☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
গত পর্বে যেখানে শেষ হয়েছিল -
হঠাৎ করে একদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করতে করতে চলে গেলাম ঘেরের পাড়ে। কিন্তু ঘেরের পাড়ে গিয়ে একটা ভয়ংকর সন্দেহ আমার মন আকাশে ঘন কালো একটা মেঘের জন্ম দিল...
ঘেরের তিন সাইড জুড়ে রয়েছে ধানের ক্ষেত এবং এক সাইডে রয়েছে গ্রামের রাস্তা যেটা দিয়ে সাধারণত লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করে। সেই পাশের একটা কর্ণারে দেখলাম বেশ বড় সাইজের একটা চিংড়ি মরে ভেসে রয়েছে। সত্যিই এই দৃশ্যটা দেখে বেশ খারাপ লাগছিল। কারণ বিগত কয়েক মাস আমাদের এত পরিশ্রমের ফলে এই জায়গা পর্যন্ত আসতে পেরেছিলাম। তারপর যদি হঠাৎ দেখি যে এত কষ্টের ফল এরকম হয়েছে তাহলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। যাইহোক তাড়াহুড়ো করেই চিংড়ি মাছটা তুলতে গিয়ে দেখি তার পাশে আরো তিন চারটা চিংড়ি মাছ মরে হালকা লাল রঙের হয়ে পড়ে আছে। এইবার তো বুকের ভিতর বেশ ভালো রকম একটা ধাক্কা খেলাম, আর পাশাপাশি যে জিনিসটা মনে হচ্ছিল সেটা হল যে ঘেরের জল দিয়ে একটা বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছিল। গন্ধটা আমার অতি পরিচিত ছিল কারণ এরকম গন্ধ আমি ধানের ক্ষেতে হাটতে গিয়ে প্রচুর পেয়েছি অর্থাৎ এটা ছিল বিষ। তার মানে কি আমাদের ঘেরে বিষ দিয়ে দিল...। প্রচন্ড একটা চিৎকার করে উঠলাম হঠাৎ করে দেখি আমার বাড়ির লোক সবাই আমার চিৎকার শুনে চলে এসেছে। তবে বাবা বা ঠাকুর দাদাকে কোন কিছু বোঝানোর আগেই তারা ঠিকই বুঝে নিল যে কি হয়েছে।
গতরাতে বা শেষ রাতে আমাদের ঘেরে বিষ দেয়া হয়েছে আর সেজন্যই আসলে কিছু কিছু চিংড়ি মাছ মারা গেছে। তবে যে ভয় আমরা সবাই পাচ্ছিলাম সেটাই ঘন্টা খানেকের ভেতর হয়ে গেল মোটামুটি সূর্যের আলো ঘেরের উপর পড়তে না পড়তেই দেখলাম চারিদিক থেকে চিংড়ি মাছ সব ভেসে উঠছে। আরো কিছু সময় যেতে না যেতেই পুরো ঘেরে চিংড়ি মাছে ভরে গেল। সব মাছ ভেসে উঠেছে। কিছু কিছু মাছ তো মরে একেবারে লাল রঙের হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে দেখলাম বাবা দৌড়ে বাজারে চলে গেল এবং গ্রামের লোকদের খবর দিল ঘেরে জাল টানার জন্য। কিন্তু তার ভিতরেই সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। সব চিংড়ি মাছি দেখলাম মরে এক কোনায় এসে জড়ো হয়েছে। সত্যি কথা বলতে আমার চোখের সামনে এই দৃশ্য আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছিল। যে এতদিনের পরিশ্রম নিমিশ এর ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। আমি জীবনে কখনো আমার ঠাকুর দাদার চোখের জল দেখিনি এই প্রথমবার দেখে এতটা খারাপ লাগছিল যে বোঝাতে পারবো না। যাইহোক যেহেতু ঘেরের জলে বিষ ছিল তাই লোকজন নামতে চাইছিল না তারপরও বাবা এবং বাবার একজন কাছের লোক মিলে ঘেরের মধ্যে নেমে পড়ল জাল টানার জন্য।
ঘন্টাখানেক অনেক কষ্ট করে জাল টেনে যে পরিমাণ চিংড়ি উঠানো হলো সেটা দেখে আমি সত্যি অবাক হলাম। যে এত চিংড়ি ছিল আমাদের ঘেরে। সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো সব চিংড়ি নেতিয়ে পড়েছে এবং অধিকাংশ চিংড়ি উপরে তুলতে তুলতেই মারা গেছে। আর যা কিছু বেঁচে ছিল সেগুলো পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। তবে তাতে কোন ফলাফল ভালো হয়নি। কিছু সময় পর দেখা গেল যে পুকুরে যে চিংড়ি গুলো ছাড়া হয়েছিল সেগুলো কিছু সময় পর মরে ভেসে উঠেছে। খুব সম্ভবত সপ্তাহ খানেক পরে এই চিংড়িগুলো বাজারে বিক্রি করা হতো। খরিদ্দারও রেডি করা ছিল। তবে এত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে সেটা আমরা কেউই আশা করিনি। তাড়াহুড়ো করে সমস্ত চিংড়ি বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হল কিন্তু তারা যে দাম বলছে সেটা একেবারেই নামে মাত্র ছিল। আমাদের পরিশ্রমের কথা তো বাদ দিলাম, মাছের খাওয়া-দাওয়ার পিছনে যে টাকা খরচ হয়েছিল তার 10 শতাংশও কেউ বলছিল না। আসলে মানুষ বিপদে পড়লে সব দিক থেকেই সবাই সুযোগ করে খোঁজে এটাই আসলে তার প্রমাণ ছিল।
যাইহোক কিছু তো আর করার ছিল না তাই যে দাম দিতে চেয়েছিল সেটা দিয়েই বাজারে সব চিংড়ি বিক্রি করে দেয়া হলো। কিন্তু এখানেই আসলে গল্প শেষ নয়। সব চিংড়ি উঠানোর পরেও দুপুর বেলাতেই দেখলাম আবারো চিংড়ি মাছে ঘেরের কিছু কিছু জায়গা ভরে গেছে অর্থাৎ আরো চিংড়ি অবশিষ্ট ছিল, সেগুলো তুলতে পারিনি। পরবর্তীতে সেই চিংড়িগুলো গ্রামের লোকজন তুলে নিয়ে গেছিল খাওয়ার জন্য। যদিও এই ব্যাপারটা নিয়ে পরবর্তীতে গ্রামের সালিশ বসেছিল তবে চোরের সঠিক সন্ধান বা কে এই কাজটা করেছে সেটা বোঝা যায়নি। হয়তোবা কেউ শত্রুতা করে ঘেরে বিষ দিয়েছিল অথবা কেউ চেয়েছিল যে চিংড়ি মাছ তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেবে। কিন্তু কোন কারনে হয়তো সেটা করতে পারিনি তবে যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা পূরণ করার মত ছিল না। এরপর থেকে আমাদের সেই ঘেরে আর কখনো চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়নি। এখন সেই ঘের ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন অন্যান্য চাষাবাদ করা হয়। আমি জীবনে যতগুলো বড় বড় কষ্ট পেয়েছি সেগুলোর ভিতরে এই ঘটনাটা অন্যতম ছিল। এখনো চোখের সামনে সেই ব্যাপারটা স্পষ্ট ভাবে ভেসে ওঠে। তবে অনেক বছর পরে সেই চোরকে ধরা হয়েছিল অন্য ঘেরে বিষ দিতে গিয়ে। পরবর্তীতে শুনেছিলাম তার নাকি চোখ তুলে নেয়া হয়েছিল।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | Story Writing। |
---|
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই কাজটি যে করেছে সে সত্যি নিচু মানসিকতার ব্যক্তি। না হলে এত জঘন্য কাজ করতে পারতো না। শত্রুতা কিংবা অন্য কোন কারণে ঘেরে বিষ দেওয়ার ব্যাপারটি সত্যি ভীষণ ভয়ঙ্কর। চোখের সামনে মাছগুলোকে মরে যেতে দেখলে নিজেকে সামলানো মুশকিল। যাইহোক ভাইয়া আপনার কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি। কি আর করার সবকিছুই মেনে নিতে হয়। হয়তো আমরা মাঝে মাঝে মেনে নিতে বাধ্য থাকি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে মাছগুলো ছোট থেকে বড় করতে এত কষ্ট হয়েছিল, তারপর এই ঘটনা দেখে আমার পরিবারের লোক সবাই পুরো ভেঙে পড়েছিল। এরপর থেকে আর কখনোই ঘেরে চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়নি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নিচু মনের মানুষের কাজ হলো নিচু কাজ করা। আর তাইতো তারা এত বড় ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু এটা কি আদৌ উচিত ছিল তাদের। দাদা আমি বুঝতে পারছি সেদিন আপনার কতটা কষ্ট হয়েছিল। যা হবার তা হয়ে গেছে। আমার মনে হয় সামনে আপনার জন্য অনেক সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো-মন্দ জ্ঞান যদি এই মানুষগুলো থাকতো তাহলে তো আর এত বড় ক্ষতি করত না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগের পর্বটা পড়েছিলাম তাই এই নতুন পর্বটা দেখার সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে গেলাম। কিন্তু এরকম কিছু একটা যে ঘটবে এটা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। মানুষ এত খারাপ হয় কি করে! আসলে আমরা কখনো কারো ভালো সহ্য করতে পারি না। এরকম দৃশ্য চোখের সামনে দেখা মানে নিজের বুকে নিজেই ছুরি দিয়ে আঘাত করা। খুব খারাপ লাগলো ভাই এই নিকৃষ্টতম ঘটনা শুনে। আর এটা সত্যি মানুষ বিপদে পড়লে সবাই শুধু সুযোগ খোঁজে, কেউ আর উপকার করে না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সমাজে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না। এরাই আসলে সব জায়গায় ক্ষতি করে বেড়ায়। তবে লোকটার পরবর্তীতে শাস্তি হয়েছিল, চোখ উঠিয়ে ফেলে দিয়েছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গত পর্ব পড়ে এমন কিছুর আশঙ্কা করেছিলাম। আসলে মানুষ ক্ষতি করার আগে একবারও ভাবে না,যার বা যাদের ক্ষতি করছি তারা কতটা পরিশ্রম করেছে এবং অর্থ ব্যয় করেছে। এই ধরনের কাজ বিবেকহীন মানুষেরাই করতে পারে। আপনারা দুইজন অনেক পরিশ্রম করেছেন, আর সেজন্য এমন পরিস্থিতিতে চোখে জল আসাটা স্বাভাবিক। যাইহোক পরবর্তীতে সেই চোরের চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। আর সেজন্যই চোর শাস্তি পেয়েছে। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গ্রাম অঞ্চলে ঘের গুলোতে সাধারণত এরকমই হয়। হয়তো শত্রুতা করে বিষ দিয়ে যায় অথবা মাছ চুরি করে নিয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি ঘটনাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো দাদা। চোখে জল আসার মত নেই ঘটনা, কারণ এর আগের পর্বতে আমি পড়েছিলাম আপনি আর আপনার দাদু মিলে বেশ কিছুদিন রাতে ঘেরের মধ্যেই একটি ছোট ঘরের মধ্যে রাত কাটাতেন ।আর সময়মতো মাছেদের খাবার দিতেন ।এত কষ্ট করে বড় করে তোলার পরে যদি সেই মাছগুলোকে কেউ ইচ্ছে করে বিষ দিয়ে মেরে ফেলে দেয়, তাহলে যে কতটা কষ্ট হয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে যে লোকটি এই বাজে কাজটি করেছিল তাকে ধরা গেলে ভালো হতো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই ঘটনাটা যখন ঘটেছিল তখন তো আমি অনেক ছোট। তবে তারপরও যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কষ্ট পাওয়ার মতোই একটি ঘটনা। আমি হলে তো কান্না করতে করতে মরে যেতাম 🙂।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের অবস্থাও অনেকটা এরকম হয়েছিল। এরপর থেকে তো আর কখনোই ঘেরে চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়নি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ দাদা পড়লাম তোমার পোষ্টে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit