অপু এবং ব্রহ্মদৈত্য ( প্রথম পর্ব)।। মে -১৫/০৫/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

অপু তার পচাৎদেশে হাত ডলতে ডলতে আর চিৎকার করে কান্না করতে করতে তাদের আম বাগানের দিকে ছুটে চলে গেল। এই বছর অক্টোবর মাসে অপুর বয়স সাত বছর হবে। কিন্তু তাকে দেখলে মনে হয় না তার বয়স সাত বছর, মনে হয় যেন কুড়ি বছরের এক অতি পাকা ছেলে। ঘুম থেকে উঠেই বাবার হাতে কাঁচা কঞ্চির মার খেয়েছে। এমনিতেও তো প্রতিদিন ঘুম থেকে দেরি করে ওঠে তার উপর আজকে আবার তার ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। বাংলাতে ২৫ পেলেও বাকি সাবজেক্ট গুলোতে দশের উপরে পাইনি। আর সব থেকে আশ্চর্যকর নাম্বার পেয়েছে অঙ্কে, সেটা হলো ডাবল জিরো। আসলে পড়াশুনার প্রতি অপুর একেবারেই মনোযোগ নেই এটা নিয়ে অপুর বাবা-মা প্রচন্ড চিন্তা করে। গ্রামের অতি দুরন্ত ছেলে আপু সব সময় চায় মাঠে-ঘাটে দৌড়াদৌড়ি আর ছোটাছুটি করে বেড়াতে। পড়াশোনা করতে তার একদমই ভালো লাগেনা। একদিন নাকি তার গণিতের শিক্ষক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল "যে বড় হয়ে তুই কি হতে চাস" এর উত্তরে সে সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে বলেছিল সে নাকি বড় হয়ে কৃষক হতে চায়। যেখানে অন্য ছাত্রছাত্রী যারা বলেছিল কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা কেউ হবে পাইলট ,সেখানে শিক্ষক মহাশয় তার এই উত্তর শুনে অনেকটাই আশ্চর্য হয়েছিল।

phobia-5073521_1280.jpg
সোর্স

যাই হোক অপুর যে পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে আজ, সে সেটাই জানতো না। সকালবেলা নাকি স্কুলে গিয়ে তার মা রেজাল্ট শুনে এসেছে। এজন্য ঘুম থেকে উঠে অপুর বাবার হাতে মার খেতে হল। অপুকে নিয়ে তার বাবা-মাও প্রচন্ড চিন্তা করছে যে এই ছেলে ভবিষ্যতে কি করবে। কিন্তু অপুর এই বিষয় তেমন কোন লক্ষ্যই নেই। তার শুধু চিন্তা কোন গাছের আম ছিঁড়ে খাবে, কোন গাছে বসে থাকা কোন এক অজানা পাখিকে ঢিল মারবে। আবার যদি সুযোগ পায় তাহলে কোন বাড়ি থেকে ছোটখাটো জিনিস চুরি করে নিয়ে আসবে। মোটকথা অপুর বাবা-মা প্রচন্ড অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল তার এই ছোট ছেলেকে নিয়ে। একবার তো চিন্তা করেছিল যে তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেবে তাতে যদি কিছুটা সংশোধন হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারল যে বাবা মায়ের কাছে থেকে যে ছেলে ঠিক হতে পারল না তাকে হোস্টেলে রাখলে না জানি আর কোন বিপদ হয়। এই ভয়ে সে পরিকল্পনাও ক্যানসেল করে দিলো অপুর বাবা।

horror-2028165_1280.webp
সোর্স

হঠাৎ করেই অপু শুনলো যে তার মা তাকে হাক ছেড়ে ডাকছে, আর বলছে "অপু তুই কোথায় আছিস..? বাড়ি আয় ভাত খেয়ে যা"। কিন্তু অপুর অভিমান এর কাছে তার মাও হার মেনে গেল। সারা বাড়ি খুঁজেও অপুকে পাওয়া গেল না। এদিকে অপু একটা আম গাছের মাথা উঠে চুপ করে বসে আছে। সেখানে বসে পেয়ারা গাছ থেকে ছিড়ে আনা দুটো পেয়ারা টুক টুক করে খাচ্ছে। অপু আজ মনে মনে চিন্তাই করে নিয়েছে যে যতই তার বাপ মা আজকে তাকে খুঁজুক, সে আজ দেখা দেবে না। অন্যদিকে অপুর মা তো আর বুঝতে পারছে না যে তার ছেলে গাছের মাথায় উঠে বসে রয়েছে। কোন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে অপুর মা অপুর বাবাকে বলল, ছেলেটাকে একটু খুঁজে দেখো না, আমি তো কোথাও খুঁজে পেলাম না। কিন্তু অপুর বাবা তো প্রচন্ড রেগে আছে ছেলের রেজাল্ট দেখে। তিনি বলল আমি পারবো না, ওরকম বাঁদর ছেলে যদি না খেয়ে থাকে তাহলে থাকুক। যার পড়াশোনার প্রতি এক বিন্দু মন নেই, তার এত খাওয়া আসে কোথা থেকে।

comic-1296118_1280.webp
সোর্স

কিছু সময় আরো খোঁজার পর অপুর মাও হাল ছেড়ে দিল, তারপর চলে গেল নিজের কাজে। এদিকে অপু অনেক সময় গাছের মাথায় বসে থাকতে থাকতে তার খিদে লেগে গেল, তাই চুপি চুপি এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। আর রান্না ঘরে ঢুকেই দেখল যে, তার মা তার জন্য খাবার বেড়ে ঢেকে রেখে দিয়েছে। কেউ দেখার আগেই তাই চুপচাপ খাবার খেয়ে সেখান থেকে আবার পালিয়ে চলে গেল আম বাগানে। তবে এবার তার রাগ কিছুটা কমেছে, অন্যদিকে অপু দেখছে তার বাবাও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই গাছ থেকে নেমে আবার বাড়ি চলে গেল। কিন্তু অপুর এই ধারণা একেবারেই ভুল ছিল, কারণ অপু তার বাবার সামনে যেতেই আবার তাকে বকুনি শুরু করে দিল। বদমাশ ছেলে, পড়াশোনা করবি না ঠিক আছে তাই বলে না খেয়ে সারা গ্রামে ঘুরে বেড়াবি। এরকম যদি আর করিস তাহলে তোকে কিন্তু আমি হোস্টেলে গিয়ে রেখে আসব, তখন বুঝতে পারবি কত মজা লাগে। এই বয়সেও অপু একবার চিন্তা করেছিল যে ঘর ছেড়ে চলে যাবে অন্য কোথাও। কিন্তু কোথায় যাবে..?, কার কাছে যাবে...? এই কথা দু'একবার চিন্তা করে আবার থেমে গেছে।

চলবে....🏃🏃🏃

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীস্টোরি রাইটিং।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

দাদা খুবই দারুন একটা গল্প লিখেছেন। এটা অবশ্য ঠিক গ্রামে এরকম কিছু দুষ্টু ছেলে আছে যারা এরকম শুধু টই টই করে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। এরকম ছেলেদের জন্য বাবা-মারা অনেক কথা শুনতে হয় মোটকথা তাদেরকে অনেক কিছু বাধ্য হয়ে মেনে নিতেও হয়। আবার এদের ক্ষেত্রে কিন্তু এর বিপরীত হতে পারে একটা সময় গিয়ে। তার মানে হলো এরা বাবা মা খুব বাধ্য হয়ে যেতে পারে যখন সে বুঝতে শিখবে যে সে যা করছে ভালো করছে না। যাইহোক দাদা পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

আপু, এই গল্পে অপুর চরিত্রের সাথে আমার ছোটবেলার চরিত্রের অনেক মিল ছিল, তাই কিছুটা আমার জীবন থেকে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে গল্পের ভিতর বেশ ভালো রকমের একটা সোশ্যাল মেসেজে রয়েছে। আশা করি পরবর্তী পর্ব যদি পড়েন তাহলে জানতে পারবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে । আসলে এরকম দুরন্তপনা বাচ্চাদেরকে নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই । এরা থাকে এদের দুষ্টুমি নিয়ে ,সবাই যে তাদের নিয়ে চিন্তা করে সেটা তারা বুঝতেই পারে না । যাইহোক বয়সের সাথে সাথে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে ।বড় হয়ে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো।জানিনা পরের পর্বগুলোতে কি আছে?

পরের পর্বগুলোতে আরো অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং এবং একটা সোশ্যাল মেসেজ রয়েছে আপু। আসলে গল্পের প্রথম অংশটা আমার জীবন থেকে নিয়েছি। এই জন্য অনেক বেশি দুরন্ত মনে হচ্ছে। হা হা হা...

অপুর পরিণতি জানার অপেক্ষায় রইলাম।আমার ক্লাসেও এরকম বেশ কিছু অপু ছিল। যারা পড়াশোনাটা বাদে বাকি সবকিছুই করতে পছন্দ করত। সেটা স্কুলের ফ্যান ধরে ঝুলে পড়া,জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলা অথবা হ্যাক্সো দিয়ে স্ক্রু কেটে বেঞ্চকে দুটুকরো করে ফেলা।
কিন্তু গল্পে অপু কিভাবে তেনাদের পাল্লায় পরলো সেটা জানার।অনেকদিন পর তোমার পোস্টটা পড়লাম। এর আগের দিন পড়বো করেও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

অপুর জীবনের সাথে আমার ছোটবেলার জীবনের কিছুটা মিল ছিল। তাই সেই ব্যাপারগুলো এখানে ইনক্লুড করে দিয়েছি। তবে গল্পের ইন্টারেস্টিং পার্ট সামনের দিকে, আশা করি গল্পটা পড়বে।

গল্পের নাম দেখে গল্পটা পড়বো না ভাবছিলাম।🤣 কিন্তু অভয় দিলেন তাই পড়েই নিলাম।আর খুব ভালোই লাগলো।বাচ্চা বিশেষ করে ছেলে বাচ্চাগুলো একটু দুষ্টু ধরনেরই হয়।এদের ভাবনাতে থাকেই না তার জন্য মা - বাবার চিন্তার কথা। দেখা যাক সামনে কি আছে।ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।

আপু গল্পের পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার চেষ্টা করবেন। গল্পের ভিতর একটা ভাল রকম মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে এখানে কোন ভূতের কাহিনী নেই।

মশাই আপনি তো দারুন জমিয়ে লিখতে পারেন 👌👌,,,, শুরুটা একদম অনবদ্য লেগেছে। লেখাটা পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিল যেন কোন একটা হাসির নাটকের আরম্ভ হলো বুঝি। আর অপুর সাথে আমার নিজের ছেলেবেলার অনেকটাই মিল আছে 😉। তবে এতটা শাসন বারণ ও একদম ঠিক নয় । দেখাই যাক অপু কি করতে চলেছে।

গল্পের শুরুর দিকটা হয়তো একটু হাস্যকর তৈরি করলেও শেষের দিকটাতে একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি পরবর্তী পর্ব পড়লে অবশ্যই জানতে পারবেন ব্যাপারটা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য।

প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটি হয়তো ভূতের, তাই ভয়ে পড়তে মন চাইছিল না ।তারপর একটু ইচ্ছে হলো পড়েই দেখি না ভয় পাই কিনা! তবে গল্পটি পড়ে সত্যি আমার অসাধারণ লাগলো ,ভয়ের বদলে অনেক মজা পেলাম ,অপুর মত একটি দুষ্টু ছেলের গল্পটি পড়ে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। দারুন গল্প লেখো দাদা তুমি।

গল্পটা বেশি ইন্টারেস্টিং এবং ভালো একটা মেসেজ রয়েছে গল্পের মধ্যে। পরবর্তী পর্বগুলো পড়লে হয়তো জানতে পারবে।

পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার অপেক্ষায় রয়েছি।