শেষের কবিতা

in hive-129948 •  2 years ago 

নমস্কার,,

পড়ার বই হোক কিংবা গল্পের বই যেকোনো একটা একটানা ৩-৪পাতা পড়ার পরেই চোখ অন্ধকার দিয়ে দেয় আমার। একটানা তো বেশিক্ষণ পড়তেই পারিনা। সত্যি বলতে ওই ধৈর্যটাই আমার থাকে না। আর সেজন্য গল্পের বই কখনোই আমি সহজে শেষ করতে পারি না। কিন্তু তাতে কি হয়েছে! চোখের সামনে সুন্দর সুন্দর মোড়কে যখন নানান ধরনের গল্পের বই দেখি তখন লোভটা আর সামলাতে পারি না। আমি কিন্তু ঠিক জানি যে বইটা আমার কখনোই পুরোপুরি পড়া হবে না তবুও আমি সাথে সাথে নিয়ে ফেলি। ভাবি যে জীবনে কত টাকা পয়সা এদিক-ওদিক নষ্ট করছি, সেখান থেকে ভালো কাজেই না হয় কিছু টাকা ব্যয় করলাম।

IMG20230120193153.jpg
Location

কিছুদিন আগেও নীলক্ষেত দিয়ে যখন হাঁটছিলাম তখন ফুটপাতের পাশ দিয়ে বইয়ের দোকানগুলোতে চোখ দিয়ে সোজা হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই চোখে পড়লো শেষের কবিতা বইটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই উপন্যাসের কাহিনী এমন কেউ নেই বোধ হয় জানেনা। আমি নিজেও জানি। কিন্তু তারপরেও স্বচ্ছ প্লাস্টিক পেপার দিয়ে মোড়ানো কভার পেজটা আমাকে এতটাই আকৃষ্ট করছিল যে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম দোকানে। আর সব থেকে মজার মুহূর্ত শুরু হল ঠিক তখন থেকেই।

IMG20230120193135.jpg
Location

যিনি বই বিক্রি করছিলেন সে ভদ্রলোকটি ভীষণ রসিক একজন মানুষ ছিলেন। যখন বুঝলেন বইটা আমি নিতে চাচ্ছি তার মুখের কথার যেন অন্ত থাকছিল না আর। আমিও বেশ ইনজয় করছিলাম তার কথাগুলো। তবে সব থেকে বেশি ভালো লাগছিল যে এই ব্যাপারটা, আমার মত আরও অনেকেই তার ফুটপাতের বইয়ের দোকানে এসে ভীড় করছে, তারা কেউ বই দেখছে, কারো ভালো লাগলে সেটা আবার দামাদামি করছে, কিন্তু সেই মানুষটা আশেপাশের অন্য বই বিক্রেতা গুলোর থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের ছিলেন। তার চিন্তাধারা এমন যে কারো যদি সত্যি সত্যি পড়ার আগ্রহ থাকে তবে তিনি তাকে বিনামূল্যেই বইটা দিতে রাজি। তবে পড়া শেষ করে নিজ দায়িত্বে বইটা আবার তাকে ফেরত দিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য তিনি একটা টাকাও নেবেন না। যে ব্যাপারটা আমি বিশেষ করে লক্ষ্য করেছি, আশেপাশের দোকানের থেকে তার কাছে সবথেকে কম দামে বই পাওয়া যাচ্ছে।

IMG20230120192020.jpg
Location

নানান ধরনের কথার ফাঁকে হঠাৎ করেই তিনি বললেন, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করার ভীষণ ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু দারিদ্রতার কবলে নিজের ইচ্ছাটাকে আর কখনো বড় করতে পারেননি। তাই তিনি এখন জীবিকার তাগিদে বই বিক্রি করছেন। আর চেষ্টা করেন খুব সীমিত লাভে একজন পাঠকের হাতে তার পছন্দের বইটা তুলে দিতে। কারণ ভদ্রলোক বিশ্বাস করেন বই আমাদের সব থেকে বেশি আস্থার প্রতীক এবং একজন প্রকৃত বন্ধু।

আমি বেশ লম্বা সময় ধরেই উনার নানান কথা শুনি এবং লক্ষ্য করলাম যে, কতটা বিনয়ের সাথে তিনি একজন পাঠককে বই হাতে তুলে দিচ্ছেন। আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেছি তার কথাবার্তায় এবং কর্মকান্ডে। তারপর শেষের কবিতা বই টা হাতে নিয়েই সেখান থেকে আমার গন্তব্যে রওনা দিলাম।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

দাদা কথা টি মন্দ বলেন নি কিন্তু ৷ আসলে ঠিক তাই বইয়ের তিন চার পাতা পড়ার চোখ যেন চুপসে যায় ৷ তবে আমি বলবো যে যখন তখন যে পড়ি সেটাও কিন্তু খারাপ না ৷
আপনি অনেক সুন্দর একটি কাজ করেছেন ৷ আসলে প্রতিনিয়ত তো নানা কাজে টাকা ব্যায় করি ৷ বই কিনে রাখলে সেটা মন্দ না ৷

তবে যাদের বই পড়ার অভ্যেস আছে তারা এরকম গল্পের বই পেলে একটানা পড়ে শেষ করে ফেলে। আমি শুধু অবাক হয়ে যাই তাদের কান্ড দেখে। হিহিহিহি।