ক্রিয়েটিভ রাইটিং || ছোট গল্প : টিয়ারা (পর্ব -০৪) শেষ পর্ব।

in hive-129948 •  5 months ago 

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমি যদিও খুব বেশি ভালো নেই।

আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে একটি ছোট গল্প শেয়ার করবো। গল্পের নাম "টিয়ারা"। গল্পটির শেষ পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

parakeet-7986601_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

তৃতীয় পর্বের লিংক

টিয়ারাকে পুনরায় তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য অমিত কিছুদিনের জন্য টিয়ারাকে নিয়ে তার মামার বাড়ি চলে যায়। নতুন পরিবেশে নিয়ে গিয়ে কিছুটা ইম্প্রুভ করা যায় কিনা, সেই ভাবনা থেকেই টিয়ারাকে নিয়ে চলে গেছিল তার মামার বাড়িতে। নতুন পরিবেশে গিয়েও টিয়ারার কোন ইমপ্রুভমেন্ট দেখা যায় না। টিয়ারার প্রতি অমিতের এই টেনশন দেখে বাড়ির লোকজনও অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারাও বিভিন্ন ধরনের উপায় খুঁজতে থাকে টিয়ারাকে পুনরায় তার অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। তারা তাদের এই টিয়ারাকে নিয়ে বিভিন্ন পাখির মার্কেটে যেত নতুন টিয়া পাখিদের সাথে পরিচয় করানোর জন্য, এসব দেখে যদি টিয়ারার কিছুটা উন্নতি হয় সেই উদ্দেশ্যে।

যাইহোক, এভাবে অনেক দিনই চলতে থাকে কিন্তু টিয়ারা আর ঠিক হয়না। টিয়ারাকে অমিত সব সময় ঘরের ভেতরে ছেড়ে দিতো, খাঁচায় রাখতো না। আমিত সবসময় চাইতো, টিয়ারা একটু খোলামেলা ভাবে ঘোরাফেরা করে আগের অবস্থায় ফিরে আসুক। এরকম একদিন ঘরের ভেতর টিয়ারা ছাড়া ছিল। হঠাৎ করেই টিয়ারা রুম থেকে উড়ে তাদের উঠোনের পাশে একটি গাছে গিয়ে বসে। অনেক ডাকাডাকির পরেও টিয়ারা অমিতের কাছে আসে না। তারপর হঠাৎ করেই উড়াল দিয়ে চলে যায় চোখের সীমানার বাইরে। হঠাৎ করেই কি থেকে কি হয়ে গেল, কোন কিছুই অমিত বুঝতে পারে না! কান্নায় ভেঙে পড়ে অমিত টিয়ারার এভাবে উড়ে যাওয়া দেখে। সে হয়তো কোনদিন কল্পনাতেও ভাবেনি টিয়ারা এভাবে উড়ে যাবে তাকে ফাঁকি দিয়ে।

এতদিন টিয়ারা আগের মত আচরণ না করলেও তার সাথেই ছিল, এখন তো টিয়ারাই একদম কাছে নেই। টিয়ারার উড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে বাড়ির লোকজনও অনেকটা কষ্ট পায়। তবে অমিতের কষ্ট সব থেকে বেশি হয়েছিল। সেজন্য বাড়ির লোকজন অন্য একটি টিয়া পাখি কিনে দেওয়ার জন্য বলে অমিতকে। কিন্তু কোনো টিয়া পাখির বিনিময়ে অমিত টিয়ারার অভাব পূরণ করতে পারবে না, এমনটাই অমিত বাড়িতে জানিয়ে দেয়। অমিত এবং টিয়ারার মধ্যে যে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তা হঠাৎ করেই কেমন জানি শেষ হয়ে যায়। এই ব্যাপারটা সত্যি মেনে না নেওয়ার মতো একটা বিষয় ছিল। তবে যে ঘটনা ঘটে গেছে তা নিয়ে কোন কিছু বলার নেই।

কয়েকদিন এইভাবে কেটে যায়। অমিতের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় কিছু দিনের জন্য। কোন কিছুই অমিত খেতে পারে না, শুধু টিয়ারার খাঁচার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং টিয়ারা ফিরে আসবে এই আশায় অমিত অপেক্ষা করতে থাকে। অনেক সময় দুপুরবেলায় সে যখন বাড়ির উঠানে বসে থাকে আর টিয়া পাখির ডাক শুনতে পায়, সে ভাবে হয়তো তার টিয়ারা ফিরে এসছে কিন্তু সেরকমটা হয় না। অন্য কোন টিয়া পাখি বাড়ির উপর দিয়ে ডাকতে ডাকতে যখন উড়ে যায়, সেটাই সে শুনতে পায়। তবে সে বিশ্বাস মনে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। প্রায় এক মাস এভাবে কেটে যায়। আস্তে আস্তে অমিতের একটু ইমপ্রুভমেন্ট দেখা যায় । তবে সে একটু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও টিয়ারাকে ভুলে গেছে, এরকমটা হয় না। হঠাৎ করে অমিত একদিন দেখে তাদের বাড়ির একটি গাছে তার সেই টিয়ারা এসে বসে আছে।

সে দেখে অনেক খুশি হয়ে যায় এবং আনন্দে চিৎকার করতে থাকে। সে বাড়ির লোকজনদের ডেকে নিয়ে আসে টিয়ারাকে দেখানোর জন্য। সে টিয়ারাকে অনেক ডাকাডাকিও করে তার কাছে আসার জন্য। তবে টিয়ারা তার কাছে আসে না, কেমন একটা অপরিচিত হয়ে গেছে টিয়ারা এই কয়দিনে এমনটা মনে হয় তখন। তবে সে যেভাবে তাকিয়ে ছিল অমিতের দিকে, সেটা দেখে মনে হচ্ছিলো তার অনেক আপন এই অমিত। একটা অদ্ভুত রকমের মুহূর্ত দেখা যায় তখন । কিছু সময় এভাবে বসে থাকার পর টিয়ারা আবার উড়ে চলে যায়। কিছু সময় আনন্দ দিয়ে আবার একটা দুঃখের মহল তৈরি করে দেয়। পরের দিন একই ঘটনা ঘটে। টিয়ারা আবার তাদের বাড়ির সেই গাছে এসে বসে ডাকাডাকি করে। এই ব্যাপার দেখে সবাই বুঝতে পারে, অমিতের প্রতি টান এখনো টিয়ারার রয়েছে। তবে সে আর খাঁচার ভিতর বন্দি থাকতে চায় না, সে খোলা আকাশে উড়তে চায়।

অমিতের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই, মাঝে মাঝে টিয়ারা তাদের বাড়ির একটি গাছে এসে বসতো এবং কিছু সময় থেকে সবাইকে দেখে আবার উড়ে চলে যেত। অনেক কাল পরে টিয়ারা আরও কিছু টিয়া পাখি নিয়ে তাদের বাড়ির ওই গাছে এসে বসে। তখন অমিত সেটা দেখে বুঝতে পারে, এটা টিয়ারার নতুন ফ্যামিলি এবং টিয়ারা অনেক ভালো আছে এই খাঁচার বদ্ধ জীবন থেকে বাইরে গিয়ে। তাই দেখে অমিত মনে মনে অনেকটা খুশি হয় এবং টিয়ারার জন্য মনে মনে অনেক শুভ কামনা করতে থাকে।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (ছোট গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা "টিয়ারা" গল্পের শেষ পর্ব টি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

একটা ভাব সম্প্রসারণ আছে না ভাইয়া, বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে, যে প্রাণীটা যে পরিবেশে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাকে সে পরিবেশেই থাকতে দেওয়ায় উত্তম। কেননা একজন মানুষকে যদি আলাদাভাবে একক একটি স্থানে বন্দী করে রাখা হয় তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাহলে এই বিষয়টা কেমন হবে একটু ভেবে দেখুন তো। সেই মানুষটা দিনে দিনে রোগা হয়ে যেতে শুরু করবে। তবে টিয়ারা বাইরের পরিবেশেই অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল আপনার পোস্ট পড়ে বোঝা যাচ্ছে। তবে এটাও ঠিক টিয়ারার অমিতের প্রতি টান ছিল। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।

ভাই, আপনি অনেক সুন্দর কিছু কথা বলেছেন যা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনার এত সুন্দর মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

একটা মানুষ হয়ে একটা পাখির প্রতি এত বেশি ভালোবাসা দেখে সত্যিই অবাক হলাম। গল্পটা পড়তে পড়তে যখন টিয়ারা হঠাৎ করেই উড়ে চলে গেল এই বিষয়টা খুবই খারাপ লেগেছিল। আর টিয়ারার জন্য অমিতের অবস্থা দেখেও খুব খারাপ লাগলো। একটা পাখির জন্য অনেক বেশি ভেঙে পড়েছিল। তবে কিছুদিন পর যখন আবারো টিয়ারাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হলো এটা কিন্তু অনেকটাই ভালো লেগেছিল। শেষ পর্যন্ত টিয়ারা নিজের নতুন ফ্যামিলি নিয়ে ভালো আছে এটা দেখে অমিত অনেকটা স্বস্তি পেয়েছে এই বিষয়টা কিন্তু অসাধারণ হয়েছে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, এত সুন্দর করে গুছিয়ে আপনার এই মন্তব্য টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। অনেক ভালো লাগলো আপনার এই মন্তব্যটি পড়ে।

যাকে যেখানে মানায় সে সেখানেই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আমরা মানুষ হয়ে তা বুঝতে পারি না। তাইতো সবসময় চেষ্টা করি পাখি গুলোকে খাঁচায় বন্দি করে পোষ মানাতে। কিন্তু এটা চিন্তা করিনা যদি আমাদের খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয় তাহলে কেমন লাগবে। টিয়ারা যখন উড়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে তখন সে আর বন্দি হতে চায়নি, তাই তো সে অমিতকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। কিন্তু অমিত টিয়ারাকে অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছে বলেই টিয়ারা চলে যাওয়ায় সে খুব কষ্ট পায়। কিন্তু বনের প্রাণীও বুঝে সেই ভালোবাসা, যা আমরা মানুষ হয়েও বুঝি না। তাইতো এত মাস পরে হলেও টিয়ারা আবার অমিতের কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু সে বন্দি হতে চায়নি বলেই কাছে না এসে গাছের ডালে বসে ছিল। হয়তো সে পাখি বলে তার মনের ভাষা বুঝাতে পারেনি কিন্তু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটু হলেও বুঝাতে পেরেছে। অবশেষে টিয়ারা তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেই গাছে এসে বসলে অমিত এটা ভেবে খুশি হয় স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে টিয়ারা ভালো রয়েছে।

এত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে। আপনার এই পুরো মন্তব্যটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু।