#দায়িত্ব
অবশেষে সংসারের দায়িত্ব যখন আমার কাঁধে এসে পরলো তখন বাজারে গিয়ে জিনিস কেনার আগে দ্রব্যমূল্যের নির্ধারিত দাম থেকে আরোও কমে কিনে নেয়ার চেষ্টা করতাম। বিলাসীতা ছেড়ে সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম আমি।
মাস শেষে সংসার খরচের লিস্ট যখন আমার হাতে দিয়ে যেতো ইলা তখন চুপচাপ লিস্ট দেখতাম আর বলতাম এতো খরচ কিসের? একটু কমে চলা যায় না?
ইলা সাফ জানিয়ে দিতো এরচেয়ে কমে চলতে হলে উপোস করে থাকতে হবে দুইবেলা। আর একবেলা লবণ মরিচ দিয়ে পান্থাভাত খেয়ে দম নিও।
তখন মনে পরতো বাবার কথা। বাবা বলতেন সংসারের দায়িত্ব এসে পরুক তোমার ঘাড়ে তখন তুমি বুঝবে সংসার চালানো কতো কঠিন! দুপয়সা পকেটে থাকলে দশ পয়সার খরচ যখন বাধ্যতামূলক বুঝতে পারবে দিনশেষে কতটা দুশ্চিন্তা নিয়ে সবার সামনে স্বাভাবিক থাকতে হয়।
বাবাকে নিয়ে যখন স্কুলে অভিভাবক সভায় যেতাম তখন দেখতাম বাবা তার সবচেয়ে সুন্দর শার্টটা গায়ে দিয়েছেন। এরপরেও আমার অভিযোগ থাকতো বাবা কেনো যে এরকম জামাকাপড় পরে আমার বুঝেই আসে না। কি হবে এতো কৃপনতা করে? একটা নতুন শার্ট নিলেতো হয়ে যায়। আমার বন্ধুর বাবারা কি সুন্দর স্মার্ট হয়ে আসে।
আজ আমি আমার ছেলের সাথে অভিভাবক সভায় যাচ্ছি তার স্কুলে। আমার ছেলে আজ অভিযোগ করছে বাবা তুমি নতুন শার্ট না কিনে এতো টাকা বাঁচিয়ে কি করবে? আমি আমার ছেলের প্রশ্নে খানিকটা ভাবুক হয়ে গেলাম। কিন্তু তার প্রশ্ন আমার বাবার উত্তর দিয়েছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম আমার পরনের নতুন শার্ট দেখে বাবা তার জন্য নতুন কিছু কেনার কথা ভুলে যেতেন। আমি যেভাবে আমার ছেলেকে আনন্দিত করার জন্য নিজের শখ বা প্রয়োজন কিছু আছে বলে ভুলে গিয়েছি।
দিনদিন সন্তান আর সংসার বড় হচ্ছে। আমার দায়িত্ব বাড়ছে। সন্তানদেরকে সেরাটা দিতে গিয়ে আমি আমার শখ আহ্লাদ সব ভুলে গিয়েছি। সন্তানদের প্রয়োজন মিটিয়ে যখন দেখি তাদের মুখে হাসি ফুটেছে তখন আমি ভুলে যাই আমাকে।
এইতো কিছুদিন আগে ছোটো মেয়ের ফরম ফিলাপ। এদিকে আমার অসুস্থতা দিনদিন বাড়ছে। মেয়ের ফরম পূরনের টাকা জমাতে গিয়ে স্থানীয় ফার্মেসী থেকেই ঔষধ কিনে খাই। এর মাঝে ছেলে আমার বলে গেলো নিজের যত্ন নিতে পারো না? সব কি শিখিয়ে দিতে হবে না কি? তুমি কি ছোটো মানুষ?
তখনই মনে পরে গেলো আমিও বাবাকে বলতাম নিজের যত্ন নিজে না নিলে কারো কিছু করার আছে? আমি বুঝতে পারলাম সবার যত্ন নিতে যাওয়া মানুষগুলো এমনই হয়। কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। নিজের সব উজাড় করে দিয়েও একবারও বলে না তোমাদের জন্য করেছি। বরঞ্চ বলে বাবা হলে বুঝবা। এখন না।
আজ আমি সত্যিই বুঝতে পারছি।
বাবা ব্যাগ ভর্তি বাজার করে আনার পর মা যখন বলতেন এসবের কি প্রয়োজন ছিলো? আমরা বলতাম তুমিতো না খাওয়ায় রাখতে পারলেই খুশি?
কিন্তু না। আজ আমার ভুল ভাঙলো।
মা ঠিকই বলতেন এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। কারন এসব বাবা খেতেন না৷ আজ আমি বুঝতে পেরেছি বাবা নিজে খাওয়ার চেয়েও বেশি সন্তানকে খাইয়ে শান্তি পেতেন।
দিনদিন বৃদ্ধ হচ্ছি।
সন্তানেরা বড় হচ্ছে। তাদের উপর নির্ভর না করে নিজেই ব্যবসা করে টুকটাক আয় করছি। এখন বুঝতে পারি বাবা কেনো আমাদের কাছে কিছু চাইতেন না!
আমার ছেলের হাতে প্রেসক্রিপশন দিয়ে যখন বললাম, এই ঔষধ শেষ হয়ে গিয়েছে। সে কিছু না বললেও আচরণে বুঝিয়ে গেলো যেন এগুলো অপ্রয়োজনীয় খরচ। অথচ একসময় আমি ঔষধ না খেলে সে রাগ করতো।
বোনের বিয়ের সময় বাবা বলেছিলেন, আমার মেয়ের জন্য আমিই যথেষ্ট। তখন খুব রাগ করেছিলাম কারন আমি মনে করেছিলাম আমি যা দিচ্ছি এটাই অনেক। আজ সেসকল জিনিস আমার ছেলে দিয়েছে তার বোনকে আমি বুঝতে পেরেছি বাবার অভিমান কোথায় ছিলো! এই জিনিসগুলো দিয়ে সত্যিই কিছু হয় না। সাজসজ্জা সব আমাদের বিনোদনের জন্য ছিলো। আজ প্রয়োজনীয় জিনিস যোগাড়ে আমি হিমশিম খাচ্ছি আর ছেলে বলছে ব্যান্ড শো ই আসল। আমি চুপ করে রইলাম। মনে পরে গেলো বাবার কোন, তিনি বলতেন হিস্ট্রি রিপিটস হিস্ট্রি। সত্যিই তাই।
বাবা তার চলে যাওয়ার কয়েকদিন আগে বলেছিলেন দায়িত্ব যখন তোমার হবে তখন বুঝে নিবে পুরুষ হওয়া কতো কঠিন! একটা সংসার সামলানো কতটা কঠিন।
আজ সত্যি তার সবটাই বুঝতে পারছি খুব ভাল করেই।
পুরুষ হওয়া এতো সহজ নয়। আর দায়িত্ব পালন করে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও নিজেকে সন্তুষ্ট করাও ততোটা সহজ নয়।
একদম বাস্তবসম্মত কথা তুলে ধরেছেন আপনার আজকের পোস্টে
দায়িত্বটা যখন নিজের কাধে পরে তখনই আমরা বুঝতে পারি কোন জিনিস্টার মূল্য কতটুকু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি অনেক সুন্দর একটা পোস্ট এবং বাস্তবধর্মী কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। যা আমরা অনেক সময় অভিমান করে বলে থাকি বাবার প্রতি সন্তানের যে অভিমানটা থাকে সবার ক্ষেত্রে শুধু আমি আর আপনি নয়। আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল। আমি ক্লাস নাইনে পড়ি পকেট খরচের জন্য বাবার কাছে টাকা চাইতে আমাকে বলল এখন তো টাকা নিচ্ছে দিবা কখন। বাবারে কথা শুনে আমি রাগ করে চলে গেলাম।পরে অন্য একটা লোক দিয়ে ডেকে নিয়ে গেল পকেট থেকে 50 টাকা বের করে দিল। আর যখন বাবাকে হারালাম নিজেও একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছলাম। নিজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। সংসার চালাচ্ছে টাকা ইনকাম করছি। এখন বাবার কথা মনে পড়লে শুধু চোখে অশ্রু ঝরে। কারন আমার রোজকারের এক টাকাও আমি বাবার পিছনে খরচ করতে পারেনি। আমি মনে করি এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। বাবা তো চলে গেল পরপারে। কিন্তু আমি তখন সংসার কি জিনিস দায়িত্ব কী জিনিস বুঝতাম না। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভার যখন কাধে পড়ে। তখন বুঝলাম দায়িত্ব কাকে বলে শৌখিনতা স্বাদ-আহ্লাদ বলতে কিছুই থাকেনা। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। এবং আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যাগুলো করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে পোস্ট করতে হলে আপনাকে প্রথমে একটি পরিচিত মূলক পোস্ট করতে হবে। একটি কাগজে লিখতে হবে আমার বাংলা ব্লগ, আপনার স্টিমিট আইডি এবং তারিখ। সেই কাগজসহ সেলফি নিয়ে সেই সেলফির সঙ্গে আরও নূন্যতম চার-পাঁচটি ছবি এবং ২৫০ শব্দের একটি পরিচিতি মূলক পোস্ট লিখুন। পোস্টে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবার সম্বন্ধে কিছু, আপনার জাতীয়তা এবং কোন এলাকা থেকে এই সমস্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। l#abb-intro এই ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই। আইডি ভেরিফাই হওয়ার পর আপনি পোস্ট করতে পারবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আর পোস্ট করবো না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোষ্টের লেখাগুলো শতভাগই চৌর্যবৃত্তি করা।
এ ধরনের post আমাদের কমিটিতে রাখা হয় না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-29-sep-21
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source:
https://hi-in.facebook.com/109198627579513/posts/412680950564611/
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit