স্মৃতিকথা মূলক রচনা : ভালোবাসায় মোড়ানো তিনটি বছর ❤️

in hive-129948 •  6 months ago 

বাংলা ভাষা যদি হয় বহমান এক নদীর নাম, তবে আমার আমার বাংলা ব্লগ হলো সেই নদীর মাঝি। সময়ের কাটায় পা দিয়ে এবার তিন বছরে পদার্পণ করলো প্রিয় এই পরিবার। এই শুভ ক্ষণে তাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এভাবেই যেন আমরা সবাই মিলে হাসি আনন্দ নিয়ে মেতে থেকে একদিন শততম বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে পারি। এমন টাই প্রত্যাশা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে।

dark-1845065_1280.jpg

Source

বর্ষপূর্তির এই সময়ে প্রতিবারই আমার বাংলা ব্লগকে নিয়ে নিজের মতো করে পোস্ট করি। প্রথম বর্ষপূর্তিতে মজা করে একটা গানও বানিয়েছিলাম। এবছর সময়ের অভাবে তেমন কিছু করতে পারি নি। তবে দাদার একটা পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম এ বছরের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিযোগিতার বিষয় বস্তু গুলো। যার মধ্যে একটা হলো আমার বাংলা ব্লগ নিয়ে স্মৃতিচারণ মূলক রচনা। এই টপিকটা দেখার পরপরই আমি মিনিট পাঁচেকের জন্য চোখটা বন্ধ করে ভাবতে থাকি আমার বাংলা ব্লগকে ঘিরে জমে থাকা হাজারো স্মৃতির ভান্ডার নিয়ে। তারপর মনে হলো এই ব্লগের অন্য সকল সাধারণ ইউজারদের চেয়ে আমি কতোটা ভাগ্যবান! আর এই সুযোগে যদি ভালো স্মৃতি গুলো আরেকটা বার মনে করতে পারি তবে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না।

😊ফিরে দেখা তিনটি বছর😊

লেখার শুরুতে যাকে ধন্যবাদ না দিলে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাব সে হলো আমার বন্ধু তর্পণ পাল। তর্পণই প্রথম আমাকে আমার বাংলা ব্লগের সন্ধান দেয় এবং কাজ করার জন্য উৎসাহ দেয়। আর তারপর থেকেই এই পরিবারে আমার যাত্রা শুরু হয়। সেই তখন থেকেই ভালো মন্দ অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছে আমার বাংলা ব্লগ।

এখনো মনে পড়ে একদম শুরুর দিকে আমাদের পোস্ট গুলোতে দাদা নিয়মিত কমেন্ট করতেন এবং তার সাথে সাথে ভোট দিয়ে যেতেন। আর রাত জেগে হতো ডিসকর্ডে আড্ডাবাজি। আমাদের দুষ্টুমিতে দাদা প্রায় প্রায়ই যোগদান করতেন। আসর পুরো জমে উঠতো দাদা আসার সাথে সাথে। কে কার পিছনে লাগছে কোন ঠিক নেই। আর তার সাথে আছে লুডু খেলা। এটা অন্যরকম এক মজা দিতো সবাইকে। টেলিগ্রামে এখন আর আগের মত আড্ডা হয় না। একটা সময় নিয়মিত টেলিগ্রামে কুইজ হতো। জিতলেই ছিল বাম্পার প্রাইজ। এক এক জন জান প্রাণ দিয়ে ট্রাই করতে থাকতাম অন্তত একটা উত্তর আগে দেওয়ার জন্য। যতদূর মনে পড়ে আমি বোধ হয় মোট দুইবার জিতেছিলাম। একবার বড় দাদার কাছে, আর একবার ছোট দাদার দেওয়া কুইজে। এখন অনেক নতুন সদস্য যোগ হয়েছে এই পরিবারে। কিন্তু যারা এই দিন গুলো পায় নি তারা সত্যিই অনেক বড় কিছু মিস করেছে। খুব মিস করি আগের ঐ দিন গুলোকে।

balloons-1869269_1280.jpg

Source

শুরুতেই বলেছিলাম আমার বাংলা ব্লগের সাধারণ ইউজারদের মধ্যে আমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ আমিই হয়তো প্রথম কেউ ছিলাম যার জন্মদিন আমার বাংলা ব্লগের স্টেজ শোতে অনেক জাকজমোক করে সেলিব্রেট করা হয়। এখন পর্যন্ত আর কোন সাধারণ ইউজারের জন্মদিন ওভাবে পালন করা হয়েছে কিনা আমার মনে পরছে না ঠিক। আর ঐ একটা বিশেষ দিনের জন্য আমার বাংলা ব্লগের কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ।

আগে প্রায় সব ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতাম। অনেক বড় মুখ করে থাকতাম ফলাফল ঘোষণার দিন। এই বুঝি শুভ ভাই আমার নাম চিৎকার করে বলবে, "সজীব রায়, congratulations, open your mike" হিহিহিহি। অনেক কয়েকবার প্রতিযোগিতায় প্রাইজ পেয়েছি। তবে মনে রাখার মত ছিল দুই দাদার আয়োজিত দুইটা প্রতিযোগিতা। ব্লাকস দাদা একবার স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান সব ঘোষণার পর যখন দেখলাম নিজের নাম নেই, কেমন একটা যেন লাগছিল। তার ঠিক কিছু পরেই ছোট দাদা বললেন বিশেষ একটা পুরষ্কার এখনো বাকি আছে। আর আমাকে সেই বিশেষ পুরস্কারটা দেওয়া হয়েছিল। যার প্রাইস ছিল অন্য সবার থেকে বেশি। ঐদিন আমি যে কতটা খুশি হয়েছিলাম সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।

এরপর আসি বড় দাদা কর্তৃক আয়োজিত আরেকটা প্রতিযোগিতা যার নাম "শেয়ার করো তোমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি"। যার বিজয়ী হয়েছিলাম আমি। অনেক বড় একটা পুরস্কার পেয়েছিলাম সেখানে। কিন্তু পুরস্কারের চাইতেও আমার কাছে সব থেকে বড় পাওয়া ছিল দাদার অনুভূতি। আমার লেখা প্রায় ৮৩ পৃষ্ঠা গল্পটা দাদা একদম শুরু থেকে শেষ অবধি পড়েন। আর প্রতিটা পর্ব পড়ার সাথে সাথে আমাকে ম্যাসেজ করে জানাতেন তার অনুভূতি। প্রায় বিকাল পাঁচটার কিছু আগে থেকে রাত সাড়ে নয়টা বা দশটা পর্যন্ত দাদা একটানা লেখাটা পড়েছিলেন। আর এতোটাই ভালো লেগেছিল যে দাদা নিজে থেকে বলেছিলেন আমি চাইলে এই লেখার ওপর একটা বই বের করবেন দাদা। যার নামকরণও করবেন দাদা নিজে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি বোধ হয় আমার জন্য আর কিছু হতে পারে না।

balloons-1786430_1280.jpg

Source

এখন পর্যন্ত আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সব থেকে বাজে সময়ের সাক্ষী হলো আমার বাংলা ব্লগ। আর যে কথাটা না বললেই নয় জীবনের ঐ ঘূর্ণিপাকে এই পরিবার যে ভাবে আমার পাশে থেকেছে তাতে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। অনেক অ্যাডমিন মডারেটর ভাইয়া আপু থেকে শুরু করে সাধারণ ইউজার যারা মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছেন সব সময়। ডিসকর্ড আমাদের পরিবারের এই বন্ধন টাকে কতটা শক্ত করেছে একদম ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি তখন। অনেক ভাইয়া আপু আছেন যাদের সাথে আড্ডা দিয়ে তখন নিজেকে ভুলিয়ে রাখতাম। তাদের মধ্যে এক জনের নাম না নিলেই নয়, তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় @tania69 আপু। এই একটা মানুষ যিনি নিজে থেকে সব সময় খোঁজ খবর নিতেন। আর ইচ্ছে করে এমন ঝগড়া করতেন যেন সব কিছু থেকে ভুলে থাকতে পারি। হাহাহাহা। এই স্মৃতি গুলো কখনোই ভোলার নয়।

balloon-991680_1280.jpg

Source

এই পরিবারে সব থেকে বড় পাওয়া হলো আমি একজন দিদিভাই পেয়েছি। হ্যাঁ @tanuja দিদিভাই। যাকে আপনারা সবাই বৌদি বলে ডাকেন। তিনিই আমার শ্রদ্ধেয় দিদিভাই। এই একটা মানুষকে যে আমি কত রকম ভাবে জ্বালাতন করেছি তার ঠিক নেই। আর দিদিভাইও ছোট ভাইয়ের মত আমাকে শাসন করেছে সব সময়। দিয়েছেন সঠিক দিক নির্দেশনা। সময়ে অসময়ে যখনই ডেকেছি দিদিভাইকে, দিদিভাই সাথে সাথে সাড়া দিয়েছে প্রতিটাবার। একটুও বিরক্তি প্রকাশ করে নি কখনো।

আর জীবনে প্রথমবার রাখি পরার আনন্দ টুকুও অনুভব করেছি দিদিভাইয়ের মাধ্যমেই। দিদিভাই নিজ হাতে আমাকে রাখি পরিয়েছেন। ঐ অনুভূতি বা ঐ ভালোলাগা টুকু আমি হয়তো লিখে প্রকাশ করতে পারবো না কখনোই। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি ভাই বোনের এই সম্পর্ক টা যেন সব সময় এমন ভালো থাকে। আর আমার দিদিভাইও যেন সব সময় সুস্থ থাকেন, হাসি মুখ নিয়ে থাকেন।

balloons-1046658_1280.jpg

Source

লিখতে লিখতে অনেক হয়ে যাচ্ছে তবু যেন শেষ হচ্ছে না। হয়তো শেষ হওয়ারও না। তবে সব শেষ যে মানুষ টা কে নিয়ে না লিখলে আমার পুরো লেখাটাই ফিকে হয়ে যাবে তিনি হলেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় @rme দাদা। দাদাকে নিয়ে কই থেকে শুরু করব আর কই থেকে শেষ করব এটা আমার সত্যিই জানা নেই। এটুকু বলতে পারি আমার দেখা অন্যতম সেরা মানুষদের একজন হলেন আমাদের প্রিয় বড় দাদা। দাদাকেও আমি কম জ্বালাতন করি নি! তবে দাদার কাছ থেকে আমি কখনো খালি হাতে ফিরে আসি নি। দেবতুল্য একজন মানুষ যাকে বলে।

দাদা, দিদিভাই, গল্টুকে সাথে নিয়ে সময় কাটানো আমার বাংলা ব্লগ পরিবারে যুক্ত হওয়ার পর আমার সব থেকে বড় পাওয়া। অনেক ইচ্ছে ছিল দক্ষিণেশ্বর মায়ের মন্দির দর্শন করা। দাদা আমার সেই ইচ্ছে টাও পূরণ করেছেন। তার সাথে যতোটা সম্ভব কলকাতা শহরটাকে ঘুরে দেখিয়েছেন। আমাদের সেই দিনের ছোটাছুটি, সাইন্স সিটিতে বসে মজার খুনসুটি এখনো চোখে ভাসে। জীবন স্মৃতির সোনালী খামে সারা জীবন এগুলো বাক্স বন্দী হয়ে থাকবে।

heart-3147976_1280.jpg

Source

সত্যি বলতে এই পুরো লেখাটা লিখতে নিয়ে আরো কতোশত স্মৃতি যে মনে উকি দিচ্ছে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। সবতো আর লেখা সম্ভব নয়। আর আমি জানি না যে আমার এই লেখাটা প্রতিযোগিতার উপযোগী হবে কি না! তবে এটুকু লেখার ছলে পুরো তিনটে বছরের ভালো মন্দ সব স্মৃতি গুলোকে যে একবার করে রোমন্থন করতে পেরেছি এটাই হয়তো আমার পরম তৃপ্তির। পরিশেষে এটাই বলবো, দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাক আমার বাংলা ব্লগ। বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাড়াক বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতি। অটুট থাকুক এই পরিবারের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আমি গর্বিত যে আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন সদস্য।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ঠিক বলেছেন ভাইয়া এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলে পুরো এই তিন বছরের জার্নিটাকে একবার স্মরণ করা হয়ে যাবে। আসলে এই পরিবারের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। সবার সুখে দুখে আমরা সবাই একে অপরের পাশে থেকেছি। যা আসলেই অনেক বড় প্রাপ্য। আমি তো সব সময় বলি দাদা ধন্যবাদ এর উর্ধ্বে। আর ওই সময়টা আসলেই আপনার জন্য খুব খারাপ লাগতো। বুঝতে পারতাম আপনার মানসিক অবস্থা। সেজন্যই তখন সব সময় পাশে থেকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছি। জানিনা কতটুকু পেরেছি। যাই হোক ভাইয়া খুব ভালো লাগলো আপনার সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে।

ঐ টুকু সাপোর্টই বা তখন কে দিত আপু! ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। মনের কথা মনেই থাকুক। দোয়া করবেন ভাইয়ের জন্য। আর অনেক অনেক ভালো থাকবেন।

আমি যখন প্রথম স্টিমিটে আসি তখন তর্পন ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন উনি। এখন আর একটিভ নেই এখানে। আপনার অনূভুতি কিছু মানুষের প্রতি আপনার কথা স্মৃতিগুলো জানতে পেরে বেশ ভালো লাগল ভাই। সত্যি এই অনূভুতি গুলো অন‍্যরকম। কখনও ভুলে যাওয়া যাবে না।

তর্পণ অনেক সাপোর্টিভ। এখনও আমার বস তর্পণই। হাহাহাহা। ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা আবারও ফিরে যাবো সেই তিন বছরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির পাতায়। আপনার মতো হয়তো এত কিছু আমি পাইনি তবে তিন বছরে যা পেয়েছি তা কখনো ভুলার নয়। এত কিছু সম্ভব হয়েছে দাদার জন্য আর দাদাকে ধন্যবাদ দিয়ে কখনো শেষ করা যাবে না। আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর ভাবে আপনার তিন বছরের স্মৃতি তুলে ধরার জন্য।

এখানে সবার একটা সুন্দর স্মৃতি তৈরি হয়েছে এই কয়েক বছরে। সারা জীবন এগুলো মনে থাকবে। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।

আরে বাহ! আপনার ৩ বছরের জার্নির একটা সম্পূর্ণ ওভারভিউ পেলাম যেন! তবে পড়ে পড়ে কিন্তু অনেক কিছুই মিস করছি!! যা আগে হতো, এখন অনেকটা ওভাবে হয় না। যেমন দাদার সাথে আড্ডার সুযোগ টাই মুলত মিস করছি!! এছাড়াও আপনার জন্মদিন পালনের বিষয় টি জেনেও বেশ ভালো লাগলো। এটা আসলেই অনেক স্পেশাল অনুভূতি! 😍

আমি সত্যিই অনেক কিছু পেয়েছি দিদি এখানে। লিখে হয়তো অর্ধেকও প্রকাশ করতে পারি নি। তবে মনে সারা জীবন থাকবে এই সুন্দর মুহূর্ত গুলো। ভালো থাকবেন দিদি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।