জেনারেল রাইটিং || স্মৃতিচারণ: নৌকা একা চলে, আমি খালের জলে!

in hive-129948 •  10 months ago 

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও মোটামুটি ভালো আছি।

Photo_1706279141893.png
পোস্টার মেকার অ্যাপ দিয়ে তৈরি

ছোটবেলায় গ্রামে বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছি সেজন্য জীবনে অনেক কিছু দেখেছি এবং করেছি। শৈশবের এমন কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলো মনে করলে যেমন আনন্দ লাগে আবার এমন কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলো মনে করলে নিজের ভেতর আতঙ্ক লাগে। তোমাদের সাথে অনেক মধুর স্মৃতি শেয়ার করেছি শৈশবের। তবে আজকে যে স্মৃতিটা শেয়ার করব সেটা একটু আতঙ্কের। পুরো ঘটনাটা পড়লেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। আমাদের গ্রামের বাড়ি এবং আমার মামাদের বাড়ি খুব বেশি দূরে অবস্থিত নয়। একদম কাছাকাছি বলা যেতে পারে। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বড় খাল বয়ে গেছে এবং এই খালের এক অংশ আমার মামা বাড়ির পাশ দিয়েও বয়ে গেছে। খাল থাকলেই নৌকা থাকাটা স্বাভাবিক।

আমাদের নিজেদের নৌকা ছিল আবার আমার মামাদেরও নৌকা ছিল। তবে আমাদের নৌকাটা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে খুব বেশি ব্যবহার করা হতো না। আমি আমার মামাদের নৌকা নিয়েই খালে ঘুরতাম । কোন কারনে খালে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম সেরকম কোন ব্যাপার ছিল না। ঘুরে বেড়াতে মাঝে মাঝে খুবই ভালো লাগতো সেজন্য নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। আমি ছোটবেলা থেকেই নৌকা বাইতে খুব ভালো পারতাম।

মামাদের নৌকার সাথে বড় বৈঠাও ছিল। একটু বড় সাইজের ছিল বলেই ভালো করে নৌকা বেয়ে চলা যেত। যাইহোক, একবার হয়েছিল কি, আমি বিকেলের দিকে মামাদের নৌকা নিয়ে আমাদের বাড়ির ঘাটে এসে নৌকা রাখি। তবে বিকেলে আনার পর আমি ভুলেই গেছিলাম সেই নৌকা মামাদের ঘাটে দিয়ে আসতে। আমি আমার মত বাড়িতে কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। অন্য দিকে মামা বাড়ি থেকে ফোন করে, নৌকোটা তাদের ঘাটে দিয়ে আসার জন্য কারণ দাদু এই নৌকা নিয়ে সকালবেলা বিলে যেত। সেজন্যই সন্ধ্যার মধ্যে দাদুদের ঘাটে এই নৌকাটা দিয়ে আসার দরকার পড়ে

যাইহোক, বিকেল গড়িয়ে যখন একটু সন্ধ্যা হয়ে যায় তখন আমি এই নৌকা নিয়ে একা একা মামাদের ঘাটে দিয়ে আসতে যাই। আমি জোরে জোরেই নৌকা বাইছিলাম এটা দিয়ে আসার জন্য। ও আর একটা কথা বলে রাখা ভালো, আমাদের বাড়ি থেকে মামাদের বাড়ির খালের মাঝে এমন একটা জায়গা রয়েছে যেখানে তিন খালের মিলন স্থান অর্থাৎ সেখানে বিশাল একটা জলাশয়ের জায়গা ছিল । যাইহোক, আমি যখন জোরে জোরে নৌকা বাইতে বাইতে এই তিন খালের মোড়ে আসি তখন হঠাৎ করে কি হয় আমি জানিনা, আমার হাত থেকে বৈঠা ছুটে যায় এবং আমি খালে পড়ে যাই। অন্যদিকে নৌকাতে স্পিড থাকায় নৌকা অনেক দূরে চলে যায়

সময়টা সন্ধ্যার সময় ছিল আর চারিদিকে অন্ধকার থাকায় আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না । আমি সাঁতার জানতাম কিন্তু এত বড় জলাশয়ের মধ্যে পড়ে যাওয়ার পরে সাঁতার কেটে কোন জায়গায় যাব বুঝতে পারছিলাম না। অন্যদিকে নৌকা অনেকটা দূরেই চলে গেছিল যা আমি সাঁতার কেটেও ধরতে পারব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক, আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই সেই মুহূর্তে। চিৎকারও করতে পারছিলাম না জলের মধ্যে ছিলাম তাই। পরে ভয়ে আতঙ্কে অনেক কষ্টে কান্না করতে করতে আমি গিয়ে উঠি খালের এক পাড়ে। সেই কথা মনে পড়লে আমার এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

নৌকা যেহেতু অনেক দূরে চলে গেছিল আর আমি সাঁতার কেটে পাড়ে উঠে গেছিলাম, তারপরে আমি দৌড়ে সেই সন্ধ্যার সময় সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি। এই সময় আমার প্রচন্ড ভয় করছিল কারণ কিছুটা ফাঁকা জায়গা দিয়েই যেতে হয়েছিল বাড়িতে। যাইহোক, আমি এমনিতেই ভয়ে ছিলাম তাই বাড়ি গিয়ে প্রচন্ড কান্নাকাটি করি। বাড়ি গিয়ে পুরো ঘটনাটা সবাইকে বলি। অন্যদিকে বাড়ির সবাই এই পুরো ঘটনাটা জেনে তারাও আমাকে শান্ত করে। পরে লাইট এবং অন্য আরেকটা নৌকা নিয়ে মামাদের সেই নৌকাটা যেখানে চলে গেছিল সেখান থেকে নিয়ে ঘাটে রাখা হয়। সেই সময় আমার যে বয়সটা ছিল এবং আমি যে সিচুয়েশনে পড়েছিলাম তা সত্যিই একটা আতঙ্ক ছিল আমার জন্য।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
ডিভাইসSamsung Galaxy M31s
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা স্মৃতিচারণ মূলক এই পোস্টটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এটা একটা অবশ্যই ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছিলো আপনার সাথে।সন্ধ্যা বেলায় এমন পরিস্থিতিতে পড়লে তো ভয় পাওয়ারি কথা।ভাগ্যিস বড়ো ধরানো দূর্ঘটনা হয়নি।বাড়িতে এসে সব বলার পরে মামাদের নৌকাটি উদ্ধার হয়েছে জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে শৈশবের স্মৃতিচারণ কারার জন্য।

দিদি, সাঁতার জানতাম এই জন্য বড় কোন দূর্ঘটনা হয়নি । তবে সেদিন যে পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম, এখনো মনে করলে আঁতকে উঠি ।