আর দেরি না করে চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।
কিছু কথা না বললেই নয়, আমি এই সপ্তাহে আমার বাংলাব্লগের অনেকগুলো কন্টেন সংগ্রহ করেছিলাম। যে গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার মোবাইলটা হারিয়ে যাওয়ার কারণে আমি শুধু কনটেন্টগুলো হারাইনি। আমার বিভিন্ন মূল্যবান ডকুমেন্টস এবং নিজের সবচেয়ে প্রিয় কিছু ফটোগ্রাফি হারিয়ে ফেলেছি। যাই হোক তবুও নিজেকে সময়ের সাথে ম্যাচিং করে চলার চেষ্টা করছি। কোন কিছু হারিয়ে গেলে তা পাওয়া যায় না যেমন তেমনই স্মৃতি স্মৃতি হয়ে থাকবে। কিন্তু সেই স্মৃতি গুলো ফিরে আনার প্রায় অসম্ভব আমার মোবাইলটি ও আমার কাছে স্মৃতি হয়ে গেল।
ফটোগ্রাফিক - ১
![]() |
---|
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধু মোটামুটি জানেন আমি একজন টেকনিশিয়ান। এবং আমি রোলিং মিলে চাকরি করি। আমি আমার মিলের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে কিছু ফটোগ্রাফি নিলাম। যেহেতু আমি গল্পটা আমার কর্মজীবন নিয়ে। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
তাহলে শুরু করছি আমার কর্মজীবনের ছোট্ট একটি গল্প।
আমার রুলিং মিল জগতে পদার্পণ শুরু হয় ২০০ থেকে ৩ এর মাঝামাঝি সময়। রোলিং মিলে আসার একমাস আগে বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন আগে বুঝতাম না সংসার ধর্ম কি। তখন আমি বিন্দাস টাইপের ছিলাম। ঘুরাফেরা, আড্ডা, খেলাধুলা, আর খাওয়া এটাই ছিল আমার নিত্যদিনের কাজ। বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িটা মনে হচ্ছে শ্মশান হয়ে গিয়েছে। বড় ভাইয়েরা পিছু হটতে শুরু করেছে, সংসার এর দায়ভার কে নেবে কে নেবে না তার কোন হিসেব নিকেশ নেই। সংসারে আমি সবার ছোট, তখন সংসারে আমার এতটা গুরুত্ব কেউ দেয়নি, বা দেওয়ার কথা ও না। সব মিলিয়ে নিজেকে মনে হচ্ছে যে আমি কোথায় আছি, কোথায় বসবাস করছি, ভিতরে ভিতরে দিশেহারা। বোঝানোর মত কোন মানুষ কেউ খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফটোগ্রাফি - ২
![]() |
---|
আমরা পাঁচ ভাই তিন বোন ফ্যামিলিতে এবং মা অর্থাৎ আমরা আট ভাই বোন এবং মা 9 জন বাবাতো চলে গেল। এর মধ্যে সংসারের টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেল। আমার ছোট বোন খুবই অসুস্থ ছিল যা খুবই দুঃখ এবং কষ্টের মাঝে তার দিন কেটেছে, সেটা না হয় আপনাদের সাথে অন্য এক দিন গল্প করব। কোন কিছু ভেবে না পেয়ে ছোট ভাইটাকে ফোন করলাম, যে ভাইয়া আমি চাকরি করব, ভাই মানতে নারাজ যে তুই করবি চাকরি তোকে দিয়ে চাকরি হবে না।
ফটোগ্রাফি - ৩
![]() |
---|
এভাবেই দিন যাচ্ছে কিন্তু ভাইয়া আমার কথা তার কানে নিচ্ছে না। এদিকে আমি পাগলের মত ঘুরজছি আর চিন্তা করছি কি করব কি করব। ১৫ দিনের ভিতরে ভাইয়াকে না হলেও দশ বার ফোন করেছি। আর ওই সময়টায় ফোন করাটা আমার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। যাই হোক অবশেষে ভাই রাজি হল, তার কাছে গেলাম যাওয়ার পরে দুই দিন ছিলাম ভায়ের বাসায়। দ্বিতীয় দিন সকালে আমাকে বলতেছে চল আমার সাথে আমার অফিসে।
ফটোগ্রাফি - ৪
![]() |
---|
ভাইয়ের অফিসে যাওয়ার পর ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল ভাইয়ের সাথে আমাকে মেশিন শপ এ ভাইয়ার হেলপার হিসেবে রাখবে। একটু ম্যানেজারের সাথে কথা বলার পর ম্যানেজার খুবই নারাজ। যে ওকে আমি ওয়াকসবে দেবো না, আমি ওয়ার্কশপ অন্য লোক দিবো। কিন্তু ওকে দেবো না আমি ওকে অন্য জায়গায় দিবো। ভাইয়া ২/৩ বলার পর ম্যানেজার রেগে গেলে যে তুমি যদি কথা বলো তাহলে আমি ওকে চাকরি দিবো না। আর যদি কথা না বলো তাহলে ওকে আমি আমার মতো করে জায়গা বুঝে আমি ওকে দিবো।
ফটোগ্রাফি - ৫
![]() |
---|
তখন আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম, আমার বলার মতো কোন ভাষা নেই। কারণ আমার চাকরিটা খুবই প্রয়োজন। তখন ভাইয়া ম্যানেজারের কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেলেন। ভাই আর কোনো কথা বলল না, ভাইয়া চলে গেল। পরে ম্যানেজার আমার ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু করল তখন ইংরেজিতে অ্যাড্রেস লিখ লিখলাম পরে বললো একটা দরখাস্ত লিখে ইংরেজিতে। দেখলাম কিছুক্ষণ পর একটা খুবই সুন্দর এবং স্মার্ট লোক অফিসে গুলো। তখন ম্যানেজার বলল আপনার সাথে এই ছেলে টাকে নিয়ে যান। ভদ্রলোক আমাকে বললো যে তুমি আমার সাথে আসো। আমার মুখে কোন কথা নেই আমি ভদ্রলোকের পিছন পিছন অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম।
ফটোগ্রাফি - ৬
![]() |
---|
তখন আমি রোলিং মিলের মাত্র নামটা শুনেছি। কিন্তু রোলিং মিল কিরকম সেটা আমি কল্পনায় ও ভাবিনি এমন হতে পারে। ভদ্রলোক যখন মিলের ভিতর ঢুকলো তখন আমার আত্মা শুকিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে যে এখানে আমাকে কেউ নিতে পারবে না। কারণ আমি এত ভয় পেয়ে গেছিলাম এত উত্তপ্ত আগুনের মাঝে আমি কিভাবে কাজ করবো। ভদ্রলোক চলে গেল পিছন ফিরে দেখে আমি নাই, তখন ভদ্রলোক আবার রিটার্ন এসে আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেল। আর ভদ্রলোক টির নাম ছিল মহম্মদ হান্নান, আর উনি ছিল রহিম গ্রুপের রোলিং মিলের সিনিয়র একজন ফোরম্যান।
ফটোগ্রাফি - ৭
![]() |
---|
আমাকে হাত ধরে নিয়ে যাওয়া দেখে মিলের ভিতরে ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ ছিল যারা বিভিন্ন বয়সের ওই মিলে কাজ করে। সবাই আমাকে দেখে হাসতেছে আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং কি আমার বয়স দেখে হাসি ঠাট্টা করতেছে আর উপহাস করছে। এ লোক কাজ করবে রোলিং মিলে, তখন আমি নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছি। একদিকে ভয় পাচ্ছি আরেকদিক দিয়ে মানুষের তৃরিষ্কার মুলক কথাবার্তা। আর জীবনে প্রথম রোলিং মিলে এসে আমি এই বিষয়গুলোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, খুবই নার্ভাস ফিল করলাম।
ফটোগ্রাফি - ৮
![]() |
---|
সপ্তাহখানেক আটটা পাঁচটা ডিউটি করলাম, দিন যাচ্ছে ভালই, আসছি যাচ্ছি যে যেভাবে বলতেছো আমি কাজ করছি। কিছুদিন পর যখন আবার ডিউটি টা বাড়িয়ে দিলো অর্থাৎ কোম্পানির নিয়ম অনুসারে ডিউটি করতেই হবে। তখন দেখা গেছে যে ভোর ৪:৩০মিনিটে ঘুম থেকে উঠতে হতো পাঁচটা বাজে মিল চালু হয় এবং রাত দশটা এগারোটা বারোটা বাজে বাসায় আসতে হয়। আমার জন্য এই ডিউটি টা কত যে কষ্টের এবং পরিশ্রমের আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি মনে করেছি যে আমি তো জীবনের সাথে যুদ্ধ করছি এর চেয়ে কঠিন যুদ্ধ আর হতেই পারে না। যেখানে হাত দুয়ে ভাত খেতাম না, প্রায় পনের ষোল ঘন্টা ডিউটি এটা আমার জন্য একটা যুদ্ধের ময়দানে ছিল।
ফটোগ্রাফি - ৯
![]() |
---|
মাঝে মাঝে মনে হতো চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। আবার চিন্তা করি সংসার এর এই অবস্থা, বড় ভাইয়েরা পিছু হটে গেলো, সংসার এর দায়ভার আমাদের ছোট দুজনের উপর। ছোট ভাইও তেমন একটা স্যালারি পেত না হয়তো মাসে ৫০০০ টাকা পেত, আর আমার বেতন ধরা হলো আঠারোশো টাকা অনেক কষ্টে আমার দিনগুলো কেটেছে যা কল্পনা করাও কঠিন। শেষ পর্যন্ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। এখন মেনে নিলাম আমার জীবনে এই যুদ্ধটা আমার জন্য শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ এবং কি এটা আমার সারা জীবনের একটা স্মৃতিও, মৃত্যু পর্যন্ত বুলতে পারব না, এবং আজকে আমি সফল।
আজকে আমি যেখানে কর্মরত আছি এবং দায়িত্বে সাথে কাজ করছি সেটা হচ্ছে রহিম স্টিল গ্রপ। আজকে আমি রহিম স্টিল গ্রুপের ডায়মন্ড ইষ্টিলের একজন সিনিয়র ফোরম্যান। আমার যুদ্ধে জয়ী হওয়া এবং কি আমার আজকের এই সফলতার জন্য আমি একসময় কান্না করেছি। আর এখন আমি প্রতিনিয়ত এই মনে মনে হাসি।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে আমার কর্মজীবনের ছোট্ট এই গল্পটি। জানিনা কে কিভাবে নিবেন, আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে। তবে জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করেছি। জীবনের শুরু থেকে কর্মজীবনের শুরুতে যুদ্ধক্ষেত্রে পথে এবং সেখান থেকে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং কি যুদ্ধে জয়ী হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। আশাকরি আপনাদের ভাল লেগেছে এবং সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আপনাদের সাথে জীবনের ছোট ছোট গল্প গুলো সময় করে শেয়ার করব। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।
ভাইয়া জীবনযুদ্ধের আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি দেখে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া অলসতায় নয় কর্মে সুখ। ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর প্রশংসা করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুবই ভালো লেগেছে এবং আমার কাছে অনুপ্রেরণা মূলক একটি অধ্যায় মনে হয়েছে।জীবনে কষ্ট না করলে সফল হওয়া যায় না।যদিও আপনি ফোরম্যান হওয়ার পর এখন আপনার বেতন ১৮০০ টাকা থেকে কত হয়েছে সেটা বলেননি।শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি, আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit