুকু হয়তো সত্যি হবে। এতটাই বেশি উচ্ছ্বাসিত ছিলাম যা কখনো বলে কিংবা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। মার্কেটে দুই তিনটা দোকানে ঘুরলাম দেখলাম মার্কেটে যাওয়ার পর অনুভূতিটা একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে গিয়েছিল। মনটা মলিন হয়ে গিয়েছিল এত সুন্দর সুন্দর দামি সেটগুলো থাকতে এত কম দামে মোবাইল নিতে হবে। কারণ উপার্জন টাই ছিল সীমিত। নোকিয়া ১১০০ মডেলের একটা সেট পেলাম দাম ছিল ২৮৫০ টাকা। সেকি আনন্দ সেট কেনার পর দুই ভাই সাথে বড় ভাইকে নিয়ে নাস্তা পানি খেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় গিয়ে দুই ভাই চিন্তায় পড়ে গেলাম একে তো ব্যাচেলর এই সময় আমাদের হাতে মোবাইল রাখাটা খুব কষ্টের ব্যাপার। তাই অনেক জল্পনা কল্পনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম এই মোবাইল ফোনটা বড় বোনকে দিয়ে দেব। যে চিন্তা সেই কাজ।
বোনের হাতে জীবনে প্রথম মোবাইল দেওয়ার অনুভূতি।
দুই ভাই ঈদের সময় যখন বাড়িতে গেলাম, তখন বোনকে যে ফোন করে বলবো তার জন্য ফোন কিনেছি সেরকম কোন ব্যবস্থা ছিল না। আর এটা আমার বোনের জন্য ছিল স্পেশাল একটা সারপ্রাইজ। রাতের বেলায় যখন বাড়িতে গেলাম, এমনকি ব্যাগ থেকে বের করে বোনের হাতে মোবাইলটা দিলাম বোনের আনন্দ এবং কি দুই ভাইয়ের আনন্দ মনে হয় যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুখ ছিল। আর জীবনে প্রথম উপার্জনের টাকা দিয়ে টাকা দিয়ে কেননা। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে পরিবারের মা-বাবা ভাই-বোনকে কিছু দিতে পারাটা যে কত বড় আনন্দের ব্যাপার যারা দিয়েছেন তারাই একমাত্র সেই অনুভূতিটা উপভোগ করতে পারবেন।
জীবনের কিছু পরিবর্তন।
দিন যায় বছর যায় আস্তে আস্তে মাস ফুরায় এভাবেই চলছে জীবন। একটা সময় গিয়ে যেকোনো নতুন মডেলের মোবাইল দেখলেই কেনা হতো নিজের সাধ্য অনুযায়ী। তবে সে প্রথম মোবাইল কেনার অনুভূতির মত কখনো কোন কিছু ফিল করিনি। মোবাইল লাগবে নিয়েছি, প্রয়োজনীয় জিনিস এটাই ভাবতাম। আজ আমার বাংলা ব্লগে সেই অতীতের আনন্দের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতিটার মত আর কখনো তেমন কিছু অনুভব হয়নি, আর বাকি জীবনে হবেও না মনে হয়।
আর বর্তমানে এমন একটা সময় এসেছে, মোবাইল আমাকে অনেক কাঁদিয়েছে। মোবাইলে অনেক স্মৃতি জড়ানোর পর হঠাৎ করে মোবাইল যদি নষ্ট হয়ে যায় কিংবা চুরি হয়ে যায় তখন আঘাতটা খুব ভিতর থেকে লাগে। এভাবে কষ্ট পেয়েছি বহুবার, আমার বাংলা ব্লগ প্লাটফর্মে আসার পরেও আমার দামি দুইটা সেট, একটা হারিয়ে গেছে, একটা নষ্ট হয়ে গেছে, একটা চেঞ্জ করেছি। এখন আর আগের মতো সেই অনুভূতি হয় না। এখন মোবাইল কিনতে কিনতে অনেকটা বিরক্তি হয়ে গেছি। তবুও নিজের চাহিদায় প্রয়োজনে কিনতে হয় নতুন মোবাইল। তবে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতির মত আর কখনো হবে না, সেটা আমরা ভালো করেই জানি।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আশা করি সকলের কাছে ভালো লাগবে। ভালো মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আবারো হাজির হবো নতুন কিছু নিয়ে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি গুলো খুব সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনি খুব সুন্দর করে অনুভূতিগুলো সাজিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। পড়ে খুব ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এবং নিজের অনুভূতি গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করে খুবই ভালো লাগছে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো ছিলো আপনার অনুভূতি। শুনেছিলাম সেই সময় সিম এর দাম নাকি অনেক ছিলো। আপনিই কিনেছেন ১০০০০ টাকা দিয়ে । আর এখন দেখুন এই দামে মোটামুটি ভালো একটি স্মার্ট ফোন কেনা যায়। আর সিম তো রিচার্জ করেই পাওয়া যাচ্ছে। তুমুল পরিবর্তন ঘটেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কালের বিবর্তনের সবকিছুই পরিবর্তন হয়। তাই সময় অনেক দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ধারায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ! বেশ দারুন লাগলো আপনার প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আসলে আমি মনে করি এরকম অনুভূতি প্রত্যেকটা মানুষেরই রয়েছে তবে হ্যাঁ এক্ষেত্রে এক এক জনের এক এক রকম। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে খুবই চমৎকার ভাবে আপনার মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতিটা শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন সবারই কিছু না কিছু স্মৃতি থেকে যায়। তবে প্রকাশ করার ধরন ভিন্ন। উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit