শৈশবের স্মৃতিচারণ : হাওয়াই মিঠাই

in hive-129948 •  2 years ago 

বন্ধুরা ,

তোমরা সবাই কেমন আছো ? আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমিও অনেক অনেক ভালো আছি।

আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে শৈশবের কিছু স্মৃতি শেয়ার করব। স্মৃতিচারণ এর জন্য আজকের টপিক হল হাওয়াই মিঠাই। হাওয়াই মিঠাই সম্পর্কে জানেনা এমন কোন মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে না । ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় সবাই এ সম্পর্কে জানে। হাওয়াই মিঠাই নিয়ে সবারই শৈশবের কোন না কোন স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। শৈশব আমার গ্রামেই কেটেছে। আমার জন্ম হয়েছিল অজপাড়া এক গ্রামে এবং সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। শৈশবের হাজারো স্মৃতি চোখ বন্ধ করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

20220619_072021.jpg

গ্রামের বাচ্চাদের হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার গল্পটা একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। শহরের বাচ্চারা হাওয়াই মিঠাই টাকা দিয়ে কিনে খায় কিন্তু গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে টাকা না থাকায় তারা ঘরের পুরনো জিনিস যেমন প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙ্গা টিনের জার, ভাঙ্গা কোন লোহা, তারপর মায়ের জমানো চুল ইত্যাদি জিনিসের পরিবর্তে হাওয়াই মিঠাই ক্রয় করে থাকে। আমার শৈশবে আমার কাছে কোন টাকা থাকতো না। হাওয়াই মিঠাই কেনার জন্য বাড়ির বিভিন্ন ভাঙা জিনিসপত্র জড়ো করে রেখে দিতাম। অপেক্ষায় থাকতাম কখন হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা লোকটি আসবে আর ওইগুলো নেওয়ার বিনিময়ে হাওয়াই মিঠাই দিয়ে যাবে।

20220619_072013.jpg

হাওয়াই মিঠাই কিনে কিন্তু একা খেতাম না আমি । ভাই, বোন যারা ছিল সবার সাথে শেয়ার করেই খেতাম। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথেও ফেভারিট এই হাওয়াই মিঠাই শেয়ার করতাম । ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে এইসব নিয়ে অনেক ঝগড়াও করতাম কারণ হলো তাদের এই হাওয়াই মিঠাই দেওয়ার পরও আমার কাছ থেকে কেড়ে খেতো। সেই ঝগড়ার মাঝেও এক আনন্দ ছিল এখন যা অনুভব করতে পারি। শহরে যেমন চাইলেই প্রতিদিন হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায় কিন্তু গ্রামে এরকম চাইলেই তখন পাওয়া যেত না। সপ্তাহে একবার এইসব হাওয়াই মিঠাই বিক্রি ওয়ালাদের দেখা মিলতো। গ্রামে এসে তারা ভাঙাচোরা বিভিন্ন জিনিসের বিনিময়ে এই হাওয়াই মিঠাই দিত সবাইকে। অপেক্ষায় থাকতে হত অনেকদিন ,তারপর গিয়ে এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার সুযোগ পেতাম। সত্যি কথা বলতে গেলে এইসবের মধ্যে একটা আলাদাই আনন্দ ছিল।

20220619_072010.jpg

শৈশবে কতবার যে এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়া নিয়ে বাড়ির লোকজনদের কাছে বকা খেয়েছি, মারধর খেয়েছি তার হিসাব নেই। বকা অথবা মারধর খাওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। সবচেয়ে বড় কারণ ছিল মাঝে মাঝে আমি পুরনো জিনিসপত্র দেয়ার পরিবর্তে বাড়ির অনেক নতুন জিনিসও দিয়ে দিতাম এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার লোভে। শৈশবে সামান্য একটু হাওয়াই মিঠাই পেলেই মুখে হাসি ভেসে উঠতো আমার। আমার শৈশবের একটা জিনিস বেশ ভালই ছিল সেটা হল এখন যেমন ছোট বাচ্চাদের বায়না করতে হয় বাবা-মার কাছে হাওয়াই মিঠাই পাওয়ার জন্য, আমাদের এই হাওয়াই মিঠাই পাওয়ার জন্য কোন বায়না করতে হয়নি। পুরনো জিনিস দেওয়ার বিনিময়ে আমরা এই হাওয়াই মিঠাই পেতাম। হাওয়াই মিঠাই ক্রয়ের ব্যাপারে আমি শৈশবে কারো উপর নির্ভরশীল ছিলাম না এই জিনিসটা এখন ভাবলে বেশ আনন্দ লাগে।

20220619_072007.jpg

আজকের শেয়ার করা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে শৈশবের কিছু স্মৃতিচারণ তোমাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানিও। সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

🧠🧠ধন্যবাদ সবাইকে🧠🧠

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাইয়া রাস্তার এই লোকটিকে দেখে হয়তো আপনার শৈশবে হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। আর শৈশবে সেই হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার অনুভূতি আমাদের মাঝে সেয়ার করলেন। আমিও আপনার মত গ্রামে বড় হয়েছি, আমরা পুরাতন জিনিষ পত্র দিয়ে হাওয়াই মিঠাই এর পরিবর্তে কটকটি বা সম্পাব্বি খেতাম। আমি জানিনা আপনি এই নাম গুলো শুনেছেন কি না। আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে ভালই লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া।

ছোটবেলায় পুরনো জিনিস দেওয়ার বিনিময়ে কটকটি আমিও অনেকবার খেয়েছি। শৈশবের এই স্মৃতি গুলো মনে পড়লে খুবই ভালো লাগে।

আপনার লিখা শৈশবের স্মৃতিচারণ "হাওয়াই মিঠাই" লিখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আর হা ভাইয়া, শৈশবের স্মৃতির সাথে হাওয়ায় মিঠাই আমাদের সাথেও ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।অবশ্য এটাও ঠিক, হাওয়াই মিঠাই এর সাথে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে আনন্দের ভিন্নতা দেখা যায়। শহরে প্রায়ই পাওয়া যায়।তবে গ্রামে মাঝে মধ্যে। বিশেষকরে সপ্তাহে একদিন।অবশ্য আমাদের এখানের গ্রামে এখনও ভাঙা বা পুরাতন জিনিস দিয়েই হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায়।আপনার হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার বিষয়টা কিন্তু চমৎকার ছিল যে খাওয়ার জন্য অনেক সময় নতুন জিনিস দিয়ে হাওয়াই মিঠাই নিতেন। অবশ্য তার জন্য অনেক বকাও খেতেন।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর করে আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ,"হাওয়াই মিঠাই"এর বিষয়টি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

এত সুন্দর করে গুছিয়ে কমেন্টটি করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। আমার শেয়ার করা পোস্টটি আপনি খুবই সুন্দর করে, যত্ন সহকারে পড়ে কমেন্টটি করেছেন যা বুঝতে পারলাম। শৈশবের এই স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে মনে পড়লে খুবই ভালো লাগে ।শৈশবে তো আর ফিরে যাওয়া যাবে না, এই স্মৃতিগুলো মনে করে দুঃখের সাথে একটু আনন্দ পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর ও চমৎকার ভাবে আমার মন্তব্যের ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য।

আমার এখনো মনে পড়ে আমাদের ছোট দিদির বাড়ির লোহার কড়াই চুরি করে হাওয়াই মিঠাই খেয়েছিলাম। আর বড়মা, ঠাকুর মা সবার চুল বিক্রি করে হাওয়াই মিঠাই খেতাম। অনেকদিন পর ছোটবেলা সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তবে এতদিন পর তোরও যে এই গল্প মনে আছে এটা জেনে আমার বেশ ভালো লাগলো।