দিঘির জলের রহস্য।। এপ্রিল -১৮/০৪/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

বাংলাদেশ ভ্রমণের একদম শেষের দিকটাতে আমি গিয়েছিলাম আমার এক ভাইয়ের মামা বাড়ি নেমন্তন্ন খাওয়ার জন্য, সেটা নিয়ে অলরেডি একটা পোস্ট করেছি বেশ কিছুদিন আগে, হয়তো আপনারা দেখেছেন। সেখানে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে আমার জেঠিমনি বলে দিয়েছিল যে তুই যে গ্রামে যাচ্ছিস ওই গ্রামে খুব বড় একটা দিঘী রয়েছে এবং সেটার অনেক বড় গল্প আছে, যদি সময় পাস তাহলে দিঘীরপাড় দিয়ে একটু ঘুরে যাস। এই কথা শোনার পর আমার বেশ কিছুটা কৌতূহল হয় এবং মোটামুটি সকালে ১১ টা নাগাদ বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে ঘন্টাখানেকের ভিতরেই সেই দীঘির পাড়ে এসে পৌঁছাই।



এখানে যে ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করছি সেগুলো সেই দিঘিরপাড় থেকেই তোলা। দিঘীটা আসলে এত বড় ছিল যে ঠিকঠাক ক্যামেরায় ক্যাপচার করতে পারছিলাম না। মোটামুটি তারপরও বেশ কয়েকটা সাইট এবং অ্যাঙ্গেল থেকে ফটো নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে জায়গাটা এত সুন্দর এবং শান্তশিষ্ট ছিল যে ছিল সেখানে বসে আরো কিছু সময় থাকা যেত। এই রোদের প্রচন্ড তাপেও ওখানে বইছিল এক দারুন শীতল হাওয়া। যাইহোক আজকের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা আমার গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। অবশ্য কথাগুলো লোকের মুখ থেকে শোনা তাই কতটা বিশ্বাসযোগ্য সেটা হয়তো বলতে পারবো না। তবে জায়গাটা দেখে এবং এখানকার মানুষের ব্যাপার স্যাপার দেখে মনে হচ্ছিল যে এরকম ব্যাপার অবশ্যই ঘটতে পারে এখানে।

InShot_20230418_131544712.jpg

সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা আমার এই আজকের গল্পটা খুব বেশি একটা বড় হবে না। একটা পর্বের ভিতরেই শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। যাইহোক এরপর আমরা দিঘির পাড়টা ভালো করে ঘুরে সেখান থেকে সেখান থেকে আবার গাড়ি ধরে চলে গেলাম সেই ছোট ভাইয়ের মামার বাড়ি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করেই দিদিমার কাছে দিঘীরপাড়ের গল্প শোনার জন্য আবদার করলাম এবং তার মুখ থেকে শোনা গল্পটা এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। এই এলাকায় নাকি এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু রাজা ছিল। রাজার এতটাই দাপট ছিল যে, যখন যা করতে মন চাইতো তখন সেটাই করত। এই রাজার ছিল তিনটে রানী এবং তাদেরকে প্রচন্ড পরিমাণে নাকি ভালোবাসতো রাজা। একদিন এই তিন রানের ভিতর কোন এক রানী নাকি রাজাকে বলেছিল যে একটা পুকুর কাটতে এবং সেটার একটা সাইট সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিতে, যাতে রানীরা অনেক আনন্দের সাথে সেখানে স্নান করতে পারে।



রাজা এই কথা শুনে এক কথায় রাজি হয়ে যায় এবং পরের দিন সমস্ত প্রজাদের আদেশ দেয় যে একটা বড় পুকুর কাটতে হবে, যেখানে আমার রানীরা সুন্দর মত স্নান করতে পারে। এখন যে জায়গাটায় দীঘিটা রয়েছে ঠিক এই জায়গাটায় শ্রমিকরা পুকুর কাটা শুরু করে। তারা একদিনে যাবতীয় কাজ শেষ করে পরের দিন সকালে যখন আবার কাজ করতে এখানে আসে, তখন নাকি সবাই দেখতে পায় যে এক রাতের ভিতরে পুরো দীঘি তৈরি হয়ে গেছে এবং সেখানে অথৈ পরিমান জল। মানুষের পক্ষে তো দূরের কথা এক রাতের ভিতরে অনেকগুলা মেশিনও যদি ব্যবহার করা হতো তাহলেও এত বড় দীঘি কাটা সম্ভব নয়। আর তার থেকে বড় আশ্চর্য বিষয় ছিল যে পুকুরের মাটি গুলো গায়েব ছিল অর্থাৎ লোকে তো কুকুর কেটে মাটি পাড়ের উপর রেখে দেয় কিন্তু এখানে কোন মাটিই ছিল না। হঠাৎ করে এক রাতের ভিতরে এমন একটা দিঘী হয়ে গেছিল যেন দেখে মনে হচ্ছিল এই দীঘি সেখানে বছর বছর ধরে রয়েছে।

20230320_152930.jpg

যাইহোক এটা দেখে তো রাজা অনেক খুশি হয়ে যায়, যে হয়তো কোন দেবতার আশীর্বাদে এখানে দীঘি তৈরি হয়েছে। একদিন চাঁদনী রাতে নাকি রানীরা সেই পুকুরে স্নান করতে নামে এবং তারপর থেকে তিন রানীর কাউকে আর কখনো দেখা যায়নি।এটা শুনে রাজা পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয় তার এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় পুরো দীঘি সেছে ফেলে দেবে। সেই সময় নাকি বহু শ্রমিক লাগিয়ে জল সেসার কাজ শুরু করে। তবে যতই জল সেচ দেওয়া হোক না কেন এক বিন্দু জলও নাকি কেউ কমাতে পারেনি। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় যেটা ছিল এই দীঘিতে নাকি সময়ে সময়ে রুপোর কলস, সোনার হাড়ি, পিতলের হাড়ি এসব ভেসে ভেসে উঠতো। সেগুলো প্রচুর লোকের চোখে ধরা পড়েছে এবং সেগুলো যখন তুলে আনতে যেত কেউ তখন সেগুলো আবার কোথায় হারিয়ে যেত। কেউ কেউ বলে এই দীঘিতে নাকি অনেক পরীরা এসে একসময় স্নান করত। আসল কথা হল যে এই দীঘিটা নাকি পরীরা কেটেছিল তাদের স্নান করার জন্য। তবে রানীদের সেখানে স্নান করতে দেখে তারা খুব রাগান্বিত হয়ে যায় এবং তাদেরকে মেরে ফেলে দেয়। এরপর থেকে এই দীঘিতে কখনো কেউ নামার সাহস পায়নি। তবে বর্তমান সময়ে সেরকম পরিস্থিতি আর নেই। এখন বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এখানে পুজো করা হয় এবং মানুষের বিভিন্ন রকম মানসী থাকে। সেই মানসী অনুযায়ী সবাই দান ধ্যান করে। এটাই ছিল আসলে এই দীঘির গল্প। আমার কাছে গল্পটা কতটা সত্য মনে হয়েছে তার থেকে বড় কথা, এখানে গেলে আপনারা বুঝতে পারবেন যে জায়গাটা কতটা ভয়ংকর সুন্দর।

20230320_152940.jpg

20230320_153023.jpg

20230320_153143.jpg

20230320_153953.jpg

20230320_153955.jpg

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীস্টোরি রাইটিং।
ডিভাইসSamsung Galaxy M31s
ফটোগ্রাফার@rupaie22
লোকেশননড়াইল, বাংলাদেশ।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

ঘটনাটা শুনে খুবই ভয়ঙ্কর লাগছে। এত বড় দিঘী আসলে মোবাইলের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করা সম্ভব নয়। তবে এটা জেনেই তো অবাক হয়ে গেলাম যে এক রাতেই এত বড় দিঘী কাটা হয়ে গেল। আসলে এটা কি সত্যিই হতে পারে এমনটাই ভাবছি। ছবিতে কিন্তু পরিবেশটা ভালই লাগছে। জায়গাটা অনেক শান্ত মনে হচ্ছে। তবে এটা কোথায় যেন শুনেছিলাম এরকম বড় দিঘিতে মাঝেমধ্যে সোনা-রূপার কলস বা অন্য কোন গুপ্তধন ভেসে উঠে, কেউ নিতে গেলে সেটা আবার হারিয়ে যায়। যাই হোক গল্পটা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আসলে এই ঘটনাটা কতটা সত্য বা বাস্তব সেটা তো আমি জানিনা। তবে লোকের মুখে যেটা শুনেছিলাম সেটাই আর কি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য।

দাদা আমার মামার বাড়িতেও এমন একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরের গল্পও সেম। একদম হুবহু।তবে শুধু একটা পার্থক্য আছে সেখানে বিশাল বড় একটা মাছ দেখা যায়,যাকে কখনো দেখা যায়না।অনেক ভাল লাগল এটা জেনে যে অন্য কোথাও এমন একটি পুকুর আছে। ধন্যবাদ দাদা গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

আগের কালে এই ধরনের ঘটনা অহরহ শোনা যেত। আসলে এই ঘটনা কতটা সত্য বা বাস্তব সেটা তো আমি জানিনা, লোকের মুখে শোনা আর কি।

এমন ভয়ানক ঘটনা পূর্বে অনেক শুনেছি কিন্তু বাস্তবে কখনো দেখা হয়নি। আর বর্তমান সময়ে তেমন একটা ঘটে বলে মনে হয় না। তবে যাই হোক আপনার আজকের পোস্ট থেকে ভয়ানক একটি ঘটনা জানতে পারলাম। এমন একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।