জীবনে প্রথমবার অনলাইন শপিংয়ে বিভ্রান্তির শিকার!

in hive-129948 •  2 years ago 

বন্ধুরা ,

সবাই তোমরা কেমন আছো ? আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমিও অনেক অনেক ভালো আছি।

অনেক বছর ধরেই শপিং এর ক্ষেত্রে আমি অনলাইনে শপিং করা বেশ পছন্দ করি এবং ভরসাও করি। অন্য কোন দেশে কি হয় জানিনা কিন্তু আমাদের এই ভারতে অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রে পলিসি গুলো খুবই সুন্দর। সেই জন্য আমরা অনলাইনে কেনাকাটায় বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। কোন একটা জিনিস অনলাইনে কেনা হলে সেটার রিটার্ন পলিসি থাকে। পলিসি অনুযায়ী জিনিসটা যদি আমার পছন্দ না হয় বা কোন ডিফেক্ট দেখা যায় তাহলে সে জিনিসটা আমি সহজে রিটার্ন করতে পারি এবং তার টাকা খুব সহজে রিফান্ড পেয়ে যেতে পারি। এইসব কারণে অনেক বছর ধরে অনলাইনে কেনাকাটার জনপ্রিয়তা চরম শিখরে পৌঁছেছে আমাদের এই দেশে।

বছরের পর বছর এই পলিসি অনুযায়ী আমি জিনিস কিনে আসছি এবং আমার কিনা জিনিস দেখে বাড়ির লোকও অনলাইনের উপর এখন ভরসা করা ধরেছে। সেই সুবাদে কয়েকদিন আগেই আমাকে মা বলেছিল বাড়ির জন্য একটি মিক্সার গ্রাইন্ডার কেনার কথা। আমাদের আগের যে মিক্সার গ্রাইন্ডারটি ছিল সেটি একটু ডিস্টার্ব দিচ্ছে। সেজন্যই মা আমাকে অনলাইন দিয়েই কিনতে বলল কারণ মা ভালো করেই জানে অনলাইন থেকে কোন জিনিস কেনা হলে তা যদি পছন্দ নাও হয় তা রিটার্ন করে দেয়া যাবে। মা বলার পর থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘাটাঘাটি করে দেখছিলাম কোথায় ঠিকঠাক দামে পাওয়া যায় মিক্সার গ্রাইন্ডার ।

20221106_152623.jpg

20221106_152534.jpg

অ্যামাজন , ফ্লিপকার্ট এর মত বড় বড় ওয়েবসাইটে প্রথমে দেখেছিলাম কিন্তু সেখানে দাম একটু বেশি ছিল। সেই তুলনায় জিওমার্ট নামক একটি ওয়েবসাইটে বেশ কম দামেই পাওয়া যাচ্ছিল। জিওমার্ট যে খুব নতুন ওয়েবসাইট তা কিন্তু না। আমি নিয়মিত জিওমার্ট দিয়ে বিভিন্ন ঘরে জিনিসপত্র কেনাকাটা করে থাকি কিন্তু এর আগে কোনদিন কোন ইলেকট্রনিক্স জিনিস কিনিনি। জিওমার্টের আরও একটা সুবিধা হল আমি যদি কুড়ি টাকারও জিনিস কিনি তা ফ্রিতে ডেলিভারি দিয়ে যায় বাড়িতে। সেই জন্য জিওমার্টের উপরও আমার ভরসা ছিল। অনেক ঘাটাঘাটির পরে লাইফ-লং নামক একটি কোম্পানির ৫০০ ওয়াটের একটি মিক্সার গ্রাইন্ডার আমার পছন্দ হয়। আমি তিন-চারটি ওয়েবসাইট কম্পেয়ার করে দেখি জিওমার্টেই তুলনামূলক ২০০ টাকা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে । আমি তখন ভেবে দেখলাম যখন সব ওয়েবসাইটই ট্রাস্টেড তাহলে জিওমার্ট থেকেই অর্ডার দি। আর সেখানে রিটার্ন পলিসিও ছিল তাই বেশি কিছু না ভেবে আমি জিওমার্ট থেকেই প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক্স কোন আইটেম অর্ডার করি।

অর্ডার করার রীতিমতো তিনদিন পরেই তা চলে আসে আমাদের বাড়িতে। আরেকটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি গ্রাইন্ডার মিক্সারটা দাম নিয়েছিল ১৩০০ টাকা যা অন্যান্য ওয়েবসাইটে ১৫০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। যাইহোক মিক্সার গ্রাইন্ডার এর প্যাকেটটি খোলার পরেই আমার মাথায় হাত! প্রথমে দেখি যে জার গুলো এসেছিল তার উপরের যে ঢাকনা থাকে তার একটি ভাঙ্গা। আমি ভাবলাম হয়তো সামান্যর উপর দিয়েই গেছে ।এই প্রোডাক্টটি যদি আমি রিটার্ন নাও করি ভাঙা ঢাকনাটি আমি ৩০ টাকার বিনিময়ে কোন দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসতে পারবো। আর যেহেতু রিটার্ন পলিসি ছিল তাই ভাবছিলাম খুব সহজেই রিটার্ন করে দিতে পারব যদি মন চায়।

20221106_152454.jpg

20221106_152800.jpg

তারপর যখন গ্রাইন্ডার মিক্সার এর প্রধান মেশিনটি বের করলাম তখন তো পুরো হতাশ হওয়ার মতো অবস্থা। দেখি গ্রাইন্ডার মেশিনে বড় একটা ফাটা রয়েছে । এত বড় ফাটা দেখে মাও খুব হতাশ হয়ে গেছিল। আমি মাকে তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলি আমি এটি রিটার্ন করে নতুন আরেকটি এনে দেবো কিন্তু তারপরও মায়ের টেনশন দেখে আমার বেশ বাজে লাগছিল। তারপর আমি রীতিমতো রিটার্ন পলিসি অনুযায়ী রিটার্নের জন্য এপ্লাই করি কিন্তু রিটার্ন করতে গিয়ে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। এইখানের রিটার্ন পলিসিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছিল। তারা রিটার্ন এর জন্য আমি যে প্রোডাক্টটি নিয়েছি তার ছবি এবং ভিডিও আপলোড করতে বলছিল। আমি তখন মিক্সার গ্রাইন্ডাটির ফটো এবং ভিডিও আপলোড করে দিই। এদের এই নতুন পলিসিটি দেখে আমারও অবাক লাগছিল কারণ আমি অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট ওয়েবসাইট গুলোতে রিটার্নের ক্ষেত্রে এসব দেখি নি। কোন প্রোডাক্টে কোন সমস্যা হলে সাথে সাথেই তারা রিটার্ন নিয়ে নেয়। তাদের এই ব্যাপারটা অত্যন্ত সাজানো গোছানো কিন্তু এইখানের এই ব্যাপারটা আমার জন্য নতুনই ছিল।

যাই হোক তিনদিন পরে আমার ফোনে মেসেজ আসে যে, আমার রিটার্নটি তারা ক্যান্সেল করে দিয়েছে। আমি তারপর কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে সবকিছু জানাই। তারা বলে তাদের পলিসিতে আনবক্সিং করার আগের ভিডিও আপলোড করতে হবে। সেটা না করতে পারলে এটি রিটার্ন নেবে না। আমি তো পড়লাম মহা বিপদে! যে বক্স ওপেন করা অলরেডি হয়ে গেছে তার আনবক্সিং ভিডিও আমি কোথা থেকে এনে দেবো। এভাবে তাদের সাথে অনেক তর্কবিতর্ক করি কিন্তু তারা কোনোভাবেই আমার এই প্রোডাক্টটি নিতে রিটার্ন নিতে রাজি হয় না। ভাঙ্গা প্রোডাক্ট দিয়ে তারা বেশ হয়রানির মধ্যে ফেলে দেয় আমাকে। বাড়িতে আমাকে অনেক কথাও শুনতে হয় এই কারণে । এই পুরো টাকা টাই লস হয়ে গেল বাড়ির। অনেক চেষ্টা করেও সেটা রিটার্ন করতে পারিনি। অনলাইন শপিং করতে গিয়ে প্রথমবার এরকম অবস্থার মধ্যে আমাকে পড়তে হয়েছে। এত বছরে প্রথমবার এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এবং বাড়ির এতগুলো টাকা নষ্ট হওয়ার জন্য নিজের কাছে বেশ খারাপ লাগছিল কিন্তু কোন কিছুই করার ছিল না আমার।

20221106_152907.jpg

সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

🤦🤦ধন্যবাদ সবাইকে🤦🤦

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে ভাই অনলাইনে শপিং করা খুবই বিরক্তি একটি কি ব্যাপার। কারণ এখানে অনেক সময় ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। আমি কয়দিন আগে একটি শার্ট অর্ডার দিয়েছিলাম পরে দেখি শার্ট এর পরিবর্তে টি শার্ট নিয়ে এসেছে আমার জন্য। আমি মনে করি নিজে গিয়ে পণ্য যাচাই বাছাই করে নিয়ে আসাটাই উত্তম । তবে আধুনিক সময়ে অনলাইন মার্কেটিং দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। গ্রাইন্ডার মেশিন ভাঙ্গা দেখে আমার কাছেও খুব খারাপ লাগছে। রিটার্ন না করার ব্যাপারটা খুবই হতাশা জনক। যাহোক কি করবেন সবই ভাগ্যের ব্যাপার।

হ্যাঁ ভাই ভাগ্যের দোয়াই দেয়া ছাড়ার কোন কিছুই করার ছিল না কারণ যেহেতু রিটার্ন করতে পারেনি তাই ভাগ্যকে দোষ দিয়েই বসে আছি। এর আগে কোনদিন এমন হয়নি, প্রথমবার এমন হলো সেই জন্য বেশ হতাশ হয়েছিলাম।

অনলাইনে বিভিন্ন ঝামেলা থাকায় আমি নিজে বাজারে গিয়ে দেখে প্রডাক্ট কিনতে পছন্দ করি। তবে আমাদের এখানেও কিছু ভালো অনলাইন মার্কেটপ্লেস থাকলেও অনেকগুলো বেশ ঝামেলা করে। তাই আমি অনলাইনে অর্ডার কম দেই। যাক আপনার সাথে যা হলো তাতে বেশ খারাপ লাগলো 😕
ভবিষ্যতে আরো সতর্ক হতে হবে ভাই।

হ্যাঁ ভাই ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরো সতর্ক থাকতে হবে, না হলে নিজের টাকা লস যাবে।

অনলাইন শপিং ভারতবর্ষে খুব জনপ্রিয় হলেও মাঝে মাঝে এরা বেশ উল্টাপাল্টা করে ফেলে। তবে এই ব্লেন্ডারটা সত্যিই বেশ হ্যারাসমেন্ট করেছিল। মনে পড়লে এখনও হাসি পায়। হা হা হা..

এইসব মনে করে হাসার আর দরকার নেই। যে টাকাগুলো অপচয় গেছে সে টাকা তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না।