"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-১৯ ।। বৃষ্টির দিনে আমার মজার কিছু অনুভূতি।।

in hive-129948 •  2 years ago 

বৃষ্টির দিনে আমার মজার অনুভূতির কথা লিখতে বলা হবে, আর সেখানে আমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে না এটা তো হতেই পারে না। কারণ আমার জীবনের ৮০ শতাংশ ভালো সময় এই বৃষ্টির দিন গুলোতেই কেটেছে। আজকের এই লেখাটা আমি হয়তো আরো কিছুদিন আগেই পোস্ট করতাম, তবে প্রচন্ড রকম অসুস্থ থাকার কারণে বিগত কিছুদিন ধরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না। এবং কাল লেভেল টু এর ভাইভা টা অনেক কষ্ট করে দিয়েছি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত পাস করেছি এটাই অনেক আমার কাছে।

আমার আজকের লেখা শুরু করার আগে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের সবার পছন্দের এবং শ্রদ্ধেয় @shuvo35 ভাইকে। যার কারণে আমি আমার আজকের লেখাটা লিখতে পারছি। হয়তো শুভ ভাই এই কনটেস্ট এর আয়োজন না করলে আমার মনের কথা গুলো এবং বৃষ্টির দিনে কাটানো ভালো সময়গুলো মনের গভীরে কোথাও এক জায়গাতে জমাট বেঁধে থেকে যেত। যাইহোক ভালো লাগছে অনেক বছর পর কথা গুলো বলার সুযোগ পাচ্ছি এত জ্ঞানী গুণী লোকের মাঝে।

rain-275317_1280.jpg
উৎস:

আজকে আপনাদের সামনে বৃষ্টির দিনের যে বিশেষ অনুভূতির কথাগুলো বলবো তা অধিকাংশই আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া। তবে ভালো করে বোঝার পর থেকে বৃষ্টির দিনগুলো যে শুধু ভালো মুহূর্ত গুলোই উপহার দেয় এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো আমার। আসলে বৃষ্টির দিন গুলো ভালো মুহূর্ত দেওয়ার পাশাপাশি এমন কিছু বিশেষ স্মৃতি রেখে যায় তার সংশোধন করতে বছরের পর বছর লেগে যায়।

এখন যেহেতু বর্ষাকাল চলছে সুতরাং ধরে নেওয়াই যায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই বৃষ্টির দিনে কেউ ব্যালকনিতে বসে প্রিয়জনের হতে হাত রেখে ধোঁয়াওঠা গরম চা এর পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছি, আবার কেউ খিচুড়ির সাথে ডিম ভাজি খাচ্ছি, আর যদি কপাল খুব ভালো থাকে তাহলে তো কথাই নেই, মায়ের হাতের ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা খাচ্ছি। তবে অন্য দিকে কিছু মানুষ এই বৃষ্টির দিনে এখনও গলা জলের নিচে রয়েছে এটা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছি না। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বাংলাদেশের মত এত সুন্দর একটা দেশের প্রায় ৪০ লক্ষ্য মানুষ এখনও হাঁটু জলের নিচে বাস করছে। তাদের কাছে বৃষ্টির দিন গুলো মোটেই উপভোগ্য নয়, অভিশাপ বটে। তাদের সার্বিক মঙ্গল এবং যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান কামনা করছি। যাই হোক আমি মনে হয় আমার আজকের টপিকস থেকে লাইন চূত হয়ে যাচ্ছি । ফিরে আসা যাক বৃষ্টির দিনে আমার মজার অনুভূতির কথা নিয়ে।

rainy-day-2572352_1280.jpg

উৎস:

বর্ষার দিনগুলো ছোটবেলায় কেটেছে আমার টিনের চালের আর কাঠের বেড়া দেওয়া বাড়িতে। ইট, সিমেন্ট আর কংক্রিটের তৈরি বাড়িতে আসলে বর্ষার দিনটা ঠিক পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। টিনের চালে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো এখনকার মন ভালো করে দেওয়া মিউজিক গুলো থেকে কম কিছু ছিলোনা আমার কাছে। আমার গ্রামের বাড়ির বর্ষার দিনের মাটির সোঁদা গন্ধ এখনকার যে কোনো পারফিউম কেও হার মানাবে।

ছোটবেলায় এতটাই ফাঁকিবাজ ছিলাম যে স্কুল শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে চাইতাম যদি বৃষ্টি হতো তাহলে হয়তো আজ আর স্কুলে যেতে হতো না। যদিও এই ব্যাপারটা অনেক বারই হয়েছে আমার সাথে। স্কুল শুরু হওয়ার আগেই নামতো মুষলধারে বৃষ্টি। তখনই প্যান্ট জামা পাল্টে চলে যেতাম খেলার মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে। যত সময় বৃষ্টি হতো তত সময় খেলতাম।

হটাৎ দেখতাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মা লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসছে আমাকে মারার জন্য। কিন্তু আমাকে ধরা তো মোটেই এত সহজ ছিল না। মায়ের হাতে তাড়া খেয়ে নেমে যেতাম মাঝ পুকুরে। মা তো আর এত দূর আসবে না আমাকে মারতে। শুধু পাড়ে দাঁড়িয়ে বলতো উঠে আয় বাবু না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে। তবে পুকুরে দাপিয়ে যখন চোখ লাল করে বাড়ি ফিরতাম তখনই হতো আসল মজা। বাবার হাতের ভয়ানক মার যা এখনো মাঝে মাঝে আমার মনে পড়ে। চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যেত। এত বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর বাবাজি আসবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। প্রচন্ড কপুনি দিয়ে জ্বর আসতো আমার তবে জ্বর সেরে গেলে এই রকম আমি নিয়মিতই করতাম। বৃষ্টির দিন হলেই আমি বেরিয়ে পড়তাম, মার খাবো তবে খেলা থামানো যাবে না। এই বিশেষ দিনগুলোতে আমাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট থাকতো এবং পুরষ্কার হিসেবে থাকতো মাটির তৈরী কাপ। একবার তো ফুটবল খেলতে গিয়ে আমার পায়ের নখ উঠে যায়। বাড়ি এসে সহানুভূতি পাবো কি, উল্টো আবার ধোলাই খেতাম।

InShot_20220626_200222095.jpg
স্থান: কলকাতা, নর্থ ২৪ পরগণা, ইন্ডিয়া।
ক্যামেরা: স্যামসাং
মডেল:M31s.

InShot_20220626_200324813.jpg
স্থান: কলকাতা, নর্থ ২৪ পরগণা, ইন্ডিয়া।
ক্যামেরা: স্যামসাং
মডেল:M31s.

বৃষ্টির দিন গুলোতে যেহেতু বিশেষ কোনো কাজ থাকতো না কারো। পুরো পরিবার এক সাথে থাকতাম তাই আসর বসতো লুডু খেলার আর সাথে থাকতো নানা স্বাদের পিঠা পুলির। ঠাকুমা পিঠা বানাতো আর আমরা সবাই খেতাম। আমাদের ঘর থেকে রান্নাঘরটা বেশ কিছুটা দূরে হওয়ার কারণে বৃষ্টিতে ভিজেই পিঠা খেতে যেতে হতো। তবে ঠাকুরমা তার নিজের শাড়ির অচল দিয়ে শরীর মুছে দিত আমার। যদিও তখন বিশেষ কোনো খাবার খাওয়ার সামর্থ ছিলোনা আমার তাই এইগুলোই আমার কাছে অমৃত ছিল তখন। তবে একটা বিষয় আমার খুব খারাপ লাগতো যখন টিনের চালের ফুটো দিয়ে ঘরে জল পড়ত। এমনও হয়েছে খাটে শুয়ে আছি আর খাটের একপাশে বালতি পাতা রয়েছে যেখানে অবিরত জল পড়েই যাচ্ছে। কিছু সময় পর পর বালতিতে জল ভরে গেল তা পরিবর্তন করে আবার নতুন করে বালতি পাতা হচ্ছে। এই কাজটি আমি করতাম না। তবে আমার বাবা অনেক সময় সারা রাত ধরে এই কাজ করতো যত সময় বৃষ্টি না থামত।

rain-2683964_1280.jpg

উৎসঃ

আমাদের গ্রামের বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত বৃষ্টির দিনে। দল বেঁধে বেরিয়ে পড়তাম মাছ ধরার জন্য। কত মাছ যে পেতাম তখন সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কৈ, শিং, মাগুর এমনকি চিংড়ি মাছ পেতাম। সব বাড়ি নিয়ে আসতাম। বাবাকে দেখতাম কিছু মাছ আবার ওখান থেকে নিয়ে ঘেরে ছেড়ে দিত।

এমনই এক বৃষ্টির দিনে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে আমার খুব কাছের এক বন্ধু মাথায় বাজ পড়ে মরে যায়। তবে এই ঘটনা আমাদের গ্রামে প্রথমবার ছিল। তাই সবাই খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকে। ওই দিনের পর থেকে আমাকে আর কোনোদিনও বিলে মাছ ধরতে দেয়নি। আমার নিজেরও সাহস হয়নি কোনো দিন আর বিলে মাছ ধরার। বন্ধুর মৃত্যুর পর এতটাই মন ভেঙে যায় যে তারপর থেকে বৃষ্টির দিনে আর কখনোই ফুটবল খেলতে যাওয়া হয়নি। সব সময় মনে পড়ত ওর কথা।

garden-6880555_1280.jpg

উৎসঃ

এই ঘটনার দুই বছর পর আমি শহরে চলে আসি চারিদিকে ইট আর কংক্রিট জঙ্গলে হারিয়ে ফেলি আমার মজার শৈশব। তবে এখন ও বৃষ্টি হলে নিজের মতো করে সময়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। হয় কফি নিয়ে বসে পড়ি, না হয় পুরনো দিনের গান শুনি, না হয় ইলিশ মাছ দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাই। তবে শৈশব এর ওই দুরন্ত পনা কোথায়। ওই মজা কি আর এখন হয়।

আসলে বলতে গেলে এত কথা আসবে যে লিখতে লিখতে সকাল হয়ে যাবে তাও বৃষ্টির দিনে নিয়ে লেখা আমার মজার অনুভূতি শেষ হবে না। তবে শেষ তো করতেই হবে। তাই বর্ষার দিনের কিছু ঘটনা খুব সংক্ষেপে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে সুন্দর ও নতুন কনটেন্ট তৈরিতে সহযোগিতা করে।

ধন্যবাদ সবাইকে

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলেই তো এভাবে তো কখনো চিন্তা করা হয়নি। যেটা আমার জন্য চমৎকার উপভোগের বিষয় সেটা অনেকের জন্য দুর্বিষহ যন্ত্রনা। এগুলো বাদ দিলে বৃষ্টির আর সবকিছুই আমার কাছে ভালো লাগে। বিশেষ করে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ। সাথে যদি হয় রবীন্দ্র সংগীত আর খিচুড়ি র সাথে ইলিশ মাছ ভাজা। আর কি চাই জীবনে? চমৎকার লিখেছেন দাদা।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ Rupok দা এত সুন্দর এবং গঠনমূলক একটা মন্তব্য করার জন্য। আপনার কমেন্ট গুলো আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। ভালো থাকবেন আপনি। শুভকামনা রইল আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য।🙂