জেনারেল রাইটিং || স্মৃতিচারণ: কোন এক বৃষ্টির দিনে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার পথে...

in hive-129948 •  6 months ago  (edited)

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

raining-5389459_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের এই কমিউনিটিতে যোগদানের পর থেকে তোমাদের সাথে শৈশবের অনেক স্মৃতি আমি শেয়ার করেছি। শৈশবের এই স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে মনে পড়লে খুবই ভালো লাগে। শৈশবের কিছু কিছু স্মৃতি রয়েছে, যেগুলো অনেক মধুর। আবার কিছু কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলো একটু তিক্ত। তবে এইসব স্মৃতি গুলো মনে করলে কিছু সময়ের জন্য অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয়। বাস্তবে অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব না হলেও, কিছুটা সময় কল্পনার মাধ্যমে অতীতে ফিরে যাওয়া যায় আর কি। যাইহোক, যেহেতু আমার শৈশব গ্রামে কেটেছে তাই গ্রামের অনেক স্মৃতি আমার জীবনে রয়েছে। একবার বর্ষার কোনো এক দিনে, নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল আমি সহ আমার পুরো পরিবারের তাই নিয়ে আজকে কিছু কথা শেয়ার করবো তোমাদের সাথে

আমার বয়স তখন ৮ বছরের মতো হবে। বর্ষার একদিনে পাশের একটি গ্রামে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল পরিবারের সবার। যেহেতু বর্ষার সময়কাল চলছিল আর গ্রামের রাস্তা মাটির ছিল, সেইজন্য রাস্তা কাদা কাদা হয়ে গেছিল। তাই আমরা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে খাল পথে নৌকা নিয়ে সেই নিমন্ত্রণ বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নি। আমাদের নিজেদেরই নৌকা ছিল, সেই নৌকা করে আমরা সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করি দুপুরের দিকে। আমাদের গ্রামে খুব সুন্দর একটি খাল ছিল। সেই খালের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়া যেত। যদিও যাতায়াতের ক্ষেত্রে খালের ব্যবহার সবাই করত না। খালের ব্যবহার বিলে যাওয়ার জন্য, বিল থেকে ধান সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল বাড়িতে আনার জন্য মানুষ ব্যবহার করত

আমরা যে সময় বাড়ি থেকে রওনা করি আকাশে মেঘ ছিল। তবে বৃষ্টি হবে কিনা আমরা কোন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক, আমরা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ার কিছু সময়ের মধ্যেই প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি নেমে যায়। আর যখন বৃষ্টি শুরু হয় আমরা নৌকা দ্রুত চালাতে শুরু করি, আশেপাশে কোন একটা আশ্রয় পাওয়ার খোঁজে। এই সময় আমরা যেহেতু নৌকায় বেশ কয়েকজন ছিলাম আর বৃষ্টি কারণে এদিক-সেদিক নাড়াচাড়া করতে করতে খালের একটা অংশে গিয়ে আমরা নৌকা নিয়ে ডুবে যাই।

একে তো প্রচন্ড বর্ষা হচ্ছিল, তার মধ্যে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়াতে বিপদের মধ্যে পড়ে যাই আমরা। এমন একটা জায়গায় গিয়ে আমাদের নৌকা ডুবে ছিল যার আশেপাশে প্রচন্ড শ্যাওলা ছিল । এই শ্যাওলার কারণে আমরা ভালো করে সাঁতরে খালের কূলে পর্যন্ত যেতে পারছিলাম না। যাইহোক, অনেক কষ্ট করে আমরা খালের কূলে গিয়ে পৌঁছায়। ততক্ষণে আমাদের নৌকা খালের একদম গভীরে ডুবে যায়। আমাদের সাথে যা কিছু ছিল সবকিছুই নিয়েই আমরা ডুবে গেছিলাম। নিমন্ত্রণ আমাদের এইভাবে পথেই শেষ হয়ে যাবে, আমরা সেটা ভাবতেই পারিনি। আমাদের সেই মুহূর্ত অন্য কোন কিছু করারও ছিল না, সেইজন্য আমরা বাড়ির সব লোকজন মিলে খালপাড়ে কিছু সময় বসে থাকি।

আমরা মূলত কারো সাহায্য নিয়ে নৌকাটাকে খাল থেকে উঠানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। যেহেতু প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই জন্য কারোর দেখাও আমরা পাচ্ছিলাম না। আমরা ওই ভাবেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি অনেকটা সময়। প্রায় এক ঘণ্টা পরে গিয়ে বৃষ্টি থামে সেদিন। বৃষ্টি থামার পর আমরা কিছু লোকেরও দেখা পাই। তারপর লোকের সাহায্য নিয়ে নৌকাটা খাল থেকে তুলি। অনেকটা কষ্ট পোহাতে হয়েছিল আমাদের এই নৌকা তোলার জন্য। যাইহোক, কি আর করা যাবে, আমাদের সেদিন আর নিমন্ত্রণ বাড়ি যাওয়া হয়নি। মাঝ পথেই আমাদের নিমন্ত্রণ সমাপ্ত হয়ে গেছিল। আর যেহেতু প্রচন্ড বৃষ্টিতে আমরা ভিজেও গেছিলাম তাই নৌকা খালের জল থেকে তোলার পর, আমরা সেটা নিয়ে পুনরায় বাড়িতে চলে আসি।

নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা গ্রামে থাকতে বেশ কয়েকবারই আমার সাথে হয়েছে। তবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা সেইবার প্রথম ই হয়েছিল। যাইহোক, সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভেজার কারণে দুদিন পর আমার বেশ জ্বর হয়। সেদিন নিমন্ত্রণ তো আর খেতে যেতে পারিনি, বাড়ি ফেরত এসে দুদিন পর থেকে ওষুধ খেয়ে যেতে হয়েছিল এই আর কি। এটাই ছিল আমার সেদিনের ঘটনা।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

আহারে,নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খালের মধ্যে ডুবে গেলেন।আসলে বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তাগুলো কাঁদায় ভরে থাকে।হেঁটে যাওয়া খুব বেশী কষ্টই হয়।আপনার ছেলেবেলার বৃষ্টির দিনে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার গল্পটি পড়ে খারাপ ই লাগলো।নিমন্ত্রণ তো খাওয়া হলোই না।দুইদিন পর ঔষধ খেয়েই কাটাতে হলো।

কি আর করা যাবে আপু, সেদিন আমাদের কপালই খারাপ ছিল। নিমন্ত্রণ হয়তো সেদিন আমাদের কপালে লেখা ছিল না, সেইজন্য আর নিমন্ত্রণ বাড়ি পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পারিনি।

বেশ ভয়ানক একটি ঘটনা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইজান। একদিকে ঝড়বৃষ্টিতে কোন কিছু দেখা যায় না আর এই মুহূর্তে যদি নৌকায় অবস্থান করা যায় তারপর আবার সেটা ডুবে যায় তাহলে কতটা বিপদজনক তা বুঝতে পারছি। যে এমন বিপদে পড়ে নি সম্পূর্ণ বুঝবেনা সে। যাইহোক ছাত্রী ডাঙ্গায় ফিরতে পেরেছেন এটা হাজার শুকরিয়া। অনেক কিছু জানতে পারলাম ভাই আপনার এই পোস্ট পড়ে।

যাইহোক ছাত্রী ডাঙ্গায় ফিরতে পেরেছেন এটা হাজার শুকরিয়া।

ধন্যবাদ ভাই, আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।