হয়তো ঐদিন সকালটা অন্যরকম হতে পারত(প্রথম পর্ব)।। মে -০৫/০৫/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেটা সারা জীবনই মনের মধ্যে গেঁথে থাকে। ছোটবেলা থেকে আমি আসলে অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি যেগুলো কিছু কিছু এখনো মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে। সেরকম একটা ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আসলে গল্পটা আমার বেশ কিছু বছর ধরেই মনে ছিল না, তবে গতকাল রাতে হঠাৎ করে কোন একটা প্রসঙ্গে একজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে গল্পটা মনে পড়ে গেল।এটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা বাস্তব ঘটনা। আমার ছোটবেলাটা কেটেছে আসলে গ্রামে। আর বলতে গেলে আমি গ্রামেরই ছেলে। হয়তো কিছু বছর শহরের কর্ম ব্যস্ততায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বরাবরই আমার টান সব সময় গ্রামের দিকেই থাকে। যাইহোক আজকের ঘটনাটা খুব সম্ভবত ২০০২ সালের। তখন হয়তো আমি ক্লাস টু তে বা ওয়ানে পড়ি। আমি জন্মের পর যখন থেকে বুঝতে শিখেছি একটু তখন থেকে দেখতাম যে আমার ঠাকুর দাদা এবং আমার বাবা মিলে আমাদের একটা বড় ঘের ছিল সেখানে চিংড়ি মাছ চাষ করত।

street-art-2779341_1280.jpg
Source

আসলে আমাদের ঘেরটা এতটাই বড় ছিল যে এক মাথা দাঁড়িয়ে অন্য মাথায় কে রয়েছে তাকে ঠিকঠাক করে চেনা যেত না। যদিও সেই ঘের টা এখনও রয়েছে, তবে সেটা অনেকটা অবহেলায়। যাইহোক ছোটবেলা থেকেই দেখতাম যে আমাদের বাড়ি প্রচুর আড়ৎ থেকে লোক আসতো চিংড়ি মাছ কেনার জন্য। কারণ আমাদের ঘেরে যে কোয়ালিটির চিংড়ি পাওয়া যেত সেটা অন্য কোথাও বিশেষ পাওয়া যেত না। বিশেষ করে বাবা এবং ঠাকুর দাদা মিলে চিংড়ি মাছের জন্য কি যেন একটা খাবার তৈরি করত যেটার জন্য আসলে মাছের কোয়ালিটি অনেক বেশি ভালো থাকত। তাছাড়াও দেখতাম যে বস্তায় বস্তায় করে শামুক নিয়ে আসতো চিংড়ি মাছকে খাওয়ানোর জন্য। যাইহোক একবার তো এত পরিমাণে চিংড়ি বিক্রি করেছিল যে এটা দিয়ে আমাদের আরো অনেক জমি রাখা হয়েছিল। প্রধানত আমাদের ঘেরের যাবতীয় দেখাশোনা করত আমার ঠাকুর দাদা। যেহেতু বাবা সরকারি চাকরি করতো তাই খুব বেশি একটা ছুটি পেত না। তবে সপ্তাহের একবার বা দুইবার ছুটির দিন এসে দেখে যেত।

love-1281655_1280.jpg
Source

আমি এবং আমার ঠাকুর দাদা, বাড়িতে থাকতাম এবং প্রত্যেকদিন রাতে ঘেরে গিয়ে পাহারা দিতাম। ঠাকুর দাদাকে দেখেছিলাম যে ঘেরে থাকার জন্য খুব সুন্দর একটা বাঁশ এবং ছন দিয়ে ঘর তৈরি করেছিল, যেটাতে আসলে আমরা থাকতাম। চিংড়ির পোনা দেওয়া থেকে শুরু করে যতদিন না পর্যন্ত চিংড়ি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ততদিন আসলে ওখানে থাকতে হতো। যদি চুরি করে নিয়ে যায় বা কেউ কোন সমস্যা করে এই জন্য। আসলে সেই সময়টাতে গ্রামে প্রচুর চোর ছিল এবং এই চিংড়ির ব্যাপারটা বেশ মাথা ছড়া দিয়ে উঠেছিল। যেহেতু আমি আগেই বলেছি আমাদের চিংড়ির কোয়ালিটি অন্যদের তুলনা অনেক ভালো ছিল তাই আমাদের ঘেরের দিকে অনেকের কু নজর ছিল। যাই হোক প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেখতাম যে আমার ঠাকুর দাদা ঘেরের জল পরীক্ষা করত এবং মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করত। আর মাছের খাবারের দিকে এতটাই যত্নশীল হতে হত হয়তোবা আমরা যতটা কেয়ারফুলি খাই তার থেকেও মাছের বেশি যত্ন নিতে হতো।

people-2562694_1280.jpg
Source

এভাবে ছোট থেকে চিংড়ি মাছ একটু বড় সাইজের করতে মোটামুটি আমাদের দুই মাসের মত সময় লাগে। আপনারা বিশ্বাস করবে না আমি এবং আমার ঠাকুর দাদা প্রত্যেকটা রাত এই ঘেরে কাটাতাম। সন্ধ্যার ভিতরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে আসতাম এখানে এবং সারারাত পাহারা দিত ঠাকুর দাদা। যদিও আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তারপরও বুঝতে পারতাম যে ঠাকুর দাদা এইমাত্র উঠে গেল আমার পাশ থেকে এবং একটা লাইট নিয়ে পুরো ঘেরটাকে একবার করে টহল দিতে গেলো। এভাবেই কেটে গেল আরো কয়েকটা মাস। তবে একদম শেষের দিকটাতে আর ঘেরে থাকার প্রয়োজন হতো না, কারণ তখন মাছ বিক্রি করার মত হয়ে গেছিল। হঠাৎ করে একদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করতে করতে চলে গেলাম ঘেরের পাড়ে। কিন্তু ঘেরের পাড়ে গিয়ে একটা ভয়ংকর সন্দেহ আমার মন আকাশে ঘন কালো একটা মেঘের জন্ম দিল...

চলবে....🏃

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীStory Writing।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

সত্যিই কিছু ঘটনা কখনো ভুলে থাকার নয়,এমনকি চাইলে ও ভুলে থাকা যায় না।তোমাদের চিংড়ি মাছের ঘের ছিল জেনে ভালো লাগলো।আসলে মাছের ঘেরগুলিতে অনেক যত্ন নেওয়া লাগে।চোরের থেকে ও বড় সমস্যা বিষ দেওয়ার মতো ঘটনা।কারণ চিংড়ি খুবই সফট সহজে না মারা গেলে ও চারিদিকের কিনারায় ভাসতে থাকে।যাইহোক পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, ধন্যবাদ দাদা।

চিংড়ি খুব সহজে মরেনা এটা ঠিক কথা, তবে এমন এমন মেডিসিন দেয়া হয় মাঝে মাঝে ঘেরে সেগুলোর জন্য চিংড়ি পাড়ে উঠে ভাসতে থাকে। আর তখনই চোরেরা সেগুলো ধরে নিয়ে চলে যায়।

হ্যাঁ দাদা,আমাদের পুকুরে মাঝে মাঝেই এমন হতো।আমাদের বাড়িতে তিনটি পুকুর ছিল আর বাড়ির পাশে বড় নদী থেকে চিংড়ির পোনা খুব সহজেই ধরে এনে তাতে ছেড়ে দিতে পারতাম।

নদীর চিংড়ি বা বিলের চিংড়িগুলো যদি ঘেরে দেওয়া যেত তাহলে তারা অনেক বড় এবং দামে অনেক বেশি পাওয়া যেত। কারণ ওই চিংড়িগুলো অনেকটাই তাপ, রোদ সহ্য করতে পারত। কিন্তু যেগুলো নার্সারি থেকে আনা হতো সেগুলোর মধ্যে অনেকটাই মারা যেত।

হ্যাঁ দাদা,আমাদের পুকুরে ও এগুলো বেশ বড় হতো।যদিও চিংড়ি মাছ অনেক জাতের সেই অনুযায়ী বড় হতো।তবে অনেকেই আমাদের এখানে নদী থেকে ধরা পোনা হাঁড়িতে করে কিনে নিয়ে যেত বড় বড় ঘেরে চাষ করার জন্য।তারপর গলদা,বাগদা চিংড়ির পোনা,কাঁকড়ার মেকো এগুলো।

গতকাল রাতে হয়তো কারো সাথে কোনো একটা প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে এই বিষয়টা মনে পড়ে গিয়েছে , আর তার জন্যই আমরা একটি নতুন গল্প পড়তে পারবো। গল্পটির পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। তবে এই এই পর্বটি পড়ে বুঝতে পারলাম , দাদা তোমাদের ঘেরে খুব ভালো কোয়ালিটির চিংড়ি মাছ ছিল ।যা শুনে আমার মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে এক গামলা চিংড়ি মাছ নিয়ে চলে আসি, হি হি হি।

এক সময় আমাদের ঘেরে খুব বড় বড় চিংড়ি হতো। সেই কথা এখন মনে পড়লে ভাবি যে কি দিন ছিল তখন। এখন তো ৫০০ থেকে হাজার টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। তখন তো ফ্রিতেও খেতাম না।

বিশাল বড় ঘের ছিল দেখছি। আচ্ছা এটা কি এখনও আছে? মানুষের মুখে শুনেছি চিংড়ির ব্যবসায় নাকি বেশ ভালো রকম লাভ। আর যেহেতু আপনাদের একটা বিশেষ টেকনিক ছিল তাহলে তো আরো কথাই নেই,, অবশ্য এই জন্যই মানুষের এত নজর লেগেছিল। যাই হোক পরবর্তিতে কি হলো এটাই জানতে ইচ্ছে করছে খুব।

না, এখন সেখানে ঘেরা নেই। পাশ দিয়ে ব্রিজ তৈরি হয়েছে জন্য ঘের অনেকটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে বাড়ি করা হবে পরবর্তীতে।

আসলে বেশিরভাগ মানুষই কারো ভালো দেখতে পারে না। কেউ ভালো থাকলে হিংসা করে এবং প্রতিনিয়ত ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আপনার ঠাকুর দাদা এবং আপনি ঘের পাহারা দিতেন সারারাত। আপনাদের ব্যবসায় লাভ বেশি হতো, সেজন্য সবার কুনজর ছিলো। যাইহোক পরবর্তীতে কি ঘটলো সেটা জানার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

পরবর্তী পর্বও আপনি অলরেডি পড়ে নিয়েছেন সুতরাং তেমন কিছু বলার নেই। তবে খুব ভালো লাগলো আপনি গল্পের দুটো পার্টই পড়েছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।