চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।
উৎসবেতে যোগ দেওয়ার জন্য কাজকর্ম পড়ে রইল সব
প্রতিযোগিতা যখন স্কুল জীবনের তিক্ত অনুভূতি
তাইতো আমি অংশগ্রহণ করার জন্য নিয়েছি প্রস্তুতি
জীবনটা আমার ব্যর্থতায় ভরে গেছে এখন
প্রতিদিনই চিন্তিত আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব কখন
সবকিছু তুচ্ছ করে একদিকে ফেলে
স্কুল জীবনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে, চলে এলাম হেলে দুলে
আমার বাংলা ব্লগে বন্ধু-বান্ধবের চলছে আড়াআড়ি
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ফিরে যাব ছোট্ট সেই স্মৃতির বাড়ি
স্মৃতি মানে হইহুল্লোড় আনন্দ আর গান
হৃদয়ের মাঝে রয়ে গেল আমার বাংলা ব্লগের টান
তাইতো আমি সব সময় স্লোগান করি
আমার বাংলা ব্লগ, আমার প্রাণ।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমার মেজাজটা একটু খিটখিটে। আমি বন্ধু প্রিয় মানুষ, খেলাধুলা প্রিয় মানুষ এবং কি হাঁটতে হাঁটতে দৌড়াতে দৌড়াতে গান গাইতে পছন্দ করতাম। পরিবারে ১১ জনের ছোট যেহেতু আমি, সবাই আদরও একটু বেশি করে।আর দুষ্টামির জন্য মার ও বেশি হজম করতে হতো সবার মার। আবার বাহিরের কেউ যদি কখনো চোখ রাঙাতো তাহলে তো কথা নেই, আগে মার তারপরে কথা। এভাবেই শৈশবে বেড়ে ওঠা। তবে পরিবার থেকে পড়ালেখার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।
প্রাইমারি স্কুলের জীবনের প্রতিটা স্মৃতি যেন সোনালী। সেই স্মৃতিগুলো সব সময় চোখের সামনে ভেসে ওঠ আর সে প্রাইমারি স্কুলের বন্ধুগুলোকে কখনো ভুলা যায় না। সারা জীবন তাদের সাথে জড়িয়ে থাকে আত্মার টান। তাদের সাথে খেলাধুলা মারামারি কথাবার্তা বেঞ্চ থেকে ঠেলে নিচে ফেলে দেওয়া এবং কি একসাথে খেলাধুলা করা সারা জীবনও মুছা যায় না এই স্মৃতিগুলো। আর সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমার বিশ্বস্ত এবং কি আমার কাছের বন্ধু ছিল আমার নিজের আপন ভাই। যেহেতু দুজনে একই সাথে একই ক্লাসে পড়ালেখা করতাম। একই সাথে স্কুলে যাওয়া আবার একই সাথে বাড়ি ফেরা মজাটাই ছিল অন্যরকম। তবে ভাইয়াকে যদি কখনো কেউ মারতো তখন আমি মেরে চোখের পলকে উধাও হয়ে যেতাম। এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় গুণ হাহাহা।
আমাদের স্কুলের ছবিটা আমি অনেক দূর থেকে বাজারের পিছন থেকে তুলেছিলাম।
শিরোনামের যে নামটি দেখতে পাচ্ছেন এটা হচ্ছে আমার গ্রামের নাম। আর আমার গ্রামে স্কুল, আর সেই গ্রামের নামে স্কুলটার নামকরণ করা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশুনা অবস্থায় এত বেশি স্মৃতি জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারি এবং কি সেই স্মৃতিগুলো সারা জীবনের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে রয়ে যায়। চাইলেও ফেলা যায় না চাইলেও ভুলা যায় না। কোনভাবে না কোন ভাবেই সেই স্কুল জীবনের স্মৃতি গুলো ভেসে ওঠে।
ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে হতে একেবারেই সবার শেষে ভর্তি করিয়েছে বাবা। বাবার কাজের শেষ নেই, চেম্বার পারিবারিক কাজ সবকিছু মিলিয়ে আজ না হয় কাল এভাবে করতে করতে ভর্তি করাতে সময়টা একেবারেই শেষের দিকে। অবশেষে ভর্তি হয়েছি তখন রোল নাম্বার ছিল ১১৪। আর এই ১১৪ রোল নাম্বারটা আমাকে প্রতিটা সময় খুব কষ্ট দিত এবং কি মনমরা হয়ে থাকতাম। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেও লজ্জা বোধ করত, যে আমার রোল নাম্বার ১১৪। আমি ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষাটা পর্যন্ত দিতে পারিনি। ক্লাস সিক্সের একটি বছর আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। এই রোল নাম্বার সব সময় হতাশা ভুগতাম।কবে ১ থেকে ১০ এর ভিতরে রোল নাম্বার হবে। আর এতগুলো ছাত্র-ছাত্রীর সাথে পরীক্ষা দিয়ে ১ থেকে ১০ এর ভিতরে যেতে পারবো কিনা সব সময় মনের ভিতর একটা অজানা কষ্ট কাজ করতো।
একদিন লাঞ্চের সময় যে যার মত হুড়োহুড়ি চিল্লাচিল্লি করতে করতে বেরিয়ে গেলো। আমি মাঠ থেকে দুই চক্কর ঘুরে পুনরায় ক্লাস রুমে এসে বসে রইলাম। তখন নিজের শরীরটাও একটু খারাপ লাগছিল। আবার একটু ঝিমুনি আসছে, টেবিলের উপরে হাত দিয়ে হাতের উপরে মাথা দিয়ে কত কি ভাবছিলাম নিজের অজান্তেই। লাঞ্চে প্রায় ১৫ মিনিট পার হয়ে গেল, আমি তখন আবছা আবছা নিদ্রায়িত। হঠাৎ আমার এক বন্ধু এসে আমাকে ধাক্কা মেরে আমার পাশে বসতে চায় আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম। এবং কি চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছি এবং কি তাকে বসতেও দিচ্ছি না।
একটা সময় ধাক্কাধাক্কি করতে করতে আমার অতিরিক্ত রাগ উঠে গেল। দিয়ে বসলাম উত্তম মাধ্যম, এক ঘুষিতে নাক পেটে গেলো। তার শরীর থেকে নাক দিয়ে এত পরিমান রক্ত বের হচ্ছে যা দেখে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেছি। তখন নিজেই পাগলের মত ছুটোছুটি করছি কিভাবে রক্ত বন্ধ করা যায়। আর সেও আমাকে ধরতে দিচ্ছে না। এমন করতে করতে লাঞ্চ এর সময়ও শেষ। একে একে ক্লাস ভর্তি মানুষ, সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। পুরো স্কুল একটা ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেলো।
অবশেষে শিক্ষকরা এসে উপস্থিত হয়ে গেল, এত ভিড়ের মাঝে কে করেছে সেটা জিজ্ঞেস করার সময় নেই আগে মেডিকেলে নিতে হবে। তাকে সবাই ধরাধরি করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। চিকিৎসা করল অবশেষে স্কুলের অফিস কক্ষে নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল কে করেছে। আর আমি যখন দেখলাম তাকে স্কুল কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে তখনই আমি স্কুল থেকে হাওয়া হয়ে গেলাম। শিক্ষকরা তাকে ওয়ার্নিং দিয়েছে তোমার গাইডিয়ান এবং কি তুমি যার সাথে মারামারি করেছ তার গার্ডিয়ান নিয়ে এসো এরপর বিচার হবে। নয়তো তোমাদের দুজনকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে।
পরের দিন আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। যেকোন একটা বাহানা দিয়ে স্কুলে যায়নি। তবে বাড়িতে মারের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে আমাকে। দ্বিতীয় দিন মায়ের হাতে বোনের হাতে মার খেয়ে স্কুল ব্যাগটা নিয়ে স্কুলের দিকে যেতে বাধ্য করলো আমাকে। রাস্তায় সেই বন্ধুর সাথে দেখা, কিছুক্ষণ কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। পরে আমাকে বলতেছে তোর বাড়িতে কেউ কিছু জানে। আমি বলছি না কেন কি হয়েছে। বলছে যে স্যারেরা বলছে তোমার আব্বাকে আর আমার আব্বাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য। এই কথা শুনে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গেল। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম, স্কুলেও যাওয়া যাবে না, বাড়িতেও বলা যাবে না। আবার স্কুলে কামাই করা যাবে না, কঠিন তিক্ত অনুভূতি অনুভব করছি যা কাউকে বলে বা লিখে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়।
অবশেষে দুই বন্ধুর স্কুল কামাইয়ের আশ্রয় কেন্দ্রস্থল হল বাজারের বটগাছ। স্কুলের সময় স্কুলে এসে স্কুলের গেটে না ঢুকে সোজা চলে যেতাম বাজারে। বাজারে মাঝখানে বিশাল বড় একটা বটগাছ ছিল। দুজনেই বটগাছের উঠে স্কুল ছুটি হওয়ার সময় পর্যন্ত সেখানেই আড্ডা দিতাম। বটগাছের উপরে শুয়ে থাকতাম খেলাধুলা করতাম এভাবেই কেটে গেল প্রায় এক সপ্তাহ বেশি সময়।
একদিন আমি বন্ধুকে বললাম যে এভাবে তো চলবে না ধরা পড়ে যাব ধরা পড়লে তখন নির্ঘাত মেরেই ফেলবে, কিছু একটা চিন্তা-ভাবনা কর। তখন বন্ধুকে বললাম তুই আগে আগে ইস্কুলে যা ২/১ দিন ক্লাস কর পরবর্তীতে আমি যাব।
যে কথা সেই কাজ, সেই নিয়মিত ক্লাস করছে। তাকে শিক্ষকরা নানান ধরনের প্রশ্ন করছে তোমাদের গার্ডিয়ান আসছে না কেনো। তোমাদেরকে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না। ক্লাস শেষে তার সাথে আমার কথা হয়। ও তিন চারদিন ক্লাস করার পরেই একটা সময় স্যারেরা সবাই ভুলে গিয়েছিল যে কার সাথে কার মারামারি হয়েছে। অবশেষে আমি যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম সেদিন হাজিরা দিতেই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হল কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য। এতদিন স্কুল কামাই করার কারণ কি। তখন ভয়ে ভয়ে বললাম স্যার অতিরিক্ত জ্বর ছিল তাই স্কুলে আসা হয়নি। যখন স্যার বলল বসে পড়ো তখন মনে হল যে বড় বাচা বেঁচে গেলাম।
যখন নিয়মিত ক্লাস করা শুরু করলাম তখন আর তার সাথে আমার তেমন কোন কথা হতো না। টোটালি কথা বলতাম না। এরপর একটা সময় ক্লাস এইট এর বছর সে আমাদের স্কুল ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেল। আর তার সাথে কখনো দেখা হয়নি। আমিও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর সহমুখী হয়ে গেলাম, ঢাকায় চলে আসলাম।
একদিন ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় বাসে উঠে আমি সিটে বসে আছি। হঠাৎ করেই তার সাথে দেখা, সে এসে সিট না পেয়ে আমার পাশে এসেই বসলো। দুজনেই সেই বন্ধুত্বের টান রয়ে গেল। এখন দুজনেই ম্যাচুয়েট, আমিও চাকরি করি, সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। অনেক কথা বলা বার্তা হল কৌশল বিনিময় হল। একটা সময় দুজনের সেই ক্লাস সিক্সের গল্পটা ভেসে উঠলো। আমি খুবই আন্তরিকতার সাথে তার সাথে কথা বলছিলাম। সেও আমার সাথে একইভাবে একই রকম ব্যবহার করছে। এবং বলছে বন্ধু জীবনে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটে এগুলা মনে রাখতে নেই। তুই আমার বন্ধু চিলি এখনো আছিস সারা জীবন থাকবি।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি। আশা করি সকলের কাছেই ভালো লাগবে। ভালো-মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আবারো দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বন্ধুত্ব আসলে এমনই। যতই মারামারি হোক কাটাকাটি হোক বন্ধুত্বের টান রয়েই যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit