জেনারেল রাইটিং || স্মৃতিচারণ : ঝালমুড়ি

in hive-129948 •  3 months ago 

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

jhal-muri-827292_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

বন্ধুরা, আজকের নতুন একটি ব্লগে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট আমি শেয়ার করবো। আসলে বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তোমাদের সাথে আসলে কোন স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট শেয়ার করা হয় না। আগে প্রত্যেক সপ্তাহেই আমি চেষ্টা করতাম কোন না কোন স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট তোমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আসলে আমাদের জীবন দশায় অনেক স্মৃতি জমা থাকে। সেই স্মৃতিগুলো যখন মনে করা হয় নিজের ভিতরে অনেক ভালো লাগে। আর সেগুলো সবার সাথে শেয়ার করতেও অনেক ভালো লাগে। আজকে তোমাদের সাথে যে স্মৃতিচারণটি আমি শেয়ার করবো, সেটি আমার স্কুল জীবনের একটি স্মৃতিচারণ।

আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি, সেই সময় বাড়ি থেকে হাত খরচ হিসেবে কোন কোন দিন ৫ টাকা আবার কোন কোন দিন ১০ টাকা, এরকম পেতাম। তবে ১০ টাকা খুব কমই পেতাম, ৫ টাকাই অধিকাংশ সময় দিত। আর যা দিয়ে টিফিন করতাম স্কুলে গিয়ে। আমার কাছে স্কুল জীবনের টিফিন টাইমটা খুব স্পেশাল ছিল। কারণ আমার খুব পছন্দের কিছু খাবার সবসময় স্কুলের সামনে আমি পেয়ে যেতাম। এই আমার স্কুলের সামনে যে ছোট ছোট দোকানগুলো থাকতো তাদের খাবারগুলো এত অসাধারণ লাগতো আমার কাছে যার কোন তুলনা হয় না। এই সব খাবারের দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এক কাকুর ঝালমুড়ি।

তার ঝালমুড়ির স্বাদ আমি এখন অব্দি ভুলতে পারিনি। এই ঘটনা প্রায় আজ থেকে ১৮ বছর আগের। তারপরও সেই ঘটনাগুলো আমার এখনো মনে আছে। কারণ সেই কাকুর ঝালমুড়ির কোন তুলনা হয় না। আর আমি এখন অব্দি সেরকম ঝালমুড়ি খাওয়ার কখনো সুযোগ পাইনি। যাইহোক, টিফিন পিরিয়ড হলেই ছুটে চলে যেতাম কাকুর কাছে। আর যেহেতু কাকুর কাছ থেকে প্রতিদিনই ঝালমুড়ি খেতাম তাই কাকুর সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিল। কাকু ২ টাকা, ৩ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা এরকম করে মুড়ি সবাইকে যার যার দাম অনুযায়ী দিয়ে থাকতো। তবে আমি গিয়ে অধিকাংশ সময় ৩ টাকার ঝালমুড়িটা খেতাম। এই ৩ টাকার ঝালমুড়িটা খেলে আরও খেতে ইচ্ছে করতো। আর যে একটা অতৃপ্ত ভাব কাজ করতো, সেই ব্যাপারটা আরও বেশি ভালো লাগতো। কারণ পরের দিন গিয়েও টিফিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম ঝালমুড়ি খাবো বলে।

আমি সেই সময় ভাবতাম এই কাকু এই ঝালমুড়িটা কি করে তৈরি করে! সেই ফর্মুলা যদি শিখতে পারতাম, কতই না ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো আর সেই ছোটবেলায় কি করে কি করতে হয়, সেটা বুঝতাম না। যাইহোক, এই ভাবেই অনেকদিন পর্যন্ত চলে। প্রতিদিনই এই একই ভাবে ঝালমুড়ি আমার কমন খাবার থাকতো টিফিনে। তাছাড়া অন্যান্য আরও অনেক কিছু খাবার আশেপাশ থেকে কিনে খেতাম। একবার স্কুলে গিয়ে দেখি ঝালমুড়ি কাকু আসেনি, আমি ভাবলাম কোন কারণে হয়তো ঝালমুড়ি কাকু অসুস্থ সেজন্য আসতে পারেনি। পরের দিনও গিয়ে দেখি একই ঘটনা। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ চলে যায়। সে ঝালমুড়ি কাকুর আর দেখা আমি পাইনা। আমি তো অনেকটা টেনশনে পড়ে যাই। কাকুর কি হলো, সেই বিষয়ে জানার জন্য। আমার মতো আরও অনেকে ছিল যারা এই ঝালমুড়ি কাকুর ঝালমুড়ি খেতে অনেক পছন্দ করত।

যাইহোক, আমরা সবাই মিলে যখন ঝালমের কাকুকে আর না দেখতে পাই, তখন আমরা সবাই মিলে একটা গ্রুপ করে সেই ঝালমুড়ি কাকুর খোঁজ করতে থাকি এবং অবশেষে সেই ঝালমুড়ি কাকুর আমরা বাড়ি খুঁজে পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি কাকু কয়েকদিন আগেই মারা গেছে। সেই কথা শুনে আমরা সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেই। আসলে সেই কাকুর প্রতি আমাদের একটা ভালোবাসাও ছিলো। অনেক আন্তরিকতাটা ছিল সেই ছোটবেলায় সেজন্যই হয়তো এরকম একটা অপরিচিত লোকের জন্য আমাদের চোখ দিয়ে জল পড়েছিল। তারপর থেকে অনেকদিন স্কুলে গেছি আর সেই ঝালমুড়ি কাকুর কথা বারবার মনে পড়তো। কিন্তু আর সে ঝালমুড়ি কাকুর দেখা কোনদিনও পাইনি। এত বছর পর এসেও হঠাৎ সেই ঝালমুড়ি কাকুর কথা মনে পড়লো। তাই তোমাদের সাথে এই স্মৃতিচারণটি আমি শেয়ার করলাম।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Cztq4BXWMFDxHzEZ2QSjxVFnsLBz27bskZMejC9cirzQ85MEJGtsm5hWaJuVngdv1B8bhQpR5JgyziewifDDtchB1uutEvCix5Baq3Kow4...HrFndeckgAdeTczZ2yUT7qZT9QggvS7DoC3cSHRK8Lzudd6HuVHjDihDS6QPqWcngTpkHr1F52teScwfJVJxW9smoQ3vTKGFmo3gcczEtpXXewE2NrM7wpofj.webp

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

আজকে আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। যে পোষ্টের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের। ঝালমুড়ি আমারও খুব প্রিয় একটি খাবার। হাই স্কুল এবং কলেজ লাইফে বেশ খেয়েছি। কিন্তু এখন গ্যাসের কারণে আর তেমন খাওয়া হয়ে ওঠে না। যাইহোক ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পড়ে।

আমার পোস্টটি পড়ে আপনার যে ভালো লেগেছে, সেটা জেনে অনেক খুশি হলাম আপু আমি। আপনার এই সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ছোটবেলায় অনেক ঝাল মুড়ি খেতাম। বিশেষ করে স্কুলের সময়গুলোতে অনেক বেশি ঝাল মুড়ি খাওয়া হতো। আপনি আপনার অনুভূতির মাধ্যমে চমৎকারভাবে লেখাগুলো উপস্থাপন করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাই।

স্কুল জীবনে থাকতে সবারই অনেক ঝাল মুড়ি খাওয়ার ঘটনা রয়েছে ভাই। আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

শৈশবের স্মৃতিগুলো হলো আমাদের জীবনের সোনালী দিনগুলো। এছাড়া স্কুল জীবনের সময় গুলোর কথা অনেক বেশি মনে পড়ে। আপনার লেখাগুলো পড়ে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সাথে নিজের শৈশব স্মৃতিগুলোর মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া।

  ·  3 months ago (edited)

আমার এই লেখা গুলো পড়ে যে আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, সেটা জেনে অনেক ভালো লাগলো আপু। আপনার এই সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে শৈশবের স্মৃতির কথা মনে পড়লে এখন মনে হয় যেন আবারও সেই শৈশবে ফিরে যাই৷ আপনার এই লেখাগুলো পড়ে একেবারে ছোটবেলার স্মৃতি গুলোর মধ্যে যেন হারিয়ে গেলাম৷ ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷

আমি যে-ই হাইস্কুলে পড়তাম, সেই স্কুলে এক চাচা বেশ মজাদার ঝালমুড়ি তৈরি করতেন। এখনো উনার ঝালমুড়ির স্বাদ আমার মনে আছে। সত্যি বলতে এতো স্বাদের ঝালমুড়ি আমি অন্য কোথাও খাইনি। স্কুলের সবাই উনার ঝালমুড়ি খুব পছন্দ করতো। ৫/৬ বছর আগে নাকি সেই লোকটা মারা যায়। যাইহোক আপনার স্মৃতিচারণ পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।