বন্ধুত্ব থেকে প্রণয়, প্রণয় থেকে পরিণয়..!🌸🦋 ।। মার্চ -২৭/০৩/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

আগের পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম...

এই মেয়ে নাকি সুদিপকে বলেছিল বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য। তবে তার পাসপোর্ট হয়নি এজন্য সে যেতে পারিনি, এই কারণে তার রাগ হয়েছে। আরো একটা কারণ ছিল সেটা হল যে ওই মেয়ে নাকি সুদীপের কাছে ইন্ডিয়ান কিছু কসমেটিক্স চেয়েছিল কিন্তু সে এগুলো কারো কাছে পাঠাতে পারেনি জন্য তার সাথে রিলেশনশিপে রাখতে চায় না। হা হা হা... আমি মনে মনে চিন্তা করলাম ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো যে এই সামান্য ব্যাপার গুলো নিয়ে এতদিনের সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। যাইহোক আপাতত কিছু তো আর করার ছিল না, তাই ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করেই ফোনটা রেখে দিলাম।


couple-2601156__480.jpg
সোর্স

পরের দিনই আমার বন্ধু সুদীপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বাংলাদেশ যাবে এবং ওই মেয়ের সাথে দেখা করে একটা মিউচুয়াল করেই তারপর দেশে ফিরবে। তবে যেহেতু ওই সময়টাতে আমরা কোন দিকেই ঠিকঠাক প্রস্তুত ছিলাম না তাই তাকে যে করেই হোক আটকে দিলাম। এরপর মাঝখানে বোধহয় তিন বছর তাদের ভেতর আর কোনরকম যোগাযোগ বা সম্পর্ক ছিল না। মাঝেমধ্যে দু-একদিন হয়তো কথা হতো তবে সেটা নিতান্তই অনিচ্ছা শর্তে। শুনেছিলাম যে আমাদের ভারতবর্ষের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েরা আরো অনেক বেশি ভালো হয়, তবে এই মেয়ের কথাবার্তা শুনে আমি তেমন বিশেষ কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যাইহোক এরপর আর এই বিষয়ে তেমন কোন কিছু হয়নি। আমাদের যখন এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়, হঠাৎ করেই আমার বন্ধু একদিন বলে যে সে বাংলাদেশ যাবে এবং সেই মেয়ের সাথে দেখা করবে। তবে পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুনে কিছুটা পিছিয়ে গেল। কিছুদিন পর আমাদের এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল এবং এসব কিছু প্রায় ভুলেই গেছিলাম। যাইহোক আমাদের পরীক্ষা দিয়ে আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম আর আমার বন্ধু CA তে ভর্তি হয়ে গেল।

man-2933984_1280.jpg

সোর্স

পরে আবার শুনতে পারলাম যে এই মেয়ের সাথে নাকি আমার বন্ধু মাঝেমধ্যে ফোনে কথা বলতো এবং তাকে নাকি বাংলাদেশে যেতে বলেছে। তাদের মধ্যে যে পুনরায় আবার একটা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সেটা আমি বুঝতে পারিনি। যাই হোক আমাদের দুজনেরই পাসপোর্ট বানাতে দেওয়া হল। তবে আমি বাংলাদেশ যাব না, সেই যাবে। আমার পাসপোর্ট টা এমনি এমনি বানাতে দিয়েছিলাম আর কি। আমাদের দুজনের পাসপোর্ট মোটামুটি ৪০ দিনের ভিতরে সব প্রসেস কমপ্লিট করে হাতে এসে পৌঁছালো। এইবার সে একটা ভালো দিন দেখেই বেরিয়ে পড়ল বাংলাদেশ উদ্দেশ্যে। এরপর কি হয়েছিল সেটা তো আমি আর জানিনা, তবে তার মুখ থেকে যেটা শুনেছিলাম সেটাই এখন বলছি। আসলে এই মেয়ের বাবাই নাকি আমার বন্ধু সুদীপ এর সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। যেহেতু ছেলে তখন CA পড়ে তাই তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল এই কথা চিন্তা করেই হয়তো দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মোটামুটি বিকালের ভিতরে সুদীপ বাংলাদেশে পৌঁছে যায় এবং সেই মেয়ের গ্রামে গিয়ে তাদের বাড়ি উপস্থিত হয়। মেয়ের বাবাকে দেখে নাকি আমার বন্ধু খুব ভয় পেয়েছিল। যাই হোক তারপরেও সাহস সঞ্চয় করে তাদের ভিতর কথোপকথন হয়। মেয়ের বাপ নাকি বলেছিল যে তুমি তো এখনো কোন চাকরি করো না, তাহলে তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে কেন দেব। আমার মেয়ের জন্য তো বড় বড় অফিসার, এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও এসে ঘুরে গেছে। তাহলে তোমার ভিতরে এমন কি আছে যে আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া যায়।

couple-1934204__480.jpg
সোর্স

আমার বন্ধু খুবই সাহসী এবং চঞ্চল ছিল, তাই এই কথার উত্তরে সে বলে যে, আপনার মেয়ের জন্য এখন যে ছেলেরা এসেছে আপনার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য, ২-৫ বছর পরে আমি তার থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা ইনকাম করব, এটা আপনাকে লিখে দিতে পারি। জানিনা মেয়ের বাবা এটা শুনে তখন কি চিন্তা করেছিল তবে পরবর্তীতে বলে যে তুমি ইন্ডিয়া ফিরে যাও আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর তোমাকে জানাবো। তবে আমার বন্ধু ওই মেয়ের জন্য এতটাই পাগল ছিল যে, বিয়ে না করে সে কলকাতা ফিরবে না। তারপরও আমি তাকে ফোন করে বুঝিয়ে আবার কলকাতা ফিরিয়ে আনলাম। কিছুদিন পরেই মেয়ের ফ্যামিলি এবং আমার বন্ধুর ফ্যামিলি থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে তাদের বিয়ে দেওয়া হবে। এই সময় তো আমার বন্ধুর আনন্দ আর ধরে না। আমাদের জন্য বড় একটা পার্টির আয়োজন করা হলো। কিছুদিন পরে আবার আমার বন্ধু বাংলাদেশ আসলো এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হল। এখন তারা দুজনেই কলকাতা থাকে। আমি মাঝেমধ্যে তাদের সাথে দেখা করতে যাই, তারাও মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসে। তবে সেই দিনের ঘটনা এবং এই মেয়েকে পাওয়ার যে সংগ্রাম সেটা চিন্তা করলে এখনো প্রচন্ড হাসি পায়। তবে আমি মনে করি ওই মেয়েকে বিয়ে করে আমার বন্ধু বেশ লাভবান হয়েছে। কারণ মেয়েটা এত ভদ্র এবং সাংসারিক, হয়তো ভারতবর্ষের কোন মেয়েকে বা অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করলে এতটা সুখী হতে পারত না।

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীগল্প।
লোকেশননড়াইল, বাংলাদেশ।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

দাদা ভাই এতো বিশাল ঘটনা ৷ যা হোক দাদা ভাই এখন ভালোবাসা এতই ঠুনকো যে অল্পতে ভেঙ্গে যায় ৷ মানে যতক্ষন দিতে পারবে ততক্ষন ভালো ৷ আর না হলে অন্য ৷
যা হোক আপনার বন্ধুর কাহিনী তো বেশ জটিল ৷ তবে আপনার বন্ধু বাংলাদেশের মেয়ের প্রতি এতো দুর্বলতা ৷ যা হোক শ
শেষ মেষ তাহলে বিয়ে টা হলো ৷

আসলে কাহিনীটা আরো অনেক বেশি জটিল ছিল। আমি তো সহজ করে লেখার চেষ্টা করেছি। পুরো কাহিনী যদি বলা যেত, তাহলে সেটা নিয়ে একটা উপন্যাস লেখা যেত এরকম অবস্থা হয়ে গেছিল।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দুটি পোস্টই পড়ার জন্য।

দারুন দারুন 😍
এরকম একটা মিলন দেখতে পাবো ভাবতেই পারিনি, তবে মনে মনে চাইছিলাম যাতে তাদের বিয়েটা হয়। যাক অনেক সংগ্রাম করে তাদের বন্ধন শক্ত হয়েছে। উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সুখি জীবন যাপন করছে এটাই শুকরিয়া।

