নমস্কার,,
ক্লাস নাইনের শুরুর দিকের কথা। বাঁদরামি আর শয়তানির যা যা শিক্ষা আছে মোটামুটি সব নেওয়া হয়ে গেছে। স্কুলে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল কে দুষ্টামির জন্য প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই চিনত বেশ। আবার ভালো ছাত্র নামেও একটা তকমা ছিল গায়ে। তাই দুষ্টুমি গুলো করে বেশ পার পেয়ে যেতাম। হঠাৎ একদিন দেখলাম নতুন অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা যোগদান করেছেন হাইস্কুল শাখায়। ও হ্যাঁ বলে রাখি, আমাদের ছিল স্কুল এন্ড কলেজ। একদম প্লে থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। আর বগুড়া জেলাতেও বেশ নাম করা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
যেটা বলছিলাম,, নতুন শিক্ষক যারা যোগদান করেছিলেন সবাইকে তো একদিনে দেখি নি। চিনিও না। একদিন আমাদের ইংরেজির শিক্ষক অসুস্থতার জন্য আসতে পারেন নি। তো ঐ ক্লাস টা নিতে হঠাৎ করেই একজন নতুন ম্যাডাম ক্লাসে আসলেন। আমি তো নরমালি লাস্টের বেঞ্চের দিকে বসতাম। পেছন থেকে একবার ম্যাডাম এর দিকে চোখ পরতেই মাথা যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। ম্যাডামকে দেখে পুরো ক্র্যাশ খেয়ে গেলাম 🤪। শুধু আমি একা না। সব বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা বাঁদরামি হাসি দিচ্ছি। মনের কথা বুঝতে আর কারোরই বাকি রইলো না। 🥰🥰
ঐ দিন থেকে শুরু হলো ম্যাডাম কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার পালা। ম্যাডামের নাম টাই বলা হয় নি। ম্যাডামের নাম ছিল বনশ্রী ঊর্মি ❤️। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছিলেন বোধ হয়। সত্যি বলতে ম্যাডাম এর ক্লাস পাই নি আমরা। মাঝে মধ্যে পরীক্ষার হলে গার্ড দিতে দেখা পেতাম। আর এমনি তে চোখ লাগিয়ে রাখতাম ম্যাডাম কোন দিক কোন দিক মুভ করেন 😊। অবিবাহিত ছিলেন ম্যাডাম। তাই দুষ্টুমি গুলো যেন আর বেড়ে গিয়েছিল। দূর থেকে একবার একটু দেখতাম। আহ্ ওতেই কি শান্তি আর তৃপ্তি 😅😅🥰। ম্যাডাম কে এত ভালো লাগে কিন্তু ক্লাস নাইন টেন পর্যন্তও তার সাথে মনে হয় কখনো কোন ব্যাপারে কথা হয় নি।
এস এস সি পাশ করে আমাদের কলেজেই ভর্তি হলাম আমরা সব দুষ্টু বন্ধুরা এক সাথে। তো একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে, আমাদের টিফিন পিরিয়ড যখন শেষ হয়, ঠিক ঐ মুহূর্তে রোজ বনশ্রী ঊর্মি ম্যাডাম ক্যান্টিনে যেতেন খাবার খেতে। আমি আর আমার বন্ধু মিলে টিফিনের পর পর্যন্ত ক্যান্টিনে বসে থাকতাম ম্যাডামকে দেখার জন্য 😍। আমার আবার টিফিনের পরেই ছিল বায়োলজি ক্লাস। পাপিয়া ম্যাডাম ঐ ক্লাস নিতেন। আমার দেখা অন্যতম স্মার্ট একজন শিক্ষিকা। যাই হোক আমি আর আমার বন্ধু যখন বায়োলজি ক্লাসে ঢুকতে নিতাম ততক্ষণে ম্যাডামের অ্যাটেন্ডেন্স দিয়ে ক্লাস প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে যেত।
পাপিয়া ম্যাডাম মোটামুটি রোজ আমাদের বারান্দায় কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখতো লেট করতাম বলে 😂😂। একদিন ম্যাডাম বলছেন,,
"সজীব, লজ্জা করে না ! রোজ রোজ যে বাইরে কান ধরে দাড়াও, এখন কলেজে পড়ছো তো। "
আমার সরল উত্তর,, "ম্যাম, সব বন্ধু বান্ধবীই তো চেনা। এতে লজ্জার কি আছে! আমরা আমরাই তো"
😝😝😝
ম্যাডাম একদিন বলছে, "কান ধরে উঠবস করো আর বলো এমন লেট করব না আর "।
আমরা সবাই উঠবস করলাম ঠিকই,, কিন্তু সাথে কি বলেছিলাম জানেন? "ম্যাডাম,, বিশ্বাস করেন আর খুব বেশি এমন করব না 🤪🤪"।
সব কিছু করতে আমরা রাজি। কিন্তু বনশ্রী ঊর্মি ম্যাডাম কে আমাদের দেখতেই হবে 😅। হিহিহিহি।
আরেকটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। একবার কলেজ ম্যাগাজিনে বিভিন্ন ধরনের লেখা দেওয়ার জন্য সব ছাত্রছাত্রীদেরকে বলা হয়। আমিও ফেসবুক নিয়ে একটা লেখা দেই। সবার লেখা পর্যালোচনা করে যারটা ভালো লাগবে তারটা ম্যাগাজিনে দেওয়া হবে। আর সেই মনিটরিং কমিটির অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন বনশ্রী উর্মি ম্যাডাম। আমার লেখাটা অনেকেরই বেশ পছন্দ হয় কিন্তু ওই টপিক্স নিয়ে কলেজ ম্যাগাজিনে অমন লেখা দিতে বারণ করেন অনেকে। ঠিক ওই সময় বনশ্রী উর্মী ম্যাডাম আমার লেখাটা যখন পড়লেন, ম্যাডামের এত মজা লেগেছিল যে আমার পুরো কাগজটা ধরেই ম্যাডাম সাথে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। আর ম্যাডামের ইচ্ছে ছিল সজীবকে সে একবার দেখবে 🥰। কে এই ছেলে 😍। আমার ক্লাস টিচার কে বলেও দেন আমাকে যেন তার সাথে দেখা করতে বলে দেন।
আমার স্যার যখন আমাকে বললেন বনশ্রী উর্মি ম্যাম এরকম দেখা করতে বলেছেন, আমার আনন্দ আর দেখে কে 🥰! সাহস করে ম্যাডামের কাছে চলে গেলাম।
ম্যাডাম আমাকে দেখে বললেন,," তুমিই সজীব! তোমাকে তো ক্যান্টিনে মাঝে মধ্যেই দেখি। লেখাটা খুব ভালো লেগেছে আমার। কি খাবে বলো?"
আমি বললাম," থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম। আমি শুধু একটা আইসক্রিম খাব। আর আপনাকেও খেতে হবে আমার সাথে 😍। "
আর তারপর ম্যাডাম এর সাথে গল্পে গল্পে আইসক্রিম খেয়েছিলাম ঐ দিন টিফিনের ফাঁকে। ম্যাডাম আমাকে বললো, তোমাকে নিয়ে তো ভালো কথাই বেশি শুনলাম, তবে বেশ নাকি দুষ্টুও আছো? 😉।"
আমি মুচকি হেসে দিয়ে বললাম,, "ম্যাম আপনার হাসিটা খুব মিষ্টি" 😍🥰।
"অনেক হয়েছে,, এবার ক্লাস করো মন দিয়ে। যাও। ভালো রেজাল্ট করতে হবে সব সময়।"
এরপর আর কখনো ম্যাডাম এর সাথে বসে গল্প করা হয় নি অবশ্য। সামনে পরলে সালাম দিয়ে হেসে চলে গিয়েছি বহুবার। আসলে ম্যাডাম যখন শাড়ী পরে হেঁটে যেত বারান্দা দিয়ে, না তাকিয়ে যেন থাকাই যেত না।
আজ এই কথাগুলো লিখছি কারণ ভোরে ঘুমানোর পর হঠাৎ করেই সেই কলেজ লাইফ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। তাই দুষ্টু মিষ্টি ঐ মুহুর্তগুলো সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিলাম।
সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
দারুণ লাগলো তোমার কলেজ জীবনের কথা পড়ে। তুমি সত্যিই দুষ্টু ছিলে। তবে ঐ বয়সে এমন দুষ্টুমি কম বেশি সবাই করে। আমিও কলেজ জীবনে এমন করেছি। আমার কলেজের পরীক্ষা দিতে গিয়েও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে লেখার ফাঁকে সুযোগ বুঝে তাকিয়ে থাকতাম কলেজের এক সুন্দরী ম্যাডামের দিকে। উনি প্রায় দিনই পরীক্ষায় গার্ড দিতে আসতেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হিহিহি,, আসলে আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু না কিছু ঘটনা আছেই । অনেকেই লজ্জায় লিখি না বা বলি না। ভালো লাগলো দাদা আপনার মন্তব্য পেয়ে। অনেক ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাহাহা!! যা করলেন না ম্যাডামের সাথে। মাধ্যমিকে থাকতে আমাদের ক্লাসেও এমন একজন অবিবাবহিত ম্যাডাম আসছিল। কিন্তু বেচারি ম্যাডামা আমাদের যন্ত্রণায় সেই স্কুলে আর বেশিদিন টিকতে পারেনি, হাহাহা! আপনার গল্পটা পড়ে মনে পড়ে গেল। ম্যাডামের সাথে আইসক্রিম খাওয়ার মুহূর্তটা দারুণ ছিল 😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাহাহাহাহা,, ওরে ভাই আপনারও দেখি কম দুষ্টু ছিলেন না। স্কুল কলেজ লাইফের এই মিষ্টি ঘটনা গুলো সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। খুব ভালো লাগলো ভাই আপনার কথা গুলো শুনে। ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ম্যাম, সব বন্ধু বান্ধবীই তো চেনা। এতে লজ্জার কি আছে! আমরা আমরাই তো" আপনি তো আসলেই মহা ফাজিল ছিলেন।
আসলে স্কুল বা কলেজ লাইফটা যারা এভাবে উপভোগ করতে না পেরেছে তাদের জীবনটাই বৃথা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম মনের কথা বলেছেন ভাই 😉😉। এটুকু দুষ্টুমি যদি নাই করতে পারি তাহলে আর জীবনে আছেই বা কি!!! তবে আমরা কখনো বেয়াদবি করি নি। সব শিক্ষক মারাত্মক ভালোবাসতেন , এখনো খুবই আদর করেন ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব ভাল লাগলো ভাইয়া পড়ে। খুব মজা নিয়ে পড়েছি।😅দুষ্ট ত কম ছিলেন না দেখছি। 😂 ওই লাইফটাই আসলে ভাল ছিল।সত্যি কথা বলতে আমি এখনও স্বপ্নে প্রায় সময়ই কলেজ দেখি, দেখি এক্সাম দেই।আর কিছু ই পারি না এমনটাই দেখি। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য। অনেক শুভকামনা ভাইয়া আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওরে আপু আপনার সাথে আমার স্বপ্নও দেখি মিলে যায় 😉😉। সময় নিয়ে যে লেখাটা পড়েছেন তার জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ আপু। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এইটুকু বয়সে দেখছি ম্যাডামের পেছনে কম কিছু করলেন না। কিভাবে যে আপনারা এতটা দুষ্টু বুঝি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম আপনার লেখাটা পড়ে একেবারে পছন্দ করে নিল। যাক একদিনের জন্য হলেও ম্যাডামের সাথে আইসক্রিম খাওয়া এবং কথা বলতে পেরেছেন। আর ম্যাডামকে দেখে সালাম দেওয়া আর মুচকি হাসি ছাড়া তো কিছুই করার নেই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে সব বন্ধুরা বেশ দুষ্টু ছিলাম আগে থেকেই। তাই এসব চলতো বেশ। ঐ সময় কার ঐ দুষ্টুমি গুলোই আজ মিষ্টি স্মৃতি হয়ে আছে। অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit