☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
আগের পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম -
একে তো ঘন জঙ্গল তার উপর আবার বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর ডাক বেশি ভয়ংকর একটা পরিবেশ তৈরি করেছিল তখন। কিছু দূর হাটার পরেই সে বুঝতে পারল কে হয়তো তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু সে অনুমান করতে পারলেও দেখতে পারছে না তাকে। এইবার তো অপু কান্না করে ফেলল আর বলল, প্লিজ আমাকে ভয় দিও না। আমি মামার বাড়ি যাবো।
বেশ কিছু সময় অপুর এভাবেই নিস্তব্ধতায় কেটে গেল। এবার কি করেই যেনো অপুর মনে সাহস সঞ্চয় হলো এবং কোন দিক না তাকিয়ে সোজা রাস্তা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছু দূর এগোতেই একটা শ্যাওরা গাছ চোখে পড়লো, গাছটা অনেক পুরনো এবং লতা পাতায় ভরে গেছিল। ওখানে যেতেই অপুর মনে হল কে যেন কাশি দিল। প্রথম দিকটা তো ভেবেছিল হয়তো শুকনো পাতার শব্দ তবে, সে যখন এটাকে এভয়েড করে আবার সামনের দিকে এগোতে লাগলো তখন দেখল পুনরায় আবারো দুইবার কাশি দিল। এইবার অপু কিছুটা ভয় পেয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো কিন্তু কোন কিছু দেখতে পেল না। তখন সে পুনরায় সেই আগের কথাটাই বলল, যে আমাকে ভয় দেখিও না প্লিজ আমি মামার বাড়ি যাচ্ছি। এমনিতেই আমাকে বাবা মা খুব বকাবকি করে তারপরও যদি আমাকে ভয় দেখাও তাহলে আমি কিন্তু কান্না করে দেব। এরপর হঠাৎ করেই অপু বুঝতে পারল যে শ্যাওড়া গাছ থেকে কোন এক বৃদ্ধ লোক ধুতি পরে আলগা গায়ে নিচের দিকে নেমে আসছে। লোকটি ব্রাহ্মণ ছিল, কারণ তার গলায় ছিল পৈতে আর মাথার পেছনে টিকি। এটা দেখার পর সম্ভবত অপুর ভয় পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার পরিবর্তে সে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল।
লোকটা হাসিমুখে অপুর কাছে এসে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল এত রাতে তুমি কোথায় যাচ্ছ বাছা...?, এই গভীর জঙ্গল পেরিয়ে। ভূতের ভয়ের কথা না হয় বাদই দিলাম এখানে তো প্রচুর ভয়ানক জীবজন্তু রয়েছে সেগুলোও তো তোমাকে আঘাত করতে পারে। লোকটাকে দেখেই অপুর ভয় পাওয়ার পরিবর্তে সে কান্না করতে করতে তার সব ঘটনা খুলে বলল, আর সেই জন্য বাবা মায়ের উপর রাগ করে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। এটা শোনার পর বৃদ্ধ লোকটি তার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি এটা ঠিক করনি এটা, বাবা মায়েরা যেটাই চায় সেটা সন্তানের ভালোর জন্যই চায়। সুতরাং তোমার বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। এই কথা শুনে অপু বলল যে না, সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। কমপক্ষে সে দুইদিন মামার বাড়ি থাকবে তারপর যদি রাগ কমে যায় তাহলে বাড়ি যাবে। কিন্তু এত রাতে তুমি বয়স্ক একটা মানুষ এখানে কি করছো, কথাটা অপু অনেকটা কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞাসা করল। তখন বৃদ্ধ লোকটা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল সে অনেক গল্প তুমি কি শুনতে পারবে....? তখন অপু বলল যে হ্যাঁ সে শুনতে চায়, কারণ সেও তার মত দুঃখী ছিল।
তখন বৃদ্ধ লোকটা অপুকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসে তার যাবতীয় গল্প শুরু করে দিল। বৃদ্ধ লোকটা পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আদর যত্ন দিয়ে তার দুই ছেলেকে তিনি বড় করেছেন। একজন সরকারি চাকরি করে এবং সে বাইরে থাকে। অন্যজন গ্রামের বাড়িতে থাকে তবে সে বাবা মাকে চোখে দেখতো না বউ এর ফাঁদে পড়ে। এই দুঃখ নিয়েই সে বিগত আট-দশ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। আসলে বাবা মাকে দেখার মত এবং তাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার মত তাদের কোন সময় নেই, তাই অনেকটা কষ্ট করে ই বৃদ্ধ এবং তার স্ত্রীর জীবন চলছিল। যদিও মাঝেমধ্যে বড় ছেলেটা বাড়িতে এসে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে যেত তবে সেটাই কি যথেষ্ট ছিল। গতবছরের এই দিনটাতে বৃদ্ধ লোকটি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তারপর থেকে আসলে এই শ্যাওড়া গাছেই তার বসবাস।এই কথা শুনে হঠাৎ করেই অপুর শরীরে কারেন্ট দিয়ে উঠলো এবং সে দুই হাত পিছনে ছুটে চলে গেল। অর্থাৎ সে যে লোকটার সাথে কথা বলছে সে মৃত...?
এবার সে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে লোকটাকে বলল আমাকে ছেড়ে দিন আমি আর কখনো এই জঙ্গলে আসবো না। তখন বৃদ্ধ লোকটি বলল তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই আমি তোমাকে ভয় দেওয়ার জন্য দেখা দিইনি। আমার অরজিনাল চেহারা যদি তুমি দেখতে তাহলে অনেকটাই ভয় পেয়ে যেতে, তাই আমার আগের চেহারাটা নিয়েই তোমার সামনে এসেছি। তাছাড়াও তোমার সাথে কথা বলে বুঝলাম এই কাজটা তুমি হয়তো করতে পারবে তাই তোমার কাছে একটু সাহায্য চাই আমি যদি পারো তাহলে আমি একটু সাহায্য কর। এই কথা শুনে অপু বেশ অবাক হল, একজন মৃত মানুষকে সে কিভাবে সাহায্য করবে। তখন বৃদ্ধ লোকটি বললো আগামীকাল আমার দুই ছেলে আমার শ্রাদ্ধ এর খাওয়া-দাওয়া দেবে এবং আমার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তারা খাবার গুলো রেখে আসবে তুমি কি সেটা আমাকে এনে দিতে পারবে। এই কথা শুনে অপু বেশ অবাক হয়ে গেল, আর মনে মনে চিন্তা করল এটাও কি সম্ভব। তখন বৃদ্ধ লোকটি তাকে বলল যে আসলে যখন বেঁচে ছিলাম তখন ছেলেপেলেরা আমাকে ঠিকঠাক মতো ভাত দেয়নি। এখন মরে যাওয়ার পরে প্রতি বছর আমার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমি তো তাদের উপর প্রচন্ড রেগে রয়েছি, তাই আর বাড়ির দিকে যাই না।
চলবে.......🏃
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | স্টোরি রাইটিং। |
---|
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে সত্যি বলতে অপুর রাগের মাথায় কোন ভয়-ভীতি ছিল না সে তখন নিশ্চয় মনে করেছিল যে পরিচিত কেউ তাকে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু যখনই সে জানতে পারল ব্রাহ্মণ্য লোকটি মৃত তখনই সে অনেকটা ভয় পেয়ে গেল তবে যাই হোক ভূত হয়ে গেলেও লোকটি অনেক ভালো ছিল। বেশ অদ্ভুত ধরনের মজার একটি গল্প ভালই লাগলো পড়ে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি গল্পটা পড়ে মন্তব্য করেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো আপু। আশা করি পরবর্তী পর্ব অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অপু এবং ব্রহ্মদৈত্য , গল্পটির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। আর আজ তৃতীয় পর্বটি পড়েও খুব ভালো লাগলো। অপু তো তাও মৃত মানুষের সাথে কথা বলছে জেনে শুধুমাত্র ভয়ে দুই পা পিছনে দৌড়ালো আর ওখানে আমি থাকলে দৌড়ানো তো দূর হাঁটতেও পারতাম না, অজ্ঞান হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটা মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি পরবর্তী পর্ব অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জানেন তো ভূতে আমি বিশ্বাস করি না ঠিকই, আবার ভূতের গল্প পড়তেও কেমন একটা লাগে। মানে মনের মধ্যে অনেক আজগুবি চিন্তা চলে আসে 😅। একদম মাঝ রাতে পড়লাম গল্পটা। ঘুম হলে হয় এবার। তবে বেশ মজার লাগছে পড়তে। সব থেকে বেশি টাচিং ছিল যে বৃদ্ধকে ছেলেরা খেতে দিত না, অথচ তিনিই আবার তাদের বেড়ে দেওয়া খাবার চাইছেন মরার পরে। ব্যাপারটা গল্প হলেও এমনটা বাস্তবেই ঘটে থাকে অনেক ক্ষেত্রে। সত্যি বলতে সব বাবা মা চায় তাদের সন্তানদের নিয়ে এক সাথে থাকতে, এক সাথে খেতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার হতে হয় কাউকে কাউকে। যাই হোক দেখা যাক পরের পর্বে কি আছে।
আর হ্যাঁ,,
এখানে "যেন" হবে হয়তো, এক সময় ঠিক করে নেবেন কেমন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বানান ঠিক করে নিয়েছি। আসলে মাঝেমধ্যে এত লেখার মাঝে দুই একটা বানান চোখের আড়াল হয়ে যায়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit