◾️ ০৪ জুলাই
▪️ সোমবার
আসসালামু আলাইকুম/ আদাব
যশপুর গ্রামের অন্যতম প্রভাবশালী ও কর্তব্য পরায়ণ ব্যক্তি সমীর বাবু। তার বড় ছেলে রাজন চার বছর পূর্বে সিডনিতে যায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। গত বছর একটি কোম্পানিতে মোটা বেতনের চাকরিও নাকি পেয়েছে সে। ছোট ছেলে প্রবীর এইবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। পাশের আশা নেই। নানা রকম অপকর্ম করে সে তার বাবার সুনাম নষ্ট করছে। অন্যদিকে গ্রীষ্মের ছুটিতে সমীরবাবুর গর্ব ও অহংকার বড় ছেলে রাজন বেড়াতে এসেছে দেশে। তার আগমনে সমীরবাবুর বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের গমগম অবস্থা। একদিন রাজন তার বাবাকে বলল, "বাবা আমাদের বাড়িটা রঙ করাও না কেন? অনেক জায়গায়তো রঙ উঠে গেছে।" ছেলের কথায় সে বাড়ির রঙের কাজ শুরু করে দেয়।
এ ঘটনার দুই-তিনদিন পরের ঘটনা
একদিন রাতে সমীর বাবু ভয়ানক চিৎকার করতে লাগলেন। সবাই উপরে এসে জানতে পারলো তার ঘরের দেওয়াল ঘড়িটা চুরি গেছে। কিন্তু ঘড়িটা কোন সাধারন ঘড়ি নয়। ঘড়ির কাটাগুলো ছিল হীরার তৈরী; ঘড়িটি সমীর বাবু আফ্রিকা থেকে এনেছিল। তিনি তার যৌবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আফ্রিকা, ইউরোপের নানা দেশ। ঘড়ির এই হীরাগুলিও অনেক দুর্লভ। মোট কথা হীরার মূল্যের চেয়ে ঘড়িটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য অনেক বেশি। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ঘড়িটি সমীর বাবুর কাছে সোনালি যৌবনের স্মৃতি। ঘটনার তিন দিন পর বিকালে ঠাকুরঘরের পাশ দিয়ে বিষণ্ণ মনে পায়চারি করছিলেন সমীর বাবু। এমন সময় তিনি লক্ষ করেন যে, ঠাকুর ঘরের পাশের ঘরটি খোলা, যেটি সাধারণত বন্ধ থাকে। তিনি দারওয়ান রামুকে বললেন ঘরটি বন্ধ করা হয়নি কেন? রামু বলল, "ছোট বাবু প্রায়ই ঐ ঘরে রাত কাটায়, তাই আমি আর এখন ঘরটি বন্ধ করি না।"
নিজের ছোট ছেলের কুকীর্তির কথা তিনি জানতেন তাই আর কথা না বাড়িয়ে তিনি চলে গেলেন। পরদিন সকালে তিনি কী মনে করে ঐ ঘরে গেলেন। গিয়ে দেখেন দরজার পাশে আধ খাওয়া সিগারেট। আনমনে সিগারেটের এক টুকরা তুলে নিয়ে পকেটে রাখলেন। দুপুরে খাবার সময় তার স্ত্রী বললেন, " রান্নার কাজের মেয়ে রিয়া গত দুই দিন ধরে আসছে না।" সে নাকি তার বাড়িও যায়নি। সিগারেটের টুকরো নিয়ে প্রবীরকে তিরস্কার করবেন বলে মনস্থির করেন। আধখাওয়া সিগারেটের টুকরোটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে সমীর বাবু কী যেন একটা লক্ষ্য করলেন। কিছুক্ষন চিন্তার পর তিনি দৌড়ে গিয়ে রান্নাঘরটি পর্যবেক্ষণ করে এলেন। সন্ধ্যায় সবাই একসাথে চা পান করছিলেন। সমীর বাবুর বড় ছেলে রাজন তাকে জানালেন পরের সপ্তাহে তাকে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যেতে হবে।
সমীর বাবু নিচু হয়ে কিছু একটা লক্ষ্য করলেন। তারপর বললেন, " তোমার জন্য যেটা ভালো হয় সেটা কর। " ঐ দিন রাত আটটার সময় বাড়িতে পুলিশ আসলো সমীর বাবুর বড় ছেলে রাজনকে ধরে নিয়ে যেতে। সমীর বাবু তার স্ত্রীকে বললেন, " আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি। " " আমি তাদেরকে বলেছি রাজনকে ধরে নিয়ে যেতে। " সমীর বাবুর স্ত্রী, উন্মাদের মতো চিৎকার চেচোমেচি শুরু করলেন। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। তখন সমীর বাবু ঠান্ডা গলায় সকললে বললেন, " আমার ঘড়ি চুরি যাবার তিনদিন পরের ঘটনা। আমি বিকেলে ঠাকুর ঘরের সামনে দিয়ে পায়চারি করছি এমন সময় লক্ষ করি ঠাকুর ঘরের পাশের ঘরটি খোলা। রামুকে জিজ্ঞাস করে জানতে পারি এই ঘরে নাকি প্রবীর মাঝে মাঝে রাত কাটাও ও নেশা করে। আমি ঘর থেকে এই আধ খাওয়া সিগারেট টুকরোটা পাই এবং লক্ষ্য করি ঘরের মেঝেতে পায়ের দাগ। স্বাভাবিক এর তুলনায় পায়ের দাগগুলো একটু বড়।
আমি পরে প্রবীরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে, সে ঐ ঘরে গত দুই সপ্তাহে একবারও যায়নি। আমি আজ সন্ধ্যায় সিগারেটটি দেখতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম ওটি বিদেশী ব্রান্ডের। আমাদের দেশে ওই সিগারেট পাওয়া যায়না। সুতরাং আমার সন্দেহ হয় রাজনকে নিয়ে। সন্ধ্যায় চা খেতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম রজনের পা দুটো তুলনামুলক অন্যদের তুলনায় বড়। ধীরে ধীরে আমার সামনের কুয়াশা কেটে যেতে লাগলো। রাজন কেন আমার বাড়ি রঙ করতে বলেছে। আমার যে ঘরে দেওয়াল ঘড়িটি ছিল সেই ঘর থেকে ঐ মন্দিরের দিকে যেতে হলে একটি মাত্র রাস্তা যা ঘরের সামনে দিয়ে। তাই রাজন ঘড়িটি নিয়ে পালাবার সময় চোখ পড়ে যায় কাজের মেয়ে রিয়ার। রাজন টাকা দিয়ে রিয়ার মুখ বন্ধ না করতে পেরে সে রিয়াকে হত্যা করে। আসলে রাজন বিদেশে যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেখানে কী একটা অর্থনৈতিক ঝামেলায় পড়ে চাকরি হারায়। পরে সে জড়িয়ে যায় চোরাকারবারিদের সাথে, ও জানতো আমাদের ঘড়িটির বাজার মূল্য কত। কাজেই প্রলোভনের মাত্রা ওর এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে নিজের বাবার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদটিতেও হাত দিতে দ্বিধা করেনি। আর চারোচালানীদের মত নিষ্ঠুরভাবে রিয়াকে খুন করতেও ওর হাত কাপে নি। রিয়ার মৃতদেহের গন্ধ চাপা দিতেই ও আমাকে বাড়ি রঙ করতে বলেছিল।" উপস্থিত জনতার মধ্যে থেকে কে একজন জানতে চাইলো রিয়ার লাশই বা কোথায় আর ঘড়িটিটাই বা কোথায়? সমীরবাবু বললেন, " ঘড়িটা আমি পুলিশকে দিয়েছি আর ঘটনা প্রমাণের জন্য পুলিশ রিয়ার লাশ নিয়ে গেছে।"
সব শুনে সমীর বাবুর স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। অন্যদিকে নিজের ছেলেকে হত্যা ও চোরাকারবারির দায়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে এলাকাবাসি আরো একবার সমীরবাবুর সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় পেল।
আমি রকিবুল শান্ত। বর্তমানে ঢাকা সিটি কলেজে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে অনার্স ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করছি । আমি পজেটিভ চিন্তাধারার একজন মানুষ । সব সময় সিম্পল থাকার চেষ্টা করি। কোডিং করতে, মিউজিক করতে , বিভিন্ন বিষয় এর উপরে আর্টিকেল লিখতে বেশি পছন্দ করি। নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখার চেষ্টা করি। ভালোবাসা পেলে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করি না ।
শুভেচ্ছান্তে
@rokibulsanto

দারুন উপভোগ করলাম পুরো গল্পটা।
বেশ বিচক্ষণ ব্যাক্তি বলতে হবে সমীর বাবুকে। ঠিক তিনি তার ঘড়ি চোর এবং দোষী ব্যক্তিকে ধরে ফেললেন। দারুন লিখনী ভাই, এগিয়ে যান দোয়া রইল।
এধরনের লিখনী আরো চাই 🤗
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রত্যেক বাবা সমীর বাবুর মতো হলে ছেলেরা অপরাধ করতে ভয় পেতো। গল্পটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে ভাই। আরো এমন ছোট গল্প চাই। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit