আজ নবান্ন উৎসব

in hive-129948 •  2 years ago 

নমস্কার,

আজ নবান্ন। আবহমান গ্রাম বাংলায় যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এই উৎসবটি। যদিও কালের পরিক্রমায় আধুনিক সমাজ অনেকটাই ভুলতে বসেছে নবান্ন উৎসব কে। আবার তথাকথিত ধর্মান্ধ মানুষ এটাকে সনাতন ধর্মের উৎসব বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অতীত ইতিহাস কেউ ঘেটেও দেখার চেষ্টা করে না।

নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। হেমন্তের এই সময়টাতে কৃষকের ঘরে যখন নতুন ধান ওঠে, ঠিক সেই সময় নতুন চাউলের ভাত ,পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম শুরু হয়ে যায়। আর এই ব্যাপারটাকেই উৎসবের মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে উদযাপন করে থাকেন গ্রাম বাংলার কৃষকেরা। মূলত এভাবেই নবান্ন উৎসবের প্রচলন হয়েছে। অনেকে এই দিনে তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নতুন অন্ন রান্না করে উৎসর্গ করেন। আমার বাড়িতেও এই রীতিটা প্রচলিত আছে।

IMG_20221118_120937.jpg
Location

মোটামুটি চার বছর বয়সেই আমি শহরে চলে আসি। তাই বছরের এই দিনটাতে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে চলে যেতাম গ্রামের বাড়িতে। ওখানে আমার জেঠুরা থাকতেন। সারাদিন নানান আয়োজনে হৈ-হুল্লোড় করে দিনটা কাটতো। নবান্নের একটা বিশেষত্ব ছিল সকালের দিকটায় দই চিড়া মুরকি এগুলো খাওয়া হয়। আর দুপুরের খাবারটা খেতে খেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত। অনেক পদের রান্না হতো সেদিন।

মাছে ভাতে বাঙালি আমরা। তাই নবান্নের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল মাছ। বাজার থেকে বিশাল বড় বড় মাছ কেনা হতো এই দিন। অন্য কোনদিন বাজারে না গেলেও এই একটা দিনে আমি প্রতিবার সকাল বেলায় বাবার সাথে বাজারে চলে যেতাম শুধুমাত্র মাছ দেখার জন্য এবং কেনার জন্য। যেটা আমার পছন্দ হতো বাবা সেটাই কিনত। অদ্ভুত একটা ভালো লাগার কাজ করত এই ব্যাপারগুলোতে।

যেদিন থেকে বাইরে থাকা শুরু হয়েছে, ছোটবেলার এই মুহূর্তগুলো শুধু স্মৃতির পাতাতেই রয়ে গেছে। নবান্নে আর ঠিকমতো বাড়িতেও আসা হতো না। বাজারে গিয়ে বড় মাছ দেখা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে বেশ। এখন তো অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি। বাবা দেখি আগেই মাছ কিনে নিয়ে এসেছে। সকালের আচার অনুষ্ঠান শেষ করার পর ভীষণ ইচ্ছে করছিল একটাবার বাজার থেকে ঘুরে আসি। কি কি মাছ উঠেছে একটু দেখে আসি। এই একটা ব্যাপারে আমার ভীষণ আগ্রহ।

IMG20221118111153.jpg
Location

IMG20221118110721.jpg
Location

IMG20221118111329.jpg
Location

যথারীতি বেরিয়ে গেলাম বাজারের দিকে। বেলা তখন বারোটা বাজবে হয়তো। আমি ভেবেছি বাজারে হয়তো ভিড় নেই খুব একটা। কিন্তু ভেতরে গিয়ে রীতিমত অবাক। তখনো মানুষ বাজার করছে এবং মাছের দোকানগুলোতে মাছির মত ভিড় লেগে আছে। আমিও বাবু সাহেবের মত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘুরলাম আর মাছ দেখলাম। রুই, কাতল, সিলভার কাপ, গ্লাস কাপ ,বোয়াল, শোল ,ইলিশ, পাঙ্গাস ,আইর, চিতল মাছ সহ আরো নানান ধরনের ছোট বড় মাছ উঠেছিল বাজারে। এক একটা মাছের সাইজ চোখে লাগার মত ছিল। দামটাও ছিল বেশ চওড়া। বড় সাইজের চিতলগুলো বারোশো টাকা কেজি পর্যন্ত চাইছিল। রুই বা কাতল চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের মাছগুলো ৪৫০ বা ৪০০ টাকা কেজি দাম চাইছিল। আর ইলিশ মাছের কেজি দেখলাম ১২০০ টাকা করে। মোটামুটি বড় সাইজের ছিল সেগুলো।

বাড়িতে ফোন দিয়ে শুনলাম রুই কাতল দুই ধরনের মাছ কেনাই হয়ে গেছে। কোন কিছু তাই কেনার প্রয়োজন নেই। বাবা মজা করে বলল, তুই মাছগুলো দেখে চোখ ভরিয়ে বাড়ি ফিরে আয়।

IMG20221118111229.jpg
Location

IMG20221118110825.jpg
Location

পাশেই ছিল কাঁচা বাজার। শীতকালীন সব শাকসবজির পসরা সাজিয়ে বসেছে একদম। এসব যখন দেখছিলাম আর মনে মনে কখন যে ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম নিজেও জানিনা। আমি শুধু হাটছিলাম আর দেখছিলাম এবং ছোটবেলার স্মৃতি গুলো মনে করছিলাম।

IMG20221118111400.jpg
Location

IMG20221118111442.jpg
Location

মোটামুটি সব বাড়িতেই আজকে বেশ জমজমাট রান্নাবান্না হয়েছে। আমাদেরও তাই। পাশের দুই বাড়ি সহ আমরা সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করব। বুঝতেই পারছেন আয়োজনটা কেমন হতে পারে। আমাদের বাড়ির ছাদেই রান্নার আয়োজন করা হয়েছিল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রান্না চলছেই। আমি যখন এই পোস্টটা লিখছি তখনও রান্না শেষ হয়নি। আসলে শীতকালীন সবজি যেমন অনেক, রান্নার আইটেম ও তাই অনেক। রাতের খাওয়া দাওয়া বেশ কব্জি ডুবিয়ে হবে।

আধুনিক সমাজের এই মানুষগুলো যত অত্যাধুনিক খাবার-ই খাক না কেন, আমার সব সময় বাঙালি খাবারই বেশি ভালো লাগে। চিকেন মটন এসবের থেকেও হাজার গুণ বেশি তৃপ্তি পাই এই ধরনের বাঙালি খাবারগুলো খেয়ে। যাই হোক অনেক কথা হলো। আজ এখানেই শেষ করছি। আর হ্যাঁ আপনাদের সকলের হয়ে আমি একাই খেয়ে নেব, চিন্তার কোন কারণ নেই। হিহিহিহি।

সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

শুভ নবান্ন সজিব দাদা ৷ হুম আজকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ৷ তবে আমাদের সনাতন ধর্মীয় মানুষেরা এ নিয়ম কানুন মেনে চলে ৷ যেমন আমরাও প্রতিবছর ধান কাটা শেষ করে ৷ বাড়িতে বড় পুজোর আয়োজন করি ৷ পায়েস ক্ষির ভোক প্রসাদ ঠাকুরকে নিবেদন করি ৷ এছাড়া পূর্বপুরুষদের উদ্যেশে দেওয়া হয় ৷ তবে আমাদের এখনো নতুন ধান বাড়ি আনে নি৷ আনলে আমরাও নবান্ন উৎসব করবো ৷ সেদিন আমিও ব্লগ লিখবো ৷
শুনে অনেক ভালো লাগলো যে আপনাদের বাড়িতে নবান্ন উৎসব হচ্ছে ৷

শুনে খুব খুশি হলাম রে ভাই। আসলে এটা আমাদের ঐতিহ্য। বাঙ্গালীর গর্ব। অতীত ভুলতে বসেছি বলেই আজ আমাদের এই বেহাল অবস্থা। যাই হোক অনেক শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থাকবেন।

ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম আজকে নবান্ন উৎসব। আসলে আগেকার দিনে গ্রাম বাংলায় এই নবান্ন উৎসব ধুমধামে পালন করা হতো । কিন্তু এখন যতই দিন যাচ্ছে পুরানো ঐতিহ্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে ।তার পরেও যে আপনারা এই ঐতিহ্যটাকে ধরে রেখেছেন এবং বিশাল একটি আয়োজনের মাধ্যমে পালন করেন জেনে ভালো লাগলো।তাহলে তো আপনার আজকে বিশাল খাওয়া দাওয়া আছে । আর বাজারে তো বেশ বড় বড় মাছ দেখতে পেলাম, দামটাও সেরকম ছিল ।সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো লাগলো ।ধন্যবাদ ।আপনাকে।

সত্যি বলতে আগের সেই নবান্ন আর বর্তমান নবান্নের মাঝে অনেক পার্থক্য চলে এসেছে আপু। তবু যতোটুকু পারা যায় আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

আপনাকে নবান্ন উৎসবের শুভেচ্ছা। নবান্ন উৎসব মনে হয় শুধু বইয়ে পড়েছি পালন করতে দেখিনি। আপনি অনেক বছর পর আজ আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। আপনার শেয়ার করা ছবিগুল সুন্দর হয়েছে। মাছের যে দাম তাতে মাছ খাওয়াই বন্ধ করে দিতে হবে। শীতকালিন সব্জির ছবি দেখে ভাল লাগলো। আপনিও সুস্থ্য থাকবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

হ্যাঁ ভাই মোটামুটি সবাই বইয়ে একবার করে হলেও নবান্ন নিয়ে পড়েছে। কিন্তু তার বাস্তবিক প্রয়োগ অনেকেই দেখে নি। আর সত্যিই ভাই, বাজারে শুধু মাছ নয়, সব জিনিসেরই অত্যাধিক দাম। ভালো থাকবেন ভাই।

ভাইয়া আপনার এ পোস্টটি পড়ে নবান্ন উৎসব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এই উৎসব সম্পর্কে আসলে আমার কোন ধারণা ছিল না। ছোটবেলা বইতে নামানো উৎসব পড়েছি ভেবেছিলাম এটি হয়তো নতুন চালের নতুন পিঠা উৎসব বা অন্য কিছু হবে ।যাই হোক আপনাকে ধন্যবাদ ।এবং আপনাকে এই উৎসবের শুভেচ্ছা।

আসলে অনেকেই বইয়ে পড়েছে শুধু, কিন্তু বাস্তবিক প্রয়োগ কখনোই করে নি বা কোথাও দেখে নি। তবে আমার মতে বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে এই উৎসব টা করা উচিত। যাই হোক, ভালো থাকবেন আপু। খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে।

নবান্ন উৎসব তো খুব বড়সড়ো করে পালন করছেন দেখছি। যদিও নবান্ন উৎসব কখনো পালন করিনি। গ্রামের লোকজন বোধহয় এই উৎসবটি বেশি পালন করে। নতুন ধান ওঠার আনন্দ তো তাদেরই বেশি । আর বাজারে গিয়ে বেশ বড় বড় কিছু মাছের ছবি তুলেছেন দেখছি। আমারই তো মনে হচ্ছে কিছু মাছ কিনে নিয়ে আসি। এত সুন্দর সুন্দর মাছ দেখে না কিনে চলে আসতে ইচ্ছা করলো? যাতে রাতে অনেক বেশি পরিমাণে খেতে পারেন সেজন্যই বোধহয় রান্না অনেক ধীর গতিতে চলে। যাই হোক খুব ভালো লাগলো উৎসবটির আয়োজন দেখে।

আপু বিশ্বাস করেন খুব ইচ্ছে করছিল মাছ নিতে। কিন্তু ধুম করে মনে হলো, বাবা তো কিনেছেই, মিছেমিছি নিজের টাকাতে হাত দিয়ে কি হবে 😅। তারপর পকেটে হাত দিয়ে বাড়ি ফিরলাম 😊। হিহিহিহি। আর সত্যিই অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম গতকাল রাতে ।

আজকে সত্যি এই উৎসব টা বিলুপ্ত হয়েই গেছে বলা যায়।জি এটা সবারই উৎসব।অনেকে এটা শুধু সনাতন ধর্মের বলে।হেমন্তের এই সময়ে কৃষকেরা নতুন ধান ঘরে তোলে।শীতকালে নতুন ধান ঘরে তোলার পর এই উৎসব পালন করা হয়।পাশের দুই বাড়ি সহ আপনাদের বাড়ির সাদে বেশ ঘটা করে এই উৎসব পালন করেছেন।অনেক মজাই করেছেন বোঝা যাচ্ছে।এটা ঠিকই বলেছেন চিকেন মাটন এর থেকে বাঙালি খাবার গুলোই আমাদের বেশি ভালো লাগে।ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া সুন্দর ব্লগটি শেয়ার করার জন্য।

এই উৎসব টা আমাদের বাঙালির গর্ব। আমাদের ঐতিহ্য। অথচ আমরা সব ভুলতে বসেছি দিন দিন। আমাদের উচিত আমাদের শিকড়ে ফিরে যাওয়া। ভালো থাকবেন আপু। শুভেচ্ছা রইলো।

আজ কাল ঐতিহ্য গুলো দিন দিন আমাদের মাঝ থেকে উঠেই যাচ্ছে বলা চলে।আগে দেখতাম নবান্নের দিনে বাড়ি বাড়ি নতুন চালের ভাত, নতুন চালের পায়েস, কত রকমের পিঠেপুলি। আজকাল আর এসব দেখাই মিলে না। ভালো লাগলো যে আপনাদের ওখানে এখনো নবান্ন পালন করা হয়।

হ্যাঁ আপু,, আমরা সবাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে আছি শুধু। অন্যদিকে আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। কি আর বলবো। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে আপু। ভালো থাকবেন।

ভাইয়া আপনার শৈশবটা সুন্দরই কেটেছে। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বাজার মনিটরিং রিপোর্ট দেখে ভালই লাগলো। । বড় বড় মাছের ছবি দেখতে পারলাম। আমাদের দিকে নাবান্ন উৎসবটা তেমন ভাবে পালন করা হয় না। তবে আগে পালন করতো শুনেছি। সব উৎসবই ভাল লাগে। আনন্দ করা যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া।

সত্যি বলতে এখন আর আগের মত আমেজটা নেই ভাই। সবাই কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছি। তবে আমাদের সকলের উচিত আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে ধারণ ও পালন করা। ভালো থাকবেন ভাই।

কাঁটা তারের সীমানা অনেক পার্বনএর সময়কাল কেও পাল্টে দেয়। আমাদের নবান্ন আর কিছুদিন পর হবে।ঘরে মা,ঠাকুরকে চালবাটা, গুঁড়, নারকেলের জল, সবরকম ফল দিয়ে ভোগ দেবে। তারপর আমরা সেটা প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করব।নবান্ন কোন নির্দিষ্ট ধর্মের জন্য নয়। সবাই ই পালন করতে পারে। আর কথাতেই তো আছে,

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

আপনাদের বাজারে তো বেশ সম্ভার বসেছে। এমন ভরা বাজার দেখলে মনে যে কি শান্তি হয় বলে বোঝাতে পারব না।

আমাদের এখানেও অনেকে দিন দেখে নবান্ন করে। আমাদের আবার সেই ছোট বেলা থেকেই দেখছি একদম প্রথম দিনটাতেই নবান্ন করে। ভালো লাগার একটা দিন আমার।