সমস্যা শুধু একটাই হয়েছে সেটা হলো যে, শ্বশুরবাড়ি অনেক দূরে হয়ে গেছে। তাই ছাড়া বাকি সবই ঠিকঠাক আছে। হা হা হা.. যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই শ্বশুরবাড়ি যাওয়া সম্ভব না আমার বন্ধুর।

হা হা 😄
এটা তো আরো মজার, একবার গেলে আদর আপ্যায়নের সীমা থাকবেনা 🤗
আর দূরে থাকলে কদর বাড়বে।

বাংলাদেশ থেকেই বন্ধুর শশুর শাশুড়ি মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসে। সবাই খুবই আন্তরিক। তবে শ্বশুর-শাশুড়ি পক্ষ থেকে জামাই এর আদর যত্নের কোন ত্রুটি হয় না এটা ঠিক।

শেষটা বেশ ভালোই হয়েছে তাহলে।জয় ফেসবুক বাবাজির জয়🫡।
তবে শেষের কথা শুনে একটু অবাকও হয়েছি আবার ভালোও লেগেছে।দেশের মেয়ের প্রশংসা শুনে ভালোই লাগলো।
আপনার হিল্লের খবর শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।

তাহলে ফেসবুকেও প্রেম হয় এবং সেই প্রেমের পরিণতিও হয়। হা হা হা...

ভাই আমার বিয়ে করার তেমন কোনো ইচ্ছে নেই। একা থাকতে খুব পছন্দ করি আমি। 🙂

যাক অবশেষে ভারত বাংলাদেশের মিলন ঘটেছে। আপনার বন্ধু অনেক সংগ্রাম করে ভারত বাংলাদেশের সুমধুর সম্পর্ক তৈরি করেছে, বিবাহ বন্ধন এর মাধ্যমে। ভাই, আপনার বন্ধু সন্দ্বীপের বন্ধুত্ব থেকে প্রণয়, প্রণয় থেকে পরিণয় গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। তার চেয়ে ভালো লাগলো বাংলাদেশের মেয়েটি ভদ্র এবং সাংসারিক কথাটি জানতে পেরে। গল্পটি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মেয়েটা আসলেই অনেক ভদ্র এবং সংসারিক। সচরাচর এরকম মেয়ে পাওয়া মুশকিল। ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য।

প্রতিটা ভালোবাসা পূর্ণতা পাক সেটাই কামনা করি। আসলেই আপনার বন্ধুর ভালবাসার গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছি দুই বাংলার মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করেছে। ভালোবাসা সাত সমুদ্র অতিক্রম করেও সফল হতে পারে। অনেক ভালো লাগলো ভালোবাসার পূর্ণতা পাওয়ার গল্প পড়ে।

দুই বাংলার ভিতরে আসলেই একটা সুন্দর বন্ধন তৈরি হয়েছে। হা হা হা... তবে এই প্রেমের পিছনে অনেক স্ট্রাগেল ছিল। অধিকাংশ সময় দুই দেশের এই প্রেম ফেল হয়ে যায়, কিন্তু আমার বন্ধুর ভাগ্য ভালো ছিল জন্য সেটা সাকসেসফুল হয়েছে।

বাহ,শেষমেষ মিলন হয়েছে। প্রথমদিকে মেয়েটা কিছু ইন্ডিয়ান কসমেটিক চেয়েছিল কিন্তু সুদীপ সেগুলো মেয়েটির কাছে পাঠাতে পারেনি দেখে রিলেশন রাখবে না বলেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এত কিছু হওয়ার পরও সুদীপ বাংলাদেশে গিয়ে মেয়ের বাবার সাথে দেখা করল। শেষমেষ দুই ফ্যামিলি মিলে তাদের বিয়েও দিয়ে দিলে এবং শেষের দিকে যেহেতু বললেন মেয়েটা অনেক সংসারী এবং ভদ্র এটা শুনেই তো অবাক হয়ে গেলাম। পূর্বের এবং পরের মেয়েটা আলাদা ছিল নাকি। 🤣

এখন তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।🤭 যদিও আমার বন্ধু প্রথম দিকটাতে খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু এখন সবকিছু ঠিকঠাক করে মানিয়ে নিয়েছে।